সন্ধ্যা নামে
সন্ধ্যা নামে
মালবিকা চাকী
~~~~~~~~~
বিকেলের
পড়ন্ত রোদে গাছে জল দেবার জন্য ছাদে ওঠার আগেই সুনীতার কানে এল মোবাইলের
আওয়াজ। কিন্তু এখন নেমে গেলে আর গাছগুলো জল পাবে না।কয়েকদিনের কাঠফাটা রোদে
এমনিতেই গাছগুলোর প্রাণ ওষ্ঠাগত, তাই মনে মনে ভাবে গাছে জল দিয়ে নিচে গিয়ে
ফোনটা ধরবে। একটু হাত চালিয়ে গাছগুলোতে জল দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার আগে আবার
ফোনটা বেজে উঠল। এবার আর দেরি না করে ছুটে গিয়ে ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে ভেসে
এল "কি গো ভুলে গেলে নাকি? আমি ছন্দা।" একটি বেসরকারি নার্সিংহোমের ওয়েটিং
রুমে ছন্দার সাথে যখন তার পরিচয় হয়েছিল তখন তাদের দুজনের বাবাই মৃত্যুর
সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। সে সময় কয়েকটা দিন ঘোরের মধ্যে কাটলেও ছন্দার বন্ধুত্ব
তার জীবনে একটা উপরি পাওনা। এরপর বেশ কিছুদিন whatsapp বা messenger-এ
নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। আজ অবশ্য অনেক দিন বাদে ফোন করেছে ছন্দা।
কিছুক্ষণ কথা বলে মোবাইলটা নামিয়ে রেখে সোফায় রাখা জামাগুলো
ভাঁজ করতে লাগল। সারা দিনের মধ্যে এই সময়টায় তার অবসর। সকলেই বাড়ির বাইরে।
একা একা ভালো লাগে না। ইচ্ছে করে একটু গল্পগুজব করতে, আড্ডা মারতে, কিন্তু
কোথায় যাবে? চারপাশের মেকি সম্পর্কগুলোতে সে প্রাণ পায় না। এমন কাউকে চাই
যে তাকে সবটা বুঝবে, যার সাথে হিসেব করে কথা বলতে হবে না কোনো বেফাঁস কথা
মুখ থেকে বেরিয়ে গেলেও টেনশন হবে না। মনে হয় এই তো সেদিনের কথা, জীবনে কত
হুল্লোড় ছিল। স্কুল, টিউশন, ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা, গল্প, শুধুই আনন্দ।
কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সব।
আসলে আজকাল প্রায়ই একাকীত্ব গ্ৰাস করছে তাকে। সংসারের দায়িত্ব পালন
করতে করতে সে হাঁপিয়ে উঠেছে। অনেক সম্পর্ক তৈরি হলেও জীবন থেকে হারিয়ে গেছে
অকারণে। হা হা করে হাসি, ছোট ছোট খুনসুটি। মনে পড়ে সেই মুখগুলো, যারা
শুধুমাত্র তাকে সঙ্গ দিতে দীর্ঘ পথ হেঁটেছে, নিজে না পড়ে নতুন কিনে আনা
গল্পের বই তার অজান্তেই পড়ার টেবিলে রেখে গেছে। কত অনায়াসেই তাদের বিচরণ
ছিল সুনীতার মনের গভীরে। কতদিন দেখা হয়নি তাদের সাথে। মাঝে মাঝে সব ছেড়ে
একছুটে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। তার দুচোখ জলে ভরে ওঠে। আবেগের তরী বেয়ে
সুনীতা ভেসে বেড়ায় শৈশব কৈশোরে যৌবনের ফেলে আসা দিনগুলোতে।
সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসে চারপাশে। বাড়ির বাকি মানুষগুলো একে
একে ঘরে ফেরে। অফিস ফেরৎ স্বামীর হাত থেকে বাজারের ব্যাগ নিয়ে সে এগিয়ে
যায় রান্না ঘরের দিকে।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴