সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

সখি মাতাল কাহারে কয়

সখি মাতাল কাহারে কয়
শিঞ্জিনী চট্টোপাধ্যায়
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^

সারাটা ব‌‌ছর গৃহপালিত, থুড়ি ঘোরতর সংসারী, দায়িত্বশীল বাবা, অফিসের বসের বাধ্য কর্মী হয়ে কাটালেও বছরের শেষের কয়েকটি দিন মানে ঐ ২৫শে ডিসেম্বর থেকে ৩১শে ডিসেম্বর আমি একদম আমার মতো। চিনি ছাড়া গ্রীন টি নয় লাল চা খেয়ে আর যাই হোক মন ফুরফুরে হয় না। অফিস, বাড়ি সারাবছর ট্যাক্টফুলি ম্যানেজ করার জন্য একয়েকটা দিন আমি নিজেকে পুরোমাত্রায় চার্জড আপ করি। বছরের আরো যে কয়েকটা দিন হাল্কা পুলকা এনার্জি নেই না তা নয়। যেমন হোলিতে ভাং, খুব বৃষ্টি পড়লে রাম, প্রচন্ড গরম পড়লে বিয়ার, স্ট্রেস হলে ভদকা উইকএন্ডে বন্ধুদের সঙ্গে স্কচ, বন্ধু ছাড়া একঘেয়েমি কাটাতে হুইস্কি একটু আধটু নিয়ে থাকি। আমার তুখোর, বুদ্ধিমতী গিন্নী রিমার ক্ষমতায় কুলোয় না আমাকে ধরে ফেলবে। বরং আমাকে নিজের আয়ত্তে রাখতে পারে ভেবে বেশ গর্ববোধ করে।
ভাবতে অবাক লাগে জানেন মিষ্টি তন্বী মেয়েটা কেমন যেন একটা চড়া মেজাজের কড়া অভিভাবিকায় রূপান্তরিত হয়ে গেল। সে যাক্ গে, চেঞ্জ ইস দ্য ওনলি কনস্ট্যানট থিঙ্গ।
বছরের শেষ দিন আমাদের এ্যপার্টমেন্টের সবাই সপরিবারে পিকনিকে এসেছি। পিকনিকের নানা কাজে তদারকি করা এবং গিন্নী কে প্যামপার করার ফাঁকে ফাঁকে গাছের আড়ালে ঝোপেঝাড়ে গিয়ে এক দু পেগ করে মেরে আসছি। সাথে পিঁয়াজ, শসা চিবিয়ে নিচ্ছি যাতে স্মেল না বের হয়।
এক দু পেগ নিলে আমি মাধ্যাকর্ষন শক্তিকে উপেক্ষা করে হাল্কা হয়ে ভেসে ভেসে বেড়াই। মাটিতে আর পা থাকে না। মনের অনেক ভেতরে থাকা একটা মুখ ও ফ্ল্যাশব্যাকে ভেসে ওঠে। একটা চিনচিনে অথচ মনোরম ব্যাথাও অনুভূত হয়। হঠাৎ আড়াল থেকে দেখি রিমা এদিকে এগিয়ে আসছে। বোধহয় সেল্ফি সেশন শেষ। হ্যাঙওভার কাটিয়ে আমিও উঠে দাঁড়ালাম। মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে উপেক্ষা করতে পারলেও গিন্নীর দৃষ্টি এবং তার থেকে উৎপন্ন হওয়া তাপশক্তিকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা আমার নেই। বুকের মনোরম ব্যাথা ঢিপঢিপ আওয়াজে পরিণত হয়েছে। আই আ্যম অলওয়েজ আ্যট ইয়োর সার্ভিস গোছের মুখ করে গিন্নীর কাছে গিয়ে বললাম "সব ঠিকঠাক?" রিমা বলল "ওরকম উদাস দৃষ্টি নিয়ে কার কথা ভাবছ?" মনোরম ব্যাথার কথা গিন্নীকে বলব আমার ঘাড়ে কটা মাথা! সত্যি বলতে কি কোনও উঠতি বয়সের নায়িকাকে ম্যাগাজিন টিভি বা সিনেমায় দেখলে আমি মার্জিত ভাষায় বলি প্রমিসিঙ আ্যক্টর, কোনো উল্লাস প্রকাশ করি না। কোন ও বন্ধুর বাড়ি ডিনার সেরে তার স্ত্রীর রান্নার প্রশংসা আমি ভুলেও করি না, কারণ অল্প সময়ের নোটিশে দেশব্যাপী লকডাউন আপনারা হয়তো প্রথমবার দেখলেন। বিনা নোটিশে কিচেনে লকডাউন আমি বহুবার দেখেছি। আর সেই আনলক প্রক্রিয়ার জন্য যে সময় ব্যায় করতে হয় তা বড় ভয়ঙ্কর।
তো হাসিমুখে বললাম "তুমি ছাড়া আমার ভাবনায় আর কে আসবে? তোমাকেই দেখছিলাম।"। রিমার মতো মেয়েরা অল্পেতে লেগে যায় এবং অল্পেতেই ফুলে ওঠে। ঠোঁট টিপে হেসে বলল "পারোও বটে"। রান্না শেষে এবার সবার খেতে বসার পালা। খেতে বসে সবার অভিযোগ মাটন নিয়ে। দোকানদার একদম ঠকিয়েছে। মাটনের দায়িত্বে থাকা চার পাঁচ জনের মুখ একদম চুন। মাটনটা দেখে কিনতে পারেনি। পরিবেশন করার আগে আমি এবং আমরা কয়েকজন বাসের ভেতর ঢুকে ছোট্ট করে একটু নিয়ে এসেছি। হঠাৎ করে মনে হল এই ভেজালের যুগেও একদম খাঁটি জিনিসটা কিনতে আমি এবং আমার মতো কয়েকজনই পারে। রিমা যে ছেলেকে টলার, ষ্ট্রঙ্গার, শার্পার করার জন্য হেল্থ ড্রিঙ্ক খাওয়ায়, কই তা তো হচ্ছে না! উল্টে ছেলে কেমন যেন অলস, স্থুল হয়ে যাচ্ছে। রিমা নিজেও যে নিয়মিত বয়স কমানোর ক্রিম ঘসে কিন্তু কোন ফল তো দেখি না! বরং আমি এনার্জি পাওয়ার জন্য যা খাই সেটার আ্যকশন সাথে সাথেই শুরু হয়।
ডালের বালতি নিয়ে পরিবেশন করতে যাচ্ছি, ভাবলাম বাড়িতে তো রিমাই রোজ পরিবেশন করে খাওয়ায়, আজ আমি ওকে একটু যত্ন করে খাওয়াই। কাছে গিয়ে বললাম "আর এক পেগ ডাল দিয়ে বেগুনী টা খাও ফুরফুরে লাগবে।" রিমা একটু সন্দেহের চোখে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে গেল। বাকিরা সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠল। সবার খাওয়া শেষে যখন বাসে উঠব, মনে হল রিমা কতদিন আমাদের পুরনো গাড়িটা নিয়ে অভিযোগ করেছে। একটা বড় গাড়ি কেনার কথা বলেছে‌। আমি আমল দেইনি। আজ আমি ওকে বড় গাড়ি চড়াব, নিজেই চালাব। আমি বাস ড্রাইভ করার কথা বলতেই সবাই একসাথে হাঁ হাঁ করে উঠল। রিমা শক্ত মুখ করে বললো "বিহেভ ইয়োরসেল্ফ"। ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললাম "আজকের দুনিয়ায় দুটো জিনিসই খাঁটি, এক আমার হৃদয় আর দুই আমার টনিক। তোমরা কেউই খাঁটি ভেজালের পার্থক্য বোঝোনা।"
হাঁটু গেড়ে বসে ওর দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে গাইলাম "সখি ভালোবাসা কারে কয়"। ও চিবিয়ে চিবিয়ে বললো, "বাড়ি ফিরে আজ আমি তোমায় বোঝাব মাতাল কাহারে কয়।" মনটা আবার ভারী হয়ে আসছে।
আজ বছরের শেষ দিনে আমার তো যা হওয়ার হবে, আপনারা সুস্থ ভাবে নতুন বছরকে স্বাগত জানান। ভালো থাকুন, পরিবার এবং সমাজকে ভালো রাখুন।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri