সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
27-November,2022 - Sunday ✍️ By- উত্তম চৌধুরী 196

শ্রাবণহৃদয়

শ্রাবণহৃদয়
উত্তম চৌধুরী 
---------------------

বাইক নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে মূল রাস্তায় উঠতেই একটি মেয়ে হাত নেড়ে দাঁড় করালো ঋতমকে। বলল, "আপনি তো সাজপাড়ের দিকে যাচ্ছেন, আমাকে একটু নিয়ে যাবেন?"
 ---" ঠিক আছে, ওঠো" বলতেই মেয়েটি ঋতমের শরীর ধরে পেছনে বসে। ও তন্ময়া। ঋতম জানে মেয়েটি পোস্ট অফিসে কাজ করে। পরিচিত মুখ, তবে সামনাসামনি কথা হয়নি কোনওদিন। আজ সামান্য তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার জন্যই তন্ময়া এটা করেছে। এমনিতে টোটো, অটোই ওঁর সঙ্গী। মূল রাস্তা ধরেই প্রতিদিন যাতায়াত করে।

কিছুদূর যাওয়ার পর হাইওয়ে ছেড়ে ওঁরা জঙ্গলের পাশে পেভার্স ব্লক বসানো রাস্তা দিয়ে চলছে। পর্যটনকে উন্নত করার জন্যই এই উদ্যোগ। এ পথে সাধারণত যাত্রীবাহী যান চলে না। তবে ট্যুরিস্টদের গাড়ি মাঝে মাঝে চোখে পড়ে। বিস্তীর্ণ মাঠ। মাঠের শেষে শাল, সেগুন আর জারুলের বন। বনের ভেতর দিয়ে বয়ে চলেছে বানিয়া নদী। ধানের চারা লাগানো শেষ হলে মনে হয় বিশাল এক সবুজ জাজিম পাতা। মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাঁড়িয়ে পড়ে ঋতম । আবার হেমন্তে ফসলের সময় আদিগন্ত সোনালি রং চোখে মায়ার কাজল পরিয়ে দেয়। 

এখন মাঠে মাঠে জল। বিছন লাগানোর প্রস্তুতি চলছে। উত্তরের জঙ্গলের মাথার ওপর মোষের পিঠের মতো মেঘ উঠে আসছে। তাহলে কি বৃষ্টি নামবে? রেইনকোট আনতে ভুলে গেছে। মেয়েটির কাছে কোনও ছাতা আছে কি? ভাবল ঋতম। দীর্ঘ পথ। কাছাকাছি আশ্রয়ের সম্ভাবনা নেই। সে বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দিল। ভয় পাচ্ছে তন্ময়া। বলল, "দাদা---আস্তে চালান। বাইকে অত অভ্যস্ত নই। বুক ধড়ফড় করে।" 
স্পিড কমিয়ে দিল ঋতম। বৃষ্টি ধরে ফেলল ওঁদের। ভেবেছিল ঝিরঝিরে হবে। না, বড় বড় ফোঁটায় ভিজিয়ে দিচ্ছে। আরও এগোলে আরও ভিজে যাবে। "কী করবে?" বলল ঋতম।
---"গাছের নীচে দাঁড়াই।"
---"সেই ভালো।"

একটি বড় ছাতাওয়ালা গাছের নীচে দাঁড়াল ওঁরা। ইতিমধ্যেই দুজনে ভিজে একশা। তন্ময়া শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ -মুখ মুছতে লাগল। ফাঁকা সিঁথিপথ। দুই ভ্রুর মাঝখানে ছোট্ট এক কালো টিপ। শরীরের মানচিত্র ফুটে উঠছে। খুলে যাচ্ছে আড়াল। ঋতম দেখল মুক্তোর দানার মতো জল পড়ছে তন্ময়ার লক থেকে। শ্যাম্পুর ভুরভুর গন্ধ। তাঁর স্ত্রীর চুলেও এমন গন্ধ মাতাল করে তাঁকে। প্রকৃতির অনবদ্য সৌন্দর্যের পাশে নারী প্রকৃতি। চোখ, মন ভরে উঠছে তাঁর। অন্য সময় হলে সে হয়তো একটু সুর ভাজত।

এবার খুব অন্ধকার হয়ে আসছে আকাশ। বাজও পড়ছে। গাছের নীচে দাঁড়িয়ে ওঁরা। ব্যাপারটি ঠিক নয়। ইদানীং বাজ পড়ায় মৃত্যু হচ্ছে খুব। ভিজে তো গেছেই, না হয় আরও ভিজবে। বাড়ির দিকে রওনা হওয়াই ভালো--- এমনটাই ভাবছে ঋতম। ঠিক তখনই তন্ময়া বলে ওঠে, "দাদা---ওই দেখুন দুটো বাইসন।"
---"চুপ! একদম শব্দ করবে না। ওরা সরে যাবে।"
---"চলুন, আমার ভীষণ ভয় করছে। এখানে আর থাকা যাবে না।"
---"আমিও তাই ভাবছি। তবে এ রকম অনেক দেখেছি আমি।"

বাইসন দুটো জঙ্গলে ঢুকে গেলে ঋতম বাইক স্টার্ট দেয়। প্রচণ্ড নার্ভাস দেখাচ্ছে তন্ময়াকে। বলল,"আমি আর একদিকে ফিরে বসব না। আপনাকে দু-হাতে ধরে বসব।"
---"তাড়াতাড়ি বসো, তোমার যেভাবে খুশি।"
তন্ময়া হাঁটুর ওপর শাড়ি উঠিয়ে বেশ কসরত করে  সিটে বসল। তাঁর দু-পা এখন দু'দিকে ছড়িয়ে।

শ্রাবণ ধারা চলছেই। মাঝে মাঝে বিদ্যুতের চোখ ঝলসে উঠছে। ঋতমের হৃদয়ও কি শ্রাবণের অবিরাম বর্ষণে ভিজে যাচ্ছে না!

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri