শাশ্বত গন্ধের কাছে/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস
শাশ্বত গন্ধের কাছে
মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস
===================
নারকেল
ফুলে উঠোন ভ'রে গেলেই কেমন উদাস হয়ে শরৎ রোদ্দুরের জন্য হা পিত্যেস মনের
ভিতর। গুটি গুটি ভাদ্র এসে বাড়ীর বড় দু-তিন উঠোন রোদ ডালায় করে ছড়িয়ে দিয়ে
যেত।বন্ধ ট্রাঙ্ক, তুলে রাখা সুটকেশ আর একটাই কাঠের আলমারি বোঝাই জিনিস
উঠোনে ঝলকাত। নষ্টালজিয়ার সে গন্ধ আমাকে সময় চেনাতো।পুরোনো কালো অ্যালবাম
জুড়ে না দেখা সময়ের গল্প। সে সবের ধূলো ঝেড়ে সন্ধেয় তোলা হবে।দরমার বেড়া
থেকে মাকড়সার জাল সরানো চলত। আর যেটা সবচেয়ে আকর্ষনীয় তা মার পুরোনো গন্ধ
অলা বেনারসিটা, মুর্শিদাবাদ সিল্ক অথবা যত্নে তুলে রাখা একখানাই পিওরসিল্ক,
উঠোন জুড়ে পুজোর গন্ধ।আর প্রচুর পুরোনো বইপত্র দিস্তা কাগজ,লম্বা লম্বা
খাতায় বাবার প্রচুর লেখা আর চিঠিপত্র।ইন্দ্রজাল কমিক্সের বাঁধানো
ইস্তেহারের পাশে 'সন্দেশ' গুছিয়ে রাখা, পুরোনো আনন্দমেলা আনন্দবাজার দেশ
পত্রিকার সম্ভার। একটিও ফেলার নয়। ভাদ্রের রোদে চাঙা হয়ে আবার চলে যেত
যথাস্থানে। আর পুরোনো হলদেরঙা ডোয়ারকিনের হারমোনিয়ামটা। কিছুদিন পর থেকেই
যাতে স্বর উঠব উঠব করছে, সেটাও রোদ পেয়ে ঝলমলে। শরৎ মানে চোখ বুঁজলেই আমার
উঠোন জুড়ে একঝাঁক নারকেল। পাড়ানো হয়েছে। পায়ে দড়ি বেঁধে দুজন মানুষ দুটো
পাশাপাশি নারকেলগাছে উঠে যেত সরসরিয়ে কাঠবেড়ালীর মত। আর সেসময় কেউ কাছাকাছি
যেতনা। কিছুক্ষণ ধুপধাপ আর পুরোনো পাতা আবর্জনা সরিয়ে উঠোন ভরিয়ে নেমে আসত
ওরা। নীচে উঠোনের আবর্জনা সরিয়ে দিয়ে শুকনো কিছু নারকেল ডাল আর চার পাঁচটা
নারকেল ভেট নিয়ে সামান্য টাকা নিয়ে ফিরে যেত। এবার বাড়ীর সবচেয়ে বড় আর
সবচেয়ে ছোট আমি দৌড়ে দৌড়ে ছ'টা ভাগ করতাম। কি আনন্দেই যে সে ভাগে ভাগে
রাখা, সবার ঘরে ঘরে পৌঁছনো,আর পুজো আসতেই নাড়ু, তক্তি চন্দ্রকাঠের
অমৃতস্বাদে ভরে থেকেছি একেবারে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত।...এখনও সে ছবির ভিড়ে
হারিয়ে যাই।...ইট কাঠ কংক্রিটে উঠোন হারালেও অন্য নদীর কাছে একরাশ
শিউলিপাতার ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকি।কার জন্য অপেক্ষা করি কে জানে!
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴