সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
27-December,2022 - Tuesday ✍️ By- সুদীপা দেব 198

রসে বশে গৃহবাসী

রসে বশে গৃহবাসী
সুদীপা দেব
^^^^^^^^^^^^^^^^^

গৃহবধূ অঞ্জলিদেবী জাঁদরেল না হলেও বেশ গাটস নিয়ে চলেন। সংসারের দশদিকে তার শ্যেনদৃষ্টি। তার এক ছেলে এক মেয়ে। তারা মায়ের নজর এড়িয়ে এদিক-ওদিক করার চেষ্টা করলেও নিখিলেশ বাবু সে সাহস অঞ্জলির নামে জলাঞ্জলি দিয়েছেন বহুবছর আগে। অঞ্জলিদেবী প্রথম রাতেই বোধহয় সাপের বিষ দাঁত ভেঙে দিয়েছেন। তারপর থেকে নিখিলেশ বাবুর যে কি হল কেমন ভেজা বেড়ালটি হয়ে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন। তিনি একজন সরকারি কর্মচারী। অফিসের ফাইলপত্রের নানান খুঁটিনাটি কাজ খুব দক্ষতার সাথে উতরে দিলেও বাড়ির কাজ খুব একটা করেন না। না মানে করতে চান না এমনটা নয়। মাঝে মাঝে তারও ইচ্ছে হয় অঞ্জলিদেবীর হাতে হাতে সাহায্য করতে। কিন্তু টিপটপ স্ত্রীর কাজে হাত লাগাতেই আত্মবিশ্বাসের পারা শাঁ করে তলানিতে এসে ঠেকে, আর অমনি সব গুবলেট করে বসেন। তারপর আর কি! কটাস কটাস কয়েকখানা বিদ্রূপ বাণ এসে বুকে বিঁধে যায়। বেড়াল সেজে থাকলেও উনি তো আর তা নন। এই বাণের সাইডএফেক্ট এ মাথা গরম হয়ে ওঠে। কিন্তু তা তো প্রকাশ করার উপায় নেই। তখন চুপচাপ গিয়ে টিভিতে হয় খেলা নয় নিউজ দেখে ভেতরের উত্তেজনা প্রশমন করে ফেলেন।
আর গিন্নীই বা চটবেন না কেন বলুন তো! ওনার কাণ্ডকারখানাগুলো তো একেবারে ফেলে দেবার মতো নয়। একদিন অঞ্জলিদেবী বাথরুমে ঢুকে গা মাথা ভিজিয়ে শ্যাম্পু মাখার পর মনে হল আর একটু শ্যাম্পু দরকার। ভদ্রলোক টবের মাটি খোঁচাচ্ছিলেন। বাথরুম থেকে হাঁক দিয়ে ভালো করে বুঝিয়ে বলে দিলেন অমুক জায়গায় শ্যাম্পুর পাতাগুলো আছে সেখান থেকে দুটো দিতে। উনি কি বুঝেছিলেন কে জানে। মহিলাদের ম্যাগাজিনের সাথে ফ্রিতে পাওয়া দুটো মাথায় মাখা তেলের স্যাসের কোণা কেটে দরজা সামান্য ফাঁক করে স্ত্রীর হাতে দিলেন। বেচারা ঐ অবস্থায় অনেকটা ভরসা করেই মাথায় মেখে নিলেন। ব্যাস। এর পরের অবস্থা কি হতে পারে আন্দাজ করতে পারছেন নিশ্চয়ই।
আর একবার নিখিলেশবাবু বিবি সমেত পাড়ার পিকনিক করতে গেছেন। মেয়ের মাত্র দু বছর বয়স। মানে ওনারা দুজনই বেশ ইয়ং। লাল সোয়েটারে অঞ্জলিদেবীকে বেশ সুন্দরী দেখাচ্ছিল। তাতে কি। স্বামীর রোমান্টিক দৃষ্টিকে ভ্রূক্ষেপ না করে অঞ্জলিদেবী গাড়িতে পুরো রাস্তা অন্য মহিলাদের সাথে গল্প করতে করতে চলে গেলেন। স্পটে গিয়েও স্বামীকে একটু ছাড়া ছাড়া করেই রাখলেন। ফেরার সময় সন্ধ্যা বেশ গাঢ় হয়ে এসেছে। আবছা আলোয় ওই লাল সোয়েটারের পেছন থেকে কানের কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বলেন "এই, এবার আমার পাশে বসবে?" গার্গী মুখটা ঘোরাতেই লজ্জায় অস্বস্তিতে নিখিলেশবাবু পালাবার পথ পায় না। গার্গী অবশ্য হেসে বলেছিল "ঠিক আছে দাদা, বৌদিকে পাঠিয়ে দেব।" তারই বা কী দোষ বলুন। লাল সোয়েটার আর লম্বা চুলের বিনুনির জন্যে বেচারা নিখিলেশ বাবুর পজিশন স্ত্রীর সামনে আবার নড়বড় করে উঠল। কি আর করা যায়, নন্দলালের মন্দ কপাল একেই বলে।
এইরকম ভুলে-ভরা বিবাহিত জীবনের সতেরটি বছর আমিষ নিরামিষ এ কাটিয়ে দিয়েছেন নিখিলেশ বাবু। এবার ওনার ওপর দায়িত্ব পড়েছে অঞ্জলিদেবীর দূর সম্পর্কের মাসতুতো বোন দিল্লি থেকে আসবে, এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করতে হবে। শ্যালিকা হলেও কোনদিন তাকে চোখে দেখেননি। বয়সে অঞ্জলিদেবীর থেকে অনেকটাই ছোট। ইউনিভার্সিটির কাজে আসবে। অঞ্জলিদেবীর ইচ্ছে ছিল নিখিলেশবাবুর সাথে যায়। কিন্তু প্রথমবার দিল্লি থেকে বোন আসবে, বাড়িতে কত কাজ। তাই এ ব্যাপারে বিরত রইলেন। যাইহোক ছেলেমেয়েরা মাসির নামে একটা প্ল্যাকার্ড বানিয়ে বাবার হাতে দিয়েছে। মোবাইলে শ্যালিকার ছবিতে চোখ বুলিয়ে নিলেন। মেয়েরা প্যান্ট শার্ট পড়লে সব মেয়েকেই একই রকম দেখতে লাগে ওনার। তবু গিন্নীর আদেশ শিরোধার্য করে বেশ পরিপাটি চেহারায় রওনা দিলেন। যথা সময়ে পৌঁছে গেলেন। ইংরেজিতে সুজাতা রায় লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছেন যেন কোনভাবে মিস না হয়ে যায়। দিল্লীর উড়ান ল্যান্ড করতে এনাউন্স হল। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাত নেড়ে সুন্দরী স্মার্ট একজন প্যান্ট শার্ট পরিহিতা সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন আমি সুজাতা রায়।
নিখিলেশবাবু বললেন "ও আচ্ছা। আসতে কোন অসুবিধে হয়নি তো?" স্মিত হেসে তিনি উত্তর দিলেন "না না এটুকু তো রাস্তা"।
খুব বেশি কথা না বাড়িয়ে দুজন ট্যাক্সি চেপে বসল। মিনিট দুয়েক দুজনই চুপচাপ। এবার নিখিলেশ বাবু বললেন "মাসিমা কেমন আছেন?" সুজাতা অপ্রস্তুত হয়ে বলে "মাসিমা মানে? আপনি কার কথা বলছেন"
"কেন তোমার মা!"
বিরক্তিতে সুজাতার কপালে ভাঁজ পড়েছে। ভাবছে লোকটা ট্যাক্সিতে বসেই আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে! আশ্চর্য, লোকটা কি আমার মাকে চেনে? চিনলেও আমি তো জানিনা। তাই অত হাঁড়ির খবর দেবার দরকার নেই। বাকি রাস্তাটুকু আরো যে কি বোর করবে কে জানে। কোন উত্তর না দিয়ে বলেন "গেস্ট হাউসটা কোথায় বলুন তো? আমি একাই চলে যেতে পারব। আপনি নেমে যেতে পারেন।" বলে ট্যাক্সি দাঁড় করায় । এহেন কথায় নিখিলেশবাবু ভাবছেন এ যে দেখছি বাঁশের চেয়ে কঞ্চি....কথার ঝাঁঝও একই। এরা মাতৃকূলের একই ডাইসের প্রোডাক্ট এটা মনে করেই নিখিলেশবাবু খানিকটা নিশ্চিন্ত হলেন। কিছুটা রসিকতার ছলেই বললেন
"অঞ্জলীর বোন বলে আমি তোমার কথায় কিছু মনে করলাম না। শ্যালিকা বলে কথা।"
"স্ট্রেঞ্জ! কাকে কি বলছেন? আমি মিস্টার সান্যালের সঙ্গে দেখা হলে আপনার নামে কমপ্লেইন করব।"
"কি! কে সান্যাল? দাঁড়ান দাঁড়ান। আপানি অঞ্জলির বোন সুজাতা রায় তো?"
"হ্যাঁ আমি সুজাতা রায় তো কি হয়েছে? আমি কারো বোন ফোন নই।"
রাগে লাল হয়ে ওঠে মহিলার মুখ। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেন না নিখিলেশবাবু। এরইমধ্যে অঞ্জলিদেবীর ফোন "তুমি এখনো এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে পারলে না! বোনটা আমার এতক্ষণ দাঁড়িয়ে তোমায় খুঁজে না পেয়ে একাই রওনা হয়েছে। তোমাকে ভরসা করাটাই আমার ভুল হয়েছে।" পাশের জনের দিকে তাকিয়ে নিখিলেশ বাবু যেন ভূত দেখলেন।
বাড়ির অঞ্জলি ভোগ এখনো তো বাকি।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri