সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

মুক্ত হাওয়া

মুক্ত হাওয়া
মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস
^^^^^^^^^^^^^^^^^

ছেলেটা ফুটফুটে। ছেলেটার দিদিও। ওদের দুজনকে নিয়ে মা বাবার বিশেষ চিন্তা কখনোই থাকেনা। তবে পরিবারে গুরুজন মানে দাদু, ঠাকুমা এঁদের মত একজন দুজন আত্মীয়ের অভাববোধ করে ঐ ছেলে মেয়ের মা। ওর নাম বিনি। উত্তরের ডুয়ার্সের এ শহরে চাকরীসূত্রেই আসা। আর চাকরীর পাঁচ ছ মাস যেতে না যেতেই এখানেই বিয়ে। তারপর ভাড়াবাড়ী। দু ভাই এর সংসারে থাকতে থাকতেই গভর্মেন্ট কোয়ার্টার পেয়ে উঠে আসা। আর সেখানেইতো বিনির ডল পুতুলের মত এক মেয়ে হল, নাম রাখল তুলতুল। বিনির নিজেরই পঁচিশ, এখনো শরীর থেকে ইউনিভার্সিটি, কলেজ গন্ধ যায়নি তার আবার মা হওয়া। কিন্তু ভারী আনন্দ। খোলা হাওয়া আর উদার আকাশের দিকে তাকালে যেমন মন রোদ্দুর হয়ে যায় ঠিক তেমন। মাঝে মাঝে মা বাবার জন্য দু:খ দু:খ মনটাও ঐ জ্যান্ত পুতুল পেয়ে আনন্দে ভরে গেছে। স্কুলে অজস্র ছাত্রীরা ওর বন্ধু, আর বাড়ী ফিরে ঐ ঝাঁপিয়ে কোলে এসে ওঠা প্রিয় পুতুল তুলতুল ওর সোনার মেয়ে। আলোর মেয়ে। মনে মনে নিজের গড়ে ওঠার সঙ্গে মিলিয়ে মেয়েকে নিয়ে ভাবে।কত ছোটতেই সুর আর কবিতার ছন্দ ওর শরীর জুড়ে। অনায়াসে সুর আসে পাখির মত। স্কুল স্কুল...বয়স তিন হল কি হলনা মায়ের স্কুলের পাশে শিশুনিকেতনে ভর্তি হল তুলতুল। ওর এক পোষাকি নাম হল স্কুলের খাতায় 'প্রজ্ঞাপারমিতা'। আহা! অতবড় নাম ধরে ডাকতে সকলের বয়েই গেছে। কেউ বলে প্রজ্ঞা,কেউ তুলি। ও মার সঙ্গে রিক্সায় স্কুলে যায়। মা ওকে নামিয়ে দিয়ে নিজের স্কুলে ঢোকে।...ইতিমধ্যে বেশ পুরস্কার টুরস্কার পেয়ে গেছে তুলি।নাচ, গান, কবিতায়। ক্লাসেও 'প্রমিসিং'বলেছেন ক্লাস মিস। বিনির যেন দুখানা ডানা নয়, চারটে ডানা।নিজের গানের ঘরে অদ্ভুত পুতুল, নড়াচড়া করা পুতুল বড় হয়। ..এবার তুলতুলের এক ছোট্ট ভাই এল, বুমবুম। বিনির খাটুনী বাড়লেও আনন্দ আর আনন্দ। ঘর ভরে থাকে ওর। তবে তুলি যেন একটানে বড় হয়ে যায়। তাকে শুনতে হয়,বড় হয়েছ, তোমার কি এটা করা সাজে! ভাই শিখে নেবে। একটু আধটু শাসন তর্জন ও করে ফেলে বিনি। পরে কষ্ট পায় রাতের নির্জনে। তুলি ঘুমিয়ে পড়লে চুলে বিলি কাটে। বুমবুম বড় মার কাছ ঘেঁষা। আর দুজনেই বড় যত্নের। যত কাজই থাক, দুজনকে দশটার মধ্যে স্নান করিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করে বাড়ী থেকে বেরোয় বিনি। দুপুরের মাসী ঘরে এলে তবেই বিনি স্কুলে বেরোয়। তুলিকেও তৈরি করে, সঙ্গে নিয়ে যায়। এভাবেই বেশ গানে গল্পে খেলায় কাজে আর জ্যান্ত পুতুল নাড়াচাড়ায় বিনির কাটছিল বেশ। হঠাৎ নতুন বাড়ী একটা তৈরি করতে হল। কোয়ার্টারের স্যাঁতসেঁতে ঘরে বিনির শ্বাসকষ্ট হল যে! সঙ্গে বুমবুমের ও। তাই ওদের বাবা তিলক বহু চেষ্টায় জমি দেখে নিল। আর বাড়ীটাও থাকার মত তৈরি হল ধীরে। দুবছরের বুমবুম আর সাড়ে ছ বছরের তুলতুলকে নিয়ে উঠে এল বিনি, তিলকের হাত ধরে অন্যপাড়ায়। বেশ বনেদি পাড়াটি। সামনেই কালীবাড়ী। আর শহরের মধ্যিখানে। তবে তুলতুলের পুরোনো বন্ধুদের ছেড়ে আসতে ভারী কষ্ট হল। এখানে অবশ্য খুব কম সময়েই বন্ধু হল অনেক। মিমি, বুড়ি, সুমি আরো কত। ওদিকে বিনি পড়ল বিপাকে। সেই আগের মাসীকে তো এ নতুন বাড়িতে কাজে আনা গেলনা। হাউসিংএর কাছে তিস্তার ঐ পাড়ে তার বাড়ী। খেত, ধান এসব নিয়ে ঐ মাসীর খুব দূরে কাজের বাড়ীতে আসা অসুবিধে। অবশ্য কারো জন্য তো সময় আটকে থাকেনা। পেয়ে গেল আর এক মেয়ে নিনিকে। ও ছেলের দেখাশোনা করত ভালো।
ইতিমধ্যে একদিন হঠাৎ বিনি বুমবুমকে স্নান করানোর আগে তেল দিচ্ছে, দেখল গলা তুলে উঁচুতে মুখ করলেই ওর কন্ঠার কাছে কেমন নরম এক মাংস পিন্ড উঁচু হয়ে আছে। পরিপূর্ন বয়স্ক মানুষের যেমন কন্ঠা বেরিয়ে থাকে তেমন। কিন্তু এটা নরম। এটা কি! বিনির খুঁত খুঁত করতে থাকে মন। দিন যায়, স্কুল করে বাড়ী আসে, কলিগদের পরামর্শ নেয়। যে শিশু চিকিৎসক ওদের দেখেন শহরে তাঁর কাছে দেখালে উনি থাইরয়েড স্পেশালিষ্ট অভিষেক বিশ্বাসের কাছে দেখাতে বলেন। শিলিগুড়ি যায় ওরা। শিশু চিকিৎসকের কাছে প্রথম। ড:মন্ত্রী।নাম আছে তাঁর। লাইন দিতে হয়। যাইহোক, উনিও অভিষেক বিশ্বাসের কাছে পাঠান। সেদিনই বিনি আর তিলক বুমবুমকে নিয়ে যায় ড: বিশ্বাসের কাছে। অনেক দেখে, গলায় ব্যথা দিয়ে হাঁ করিয়ে দেখে টেখে একবারে প্রেসক্রিপশন করেন। লেখেন'থাইরো গ্লসিস সিসড্'। ইমিডিয়েট অপারেশন করতে হবে। ওদের হতভম্ব ভাব দেখে আর অজস্র জিজ্ঞাসায় বলেন, থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের ওপর এক সিসড্ আছে। এখুনি অপারেট না করলে সাইনাস ইত্যাদি নানা অসুবিধের কথা বলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভর্তি করাতে বলে দিলেন। উনিই দেখবেন।...মাথায় আকাশ ভাঙে বিনির। মাত্র আড়াই বছরের ছেলে ওর গলা অপারেশন! ভোকাল কর্ড হ্যাম্পারড্ হতে পারে! খুব মনখারাপ নিয়ে মাথায় চাপ নিয়ে বাড়ি ফেরার বাস ধরে। শোনা গেল সেদিনই এন জেপি স্টেশনে ভয়ানক জঙ্গী বোমায় নিহত, আহতের সংখ্যা পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে। কেঁপে ওঠে বিনি তিলক। ভাগ্যিস ট্রেনে চাপেনি!...বিমর্ষ মনে কি সিদ্ধান্ত নেবে শুভানুধ্যায়ী, অভিভাবকদের পরামর্শে চেন্নাইয়ের টিকিট কাটে ওরা। স্থির হয় যা হবে সেকেন্ড ওপিনিয়নের পর। তিলক, তুলতুল, বুমবুম আর ওদের মামা আর বিনি সাতদিনের মধ্যে চেন্নাই পৌঁছয়।হোটেল বুক করা ছিল অসুবিধে হয়না। আর এই প্রথম ওদের নিয়ে এতদূর। আনন্দেই আছে দুটিতে। পরদিন সকালেই অ্যাপেলো হাসপাতাল। সত্যি, বিনি এর আগে এত সুন্দর পরিচ্ছন্ন মন্দিরের মত হাসপাতাল দেখেনি। ঢুকতেই গণেশ মূর্তি। নিত্য পূজা হয় সেখানে। যেন বেড়াতে এসেছে কোন মন্দিরে। এদের পরিসেবা অন্যধরণের। সবরকম টেষ্ট দিলেন ডাক্তার বুমবুমের।সেটা নিয়েও একটু অসুবিধে হল। বুমবুম পরীক্ষাগারের আলো যন্ত্রে কিছুতেই সে ঘরে ঢুকবেইনা। তারপর বহু বোঝানোর পর পরীক্ষাপর্ব শেষ হল। পরদিন সব রিপোর্ট একসঙ্গে পাওয়া গেল। আর থাইরয়েড স্পেশালিষ্ট"শিবাগ্ননম্ সুন্দরম্" বুমবুমকে দেখলেন। ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বুঝিয়ে দিলেন বুমবুমের কিছুই হয়নি। সিসড্ তো নয়ই। কারণ থাইরয়েড গ্ল্যান্ডই'ননভিসুয়াল'। সিক্রিয়েশন হয়ে ওই বিশেষ জায়গা ফুলে উঠেছে। এর নাম'একটপিক থাইরয়েড'। ওষুধেই কমে যাবে। দুবছর পর পর চেকাপ করিয়ে নিলেই হবে। ওষুধ লিখলেন সামান্য একটা। আর অনেক আদর করলেন। ভয় ভাঙালেন। ডায়েট চার্ট ও দিলেন।
কিই যে হালকা পাখির মত লেগেছিল সেদিন বিনির। তুলতুলকেও টেষ্ট করানো হল। কিছুই পাওয়া গেলনা। সেদিন সকলে চাপমুক্ত হয়ে চেন্নাইয়ের মেরিন সী বিচে অদ্ভুত আনন্দে কাটল।পরদিন সাইড সিন। তার পরদিন বিনিদের পাঁচজনের টিম গাঙচিলের মতো উড়েই চলল উটির দিকে। আনন্দে খোলা হাওয়ায় হালক মনেও বিনি কেঁপে ওঠে, ভাগ্যিস শিলিগুড়ির ঐ ওভার কনফিডেন্ট ডাক্তারী সিদ্ধান্ত কাটাতে পেরেছিল, তাহলে যে কি হত....ফুৎকারে ঐ কালো কুৎসিত ভাবনাকে দূরে আগুনে ছুঁড়ে দিয়ে উটির রাস্তায় গাড়ীর ভিতরেই তুলতুল আর বুমবুমকে জড়িয়ে ধরে আদর করে বিনি। জানলার কাচের ফাঁক দিয়ে ঠান্ডা হাওয়ার সঙ্গে রোদ্দুর তখন খুশি মাখিয়ে দিচ্ছে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri