সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
26-November,2022 - Saturday ✍️ By- শুক্লা রায় 198

মাদার ফুল

মাদার ফুল
শুক্লা রায়
~~~~~~~~~~

লোকটি হঠাৎ গান ধরল। প্রাথমিক অজ্ঞতার কারণে আমি অবশ্য সেটা সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারিনি। চমকে উঠে প্রথমে ফোনটা দেখলাম। ভাইব্রেট করছে কেন? রিং টোন বাজার কথা! একটু পরেই বুঝলাম, না, ফোনের কোনো দোষ নেই। লোকটি হঠাৎ মনের আনন্দে গান ধরেছে। গুনগুন করে। বেঞ্চে আমাকে এক থালা ভাত সাজিয়ে দিয়ে উনি তখন আর এক কাস্টমারের জন্য 'পেলেন টি' করছেন। ধাতস্থ হয়ে থালাটা টেনে খাওয়ায় মন দিলাম। খাওয়া কি আর অত সহজ! আবার পিলে চমকাল! না না, পিলের কোনো দোষ নেই। হিমোগ্লোবিন কম তো, একটুতেই চমকায়। চমকাল তো সেই গানের ঝটকায়ই। গুনগুন আওয়াজটা মানে ওই ফোন ভাইব্রেশনটা হঠাৎ রিং টোনের আকার নিল। হঠাৎই। সে সঙ্গীতের শিল্প নৈপুণ্যে এবং মাধুর্যে আমার প্রায় যাই যাই দশা। মা কালির কিরে খেয়ে বলতে পারি, স্বয়ং হাঁড়িচাচার সাথে কম্পিটিশন হলেও ইনিই জিতবেন। চমকানোর তাৎক্ষণিক অভিঘাতে কাতলা মাছের কাঁটা কৎ করে গলায় গেঁথে গেল! হে ঈশ্বর! কি কান্ড! একা মহিলা খেতে বসেছি। এমনিতেই সবার হা চোখ আমার দিকে। এবার এত আগ্রহী ও অত্যুগ্রাহী চোখ এড়িয়ে গলার কাঁটা নামানোও তো বিশাল কসরতের ব্যাপার। সাহস না হারিয়ে কাঁটাটাকে ভুলে থাকার চেষ্টা করলাম। সে তো ভোলা যায় না কিছুতেই। গিলতে গেলেই নিজের উপস্থিতি সবিস্তারে মানে সব্যথায় বুঝিয়ে দেয়। কী গেরো!
        এই সময়ই আমার উদ্ধারকত্রী দুই দিকে গার্ডার লাগানো দুটো ঝুঁটিওয়ালা একটা লাল ফ্রক নাচতে নাচতে প্রবেশ করলেন। লোকটার টাক মাথাকে তাতিয়ে দিয়ে কথার উপর কথা ছুটতে লাগল নদীর স্রোতের মতো কলকল করে। ব্যস। গান এমনিই বন্ধ। তবে লোকটি আশ্চর্যরকম নির্বিকার। অভ্যেস আছে বোঝা যায়। কিন্তু চমক শেষ হয়নি। সবার চোখ মেয়েটার দিকে দেখে এই সুযোগেই বাঁ হাতটাকে কাজে লাগিয়ে কাঁটাটা তুলে ফেললাম। আঃ! শান্তি! এবং পরমুহূর্তেই আর একটা চমক। হিমোগ্লোবিন কম। ক্ষণে ক্ষণে চমকাই। প্রাণটা বড্ড কমজোরি। এবার চমকালাম তার  অপূর্ব কন্ঠস্বরে। বেশ আদুরে গলায় মেয়েকে অনুরোধ করছে, 'বেটি, তোর মাসিকে চা খেতে বল।' ও। এই বিষয়। দেখলাম সমস্ত গান ও আগ্রহের মূল উৎস একটু দূরেই ঐশ্বর্য স্টাইলে একটা দোকানে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। মনোযোগ বা মন এদিকে কিনা বোঝার উপায় নেই। সে তার মতো গর্বিত ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে। সরল বাচ্চা ছুটল সেদিকে। কিছুটা অনিচ্ছায় অবহেলায় তিনি এলেন। আমি খেয়ে উঠে ততক্ষণে ব্যাগ থেকে টাকা বের করেছি।  
        ঠোঁটে কি হালকা লিপস্টিক? কালো মুখটায় একটা মায়া জড়ানো। চোখদুটো বেশ ডাগর। দূর থেকে দেখে মনে মনে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলেও কাছ থেকে দেখে ভালো লাগল। একটু মোটা। বয়সও হয়েছে বোঝা যায়। কত কে জানে! আমি এসবে খামোখা মাথা ঘামাই কেন?  মাছ ভাত একশ টাকা। টাকা দিতে গিয়ে দেখি লোকটার হাতটাই শুধু বাড়ানো, মনটা নয়। অ্যানিমিয়ার পেশেন্ট। হৃদয় শক্ত নয়। অল্পেই আতঙ্কে ভুগি। সেজন্য টাকাটা না দিয়ে অপেক্ষা করলাম। একটু লাজুক লাজুক নরম হেসে লোকটা মেয়েটার দিকে চা এগিয়ে দিল। নে। চা টা খা। তার অবশ্য চা নেবার কোনো তাড়া নেই। নির্বিকার। লাল ফ্রক অধৈর্য। ঝুঁটি দুলিয়ে বাবার সমর্থনে এগিয়ে এল। 'মুন্নি মাসি, তুমি কি গো, চা-টা নাও না চট করে, এত কি ঘ্যাম দেখাও'। মানে তাহলে সে সুন্দরী মুন্নি? দু চোখে, কিছুটা শরীরেও হিল্লোল তুলে তিনি চা-টা নিলেন। কায়দা করে কাপটা ধরলেন। খেলেন সামান্যই। তাতেই 'মা কমলা সুলভ ভাতের হোটেল'-এর মালিক এক্কেবারে গলে জল, মানে কৃতার্থ আর কি! অবশ্য মুন্নির তাতে কিছু যায় আসে না বোঝা গেল। তির্যক চোখে তাকিয়ে মোক্ষম প্রশ্নটা ছুঁড়ল, 'সোনাদি বেঁচে থাকতে তো কোনোদিন পাত্তা দাওনি।' দোকানের টেবিলটা ধরে লাফাতে লাফাতে বাপের হয়ে বেটি উত্তর দিল, 'কেন পাত্তা দেবে? মা রাগ করত না? এখন মা নাই, তাই তো বাবা তোমাকে এত্ত খাতির করে'। দুজনের চোখেই কী বিদ্যুৎ চমকাল? আমি আদার ব্যাপারী, ওসব খবরে আমার কাজ নেই। উদাস মুখে দূরে তাকালাম।
        'কিরে, মাদার ফুল দিয়ে লম্বা লম্বা নখ বানাবি বলছিলি না, চল্।' ঝুঁটির লাফানো বন্ধ হয়ে গেল। ঝপাং করে মাসিকে জড়িয়ে ধরে বায়না তুলল, 'চল, চল, চল। এখনি চল।' মুন্নিদেবী আর একটা তীর্যক দৃষ্টি হেনে ললিত ভঙ্গীতে এগোলেন। দোকানে বসে থাকা জোড়া জোড়া চোখ এখন সেই দিকে। আমি দেখছি দোকানীকে। মাদার, শিমূল সব মিলে যেন একসঙ্গে ফুটে আছে চোখে। মোটা, কালো, বেঁটে-খাটো চেহারার লোকটিকেও তখন অন্যরকম সুন্দর লাগছিল। একমাত্র সে কারণেই অবশ্য তার সবগুলো গানকে ক্ষমা করে দেওয়াই যায়। টাকাটা এবার শান্তিমতো হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমি ফিরলাম। সুনশান পথটায় একবুক ধুলো আর হু হু বাতাস ঘুরপাক খেতে খেতে আমাকে ঘিরে এগোচ্ছিল। মাস্কে নাকমুখ ঢেকে আমিও এই ধুলোপথ একাকী পেরোনোর শক্তি সঞ্চয় করতে করতে এগোচ্ছিলাম।  আসলে এও তো বসন্তই! এই রুক্ষতা, বুকের আঁচল ছুঁয়ে জেগে ওঠা এই ধুলো ঝড় - আমার মতো আম জনতার বসন্ত।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri