সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
26-November,2022 - Saturday ✍️ By- সুদীপা দেব 216

ভিন্ন কোণ

ভিন্ন কোণ
সুদীপা দেব
~~~~~~~

বাপের বাড়ি থেকে ফিরে কমলিনী জানতে পারে তিতিরকে ওরা এখান থেকে নিয়ে যাবে ব্যাঙ্গালোর। ওর পিসি সব ব্যবস্থা করেছে। হঠাৎ এই খবর শুনে কমলিনী যেন অপ্রস্তুত হয়ে যায়। খুব মনখারাপ হয় তার। নিজের ঘরে বসে অনেক কষ্টে চোখের জল বাধে। নিজেই নিজের মনে সান্ত্বনা দেয়; সত্যিই তো তিতিরকে আর সে নিজের কাছে রাখতে পারছে না, যত্নআত্তি তো দূরের কথা। মা হারা একরত্তি মেয়ের দেখভালের একজন লোক দরকার। ঠাকুমার অনেক বয়স হয়েছে। নতুন মা কি এত দায়িত্ব সামলাতে পারবে! ঠেলাঠেলির মধ্যে মেয়েটা বেড়ে ওঠার সঠিক পরিবেশ পাচ্ছে না। তিতিরকে আবেগে ধরে রাখা ঠিক হবে না। পিসি ওকে খুব আদরে যত্নে রাখবে নিশ্চয়ই। বড় শহরে থাকবে, বড় স্কুলে পড়বে। সেখানে কত নতুন বন্ধু হবে তিতিরের। সকলের সাথে মানিয়ে তিতির খুব ভালো থাকবে। কমলিনী জানে ওর রক্তের সম্পর্কের পিসি অত্যন্ত বিচক্ষণ। তিনি অবশ্যই খুব ভালো রাখবেন। তবু মেয়েটার জন্য ভেবে কমলিনীর বুকের ভিতর একটা কষ্ট দলা পাকিয়ে ওঠে। তিতির ওর নাড়িছেঁড়া ধন নয়, তবু কেন যে এরকম লাগছে!

কমলিনীর বড় জা সুমনার সাথে বেশ সখ্যতা। ওরা দুজন শরিকি দুই ভাইযের দুই বউ। বিয়ে হয়ে আসার পর কমলিনী সুমনাকে এবাড়িতেই পেয়েছে। কিছুদিন পর অবশ্য সুমনার স্বামী পাশের জমিতে বাড়ি করে আলাদা হয়ে যায়। সদ্যবিবাহিত কমলিনীর এসব নিয়ে মাথা ব্যথা ছিল না। সে আগের মতই তার দিদিভাইকে ভালোবাসত। পাশাপাশি দুই বাড়ির জায়েদের রান্না করা শুঁটকি মাছ, জাম্বুরা মাখা, লাউ-কুলের টক এসব সাধারণ রান্না দেওয়া নেওয়া না হলে হজম হত না। পাড়ার অনুষ্ঠান বাড়িতে কেউ যাক বা না যাক, এই দুই বউয়ের একসাথে যাওয়া চাই। দুটি ভিন্ন পরিবেশ থেকে আসা দুটি মানুষের কি ভাবে যে এত ভাব গড়ে ওঠে! জ্ঞাতি ভাইদের দুই বাড়ি আলাদা হবার পর এই দুই বউয়ের জন্য সাময়িক নড়বড়ে সম্পর্ক আবার মজবুত হতে থাকে।
ঈশ্বরের খাতায় কি নিদারুণ কঠিন হিসাব লেখা থাকে তা অনেক সময়ই আমাদের সাধারণ বুদ্ধিতে মেলে না। দশ বছর স্বামীর ঘর করার পর দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় সুমনা। সংসারে অভিমান করে স্বামী, পুত্র, কন্যা সবাইকে রেখে সম্পূর্ণ অজানা অচেনা দেশে ঠিকানা না রেখে চলে যায় সে। তিতির শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে। অবাস্তব ভাবনাকে আশ্রয় করে কমলিনী ভাবে বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে সুমনা যদি ফিরে আসে!

বিয়ে হয়েছে বেশ কয়েক বছর। এ পর্যন্ত কমলিনী অনেক চেষ্টা করেও মা হতে পারেনি। ঈশ্বর যেন মা এবং সন্তান দুজনের চাহিদা পূরণের জন্য সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেন। তিতিরকে এবাড়িতে নিয়ে আসে কমলিনী। চার বছরের তিতিরকে আরো বেশি মাতৃত্বের বন্ধনে জড়িয়ে নেয় সে। কমলিনীর নিজের দেওর-জা এজন্য কম খোঁটা দেয়নি। তাদের কাছে ব্যাপারটা ছিল কাকের বাসায় কোকিলের ছা প্রতিপালনের মত ব্যঙ্গ রসিকতার বিষয়। আড়ে ঠারে নানা কথা শুনেও তিতিরকে সে ছাড়তে পারেনি বরং আরো বেশি বেশি আঁকড়ে ধরতে চেয়েছে। একইসাথে নিজের চিকিৎসাও চালিয়েছে। তিতিরকে বুকে নিয়ে কি শান্তি পেয়েছে তা শুধু কমলিনীই জানে।
গায়ে আঁচল জড়িয়ে তুলসিতলায় প্রদীপ দিতে দিতে করজোড়ে কমলিনী প্রার্থনা করে
"সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, তুমি ওকে আমার সাথেই বেঁধে রেখ।"
তিনি শুনেছেন কিনা কে জানে!
এবাড়ি এলে তিতিরের নিজের মাসিরা বোনের জন্য চোখের জল ফেলে। ছোট্ট তিতির তার ছোট্ট বুদ্ধিতে অনেক বড় কথার সান্ত্বনা দিয়ে বলে "আমার মা আছে তো! রাঙা মা, একসাথে মিলে হয় রাঙামা।"
কমলিনীকে সে ওই নামে ডাকত।

কমলিনী মা হতে চলেছে। ডাক্তারবাবু কমলিনীকে অত্যন্ত সাবধানে থাকতে বলেন। হাঁটাচলা কাজকর্ম সমস্ত বাদ। যৌথ পরিবার হলেও রাঙামা ছাড়া এবাড়িতে তিতিরের দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই। কমলিনীর শরীরে নানারকম জটিলতাও বাড়তে থাকে। সেও যেন পেরে উঠেছে না। বুকে অব্যক্ত কষ্ট নিয়ে তিতির ফিরে আসে তার নিজের বাড়িতে বাবা, ঠাকুমা আর ন'বছরের দাদার কাছে। সেখানে কিছু মাস পর তিতিরের নতুন মা আসে। কমলিনী যায় বাপের বাড়ি।
 
একদিন তিতির খুব বায়না করেছিল তার ছোট ভাইবোন দুটির মত সেও কমলিনীর সাথে ঘুমোবে। আজ কমলিনীর খুব কষ্ট হচ্ছে, তার এই আবদারটুকু সেদিন নানা কারণে রাখতে পারেনি। এরকম এলোমেলো অনেক কথা আজ তার ভেতর আঁচড় কাটছে। তিতির নিজের কাছে না থাকলেও তবু সামনে থেকে তাকে চোখে দেখতে পেত। ক'দিন পরই তিতির চলে যাবে বহুদূর। ওর প্রতি ওইটুকু অধিকারও আর থাকবে না।
কমলিনী ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে তিতিরকে ভালো রেখো।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri