সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

ভালোবাসার টানে/অর্পিতা মুখার্জী চক্রবর্তী

ভালোবাসার টানে
অর্পিতা মুখার্জী চক্রবর্তী
---------------------------

ট্রেনের গতি বাড়ার সাথে সাথে জানলার বাইরের মুখের ছবিগুলো অস্পষ্ট হতে হতে একসময় মিলিয়ে গেল। তার সাথে মিটে গেল শহুরে জীবনের ক্লান্তিকর যান্ত্রিকতা, স্বপ্নহীন ইঁট কাঠ পাথরের বাস্তবতা, কাঠ কাঠ পোশাকি সৌজন্যের আবরণ.... এমন আরও অনেক কিছু। পরিতৃপ্তির নিঃশ্বাস নিয়ে গুছিয়ে বসলো প্রতীক। সে পেরেছে.. শেষপর্যন্ত তার পদত্যাগ পত্রটা অফিস প্রধানের হাতে তুলে দিয়ে সকলের অনেক আপত্তির বিরুদ্ধে গিয়েও নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল থেকে তথাকথিত অনেক বেশি মাইনের চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজের ছোট শহরতলীতে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে। ফিরে গিয়ে যে নতুন কাজে ও যোগদান করবে, সেটা ওকে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য কম দিলেও, ওর মনের ভাঁড়ারকে আনন্দের রসদের যোগান দেবে অনেক বেশি.. এটা ওর স্থির বিশ্বাস। ওর পরিবার, কিছু নিকটজন, কিছু বন্ধুবান্ধব যাদের উৎসাহে বছর দুয়েক আগে যেখানে চাকরি নিয়ে এসেছিল, প্রতিদিন সেখানে ওর স্বপ্ন, ভালোলাগা ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। ওকে হাতছানি দিয়েছে ছেড়ে আসা সেই সবুজ প্রান্তর। কাজের অসম্ভব চাপ ও সবার প্রতি নিরুচ্চারিত এক অভিমানে এই দু'বছরে ও আর বাড়িমুখো হয়নি।
ট্রেনের দুলুনিতে চোখ বুজে আরও বেশ অনেকগুলো বছর পিছিয়ে গেল প্রতীক....
ডুয়ার্সের সবুজকে গায়ে মেখে ডুয়ার্সের পথে চা বাগানকে পাশে রেখে সাইকেল চালিয়ে এগিয়ে চলেছে এক কিশোর। ডুয়ার্সের অপরূপ শ্যামলীমার মতোই তার দুচোখেও সবুজের স্বপ্ন। কিছুদিন আগে পরিবেশ শিক্ষার পাঠ নিতে এই অঞ্চলে এসে এখানকার সবুজের সাথে, নদী, পাহাড়, ঝর্ণা, পাখপাখালির সাথে ওর প্রথম আলাপ। দেখা ও জানার আগ্রহ ওকে ঐ ক'দিনেই এখানকার সবকিছুর সাথে একাত্ম করে দিয়েছিল। এমনকি রাতে তাঁবুর ভেতরে থেকেও ডুয়ার্সের নিস্তব্ধতার নিজস্ব রূপকে ওর সমস্ত সত্তা দিয়ে ও অনুভব করার চেষ্টা করতো। ঝিঁঝির ডাক, তাঁবুর গায়ে লতা গুল্মের ছায়া, বনজ ঘ্রাণ সবকিছু মিলে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চের ছোঁয়ায় প্রায় বিনিদ্র রাত কেটেছে ওর.., সেই শুরু.. তারপর আর থেমে থাকেনি.. কি এক অপরিসীম টানে বার বার ছুটে এসেছে তার ভালোবাসা, তার প্রিয় ডুয়ার্সের কাছে। স্কুলের উঁচু ক্লাসের দিনগুলোতে যার সূচনা হয়ে ধারাবাহিকতা বজায় থেকেছে গত দু'বছরের আগে পর্যন্ত। প্রথম দিকে সাইকেল, তারপর দুচাকা, সময়বিশেষে চারচাকাকে সঙ্গী করে। অফুরন্ত ভালোবেসে বন্ধু হয়েছে এই সবুজের ছায়া সুনিবিড় পথের, হরেক নদীর, ঝর্ণার, গাছগাছালির, পশুপাখির.. কৈশোর থেকে যৌবনে ও আরও কিছুটা পরিণত হওয়ার সময়ে। এই পথ চলায় কতো সময় সঙ্গী হয়েছে কতো বন্ধু, নিকটজন। কিন্তু, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই সেই মুহূর্ত টুকুকে আস্বাদন করে ফিরে এসেছে। আর ও নিজে? ডুয়ার্স যেন ওর পিছুটান,, এক দুর্নিবার আকর্ষণে বার বার ছুটে গেছে ঐ মোহময়ীর কাছে। মূর্তি নদীর ধারের ওয়াচ টাওয়ারে উঠে পাশের জঙ্গলকে দেখা, জঙ্গলে গন্ডার, বাইসন, হাতি, ময়ূর এদের প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা, শীতের মরসুমে সেজে ওঠা অনিন্দ্য সুন্দর ডুয়ার্সের চাপড়ামারির জলাগুলোতে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনার ছবি, পানকৌড়ির ছোঁ মেরে মাছ মুখে করে উড়ে যাওয়ার ছবি, বনে বনে ঘুরে ঘুরে শাল, শিমুল, পলাশ, বহেরা, পিপল এইসব গাছগাছালিকে চিনে নেওয়া, বনভূমির সরীসৃপদের সঠিক ভাবে চেনা, কখনো বা শুধুই বেড়াবার আনন্দে বক্সাদুয়ারের কাছে পৌঁছে যাওয়া, মূর্তি নদীর সাঁকো পার করে খুনিয়ার জঙ্গলের গভীর নিঃসীম আদিমতাকে রোমাঞ্চকর শিহরণের সাথে উপলব্ধি করা, আবার মূর্তি নদীর ধার ঘেঁষে নির্জন উপত্যকা, চা বাগান ও কমলালেবুর বনের মধ্য দিয়ে বাঁক নেওয়া রাস্তার সঙ্গী যে ও কত বার হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। আর ঐ পথে ওর সঙ্গী হয়েছে টিনের চালা দিয়ে তৈরি ছোটো ছোটো বাড়ি, শাল, সেগুনে ভরা জঙ্গলের অনতিদূরে ধাপচাষের শোভা, আর পথের দু'পাশের দিগন্ত বিস্তৃত চাবাগানের মহিলা শ্রমিকদের দুটি পাতা একটি কুঁড়ি তোলার ব্যস্ততা। জীবনের এতোগুলো বছরে ডুয়ার্সের সাথে পথ চলায় বিভিন্ন উপজাতির মানুষদের সংস্পর্শে এসেছে নিজস্ব আন্তরিকতায়। সময়ের সাথে সাথে এখানকার বনভূমির সুরক্ষায়, নদ-নদীর দূষণ রোধে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। পরিবেশ সচেতনতা মূলক শিবিরের মাধ্যমে ছাত্র ছাত্রী ও সাধারণ মানুষের মনে প্রকৃতি সম্পর্কে ভালোবাসা গড়ে তুলতে চেয়েছে বারংবার। কিন্তু পারিপার্শ্বিক ও পরিবারের চাপে জীবনের উন্নততর সুযোগের হাতছানিকে নিজের প্রবল অনিচ্ছাতেও সাদরে বরণ করে পাড়ি দিতে হয়েছে দেশের আরেক প্রান্তে.... যেখানে বড়ো বেশি ইঁট কাঠ পাথরের ভিড়, বড়ো বেশি বাস্তবতা, স্বপ্নের কোনো স্থান নেই এখানে। প্রাণের দুয়ারে, অনন্ত সবুজের ছাড়পত্রে তাই কিছুটা অভিমান করেই আর ফেরেনি এই দুটো বছরে। অপেক্ষায় থেকেছে শুধু পাকাপাকি ভাবে ফিরে যাওয়ার আবার সেই পরিচিত সবুজের ঠিকানায়।
একটা দরজা খুলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে.... খুশির দুয়ার.. উত্তরের আনন্দের দুয়ার.... তারপর, চারিদিকে সবুজে সবুজ। মাঝে মাঝে কোনো কোনো গাছ ফুলের শোভা নিয়ে বিরাজ করছে। সবুজেরও কতো বাহার, কত রকমের শ্যামলীমা, সতেজতা.. চোখের আরাম, প্রাণের শান্তি। স্বপ্ন মাখা নীল আকাশের নীচে পাহাড়ের গায়ে একরাশ সবুজ স্নিগ্ধতায় নিজেকে হারিয়ে ফেলা। অবিরাম পাখির কূজনে ভরে আছে চরাচর। ঐ তো, ময়না, বুলবুলি, বনমোরগ, তোতা, ঘুঘু, কাঠঠোকরা, ঈগল কতোরকমের পাখি! ময়ূর তার পেখমে একরাশ খুশি ছড়িয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বনপথে। কাছের দুরন্ত নদীটা একরাশ উচ্ছ্বাস নিয়ে কুলকুল করে বয়ে চলেছে। সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে জোট বেঁধেছে হরিণের দল। প্রজাপতিরা তাদের রঙিন চঞ্চল ডানায় অফুরন্ত খুশি মেখে ইতিউতি উড়ে বেড়াচ্ছে। একটু দূরের পাহাড় ওদের ডেকে বলছে, 'তোমাদের খুশিতে আমাকেও সামিল করবে? 'ঝর্ণার জল হাসিতে মুখর হয়ে পাহাড়ের গা ছুঁয়ে বলছে 'এস, বন্ধু হই'। বাতাসে, বাতাসে কানাকানি.. প্রকৃতি রাজ্যের সব সদস্যরা তাদের সেরাটুকু প্রকৃতিকে উপহার দিয়ে তৈরি করেছে তাদের ভালোবাসার জগতকে.. তাদের আদরের 'ডুয়ার্স'কে।
সকালের স্নিগ্ধ আলো ও জানলার বাইরের ছুটে চলা অঢেল সবুজকে দুচোখে মেখে তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে প্রতীক সমস্ত অভিমান ঝেড়ে ফেলে তার প্রথম ভালোবাসা, তার প্রিয় ডুয়ার্সকে অনুচ্চারিত শব্দে বলে উঠলো, 'তুমি আবার আমার হবে তো?' সকালের মিষ্টি হাওয়ায় সোনালী রোদের সাথে সবুজ সবুজ ছায়ারা ট্রেনের জানলা ধরে উঁকি দিয়ে একরাশ খুশি হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো ওর বাড়ানো হাতের পাতায়.... দুপাশের সবুজ বনানী থেকে সবটুকু ভালোবাসা নিয়ে এসে, মিষ্টি আলো সেখানে লিখে গেল, 'আমি রাজি'.....।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri