সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
24-January,2023 - Tuesday ✍️ By- রানা সরকার 495

বৃষ্টিতে দূরের ভাসান

বৃষ্টিতে দূরের ভাসান
রানা সরকার
================

অনেক দিন বাদে এই ঘোর বর্ষায় সুমনা তার পুরোনো পাহাড়তলীর বাড়িতে এসেছে। একটা অপরিচিত গন্ধ বুকে টেনে নিয়ে মাটির সেই সোঁদা গন্ধতে মেলাতে পারছেনা সুমনা। মিলিয়ে নিতে পারছেনা এই শহরের বাড়িঘরের বহু পরিচিত একেকটি অবস্থানকে।  এ শহরের কোথাও কোনো অবগুণ্ঠন নেই। দীর্ঘ রাস্তা, পাহাড় ও সমতলের সংযোগকে গভীরভাবে জড়িয়ে রেখেছে।  শিলিগুড়ি শহরের সঙ্গে দুটি  মহানন্দা সেতু সমতলের প্রবেশ পথে সারাদিন ব্যস্ত থাকে। ব্যতিক্রম শুধু নিচের নদী অতীতের স্বচ্ছতোয়া মহানন্দা। বর্ষায় মহানন্দা জেগে ওঠে। নদীর বুকে এই সেতুযুগল তখন মনে করিয়ে দেয় এই নদীতে ভাসান এক সীমাহীন জলদৌড়ে বিশাল দূরত্বকে অতিক্রম করছে প্রতিদিন।  শহরে বর্ষা এলে এই নদীর উচ্ছ্বলতায় আশপাশের মানুষকে আবেগ চঞ্চল করে রাখে। কিশোরীবেলায় বেড়ে ওঠার সেই দিনগুলিতে নদীর এপারটাতে দাঁড়িয়ে ভেবেছে সুমনা - এ নদী কেমন নদী যার প্রবাহের  উদ্দামতা শুধু বর্ষায়।

এ বারের মৌসুমী বায়ুতাড়িত মেঘ উত্তরের আকাশে এসে জমাট বেঁধেছে। পাহাড়ের অতিরিক্ত বৃষ্টি ও সমতলের লাগাতার বৃষ্টিতে একাকার মহানন্দা বিপদসীমা ছাড়িয়ে দূর গঞ্জের লোকালয়গুলিকে প্লাবিত করে এগিয়ে চলেছে।  

এই ঘোর বর্ষায় সুমনা তার একদা বৃষ্টিভেজা দিনের মুখোমুখি এখন। এ শহরের উত্তাপ মহানগরীর থেকে বেশি নয়। বৃষ্টির একটা নিজস্ব ছন্দ আছে - সুমনা তাকে চিনে এসেছে এতকাল। কলকাতা থেকে এসে দীর্ঘক্ষণ জুড়ে বৃষ্টিতে এখানে চলমান জীবনের ছবি দেখে প্রতিনিয়ত অতীত হাতড়ে চলেছে। সুদূরের কোল থেকে সহজ উপমায় ঝড়, জল, বৃষ্টিতে নিজের ভেতরে অনেকটা ভিজে উঠছে সুমনা।     
এ শহরকে জুড়ে নিয়ে সেতু বন্ধনের সেসব দিনে নদীর সঙ্গে আপোষ করে একটু একটু করে সুমনা বড় হয়ে উঠলো। বয়সটা থেমে থাকেনা কখনো। এভাবেই বয়স বেড়ে সুমনা এখন বেশ সুগৃহিনী একজন। এখন পাহাড়তলীর শিলিগুড়ি শহরের মহানন্দা পাড়া নদীর নামের সঙ্গে যুক্ত থেকে একটা দীর্ঘ অচলায়তনকে এ কয়েক বছরের মধ্যে ভেঙে দিয়েছে অনেকটা।  কলকাতায় বসে এসবের বিন্দুমাত্র টের পায়নি সুমনা।  

এবারের বর্ষায় পাহাড়তলীর সমতলের এই শহরকে সুমনা নতুন করে দেখছে। সেতু তৈরির সে সময়টা ছিল সুমনার কিশোরীবেলা। তখন তরাই -এর বারবেলায় বুনো চাঁপার গন্ধ আর হাওয়ায় হাওয়ায় কেঁপে ওঠা বৃষ্টি শেষের পর্যন্ত বেলায় সুমনার হেঁটে চলে আসতো সেতু তৈরির জায়গাটিতে। মহানন্দার বুকে তখন প্রথম মহানন্দা সেতুটি তৈরী হচ্ছিলো। জলপ্লাবনে অর্ধসমাপ্ত কাজের ওপর বর্ষার প্রকোপ নেমে আসা সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে তরুণ সুদর্শন ইঞ্জিনিয়ার নবনীল বসু তার কর্মীদেরকে নিয়ে অস্থায়ী টেন্ট থেকে রুটিন ওয়ার্ক এ বেরিয়ে আসতো বৃষ্টি ভেজা নদীর পারে। সেতু তৈরিকে ঘিরে এই সব টুকরো স্মৃতি আজও বড় বেশি উজ্জ্বল হয়ে মনো দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকে। আলো আঁধারির সেই দিনগুলি এতদিন পর বর্ষায় একই ভাবে আবার সুমনার সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। সাবেকি আমলের চারচালার টিনের ঘরটির উত্তরের বড় জানলার দিকে দাঁড়িয়ে সকাল থেকে এক নাগাড়ে অবিশ্রান্ত ধারায় নেমে আসা বৃষ্টিকে এক মনে পরখ করে চলেছে সুমনা।  

নদী তীরবর্তী শহর সেতু আর জলপ্লাবনের সঙ্গে নদীতে প্লাবন মিলেমিশে এ শহরের সাবালকত্ব বাড়িয়েছে অনেকটাই। বেলা অবেলায় সেসব দিনে মহানন্দার পাড়ে জলস্রোতের তীব্রতায় নদীপাড়ে জীবনের জগতে সকরুণ প্রেম এসে সুমনাকে নাড়া দিয়েছিলো সেদিন। সেই শুভক্ষণে শ্রাবণ ধারায় সুস্নাত থেকে বৃষ্টিতে ভিজে উঠে মুখোমুখি হাসি খুশি সুদর্শন ইঞ্জিনিয়ার নবনীলকে কাছ থেকে দেখেছিলো সুমনা।  

মহানন্দা পাড়ের সেতু তৈরির কারিগর বৃষ্টিভেজা শরীরে এগিয়ে আসতেই সুমনা দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো। গায়ে সৌখিন বর্ষাতি। মাথাভর্তি চুলকে গুছিয়ে নিয়ে রেইনক্যাপ এ এলানো বেণীকে সামলে নিয়ে বৃষ্টির আপন বর্ণমালায় সুমনার সম্মতিসূচক কথা বার্তায় নবনীল ঘুরে দাঁড়িয়েছিল সেদিন।

নবনীল : "তুমি নদীকে এতটা আপন করে কি দেখো প্রতিদিন ?"

সুমনা : "শুধু নদীতো নয় - নদীর বুকে সেতু তৈরির কারিগরকেও দেখতে ইচ্ছে করে।"  

নবনীল : "নদীই তো ভালো।  তাঁকে বাঁধতে আসা কারিগর শুধু নদীটিকে শাসন করে চলেছে। এতে তোমার ভালো লাগার কি হলো ?"

সুমনা : "এতো বড় একটা নদীকে প্রতিদিন শাসন করছেন  - তাঁকে সমঝে চলতে বাধ্য করছেন। নদীকে পোষমানানোর জাদুদন্ড হাতে আপনি সত্যি অবাক করার মতো জলপ্রহরী।" 

নবনীল :  "আমাকে জলপ্রহরী ভেবে নেওয়াটা তোমার পক্ষে নিতান্তই সহজ। দিন রাত এক করে নদীকে পাহারা দেয়ার মতো কঠিন কাজ নদী পাড়ে এই অস্থায়ী টেন্ট থেকে করতে হয়। সেজন্যেই অস্থায়ী টেন্ট-ই হলো আমার ঠিকানা।"  

সুমনা : "এই ঠিকানায় থেকে আপনি আপনার বীরত্বে কতদিন নদীকে শাসন করবেন ?"

নবনীল : "যতদিন নদী আমাকে ভাসিয়ে না নিয়েছে।" 

সুমনা : "সে ভাসান আমি চাইনা। আমি নদীপাড়ের এক বাতিঘরের সজাগ প্রহরীকে অন্য কোথাও যেতে দিতে পারবোনা।"

নবনীল : "তোমার যেতে না দেয়ার ইচ্ছের ওপর আমার এখানে থেকে যাওয়াটা নির্ভর করছেনা। আমি খেয়ালি মহানন্দার কাছে অনেক ভাবে বাঁধা পড়ে আছি।"  

সুমনা : "এও তো হতে পারে জীবনের কোথাও আপনি অন্যভাবে বাঁধা পড়ে আছেন। সেখানে নদী নয় - আছে এক মুগ্ধ ছায়াঘর।  "
নবনীল : "সেই ছায়াঘরে আমি শিথিল হয়ে পড়ব যে ! ওই গন্ডিটার চেয়ে নদীর চঞ্চলতা অনেক ভালো।  "

বৃষ্টি থেমে থাকায় এতক্ষণ মহানন্দার পাড় ঘেঁষে ঢালু এক নিরালায় সুমনা ও নবনীলের সহজ আলাপন এক কোমল স্নিগ্ধতায় অনেকক্ষণ জেগে ছিল। 

শিলিগুড়ি ও তাঁর  আশেপাশের বৃষ্টির পরিমান মহানন্দাই দেখিয়ে দেয়। এখানে লাল ও হলুদ সংকেতের ভাষা শুধু মাত্র বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে চলা নদীর প্রবাহকে মনে করিয়ে দেয়না। এখানে প্রবল বর্ষণে চঞ্চলা মহানন্দা গভীরে টেনে আনে দূর গঞ্জের উষ্ণ দাওয়া আবার পাহাড়ি উপত্যকার শক্ত সুঠাম গড়নের বিশালাকার গাছ। বর্ষায় নদী দেখার একটা আগ্রহ সুমনাকে মহানন্দা পাড়ের সেতু তৈরির জন্যেই ঘেরা চত্বরটিতে নিয়ে আসতো। সময়ে অসময়ে মহানন্দা পাড়ার সুমনা জনাকয়েক কিশোরীর সঙ্গে নদী পাড়ে সেতু তৈরির অস্থায়ী ক্যাম্প অফিসের চারপাশটায় চেনা অচেনার আনন্দে মিশে থাকতো অনেকক্ষণ।  

একদিকে বর্ষায় প্রচন্ড জলোচ্ছ্বাস আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেতুর পিলারগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ।  দুটোই বর্ষায় মহানন্দার এক রুদ্র অস্তিত্বের প্রত্যক্ষ সংযোগ। এক দুর্বার আকর্ষণে বিকেলের ছায়াপথ ধরে প্রতিদিন নদীর পাড় অবধি  হেঁটে আসার নিজস্ব ছন্দে সুমনাকে আলাদা করে চেনা যেত। তরুণ ইঞ্জিনিয়ার নবনীল সুমনাকে তাই আলাদা করে চিনে নেয়ার প্রবল ইচ্ছেকে মনে স্থান দিয়ে ফেলেছে। বৃষ্টি ভেজা অনেক সকালে নবনীল সুমনাকে সেতু তৈরির গল্প কথায় টেনে এনে জীবন নদীর সঙ্গে মহানন্দাকে অনায়াসে মিলিয়ে দিতো। সে সময়ের বর্ষায় শহরের উপকণ্ঠ জুড়ে মহানন্দার বিস্তারে দুই তরুণ তরুণীকে ভালোবাসার অমোঘ টানে কাছে এনেছিল। দূর ও কাছের মাঝে আর এক সংযোগ সেতুকে গড়ে তোলার যে ইচ্ছে জেগে উঠেছিল দরদি অনুভাবনায়
 স্বপ্নলোকের খোঁজে এক একটি বিনিদ্র রাতের অস্থির প্রহরের সকরুণ মুখোমুখিতে দুজনেই বিপরীত দূরত্বে মহানন্দা পাড়ের অদূরে অনেক রাত অবধি জেগে থেকেছে ।    

অনেক কথার ভিড়ে সেসব দিনের স্মৃতি সুমনাকে কাছে ডেকে নেয়। বর্ষার এই দিনগুলিতে কখনো সুমনা ভেজা গোধূলিতে বাড়ির উঠোনটিতে নেমে আসে। সেখানে সুমনা বড় একা। স্মৃতির দুয়ার খুলে এখনো সে নবনীলকে দেখতে পায়।  

সেবারে বর্ষায় নবনীল সুমনাকে সেবক পাহাড়ে বেড়াতে নিয়ে এসেছিলো। শুধু নদী নয়, পাহাড় ও অরণ্যের নিচে ভিন্ন প্রবাহের আর এক নদীকে চিনেছিল সুমনা।  নবনীল সুমনাকে পাহাড়ের নিচে নদীটিকে দেখিয়ে বলেছিলো - "তুমি আজ নদী তিস্তাকে দেখলে সুমনা, এ নদীর নামটি একটি মিষ্টি মেয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।"

সুমনা : "এই মিষ্টি মেয়ের মতো নদীটি আমাদেরকে বৃষ্টির গান শুনিয়ে অনেক দূরে নিয়ে যেতে পারে।"

নবনীল : "তুমিই তো বৃষ্টির গান গাইবে এখানে। এই পাহাড়ের গা বেয়ে আঁধার ও বৃষ্টি আরো নিবিড় হয়ে নেমে আসার আগে সুমনা তুমি একবার গেয়ে ওঠো ......... ।"

সেবক পাহাড়ের করোনেশন ব্রিজের এক অংশে দাঁড়িয়ে সেদিন নবনীল এর নরম অনুভূতির কথাগুলো আজ ও সুমনাকে মনে করিয়ে দেয় ঘন মেঘের আড়াল থেকে নেমে আসা বৃষ্টি সেই সঙ্গে নবনীলের নিবিষ্ট চাহনি।  

অনেকদিন পর আজ সুমনা সেদিনের গাওয়া গানটি গেয়ে উঠলো - "বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছো দান
আমি দিতে এসেছি শ্রাবনের গান ..... "

গোটা বিকেলটা পালিয়ে আর একটি নদীর কাছে চলে যাওয়ার একটা আদরের স্মৃতি সুমনা এতদিন বুকের গভীরে পুষে এসেছে। এই বর্ষায় সেবক পাহাড়ের করোনেশন ব্রিজ থেকে নিচের গভীরে তিস্তাকে দেখতে চায় সুমনা। যেখানে পাহাড়ের বুক চিরে তিস্তার আবহকালীন স্রোতধারা নেচে উঠবে বৃষ্টির উৎসবে।  বর্ষাকে আরো নিবিড়ভাবে দেখতে চায় সুমনা। 

স্মৃতি সততই সুখের হলেও একটা দুঃখবোধ সুখ দুঃখ কে নিয়ে পুরোনো হয়ে ওঠে। সুমনার দুঃখ গুলি বর্ষার শ্রাবণ ধারার মতো কেঁদে উঠেছে বারংবার। সেখানে মহানন্দা পাড়ের সেতু তৈরির অস্থায়ী ক্যাম্পের তরুণ সুদর্শন ইঞ্জিনিয়ার নবনীল বসু কখন যে সুমনার প্রেমিক হয়ে উঠেছিল তা আজ নিশ্চিতভাবে মনে করতে পারেনা সুমনা।  

পাহাড় ও সমতল জুড়ে বৃষ্টির দাপট বেড়ে চলায় এক সময়ে সেতু তৈরির প্রেমিক ইঞ্জিনিয়ার নবনীলকে নিয়ে দরদি ভাবনায় সুমনা রাত জেগে বাড়ির ঝুল বারান্দার এক কোণে বসে থাকতো। সুমনার কণ্ঠে তখন থাকতো রাত শেষের গান।  

সেবারে মহানন্দার বর্ষার সংকেত ছিল ভিন্নতর। বিপুল ভাসানের সম্ভাবনার একটা সংকেত নিয়ে দপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা যথেষ্ট চিন্তিত ছিল। শহরবাসী সকলকে সাবধান হওয়ার জন্যে সতর্কতা জারি হওয়ার পর উৎকণ্ঠিত মানুষের একটা বড় অংশ শহরে জল ঢুকে পড়ার আসন্ন বিপদ সম্পর্কে সজাগ ছিল। সাময়িক ভাবে কিছু মানুষ শহর ছেড়ে অন্যত্র সরে এসেছিলো সেদিন। মহানন্দা পাড়ের অস্থায়ী ক্যাম্পকে ঘিরে ভীষণ এক দুশ্চিন্তায় সুমনা বেরিয়ে এসেছিলো। আর নবনীল তখন তাঁর ক্যাম্প অফিসকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে সরাসরি তদারকিতে ব্যস্ত। সেতু সংলগ্ন নদী পাড়ের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলবন্দী সুমনার সঙ্গে নবনীলের দূরত্ব দূর অচেনার প্রান্ত সীমায় ক্রমশই বিলীন হয়ে যাচ্ছিলো। 

রাত শেষের প্রহরে সুমনা নবনীলের সেই কথাটির পুনরাবৃত্তি যেন শুনতে পেলো : "যতদিন নদী আমাকে ভাসিয়ে না নিয়েছে সেই অবধি এই নদীকে আমি শাসন করে যাবো।।"

পাহাড় ও সমতলের বৃষ্টির পরিমান একটা সময়ে এতটাই বেড়ে উঠেছিল যে মহানন্দার তীরবর্তী শিলিগুড়ি শহরে জল ঢুকে পড়ে সাথে নতুন করে বৃষ্টির তীব্রতা বেড়ে চলেছিল। মহানন্দা সেতু তৈরির তরুণ ইঞ্জিনিয়ার নবনীল তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে প্রথম আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে । রাত শেষের বৃষ্টির সঙ্গে মহানন্দার প্রবাহের উদ্দমতায় সেতু তৈরির অস্থায়ী টেন্ট অফিসটি জলের তোড়ে তলিয়ে গেলে ক্যাম্প অফিসের কয়েকজনের নিখোঁজের তালিকায় নবনীলের নামটি উচ্চারিত হয়ে আসছিলো সেদিনের বৃষ্টি ভেজা সকালে।  

আজ এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে শ্রাবণের বর্ষণ মুখর একটি রাতের শেষে মহানন্দা পাড়ে বৃষ্টির সকাল।  আজকের এই সকাল সেদিনের সেই বৃষ্টি ভেজা সকালের বিষন্নতার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। মেঘ কালো করে শিলিগুড়ি শহরের উপরি আকাশ থেকে বৃষ্টি নেমে আসছে। কলকাতা থেকে সুমনা অনেকদিন বাদে তাঁর পুরোনো শহরে এসে বৃষ্টি বন্দি হয়ে শহর তাঁর অন্তরঙ্গ ও বহিরঙ্গ দুটি দিককে নিজস্ব অনুভূতিতে ধরে রাখতে চাইছে। সুমনার সেই কিশোরীবেলায় গড়ে ওঠা নদীর বুকে দ্বিতীয় আর একটি সেতু পাহাড় ও সমতলের সঙ্গে সংযোগ তৈরী করে নদীর বুকে চওড়া সেতু যান চলাচলকে এগিয়ে দিচ্ছে প্রতিদিন। এই বদলে যাওয়া শহরে এখন ভারী বৃষ্টির আগাম কোনো সতর্কতা নেই।  এ শহরে উত্তর দিকে পাহাড়ের অবস্থান বৃষ্টির তাজা মরশুমে মহানন্দার তীরবর্তী শহরটাকে ভিজিয়ে রেখেছে। একটা সময়ে শহরের আকাশ জুড়ে মেঘের ঘনঘটায় সুমনা তাঁর কিশোরী বেলায় মনের গভীরে ভিজে উঠতো। আজ এতো দিন পর মেঘ বৃষ্টি আর শ্রাবণের টানে মহানন্দাকে দেখার তেমন কোনো আগ্রহ নেই সুমনার।  

কলকাতা থেকে এখানে আসার পর আকাশ সুমনাকে নিয়ে পাহাড় থেকে নেমে আসা কোনো একটি নদীর কাছে যাওয়ার কথা বলেছিলো। সুমনা বৃষ্টিতে ভিজেই নদীকে স্পর্শ করতে চায়। মেঘ দেখে আজ আকাশের মনে হলো সুমনার ইচ্ছের মেঘগুলো এ শহরের উপরি আকাশটাকে ঘিরে রেখেছে।  

এমন একটি বৃষ্টি ভেজা দিনের দিকে তাকিয়ে আকাশ সুমনাকে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসার বেপরোয়া প্রস্তাবে অন্য এক নদীর কাছে যাওয়ার কথাটায় চলে এলো। 

আকাশ : "সুমনা এ শহরের নদীর সঙ্গে তোমার অভিমানে তোমাকে একটা ভাসানের দুঃসহ স্মৃতির কথা মনে করিয়ে দেয়। তুমি তো এ নদীকে স্পর্শ করতে চাও না। আমাদের যাত্রা পথ অন্য এক নদীর দিকে - তুমি যাবে তো ?"

সুমনা : "এই বৃষ্টি ভেজা দিনে নদীকে স্পর্শ করার ইচ্ছেকে আমি বাড়তে দিই না আকাশ। আমার মনে হয় হৃদয়ের দুকূল ভাসিয়ে বহু আগে নদী আমাকে শুধু বিপন্ন করে রেখেছে।"

আকাশ : "তোমার আমার সম্পর্কে একটা নদীই কি বিরহ মধুর হয়ে এভাবে বহু প্রতীক্ষায় তোমাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে !"

সুমনা :  "আমি বৃষ্টির কাছে ধরা দিয়ে নিজেকে ভিজিয়ে নিতে চাই -  সেখানে তোমার সব কিছুতে ধরা দেয়ার জন্যে আমার প্রতীক্ষা আরো দীর্ঘ হয়।"

আকাশ : "তুমি আজ এই ঘন বর্ষার বৃষ্টিতে নদীর কাছে যাবে সুমনা। শহর থেকে দূরে সে নদীতে আমাদের ভালোবাসাকে নতুন করে ফিরে পাবো।"

আকাশ সুমনাকে নিয়ে এই বর্ষায় উতলা মেঘের দুপুরে ভেজা সড়কে এসে দাঁড়ালো। শহরের নদীকে ছেড়ে আর এক নদীর কাছে পৌঁছানোর জন্যে আজ সুমনা বড় শান্ত। বৃষ্টির সঙ্গে শ্রাবণের বেলা শেষের মোহিনী আঁধারে ফিরে দেখার তাগিদ এসে সুমনাকে স্পর্শ করলো।  নিস্তব্ধতাকে ভেঙে বৃষ্টির উৎসব জেগে উঠছে। মহানন্দে আজ সাঁঝের ভাসানে দুদিকের আলোকসজ্জার নিয়নের আলো নিচের ঢেউ এ কেঁপে কেঁপে দূরের কোথাও দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে এখন ......।


আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri