বৃষ্টি-পরম্পরা
বৃষ্টি-পরম্পরা
মালবিকা চাকী
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
আষাঢ়ের
শেষ শেষ। সকাল থেকেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টি হলেই বরাবর মনটা কেমন
উদাস হয়ে যায় সুবর্ণার। সে যেন কেমন নিজেকে গুটিয়ে নেয়।সাংসারিক রোজকার
কাজকর্ম করতে ইচ্ছে করে না। স্বামীর অফিসে যাওয়া পর্যন্ত রান্না ঘরে কাটিয়ে
কোন রকমে নিজের স্নান খাওয়া সেরে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায় সে।আজ তো মেয়েটাও
বাড়িতে নেই। বৃষ্টির জন্য ওর বাবা অফিসে যাওয়ার পথে ওকে টিউশনে নামিয়ে
দিয়ে গেছে। তাই আজ আর কোন তাড়া নেই তার।
বৃষ্টির
সাথে সুবর্ণার আবাল্য সখ্যতা। ছোট্ট সুবর্ণা প্রায়ই স্কুলে যাবার পথে
রাস্তায় জমে থাকা বৃষ্টির জলে ইচ্ছে করে কেডস ভিজিয়ে মায়ের বকুনি খেত।
একদিন তো টিউশন শেষে ছাতা বন্ধ করে বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরে ধুম জ্বর ও
বাঁধিয়ে ফেলেছিল।কতবার মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাড়ার বন্ধুদের সাথে বৃষ্টির
জলে গামছা পেতে মাছও ধরেছে। কিন্তু মায়ের ভয়ে ওগুলো বাড়ি না এনে বন্ধুদের
বিলিয়ে দিয়েছে। ছোটবেলা থেকে বৃষ্টির ফোঁটা পড়লেই যে তার মন কেমন করে,
বৃষ্টিকে ছুঁতে ইচ্ছে করে। সুবর্ণার মনে পড়ে যেদিন তার প্রথম ভালোবাসার
সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল, সে ঘরের দরজা বন্ধ করে চিৎকার করে কাঁদছিল, সেদিনও
বাইরে অঝোরে বৃষ্টি ঝরছিল। আজ অনেক দিন বাদে একান্ত অবসরে মনের মাঝে
কতকিছুই না ভিড় করে আসে সুবর্ণার। একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ যখন ঝাপসা
হয়ে আসে তখনই দরজার বেল বেজে ওঠে।ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দেখে বৃষ্টিতে কাক
স্নান করে দাঁড়িয়ে তার মেয়ে। মায়ের দিকে চোখ পড়তেই মুখটা কাঁচুমাচু করে
মেয়ে বলে - "ছাতাটা কিছুতেই খুলতে পারলাম না মা, দেখ একদম ভিজে গেছি"। মৃদু
হেসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে সুবর্ণা। বাইরে তখনও অঝোরে ঝরছে বারিধারা।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴