বৃষ্টি দিন আর রামধনুর রং
বৃষ্টি দিন আর রামধনুর রং
সুমনা দত্ত (ঘোষ)
~~~~~~~~~~~~~~~
কখন যে বৃষ্টিতে ভিজে একসা হয়ে গেছে সেটা বুঝতেই পারেনি তিয়াসা! সম্বিত ফিরল মাধুরীর ডাকে। "বৌমুনি, সেই কখন থেকে এখানে বসে আছ, বৃষ্টিতে একদম ভিজে গেছ। যাও ঘরে যাও। পরে যে অসুখ করবে।" তিয়াসা খানিক আশ্বস্ত হল। না, মাধুরীদি চোখের জলটা খেয়াল করেনি। করলেই প্রশ্নবাণে জর্জরিত করত। ভাগ্যিস চোখের জলের কোনো রং হয় না! ধীর পায়ে ঘরে ঢুকে পোশাক পাল্টে সোফায় গা এলিয়ে দেয় তিয়াসা। মাধুরীদি হাতের কাজ শেষ করে ব্ল্যাক কফি তৈরি করে তিয়াসাকে দেয়। অন্য হাতে একটা বাক্স টেবিলের উপর রেখে বলে, "বৌমুনি , এটা এইমাত্র এসেছে।"
তিয়াসা দেখল বড় বড় অক্ষরে লেখা তার নাম। বাক্সটা খুলতেই বেরিয়ে এল একটি সুদৃশ্য ডাইরি আর একটি পেন। কে পাঠাল ভাবতে-ভাবতে ডাইরির পাতা ওল্টাতে লাগল ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটি চিরকুট তাতে লেখা আছে , "তিয়াসা, অক্ষর সাজিও এর প্রতি পাতায় "! সাথে দেওয়া একটি ফোন নাম্বার।
ইদানিং সৃঞ্জয়ের সঙ্গে ছোটখাট ব্যাপার নিয়েই মন-কষাকষি চলছে। আজ তো চরম পর্যায়ে চলে গিয়েছে। তারমধ্যে এই উটকো ঝামেলা! কে পাঠাল, কেন পাঠাল! তিয়াসা ফোন নাম্বার ডায়াল করলে অপর প্রান্তে পুরুষ কন্ঠ ,
-হ্যালো , কে বলছেন?
- আমি , আমি মানে তিয়াসা দত্ত।
- ও তিয়াসা , আমার উপহার পেলে?
- পেলাম , কিন্তু আপনি কে বলুন তো আমি তো ঠিক.......
- কে আমি থাক না সেসব! শুধু জেনো, আমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী। আমি তোমার কলমে উঠে আসা প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বর্ণ, প্রতিটি কবিতায় যাপন করি ।
- দেখুন মশাই আমার কিন্তু ফালতু কথা শোনার কোন সময় নেই।
- জানি তো, তাইতো ডাইরি আর পেন পাঠালাম। তুমি শুধুই লিখবে, অনেক অনেক লিখবে। আমার জন্য লিখবে, আমাদের জন্য লিখবে।
- মানে! কি বলতে চাইছেন আপনি?
- তোমার লেখা প্রতিটি শব্দ প্রতিটি কবিতা তো আমারই জন্য তিয়াসা। অন্তত আমি তাই মনে করি।
- আপনি কি বলছেন এসব! আমি যে বিবাহিতা!
- দয়া করে এভাবে বলো না তিয়াসা! তোমার কবিতার প্রতিটি ছত্রে ভালোবাসা উপচে পড়ে, তাতে যদি কেউ তোমার প্রেমে পড়ে যায় তবে তার দোষ কোথায় বলো? এ তো তোমার কলমের সার্থকতা।
- দেখুন কবিতা পড়ে কেউ যদি প্রেমে পড়েও যায় তবে সেটা কবিতার প্রেমে পড়বে কবির প্রেমে নয়। কবির কি দায় বলুন?
- সে কি দায় বলছ কেন! ভালোবাসার কি কোন দায় আছে বল!
- দেখুন আমার মনে হচ্ছে আপনি মানসিক রোগী।
- না তিয়াসা আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।
আমি তোমার কবিতায় সংগোপনে বাড়তে থাকা বিরহ বেদনা, ভালোবাসার জন্য তোমার আকাঙ্ক্ষা সবটা দেখেছি! যারা লেখে তারা যে মনের কথাই লেখে। আর যারা সঠিক পাঠক তারা ঠিক বুঝে যায় কবি কি বলতে চায়!
- আরে মশাই , আপনি বলুন তো আপনি কে? আর কিসের জন্য আপনি এমন করছেন?
- আমি! ওই যে বললাম আমি একনিষ্ঠ পাঠক। ভালোবাসি তোমার কলমে উঠে আসা প্রতিটি শব্দ। তবে তুমি যখন জানতেই চাইছ তবে শোনো, কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে তোমার স্বরচিত কবিতাপাঠের পর যে তোমায় এমনি করেই ডাইরি আর পেন উপহার দিয়েছিল, সে-ই আমি।
- তমোসদা, তুমি! আমার মনে আছে সেদিন তোমার কন্ঠে "হঠাৎ নীরার জন্য" আমার খুব ভালো লেগেছিল। তোমায় বলেছিলাম সে কথা। বলেছিলাম তোমার কন্ঠে আমার কবিতাদেরও রেখো। তা এত বছর পর কোথা থেকে!
- হ্যাঁ আমার তখন ফাইনাল ইয়ার। তারপর অস্তিত্বের লড়াইয়ে জেরবার আমি । ঠিক তখনই শুনলাম তোমার বিয়ে বড় অফিসারের সঙ্গে। বহু বছর পর তোমায় ফিরিয়ে দিল ফেসবুক।
- কিন্তু.....
- না আর কোন কিন্তু নয়। আমি চাই আমার পাঠানো ডাইরির প্রতিটি পাতায় উঠে আসুক তোমার কবিতারা, বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ুক তোমার মনখারাপেরা, ভিজে যাক কবিতার খাতা।
- তাতে তোমার কি লাভ তমোসদা!
- লাভ ! সে তুমি বুঝবে না তিয়াসা। তুমি শুধু ভালো থেকো।
-আর তুমি?
- ভালোবেসে কে কবে থেকেছে ভালো বলো? আজ তবে রাখছি।
ফোনটা কেটে যায়। বাইরে বৃষ্টি কমে আকাশে একফালি রামধনু রঙের ঝিলিক। ঝাপসা চোখে তিয়াসা ডাইরির পাতা ওল্টায়।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴