সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

বৃষ্টি ও বাঁধন আশিস কুমার খাজাঞ্চি

বৃষ্টি ও বাঁধন
আশিস কুমার খাজাঞ্চি 
----------------------------------

শ্যামাচরণ এখন সল্টলেক ডি ব্লকে বিরাট এক বাড়িতে সস্ত্রীক থাকেন। নিজস্ব বাড়ি। বছর আঠাত্তরের বৃদ্ধ। স্ত্রী হৈমও সত্তরোর্ধ্ব। একমাত্র ছেলে রন্টু তার স্ত্রী রীতি ও ছেলে টুটুনকে নিয়ে কানাডাতে রয়েছে।
দুই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা একে অপরকে ছাড়া চোখে অপার শূন্যতা দেখেন। এদিন শ্যামাচরণের মনে হল হৈমকে যেন বহুক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দোলাকে ডেকে বললেন, তোর মা কোথায় রে?
ও বলল আমি তো নিচের তলা থেকে এলাম। ওখানে নেই। বছর চৌত্রিশের দোলাই এখন এই দু'জন মানুষের একমাত্র আশা। ও রন্টুর বাবা-মাকে বাবা ও মা বলেই ডাকে। মা মা বলে চিৎকার করতে করতে দোলা তরতর করে ছাঁদে উঠে এল।
দেখে হৈম চিলে কোঠার দেয়াল হেলান দিয়ে বসে। সামনে শূন্য দৃষ্টি।
মা, তোমার কি হয়েছে? চোখে জল কেন? বাবা তোমায় কতক্ষণ দেখতে না পেয়ে ডেকে ডেকে হয়রান।
তুই যা, মা। আমি খানিক বাদে নামছি। 

খুঁজতে খুঁজতে শ্যামাচরণ উপরে উঠে এলেন। একি, তুমি এখানে এভাবে একা বসে? 

দেখ না বাবা, কতবার বলছি শুনছেই না। 

নিচে চল, হৈম। চা খেতে খেতে কথা বলব। দু'চার ফোঁটা বৃষ্টিও পড়ছে। এখনই ঝমঝমিয়ে নামবে। তোমার তো আবার অল্পেই ঠান্ডা লেগে যায়। 
দোলা, কড়া করে তিন কাপ লিকার চা বানাস তো। একটু আদা দিস। আর যদি দু'চারটে পেয়াঁজি ভাজতে পারিস। এই বৃষ্টির মধ্যে জমিয়ে খাওয়া যায় আর কি।
বুঝেছি। শুধু দশটা মিনিট সময় দাও।
হৈম, তোমার কষ্টটা কোথায় আমি জানি। কিন্তু সে কষ্ট তো আমারও। শুধু ভাসাই না। কিন্তু তোমার চোখের এক ফোঁটা জলে আমি যে নিজেই ভেসে যাই। 

তুমি তো তবু তোমার লেখা নিয়ে সময় কাটাতে পার। গল্প-উপন্যাস পড়। কিন্তু আমি......। উড়োজাহাজের যাওয়া-আসা দেখি। যদি কোন একটা আমার খোকাকে  আমাদের বন্দরে নামিয়ে দেয়। মুহূর্ত গুনি।  আমার ঝাপসা হয়ে আসা দৃষ্টি থাকে দূর আকাশে।

তোমার ছেলে তো দীর্ঘ তেরটি বছর আমাদের ছেড়ে আছে। টুটুন তখন পাঁচ বছরের। শেষ দশ বছর কোন ফোনও পাইনি।
তোমার মনে পড়ে, রন্টু যেদিন পৃথিবীর প্রথম আলো দেখে সেদিন কি ঘন ঘন বিদ্যুতের ঝলকানি, তেমনি বৃষ্টি। যেন বছরের সমস্ত বৃষ্টি এক সাথে নেমে এল আমাদের বকুলতলাতে। আমি তীব্র প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছি। তুমি দৌড়ে বালা খুড়িকে ডেকে নিয়ে এলে। খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘরে জায়গায় জায়গায় জল পড়ছে। তুমি চালে উঠে খড় লাগানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলে। অনেক ভালো ছিলাম গো। 

আমাদের বকুলতলা গ্রামের ভিটেতে আমার নাড়ি পোঁতা। আমাদের ছেলেরও। আজও আমার ঘুম ভাঙে বকুলতলাতে। ঘুম আসে বকুলতলাতেই । স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফিরলেই রন্টু দৌড়ে এসে বলত বাবা লেবু লজেন্স এনেছ? মাছ লজেন্স কোথায়? চক আনতে বলেছিলাম, দাও। 
বর্ষাকাল এলে চারদিককার জলে পুকুরটা ভরে উঠত। জলের ধারা বেয়ে দু'একটা  কৈ মাছ, মাগুর মাছ মাঝে মাঝেই উঠোনে উঠে আসত। কয়েক  দিন টানা বৃষ্টি চলছিল। হঠাৎ একটা কই মাছ উঠোনে দেখে রন্টুর কি আনন্দ! বাবা, মাছ। বলেই দৌড়ে ধরতে গেল। পা পিছলে পড়ে বাঁ হাতের আঙুলটা ভাঙল। মাছটা কিন্তু ছাড়েনি। তখন বয়স সাত কি আট হবে। ঠিক বলছি তো, হৈম? 

আমার দাদু ভাই তখন মাত্র বছর পাঁচেকের। ওরা যেদিন কানাডাতে যাচ্ছে ঝিরে ঝিরে বৃষ্টির মধ্যে গাড়িতে উঠল। চোখের জলে- প্রকৃতির জলে অফুরান গলাগলি। তুমিও তো সেদিন দমদম বিমানবন্দরে ওদের ছাড়তে গিয়েছিলে। রাতে খাওয়াটাও ঠিকঠাক করতে পারনি। কারণটা তো জানি। গোকুলের কাছে শুনেছিলাম ফেরার পথে একটা কথাও বলনি। 

নাও চা এসে গেছে। দোলা কি দারুন পকোড়া ভেজেছে দেখ। হৈম, দোলা কিন্তু এসব কাজে বেশ পটু।
মেঠো পথ ছেড়ে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছ জানি।  

আজ তোমার ছেলে হাওয়াই জাহাজে কলকাতা বিমানবন্দরে নামবে।
ঠাট্টা কোরো না। বাবা-মা বেঁচে আছে কিনা শেষ দশ বছরে যে ছেলে একবারের জন্যও খবর নেয়নি .....। টুটুন, বৌমা, খোকা ওদের ভালো থাকার খবরটা যদি বাতাসের কাছেও পেতাম....। 

না গো না, ঠাট্টা নয়। তোমার খোকা এয়ারপোর্টে নেমে ফোন করেছিল। অচেনা নম্বর। ধরা না ধরার মাঝে পড়লাম। অবশেষে রিসিভ করতেই উল্টো দিক দিয়ে ভেসে এল,"হ্যালো, বাবা?" চমকে উঠলাম! "এয়ারপোর্ট থেকে বলছি। আধা ঘন্টার মধ্যে বাড়িতে ঢুকছি। মাকে বলো।" আমি কোন কথা বলতে পারলাম না জান। আবেগের কাছে হার মানলাম। অস্ফুটে বললাম সাবধানে এসো। 

দেখলে, আমার উড়োজাহাজ কিন্তু পাশ কাটিয়ে যায়নি। কি অদ্ভুত যোগ! ও যেদিন দেশ ছাড়ল সেদিনও এক বৃষ্টিভেজা দিন। আজ ফিরছে সেই বৃষ্টি সাথে। আমার দাদুভাই কিন্তু গাড়ির দরজা খুলে আগে বেরবে। 

এতদিন বাদে টুটুন ওর দাদু-ঠাম্মাকে কিভাবে নেয় দেখ। ও কিন্তু আজ সেই ছোট্টটি নেই।
অতসত বুঝি না। তুমি রন্টুকে এখনই ফোনে বলে দাও। আর রন্টু যেন নিজে গাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টি মেখেই বারান্দাতে পা রাখে। বর্ষাই ওর বাসর।আজ আমিও ভিজব। 
বাধা দেব না।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri