সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
27-November,2022 - Sunday ✍️ By- শ্যামলী সেনগুপ্ত 236

বুন্দরিয়া বরষে রে

বুন্দরিয়া বরষে রে  
শ্যামলী সেনগুপ্ত 
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

       অনেক রোদেলা দিনের পর যখন রোদ আরও তীব্র হয়, আরও খর হয় তাপ, মাটিতে টান ধরে, ফুটিফাটা হয়, তখন তীব্র হয় তার শরীরী জ্বালা। রোজ রোজ তপ্ত বাতাসের ছোঁয়ায় তার মাটির ঘরের খড়ের চাল কেমন শুকিয়ে যায়। মনে হয় একটা স্ফুলিঙ্গ অসাবধানে এসে পড়লেই পুড়ে যাবে তার সাধের ঘরটি, তার জমির আসনটুকু, তার বছরকার রসদ আর তার বুক।
        চাষী ঘরের মেয়ে। মিলিয়ে রাখা নাম ভুঁই। শুনেছে, বাবার ঠাকুমা নাকি রেখেছিল এই নাম, সে জন্মানোর আগেই। এক অবিশ্রান্ত বাদল দিনে ব্রাহ্ম মুহূর্তে জন্ম হয়েছিল তার। তখন বাবার ঠাকুমা অন্য লোকে। তবু কেন জানি বড়োঠাক্মা আঁচ পেয়েছিল নাতবৌয়ের পুতি হবে। তাই পরপাড়ে পাড়ি জমানোর আগে বলে গেছিল 'ভুঁই'। আরও বলেছিল, যেন দাহ করা হয় না তার জড় শরীর, পুঁতে দেওয়া হয় যেন তার সাধের জিরেতে। সময়ের তুলনায় বড়োঠাক্মা অনেক এগিয়ে ছিল। তুফানের গতিতে জমির কাজ করত স্বামীর সঙ্গে। চাষির মেয়ে, বছরের প্রথম বৃষ্টি বিন্দু মাটির উপরে টুপটাপ ঝরে পড়লে কেমন শিহরিত হয় রোমকূপ, অঙ্গে অঙ্গে জেগে ওঠে প্রিয় মিলনের তীব্র কামনা সেসব বড়োঠাক্মা অনুভব করতে পারত এমন করে যেন নিজেই প্রবল কামতাড়িত। সেইসব দিনে তুমুল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, উথালপাথাল বাতাসে আঁচল মেলে দিয়ে  পৌঁছে যেত তার জিরেতে। কীভাবে বীজ বাছাই করতে হবে, বীজতলা তৈরি হবে কীভাবে, কেমন করে জাগ দেওয়া হবে বীজ, কী করে করতে হবে বপন সব তার জানা ছিল। নিখুঁত ভাবে করত বীজতলার পরিচর্যা, চারা উঠোনো, চারা বহন। রীতিমত দাঁড়িয়ে থেকে রোপণের জন্য জমি তৈরি করাত। চারা রোপণ করত নিজের হাতে।
         আমন চাষীর ঘরের নিশ্চিত ফসল।আবহমান কাল থেকেই  এই ধানে তার গোলা ভরে ওঠে। ভুঁই জানে এসব। পড়াশুনোর জন্য যেমন ইশকুলে যায়, তেমনই ষোড়শী ভুঁই জানে রোপা আমনের বীজতলা তৈরি করতে।তাই আষাঢ় এলেই চনমনে হয় সে। বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির জল ধারণ করে রোমের কূপে কূপে।শরীর জুড়ে অঝোর ধারা নিতে থাকে আষাঢ় জুড়ে। নরম হয়, কোমলতর হয় তার মাটি ও মেটেল। পায়ের ছন্দে ওঠে রাগ মল্লার, শরীরে জাগে ময়ূর পেখম, তৃপ্ত চাতকের মতো নেমে পড়ে মূল জিরেতে শাওন-ভাদোঁর সুরে সুর মিলিয়ে। তবে ভেসে যায় না। কতখানি শ্রাবণধারা দরকার তার মাটির জন্য, কতটা শ্রাবণজল ধরে রাখবে কোমল অঙ্গে সব জানে সে। তাই আশ মিটে গেলে সরিয়ে আনে নিজেকে। এখানেই তার কোষে কোষে যাযাবর প্রবৃত্তি। কারও নয় সে, অথচ সবার।বন্যা আসবে কিন্তু তার শরীরকে বাঁধতে পারবে না বরুণজল। প্রয়োজনে ভেসে থাকবে, মন ও মননে গুছিয়ে তুলবে ভাসমান বীজতলা। আটকে দেবে বাকানি।আলোক-অসংবেনশীল সুতরাং, এদের জন্য চাই মেঘছায়া। তাই সঘন গভীর রাতে ভুঁইয়ের শিঞ্জিনী  জুড়ে রে-রে-সা-নি-সা-ক্ষা-রে-পা-ক্ষা-রে-নি-সা...

             ভুঁইয়ের শিরায় শিরায় প্রবহমান রক্ত ধারায় এই ছন্দ, এই সুর। কবে কোন কাল থেকে বড়োঠাক্মা, বহুকেলে আরও আরও  ঠাক্মাদের থেকে উত্তরাধিকারের শোণিতস্রোতে পাওয়া  ঝাঁপতালে নাচতে থাকে ভুঁই। 'আত ঘোর ঘোর গরজত আয়ে' ছড়িয়ে যায় মধ্যরাতের বাতাসে। শষ্পে শষ্পে ভরে ওঠে মাঠ ও প্রান্তর। একবীজপত্রী বাড়িয়ে দেয় তার সুডৌল শ্যামল বাহু, জড়িয়ে ধরে ভুঁইয়ের কোমর, উলটানো তানপুরা সোজা করে তারে তারে বুনে দেয়  মীড়,আঙুল চলে ছন্দে ছন্দে, ঊরসজলে  ভিজে যায়  ঠোঁট, চুপচুপে ভুঁইয়ের শরীর জুড়ে  শীষ আর শীষ।মেঘলা বাতাসে আন্দোলিত দীঘল শ্যামলা শীষে পরিপূর্ণ  ভুঁই দেখতে থাকে আদিম মানুষ-মানুষী তাদের আবহমান ক্ষিদে নিয়ে ঘিরে আছে জমি ও জিরেত। সে ক্ষিদের বাসা  পেটের  গভীরে, পাকস্থলী জুড়ে। ঘন সবুজ শসা ক্ষেতের আল বরাবর লাল ভেলভেট পোকা গুটগুট করে হাঁটে, হাঁটতে হাঁটতে পেরিয়ে যায়  সবুজ মখমলি গালিচা। পেলব শীষে রঙ লাগে।ভুঁইয়ের কাজ শেষ। বাকিটুকু সামলে নেবে হলধর ও তার জোয়ান মা, মেটেল।
        ভুঁই তো যাযাবর। তার কামনা মিটিয়ে সে ফিরে যায়। পড়ে থাকে খড়বিচালি। পড়ে থাকে রুখা জিরেত, তেতে ওঠে চৈত্রের এলোঝেলো বাতাসে। পুড়তে থাকে বোশেখ-জৈষ্ঠের তপোল্লাসে আর অপেক্ষায় থাকে কখন বেজে উঠবে বুন্দরিয়া, তিন তালে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri