সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
26-November,2022 - Saturday ✍️ By- সুকান্ত নাহা 222

বুড়ি, ভানুদা ও আমি

বুড়ি, ভানুদা ও আমি
সুকান্ত নাহা
~~~~~~~~~~~~

আমাকে না বললেও আমি জানি আজ কেউ একজন আসছে ওর কাছে। আমার সাথে যদিও অনেক কথাই ও শেয়ার করে।  টুকরো-টাকরা ভালো লাগা, মন্দ লাগার কথা। ছেলেমেয়েদের কথা। নাতি-নাতনিদের কথা। এমনকি শরীর খারাপ হলেও বলবে, ' হাঁটুর ব্যথাটা বড্ড বেড়েছে রে আজ...কোনও যো-টো আছে নাকি কে জানে...' বলেই লেংড়ে-লেংড়ে ক্যালেন্ডারের কাছে গিয়ে দাঁড়াবে। তারপর উঃ আঃ করতে করতে বিছানায় এসে বসে হয়ত বলবে, 'রাতে আর ভাত খাব না রে। শরীর রসস্থ হবে। গণেশকে বলব  দুধ-পাউরুটি দিতে। তুই কী খাবি, ওকে বলে দিস?' রগড় দেখে আর বাঁচি না। সোফায় বসে আড়চোখে তামাশা দেখি আর হাসি। মনে মনে বলি, 'ওরে তুই তোর কথা ভাব। আমার কথা অত না ভাবলেও চলবে। গণেশ আমার ইয়ার-দোস্ত। লুকিয়ে চুরিয়ে কত কি খাওয়ায় তুই টেরও পাস না।'

আমার সাথে ওর তুই তোকারির সম্পর্ক। বরাবরের।  আজকের তো সম্পর্ক নয়। ঢের দিন হল। একে অপরকে ছাড়া একমুহূর্ত থাকতে পারি না। 'চোখে হারাই' বললেও কম বলা হয়। একেক সময় ঝগড়াও হয় খুব। ঝগড়া হলে এই 'শেষ বসন্ত'র প্রতিটা বোর্ডার জেনে যায়। রাগ হলে বুড়ি মুখে যা আসে তাই বলে যাবে। এমনকি কী বলব, আমার গুষ্টি তুলেও গালাগাল দেবে। আমি খুব একটা প্রতিবাদ করি না। করিওনি কোনোদিন। মুখ বুজে সয়ে যাই। কিন্তু সব সময় কি আর মুড ভালো থাকে। একেক সময় রেগে উঠি। আমি রাগলে ও তিনগুণ চেঁচাবে । আবার উল্টে আমাকেই বলবে,'খবরদার,চেঁচাবি না বলে দিলাম।' 

আজ যে আসছে সে কখনো আসেনি এখানে। তবে ইদানীং দেখি একটা ফোন আসে মাঝেমাঝে। ফোনটা এলেই ওর দুঃখী দুঃখী মুখটায় হাসি ফোটে। মাঝে মাঝে তো হেসে গড়িয়ে, আহ্লাদে গলে জল হয়ে পড়ে একেবারে। বুড়ির ঢঙ দেখে তখন আমার ভেতরটা জ্বলে যায়। চাপা হিংসেও যে হয় না তা নয়। তবে সবকিছু দেখি আর না দেখার ভান করে চুপ করে থাকি। ছেলেমেয়েদের ফোন- টোন তেমন আসে না। এলেও ওর হাবভাব দেখে মনে হয় না তেমন খুশি হয়েছে।  নাতি-নাতনিরা ফোন ধরলে তবুও হেসে হেসে কথা বলে। তবে সে হাসি আর এ হাসি আলাদা। এই ফোনটা এলে ওর মুখটা ঝলমল করে ওঠে। কথা বলতে বলতে কত যে রঙঢঙ করে। কার ফোন প্রথমদিন বুঝিনি। পরদিন কানখাড়া  করে ওদের কথোপকথন শুনলাম। 
বুড়ি হেসে হেসে বলছে, 'সত্যি, তুমি না সেই আগের মতোই রসিক আছ। একটুও বদলাওনি ভানুদা।'
সেদিন জানলাম ওদিকের ঐ রসিক লোকটার নাম ভানুদা। 

সেই ভানুদা আজ আসছে বুড়িকে দেখতে। সকাল থেকে বুড়ি আজ খুব খুশি। আনন্দের ঠেলায় আমাকে  বলেই ফেলল, 'বুঝলি ভানুদা আসছে আজকে। আজ আমার আনন্দের দিন। ছোটবেলায় কি যে ভালোবাসত আমায় ভানুদা। আজ এতদিন বাদে আমার ঠিকানা খুঁজে দেখতে আসছে। যাই আমি গণেশকে বলে আসি। দুপুরে একটা এক্সট্রা মিল দিয়ে যাবে। ভানুদা খেয়ে যাবে'

সত্যি বলতে কি ঐ ভানুদা না কে তাকে নিয়ে বুড়ির এত আদিখ্যেতা দেখে আমার রাগ হচ্ছিল। হিংসেও হচ্ছিল। দেয়ালে ঝোলানো বুড়োর ছবিটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম, ' দ্যাখো তোমার বৌয়ের কান্ড। কোন এক ভানুদা না কে, সে আসছে দেখে তার আনন্দ আর ধরে না।'

যা হোক, দুপুরে সেই ভানুদা এল। ঘরে ঢুকতেই বুড়ি একগাল হেসে প্রণাম করে বলল, ' তোমাকে এতদিন পর বাইরে দেখলে তো চিনতেই পারতাম না ভানুদা। তুমি কিন্তু সেই ছোটবেলায় দেখা ভানুদার মতোই সুন্দর আছো। '
শুনে ভানুদা হেসে বুড়ির থুতনি ধরে আদর করে বললেন, 'তুই সেই আগের মতোই পাগলি রয়ে গেলি।'

বুড়ি ভানুদাকে সাদরে ঘরে এনে বসাল। তারপর শুরু হল তাদের নানান গল্পগাছা। আমি সব লক্ষ্য করছিলাম দূর থেকে। বুড়ি ভানুদার প্রায় গা ঘেঁষে বসেছে। ইনিয়ে বিনিয়ে বুড়ি যখন তার দুঃখের কথা বলে চোখের জল ফেলছে ভানুদা তার চোখের জল মুছিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আপদ। দেখে আমার গা জ্বলে যাচ্ছিল। বুড়ি একবারও আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল না। তবে ভানুদা কিন্তু আড়চোখে আমাকে কয়েকবার দেখেছে। খুব একটা প্রসন্ন হয়নি দেখে তা বুঝেছি। সে না হোক। তাতে আমার বয়েই গেল। 

দুপুরে ভানুদা বেশ তরিবত করে খেলেন। খেয়ে ঢেকুর তুলে বললেন, 'বুড়ি তোদের এই হোমের রান্না তো বেশ ভালো। আমাদেরটা আবার এত ভালো না। কি যে সব তেল মশলা ছাড়া খাবার দেয়। যা-তা।' তার মানে এই ভানুদাও বৃদ্ধাশ্রমেই থাকেন কথা শুনে বোঝা গেল। আর বুড়ির নাম যে সত্যিই 'বুড়ি' শুনে হাসি পেল। খাবার পর দেখলাম ভানুদার জন্য পান বের করে দিল বুড়ি। বাব্বা , আবার পান! নিজে তো খায় না। কাকে দিয়ে আনালো কে জানে! পান পেয়ে ভানুদা বিগলিত হয়ে বললেন, 'আমি যে পান খাই সেটা মনে আছে তোর!'
'থাকবে না আবার। তুমি তো আমার মায়ের কাছে এসেও হাত পেতে পান চাইতে। তোমার মা মানে সোনা কাকিমা তোমাকে যেজন্য বকাবকি করত, সব মনে আছে।' বুড়ি বলে। 

সন্ধ্যা নাগাদ ভানুদা ফেরার জন্য উঠে পড়ল। তাকে এগিয়ে দিতে দরজার কাছে গেল বুড়ি। ঠিক তখনই আমার দিকে তাকিয়ে ভানুদা বললেন, 'এটাকে আবার কোত্থেকে জুটিয়েছিস বুড়ি? এখানে এসব থাকতে দেয়! বিদেয় কর এটাকে।'

বুড়ি আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করল। আমি সোফা থেকে নেমে গা ঝেড়ে লেজ নাড়তে নাড়তে এসে বুড়ির গা ঘেঁষে দাঁড়াই। বুড়ি আমার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে, 'এ আমার সবচেয়ে আপনজন ভানুদা। যেদিন ওরা আমাকে এখানে রেখে গেল এই ভুলু খাওয়া দাওয়া ছেড়ে মরতে বসেছিল। বাধ্য হয়ে ওরা নিয়ে এসেছিল আমার কাছে দেখাতে। আমাকে দেখে ওর সে কি আনন্দ। আমাকে ছেড়ে কিছুতেই যাবে না। শেষে এই হোমের মালিককে বলেকয়ে ওকে রাখতে পেরেছি। ওকে এই শেষ-বসন্তের সকলেই খুব ভালোবাসে । ওকে বিদেয় করলে যে ওরা আমাকেই বিদেয় করে দেবে, দাদা।'

ভানুদা কী বুঝল কে জানে। আমার দিকে নাক কুঁচকে তাকিয়ে পা বাড়াল বাইরে। সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল নিচে। দরজাটা বন্ধ করে বুড়ি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, 'কেমন দেখলি আমার ভানুদাকে? কেমন হ্যান্ডসাম বল! '

আমি শুধু একটা শব্দ তুললাম মুখ দিয়ে, 'আঁ -উ-উ-উ। '
তার অর্থ যে 'কচু' বুড়ি বুঝল কিনা কে জানে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri