সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
27-November,2022 - Sunday ✍️ By- দেবলীনা দে 227

বানভাসি

বানভাসি
দেবলীনা দে
÷÷÷÷÷÷÷÷÷

একটানা চারদিন বৃষ্টি, পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শান্ত ঝোরা যেন দামাল, দিন-রাত ফোঁসফোঁস করছে। শিউলির কপালে চিন্তার ভাঁজ। এইভাবে একনাগাড়ে বৃষ্টি হতে থাকলে যে কোন সময় ধসে যেতে পারে তার দু-কামরার কাঠের বাড়িটা। সেই নিখিলের হাত ধরে বিয়ের পর এই ছোট্ট কাঠের বাড়িতে এসে ঢুকেছে, তারপর কতটা কাল পেরিয়ে গেছে, সুখের যেমন মুহূর্ত রয়েছে আবার দুঃখের দিনগুলি ঘরের কোণে থাকা চৌকির সঙ্গে শিউলিও সাক্ষী রয়েছে।
   গত কয়দিন ধরে তার চোখে ঘুম নেই।  কেবল পুরোন দিনগুলি একের পর এক এপিসোডের মতো তার মনে পড়ছে, সে দেখতে পাচ্ছে, পাহাড়ের ঢাল বেয়ে লাল ফিতে বাঁধা দুই বেনী, লাল পাড় সাদা শাড়িতে একের পর এক বাঁক পেরিয়ে স্কুলের দিকে ছুটে চলেছে। এমনি এক বৃষ্টির দিনে ভিজে চুপচুপে অবস্থায় গাছের তলায় দা‍ঁড়িয়ে বৃষ্টি থামার অপেক্ষায়, মনে ভয়, নিঝুম রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারব তো, মনে হয় ভিজে ভিজে ফিরতে হবে, আর দেরী করা ঠিক হবে না, এইভেবে গাছের নিচ থেকে সবে সাইকেলের প্যাডেলে পা দেবে, পাশে এসে দাঁড়াল লালটং বস্তির রাজু, তার সহপাঠী। তবে তেমনভাবে কোনদিন কথা হয়নি। 'কিরে বাড়ি যাবি তো, চল ধীরে ধীরে চলে যাই আজ বোধহয় বৃষ্টি থামার নয়। তারপর ক্লাসের কত রকম কথা, দুজনে কখন যেন বাড়ির কাছে চলে এসেছে। এবার বাড়ি যেতে পারবি, যা আমি দাঁড়িয়ে আছি। 'মা তুমি এখনও ঘুমোওনি, জানলার দিকে তাকিয়ে একমনে কি ভাবছ, ভয় পাচ্ছ কি? আমি তো আছি, তুমি চিন্তা কর না।' পাশে বসে থাকা শিউলি ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল, 'বাবু তুই অনেক বড় হয়ে গেলি। উপরওয়ালা আছে ঠিক আমাদের রক্ষা করবে।' বৃষ্টি খানিকটা ধরে এলেও পাশের ঝোরার জলের আওয়াজে বোঝা যাচ্ছে কতটা ফুঁসছে।
টিলার উপর এই কাঠের বাড়িটা কতটা যত্নে সংসার গড়ে তুলেছিল সে কথা বারে বারে মনে পড়ে। সেইসঙ্গে নিখিলের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক বাঁধনটা সুক্ষ্মভাবে বুনেছিল, কিন্তু তার আয়ু যে বেশিদিন নয় তা কি জানত। বিয়ের পর এমন বর্ষার দিনে দুজনে কাজ শেষে গল্পের ঝুড়ি খুলে বসত।তারপর রাত গড়িয়ে যেত তাদের কথা ফুরতো না। আশে-পাশে প্রতিবেশীরা বলত এমন করে সংসার করা যায় তোমাদের দেখে ভালো লাগে, যতই ঝড়-ঝাপটা আসুক না কেন দুজনে কেমন সুন্দর করে সমাধান করে ফেলত। তারপর শিউলির কোল আলো করে সন্তান এল। নিখিল সেই প্রথমদিন থেকে যত্নে কোনরকম খামতি রাখেনি। ধীরে ধীরে ছেলে বড় হতে লাগল, নিখিলের ব্যবসায় উন্নতি হতে শুরু করেছে, দুজনে ঠিক করল এবার বাড়িটা কিছুটা বড় করবে, কিন্তু তা আর হল না। এক সকালে ব্রাশ করার সময় নিখিল জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল, কাছের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার সময়টুকু পেল না। শিউলির সাজানো সংসার অতল জলে তলিয়ে গেল।
ধীরে ধীরে নিজেকে শক্ত করল, ব্যবসার হাল ধরল, শহর থেকে মালপত্র আনতে শুরু করল, সঙ্গে তার ছেলে। এমনি একদিন শহর থেকে মালপত্র নিয়ে ফেরার পথে স্কুল বেলার বন্ধু রাজুর সঙ্গে দেখা। সেই পুরোনোদিনের গল্প সঙ্গে বর্তমান উঠে এসেছে, রাজু সেচ দপ্তরে সুপারভাইজারের কাজ করে, বেশ কয়েক বছর আগে ডেঙ্গু তে তার স্ত্রী মারা যায়, ছোট্ট একটি ছেলেকে রেখে, তাই কাজ কর্ম এবং ছেলেকে মানুষ করা তার জীবনের লক্ষ্য। 
সকাল হতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে শিউলি, ঘরের সব কাজ সেরে সাইকেলে চেপে যেতে হবে দোকানে। ছেলেকে সব বুঝিয়ে তবে বেরোতে হয়। বাড়ির পিছনের ঢালে ছোট ছোট গাছগুলো এই কয়দিনের বৃষ্টিতে মাটি আলগা হয়ে শিকড় বেরিয়ে গেছে। এইভাবে বৃষ্টি চলতে থাকলে মাটি ধস নামতে পারে,  সেই আশঙ্কায় দিন কাটছে। মনে মনে বলল, 'আজ আর বেশিক্ষণ দোকানে থাকা যাবে না, চার পাশের অবস্থা ভালো নয়, যে কোন সময় বিপদ আসতে পারে।' 
দোকান থেকে ফেরার পথে, দূর থেকে দেখতে পাচ্ছে, নিচু সাঁকোটার উপর দিয়ে বড় স্রোতে নদীর জল যাচ্ছে, আশ-পাশ এর গ্রামের লোকজন ভিড় করে দেখছে, এরমধ্যে সেচ দপ্তরের কিছু লোক নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে, এদের মধ্যে রাজুকেও দেখতে পাচ্ছে। জল ক্রমশ বেড়েই চলেছে, খুব সাবধানে পার হতে হবে, এই ভেবে শিউলি ধীরে ধীরে সাঁকোটার উপর যেই পা রেখেছে, ওপারে থাকা লোকজন চিৎকার করে বারণ করছে,  কিন্তু ওর যে বাড়ি ফিরতেই হবে, ঘরে তার ছেলে রয়েছে, ভগবানের নাম জপ করতে করতে মাঝ সাঁকোতে পৌঁছতে আচমকা সামনের পাহাড় থেকে মাটি, পাথর আর ঘোলা জল ধসে পড়তে শুরু করেছে, শিউলি নিজেকে সামলাতে পারছে না, কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না, ওপারের লোকজন ভীত, সাহায্য করার ইচ্ছে থাকলেও সাহস করে উঠতে পারছে না। এদের সবাইকে পিছনে ফেলে এগিয়ে আসে বন্ধু রাজু, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিউলিকে রক্ষা করতে ছুটে এল। কিন্তু নিজেকে বাঁচাতে পারল না। স্রোতের টানে ভেসে গেল শিউলির চোখের সামনে, চিৎকার করতে লাগল সাহায্যের জন্য কিন্তু কেউ এল না। ভেসে গেল সেই ছেলেবেলার বন্ধু। 
বৃষ্টি শেষে আকাশ পরিষ্কার, শিউলির মনে ঝড় একইভাবে বইছে, বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে দুই ছেলেকে, দূর থেকে নিখিল আর রাজু হাসছে, আজ দুই ছেলের মা, ঘরে-বাইরে সমান তালে সামলে চলেছে শিউলি।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri