সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

বর্ষা দিনের মেঘমল্লার

বর্ষা দিনের মেঘমল্লার 
সুদীপ্তা চট্টোপাধ্যায়
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

বৃষ্টি নামলেই মেঘের মন অদ্ভুত এক মন্দ্রছন্দে ভিজতে থাকে অকারন,আনন্দ নাকি দুঃখ সে বোঝে না। বুকের ভিতরে আকাশের বজ্র বিদ্যুৎ-এর তালে তাল মিলিয়ে দ্রিমি দ্রিমি মাদল বাজতে থাকে; সেই ছোট্টবেলা থেকেই বরষা দিনে বাড়ির সামনের কদম ঘ্রাণের খোলা মাঠ আর খোলা টেরেস, বৃষ্টিতে ভেজার এক অদম্য আকর্ষন! 

ওয়াইপারের আলতো ধাক্কায় উইনসিল্ডের ওপর ছিটকে যাচ্ছে বর্ষার প্রথম বৃষ্টিদানা, অ্যামেরিকার সিজন ক্যালেন্ডারে বর্ষা নামে আলাদা কোনো ঋতু নেই … এপ্রিল থেকে জুলাই যখন তখন মেঘবৃষ্টির যৌথ অভিযান চলে।

নিউ জার্সি, নিউ ইয়র্কের পাবলিক ট্রান্সপোর্টের ডেলি কমিউটার মেঘ। নিউ জার্সি থেকে সাবওয়ে আর 
প্যাথ ট্রেনেই রেগুলার অফিস যাওয়া, বছরের প্রথমেই মান্থলি টিকিট কেটে রাখে কিন্তু আজ ভোরের অ্যালার্ম ক্লকের তীক্ষ্ণ, তীব্র আওয়াজও মেঘের ঘুম ভাঙাতে পারেনি।
শেষ রাতের ভেজা ভেজা বাতাস আর কম্ফোর্টারের ওমে ঘুমটা গাঢ় হয়ে সব রুটিন উল্টোপাল্টা করে দিয়েছে। 
পারকুলেটরে কফি বসিয়েই চলল স্নানে তারপর একটা ব্রেকফাস্টবার আর কফি মাগ নিয়ে ঢুকে পড়ল নিজের ছোট্ট হোন্ডা সিভিকে, আজ টাইম কার্ডে লেট মার্ক মাস্ট তবে গাড়িতে গেলে কিছুটা টাইম সেভ হবে। ট্রেনের নিজস্ব টাইমটেবিল তো মেঘের ওভার স্লিপিংএ  পিছিয়ে যাবে না।

জানলার কাঁচটা নামিয়ে দিল মেঘ, কতদিন পর ভোরের উদীয়মান সূর্যকে সাক্ষী রেখে ভ্রমণ; অন্যদিনগুলোয় ট্রেনে উঠেই মুখের ওপর নিউজপেপার রেখে একটা পাওয়ার ন্যাপ নিয়ে নেয় মেঘ।

আজ দিনটা অন্যরকম খোলা জানলা দিয়ে মুখে, ঠোঁটে, চুলে বৃষ্টির দানা ! মনটা ফুরফুরে হয়ে ফিরে যাচ্ছে ওদের বাড়ীর তিনতলার খোলা ছাদে। ছাদের বেডরুম, সংলগ্ন বাথরুম আর চিলেকোঠার সরু ঘর মেঘের দখলে ছিল পুরো তিনতলা ওর মেয়েবেলার একলার সাম্রাজ্য!  
স্নানের আগে মায়ের চোখ এড়িয়ে আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টিতে ভেজাটা তাই অসম্ভব ছিল না … 
তুমুল বৃষ্টির জলতরঙ্গে নূপুরের রিমঝিম বোল তোলাটা ওর একসময়ের প্রিয় খেলা ছিল। 

সিয়াটেলের মতো যদিও ঘ্যানঘ্যানে বৃষ্টির শহর বা বিশ্বের ছাতা রাজধানী লন্ডনের মতো নয় এই ইষ্ট কোষ্ট, তবে এখানেও বর্ষায় বৃষ্টি আর মাঝে মাঝেই ছোট বড় টর্নেডো, হারিকেন আসে জনজীবনকে একটু উল্টোপাল্টা তালে নাচিয়ে যায়।
মিডটাউনে গাড়ি পার্কের কথা মনে পড়তেই বর্ষার রোমান্টিক মুড একনিমেষে হাওয়ায় উড়ে গেল। সারাদিনের পার্কিংএ বাজেট ঘেঁটে যাবে। তার থেকেও বড় চিন্তা পার্কিং পাওয়া, অন্তরজালের মতো বিস্তৃত স্ট্রিট আর অ্যাভেনিউ ছড়িয়ে আছে ম্যানহ্যাটনের রাস্তায়, ওয়ান ওয়ের ঝামেলা, ইয়েলো ক্যাবের বিরক্তির হর্ণ, উবারের রুল না মানা ড্রাইভার সব সামলে যখন পার্কিং পেল তখন পেরিয়ে গেছে বেশ কিছুটা সময়। এর পরও পুরো তিনটে ব্লক হাঁটলে তবে অফিস।

হাওয়ায় ছাতা সামলানো কষ্টকর, মনে পড়ল একবার সাম্য সার্থককে বলছিল 
-সার্থক, মেঘকে সেন্ট্রাল পার্কে নিয়ে যা, আকাশে মেঘ জমলেই তো মেঘের বৃষ্টিধারা হতে মন চায় ওর ভেজার শখটাও মিটবে ম্যানহ্যাটনটাও দেখা হবে।
-ওর শখ মেটানোর এতই যখন ইচ্ছে তখন তুই নিয়ে যা না! তোদের দুজনের শখই মিটুক ! 

আজ কেন যে পুরোনো কথা মনে পড়ছে! বিয়ের পর তিনবন্ধুর শেয়ার্ড অ্যাপার্টমেন্টে এসে উঠেছিল মেঘ। তখন কিন্তু  ভীতু, ইনসিকিওর্ড টাইপ সার্থক প্রিয় বন্ধু সাম্যকে ছাড়া কিছুই করতে পারত না। এমনকি হানিমুনেও সাম্য ছিল ওদের সাথে। তারপর তিক্ততা বাড়তে বাড়তে এক অসুখ।
সংসার সামলাতে কবে যেন সাম্যর নামের পাশে পারমানেন্টলি অনুপস্থিত লিখে দেয় মেঘের মন।
যে বন্ধ মনের দরজার জং কোনোদিন খুলবে না জেনেও সেখানেই মাথা কূটে মরে তার যাবতীয় অভিমান। 
একটা পরিপূর্ণ সংসার তৈরির চার বছরের চেষ্টায় চারিদিকের খোলা আকাশ, মেঘ বৃষ্টির কলতান তখন চোখেই পড়ত না সে ভাবে।একটা অবিবেচক,স্বার্থপর, ইগো সর্বস্ব পুরুষ আর বেঁচে থাকার রুটিনে বদ্ধ  ছিল যাবতীয় যাপন।

শুভ্র! সাম্য! এতদিন পর হঠাৎ সেই ভুলে যাওয়া নামগুলো কেন মনে পড়ছে! 
বৃষ্টি এখন ঝিরঝির, ছাতা সামলে মেঘ ভাবে আজও সে বোঝে না  বৃষ্টি তার জলসখি নাকি মনখারাপের বাহানা ! জানে না এখন ঠিক কী ঘটলে তার মন ভালো হবে। কেন মনে হচ্ছে অফিস চুলোয় যাক ! কেন মন চাইছে হাতে কদম ফুল নিয়ে কেউ তার সামনে এসে দাঁড়াক।
আজ সারাদিন রিমঝিম বৃষ্টিতে ওর ছাতা উড়ে যাক! কেউ দৌড়ে যাক উড়ন্ত ছাতার পেছনে, না পেয়ে হাসতে হাসতে ফিরে আসুক তার পাশে! মেঘের কোমর জড়িয়ে ওর ভেজা আঁচল তুলে নিজের মাথা ঢাকুক! 
নিজের মনেই হেসে ফেলল মেঘ, মনটা আজ তার বশে নেই … উড়ে বেড়াচ্ছে ম্যানহ্যাটানের মিডটাউন থেকে উত্তরবঙ্গের প্রান্তিক সেই ছোট্ট শহরটায়…
এত বছর পর বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ভুলে যাচ্ছে এখানে কদমের মতো একটা ফুল দেখলেও সত্যি কদম ঘ্রাণ পায়নি কতকাল… আর উইকএন্ডের বাঙালী পার্টি ছাড়া শাড়িও পরা হয় না … তাই আজ তার পাশে কেউ থাকলেও আঁচল তুলে মাথায় দিতে পারত না!

কেন মনে হচ্ছে ঠিক কী কী না ঘটলে তার এমন তুমুল মন কেমন করত না, আজও বোঝে না মেঘ মন কী চায় ! বোঝে না ! নাকি ভাবে না ! আসলে ভাবতে চায় না।
সার্থকের বাড়ি থেকে সেল্টারে উঠে আসা তারপর আবার নতুন করে জীবনকে গুছিয়ে নেওয়ার তাগিদের মাঝে কেটে গেছে চারটে বছর, কত বর্ষা এল চলেও গেল … বৃষ্টিতে ভেজা হয়নি …
কিন্তু আজকের এই বৃষ্টির দিন কার বারতা নিয়ে এল ? কেউ কি পাঠাল মেঘদূত! মেঘপিওনের হাতে কী তার মনকেমনের দিস্তার সংকেত…
ইশারায় কোনো এক মেঘমল্লারের বেজে ওঠার ইংগিত! 

খেয়াল হলে বুঝল অফিস ফেলে পেরিয়ে এসেছে অনেকগুলো ব্লক … 
ফিরবে কী ফিরবে না ভাবতে ভাবতে ছাতা সামলে, ব্যাগ খুলে ফোনটা হাতে নিল মেঘ তারপর কনট্যাক্ট লিস্টে খুঁজতে লাগল একটার পর একটা ভুলে যাওয়া এবং ভুলতে চাওয়া নাম …

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri