পথ
পথ
রানা সরকার
=========
এ পথ অনন্ত কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম ফাল্গুন দেখেছিল একদিন। একদিন দেখিয়েছিলে তুমি দিগন্তের অমিশ্রিত রেখা। চোখের রেটিনায় এতো বড় আকাশ, এই নদী, অরণ্যের অদূরে শান্তশ্রী লোকালয় অনুক্ষণ জেগেছিলো স্মৃতি সোহাগের ছায়ায়। জেনেছিলাম পথ ভেঙে যেতে হবে পথের সন্ধানে। যুদ্ধ কী কখনো হয় ফুলের বিছানা অথবা শিথিল কোনো সহজ গণনা? এভাবেই নিয়ত পথ চলার ক্ষনিক বিরামে একদিন ঠিক তোমার মতো আমারও অনেক কথা ছিল। কথা ছিল পুরোনো এলবামের ধূসর ছবিগুলোকে আমরাই তুলে নেব স্মৃতিমুগ্ধ ভুবনে। কিছু কথা অমলিন সখ্য জড়িয়ে রেখেছে ধরে স্মৃতির মোড়কে। পেরিয়ে একটি শতক চেয়ে আছি সহস্রাব্দের দিকে। এই সমতটে তবু এক অনাদীকালের বিস্ময় ছুঁয়ে থাকে। আপন পদচিহ্ন যেভাবে এঁকেছে স্বজন ,প্রতিদিন সে কোন বালক এসে চেয়ে দ্যাখে।অনুসারিত এই পথ তাকে এগিয়ে নেয় সীমান্ত প্রান্তিকে। বালক এগিয়ে যায়। কালহরণের চাতুরি সেও জেনেছে এখন। পথের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায় নবীন প্রজন্মের কনিষ্ঠ স্বজন। সহযাত্রী সে প্রিয়জন আমার। স্বপ্নস্বাদে কত রাত জেগে থাকে মানুষ।সে অনেক গল্পকথায় জেগে থাকে দূরের অতীত। জীবনের দীর্ঘ এক অতীতপথ বর্তমানকে জুড়ে নিয়ে পথ ভাঙতে হয় কোনো এক অভীষ্ট লক্ষ্যে। বহতা নদী পাথুরের পথের বুক চিরে ভবঘুরের মতো এসে পথ করে নেয়। অবগাহনের স্মৃতি টানটান জুড়ে দেয় এপার ওপার। এই পথ পরিক্রমায় তুলনীয় জীবন নদী নিরুদ্দেশের মোহনায় কখনো কোনো গভীরকে ছুঁয়ে যায়। মানুষের গল্প বলার জন্য আরেকটি মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়। বিষয় ভাবনায় যারা গুনে চলে দিন রাত সপ্তাহ মাস বছর শেষে পথের সচিত্র বাঁকে যারা দাঁড়িয়ে যায় ,অপেক্ষমান তাদের কাউকে লুকানো দীর্ঘশ্বাস ভাসিয়ে নেয় দূরের কোথাও। এখানেই এই অনন্তকালীন পথে আমাদের মিলনের এক নিবিড় সাক্ষাৎ ঘটে। পেরিয়েছি পথ,দুঃসাহসের পথ দিয়েছে খুলে স্মৃতির দুয়ার। প্রিয় গোধূলির রঙ কুসুমিত হয়েছে নতুন। অমোঘ মৃত্যুর ছায়ায় স্বপ্নসাধ রক্তঘামে একাকার। এখানেই মুক্তি আমার, খুলে দেয় আলোর প্রাসাদ।
"আমি পথ ভোলা এক পথিক এসেছি "। জন্মের সেই ক্ষণ এবং একটি বিশেষ দিনের গল্প আমাকে আজও কেউ এসে শুনিয়ে যায়। "সমুখের শান্তি পারাপার "। সেই এক পথ - এক অন্বেষণ। "জীবনের জগতে প্রকৃতির অন্তিম নিশীথ ,চারিদিকে পোড়া সাঁকো সমাধির ভির/ সে অনেক ক্লান্তিক্ষয় যেন ঢের মহাসাগরের থেকে এসেছে নারীর / পুরনো হৃদয় নব নিবিড় শরীরে " । পুরনো হৃদয়ের এক নবনিবিড় শরীর নিয়ে আমাদের সুদূরের যাত্রা পথ। আর আমি? "আমি কান পেতে রই / ও আমার আপন হৃদয় গহন দ্বারে /বারে বারে।কোন গোপন বাসীর কান্না হাসি /গোপন কথা শুনিবারে বারে বারে। " এই ইচ্ছা নিসর্গের নিগূঢ়তম রূপের পথে আমার যাত্রা -পুনঃযাত্রা আমার। দেহাতের এই পথে আমিও গেয়েছি গান আবাল্য পড়শী আমার দুখিয়ার সাথে। গ্রাম রাঙালি ,অভিন্ন তহশীলে চিহ্নিত মৌজা এক - অদূরে বহতা এক মুজনাই নদী। লোকায়ত জীবনের এই পথে কোনো পথসীমা ছিলোনা কোথাও। সুবিস্তৃত পথ হাঁটতে বয়স পেরিয়ে গেছে আমাদের এই আবাসিক গ্রামে।
দূরকে অতিক্রম করার শুধুই এক পথ সুবিস্তৃত থেকেছে সামনে আমার। গাণিতিক সূত্র ধরে পৌঁছতে পারিনি কোনো রঙিন বন্দরে। দূরগামী মানুষের ভিরে সেকোন বেদুইন আমি ব্যস্ত কোলাহলে। হাওয়ায় কাঁপানো দিন ,স্পষ্টত মধুমাসে ঠিকানা বিহীন ছিলেম এক যোজন দূরের কোনো এক প্রান্তিক বন্দরে। নবম ফাল্গুনের দিনের নেই কোনো প্রত্যাশিত পর্ব আমার। জন্মদিন আমার ,বছর পেরিয়ে কতবার এইদিনে আর্দ্রতার হিমাঙ্কটুকু নিঙরে দেখেছি প্রজ্বলিত দুপুর। দূরের বন্দর ছিল একাকী শীতল। নোঙর বিহীন নৌ-তরী ভেসে ভেসে তারপর এতদিন ,এতপরে ছুঁয়েছে নদীকূল নিবিড় সমতটে । স্বপ্নের বাতিঘরে আমি সে নাবিক গড়েছি উত্তরকাল, নিজস্ব সংলাপ। এ মানসপটে ভ্রমণের পথ দীর্ঘায়িত হয়েছে ক্রমে। অমোঘ মৃত্যুর আগে শর্তহীন জেগে আছি- এগিয়ে এসেছি দূরে।
এভাবেই পথ অতীত পেরিয়ে বর্তমানকে ছুঁয়ে পৌঁছতে চায় এক অনাবিল কাঙ্খিত বন্দরে। "পথ আমারে শুধায় লোকে /পথ কি আমার পরে চোখে " এই সংশয় এই ক্লান্তিকর উচ্চারণ আমাকেও এক অনন্তকালীন জিজ্ঞাসার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। " যে পথ দিয়ে চলে এলি সে পথ এখন ভুলে গেলি -/কেমন করে ফিরবি তাহার দ্বারে মন,মনরে আমার । তাই ফেরা ,ফিরে দেখার এক অতীত চারণে সে মানুষ আমিও স্মৃতি ভারে বিপন্ন এখন। এখনো তবুও জোয়ার নদীতে শরীরে প্রদীপ্ত আহ্লাদ।
পথ ভেঙে যেতে যেতে যে গান গেয়েছিল তারা যে পথ অনন্ত জেনে কিছু কথায় জেগেছিলো রাতের প্রহর আমি সব জেনেছি তাদের। সুনিপুণ এঁকেছিল তারা পথের তোরণ। সেসব দিনের দিকে চেয়ে আজ প্রসারিত হাতে দাঁড়িয়ে সবাই -সে পথ দুরন্ত জেনেও লক্ষ মাইল দূরে মানুষের পরশে জাগে পথঘাট নিবিষ্ট আঁধার। ছায়াপথে বৃক্ষের সমীপে বসন্ত আবার।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴