আমাদের ছেলেবেলা কেটেছে খুব সরলতার মধ্যে। কোন জটিল বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন চেতনা ছিল না।
উৎসব
পার্বণ যেমন কাটত তেমনি রবীন্দ্র নজরুল জন্মজয়ন্তীও খুব উৎসবের আমেজ মেখে পালিত পাড়ায় পাড়ায়।
সেবার কী হল! রবীন্দ্র জয়ন্তীর অনুষ্ঠানের সূচী জানিয়ে দিতে মাইক বের করল বাণী ক্লাব।কালিবাড়ি পাড়ায় থাকতেন এক সত্তর বছরের বৃদ্ধা। পাড়ায় সবাই ওনাকে ঠাকুমা বলেই ডাকত।
সে সময় বাইরের দেয়ালে গোবর দিয়ে ঘুঁটে দেবার চল ছিল।
বোশেখ মাসের তপ্ত দুপুর। ঠাকুমা দেয়ালে ঘুঁটে দিচ্ছিল।
মাইকে তখন রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তীর প্রচার হচ্ছিল। ঠাকুমা গোবর মাখা হাতেই মাইকিং করার রিকশাটা দাঁড় করিয়ে বললেন--তরা কি রবীন্দ্রর জন্মদিন পালন করতাছিস? আমাগো পিছন পাড়ার রবি? ওই সুপারি চোর ডা?
মাইকিং করছিলেন আমাদের হরি কাকা। খুব রসিক মানুষ।
ঠাকুমার কথা শুনে বলল-নাগো ঠাকুমা ইনি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তুমি চিনো না? তুমি হেমা মালিনিকে চিনো ?
ঠাকুমা ফোকলা দাঁতে হেসে উত্তর দেয়- হ, চিনি তো! ওগো নাচন করে।
হরি কাকা বলে তুমি রবি ঠাকুর কে চেনো না? ক্যান ছোটবেলায় পড় নাই? কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি ...
ঠাকুমার সহাস্য উত্তর--হ পড়চি তো!
ওই তো ওই কবিতাটি যিনি লিখেছেন তিনিই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
ঠাকুমা বিড় বিড় করতে করতে কবিতাটি বলতে বলতে চলে গেল।
হরি কাকা কিছুতেই মেলাতে পারলেন না ঠাকুমার মেমোরির জি.বির হিসাব।