সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
04-December,2022 - Sunday ✍️ By- মধুপর্ণা রায় 231

টেলিফোন/মধুপর্ণা রায়

টেলিফোন
মধুপর্ণা রায়
===========

রাত দুটো নাগাদ বেস ফোন বাজছে! ইন্দ্রাণী তখন বিছানায় জেগে সিলিংকে আকাশ বানিয়ে নিতে লড়াই চালাচ্ছিল। সৌরভ অফিসের কাজে দিল্লি গেছে। আজকাল ইন্দ্রানীর ঘুম আসে না। এবং সে অতীত - বর্তমান - ভবিষ্যৎকে গেঁথে ছিঁড়ে জোড়া দিয়ে সময় নামের গাণিতিক বিপর্যয়কে অস্বীকার করবার একটা অদ্ভুত ভৌতিক খেলা চালিয়ে যায়। দিব্যি থেকে যাবার একটা জোর তার ভেতরেই আছে। রাতের পর রাত জেগে থাকা তাকে ক্লান্ত শ্রান্ত অতিষ্ঠ জাতীয় কিছুই করতে পারে নি।
লাফ দিয়ে উঠে বসল সে। এত রাতে ফোন কেন বাজছে! রিসিভার তুলে হ্যালো বলতেই ওপাশে আর শব্দ নেই। ইন্দ্রাণী ফোন কেটে দিল। ইন্দ্রাণী ঘরেদোরে আকাশ খোঁজে। ইন্দ্রাণী চোখ বুজলে অরণ্য দেখে। ইন্দ্রানী সমুদ্রের তলের অলৌকিক আলোকে খুব চেনে। তার কোথাও কোনো বাড়তি চাহিদা কিছুতেই তৈরি হয় না। সৌরভ তাকে "সুচেতনা তুমি এক দূরতর দ্বীপ" জাতীয় কিছু একটা বিবেচনা করে বাতিল করেছে। ইন্দ্রাণী বোঝে।
ফোন বাজছে আবার। ইন্দ্রাণী ঘড়ি দেখল। দুটো বেজে বারো। -- হ্যালো.....
-- কি খবর বৌদি?
ইন্দ্রানী সেকেন্ড বিরতি নিল।
-- আর কীই খবর হবে! তুই? তোর কি খবর রে?
-- দাদা কি ঘুমোচ্ছে? এত রাতে তুমি একাই এপাশ ওপাশ?
ভুরুতে ভাঁজ পড়ল। সৌমাল্য নয় এ। ইন্দ্রানী সচেতন হয়ে গেল।
-- আচ্ছা! এত রাতে তোর দাদা- বৌদিকে মনে পড়েছে, না? পাজি ছেলে?
--সুন্দরীদের সবসময়ই মনে পড়ে বৌদি। কী ফিগার মাইরি! হোঁচট খেল ইন্দ্রাণী।
-- তুই কবে থেকে বৌদির সঙ্গে এ ধরনের কথা বলা শিখলি রে সোম? আমেরিকা কি শেষে এইসব শেখাচ্ছে নাকি? ও দেশে কি বাছবিচার নেই? যাক গে, এখন ছাড়লাম। তুই মন দিয়ে অফিসের কাজ কর। আমি রাখছি।
৷ ফোন কেটে দিল ইন্দ্রাণী। ক্রেডেল থেকে রিসিভার সরিয়ে রাখল। বুকের ভেতর আওয়াজ হচ্ছে!
সৌরভ দিল্লি থেকে ফিরে এবার একটু বেশি ক্লান্ত। ঘুমোচ্ছে অঘোরে। ইন্দ্রাণী ভাবছে ওর সুগারটা একবার টেস্ট করিয়ে নেবে। ইনসমনিয়া হয়ে যাচ্ছে নাকি তার! ঘুম আসতে আসতে ভোর চারটে বেজে যায়। আরো দু'দিন ফোনটা এসেছে। ঠিক রাত দুটোয়। কলকল করে কথা বলেছে ইন্দ্রানী।
-- কি রে সোম? নিজের মাকে তো কই নিজের রিসেস পিরিয়ডে ফোন করে ঘুম ভাঙাস না?! বৌদিকে না জ্বালালে শান্তি হয় না, না?
-- বৌদি প্রেম আমার। দাদাকে দিয়ে চলবে না তোমার। লোকটা শব্দ করে হাসছিল। ইন্দ্রানী দৃকপাত করতেই চাইল না। নিজের কথা চালিয়ে যাচ্ছিল।-- হ্যাঁ রে, তুই বিয়ে টিয়ে করবি না? মেমসাহেব জোটালি কোনো? দেখ সোম, ওই সাদা গায়ের রঙ কিন্তু আমার একটুও ভালো লাগে না। অবশ্য তোর ব্যাপার তুই বুঝবি। নে! অনেক হয়েছে। এখন ঘুমোব। কাল আমার অনেক কাজ। রাখছি রে... সাবধানে থাকিস সোনা।
বোতল থেকে অনেকটা জল খেল ইন্দ্রাণী।
দিন তিনেক তো হলই। সৌরভকে কিচ্ছু বলে নি সে। বলতে ইচ্ছে হয় নি। উষ্ণতাহীন তাপের আঁচটুকু ছাড়া আর কিই বা পড়ে আছে সম্পর্কের?! গ্যাসে চায়ের জল বসিয়ে জানলা দিয়ে নদীর দিকে তাকাল ইন্দ্রাণী। নদী তো খালে পরিণত হয়েছে। ওভেনে জল ফুটছে। ফুটেই যাচ্ছে। ইন্দ্রানী ভাবছে, আজ রাতেও ফোনটা আসবে। সৌরভ কী অস্বাভাবিক ঘুমোয়! টেরই পায় না! লোকটা পরশু রাতে ফট করে বলল-- দাদার সঙ্গে ওটা হয়ে গেছে? গা গুলিয়ে উঠেছিল ইন্দ্রানীর। সে হেসে গড়িয়ে পড়ে বলেছিল-- ওটা? মানে, সেই ডিলিংটা তো? না রে বাবু..., এখনো কিচ্ছু বলি নি। দাদাকে তো জানিসই। দুম করে রেগে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করবে। তুই আয়। তোকে দিয়ে বলাব। লোকটা হিসহিস শব্দে বলল-- ওটা কি আর ছেলেতে ছেলেতে হয় গো বৌদি? ইন্দ্রানী আবারও হেসেছিল-- না সৌমাল্য বাবু, তাই- ই হয়। মেয়েরা কোনো কথা বললেই দোষ। আর তোমাদের পরিবার বেশ মেল- শোভিনিস্ট। লোকটা বলেছিল-- যাও শুয়ে পড়ো। খুব দেখতে লোভ হয়। ইন্দ্রানী রিসিভার নামিয়ে দিল।..... এই যাহ! চায়ের জল শুকিয়ে এসেছে! সসপ্যানে নতুন করে জল ঢেলে দিল ইন্দ্রাণী।
লোকটা কিছুতেই দমছে না। ফোন টিজিং চলছে। কলার আই.ডি থাকলে নাম্বারটা পেয়ে যেত ইন্দ্রানী।
-- আজ শিলিগুড়ি যাচ্ছি। নাইট স্টে করতে হবে। মিটিং আছে একটা। সৌরভ কাঁধের ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছে। ইন্দ্রানী তাকাল।-- আগে তো বল নি?! সৌরভ জবাব দিল না। ইন্দ্রানী জানে, সৌরভ আজকাল বাড়তি কথা মনে করলে, জবাব দেয় না। সেকেন্ড কয়েক সে সৌরভকে দেখল। দীর্ঘশ্বাস ঠেলে ভেতরে পাঠিয়ে বলল-- খেয়ে যাবে? ইন্দ্রানী লক্ষ্য করল-- ব্যাগ গোছাতে গোছাতে মোবাইল- মেসেজ সামলাচ্ছে সৌরভ। তার মুখে কথারা খেলছে। আলো.... আবছা আলো.... একটু অন্ধকার............. এবং আশ্বিনের শুরুতে শিলিগুড়ির রাতভর মিটিং সারতে হবে বলে গরম জ্যাকেট ঢুকছে তার রুকস্যাকে।
জ্যোৎস্নায় সব কেমন ধরা- ছোঁয়ার বাইরে। ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে নাইট- কুইন ফুটবে আজ। রাতের নির্ঘুমে সে আজ রানীর জেগে ওঠা দেখবে। ইন্দ্রাণী ঠিক করে নিল। সকলে বলে- তার চেহারায় আভিজাত্য আছে। ইন্দ্রানী আয়নায় নিজেকে দেখল।
আর গ্রামীণ দুই জলাশয় জেগে রইল তার মুখটি ঘিরে। ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল তারপর । রাতের রানী রাতেই কথা বলে। গুছিয়ে নিচ্ছিল, আজ লোকটার সঙ্গে শেষ কথা বলবে সে। দেওর সাজিয়ে আজ পাঁচদিন যে খেলা সে খেলছে, বন্ধ করে দেবে।
বিছানায় জেগে বসে আছে। মুখোমুখি জানলাটা খোলা। ওখানে নদী। ওখানেই চাঁদের আলো। ওখানে একটা নৌকো আছে কি? ইন্দ্রানী দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকাল। রাত কত হল? মাত্র একটা বেজে পাঁচ। এ কথাও ভাবল ইন্দ্রানী যে, এবার সারেণ্ডার করে দেবে বেস ফোন।
ফোনের তরঙ্গে কেঁপে উঠল ঘর। ধ্বক করে উঠল বুক। ঘড়ি বলছে সোয়া একটা। বেনিয়ম হয়ে গেল। আজ খোলাখুলি কথা বলবে। অসভ্যতার কড়া জবাব দেবে। রিসিভার তুলে ইন্দ্রাণী অথচ জলের মত বইতে লাগল-- সোম, এবার দাঁড়া। তোর কানটা মুলে দেব। যখন আমার বিয়ে হয়, তখন থেকে তুই আমাকে জ্বালাচ্ছিস। বৌদি, আমাকে পড়াও। বৌদি, আমার প্রজেক্ট করে দাও। বৌদি, আমাকে সিনেমায় নিয়ে চল। বৌদিকে জ্বালিয়ে মারার বাতিক তোর এখনো যায় নি! না?
ওপারে শব্দ নেই। ইন্দ্রাণী দম নিল। অপেক্ষা করল।
খেলা শেষ করবার প্রতিজ্ঞা ভুলল। এবং বলে চলল-- সোমবাবু, তোমার জন্যে আমরা কিন্তু একটা দারুণ মেয়ে দেখেছি। খুব স্মার্ট। ট্রেন্ডি। তোর বৌদির মত ক্যাবলা নয়। লক্ষ্মী বাবু, এবার আর আপত্তি.....
-- ম্যাডাম.....
ফোনের ওপার থেকে এই সম্বোধন কানে আসতেই থমকে গেল ইন্দ্রানী। ওপারেও নৈঃশব্দ। দেওয়াল ঘড়ির বুকের আওয়াজ বেশি স্পষ্ট হচ্ছে। ইন্দ্রাণী সব সামলে নেয়। নিতে পারে। বলল-- বলুন।
-- আমি ক্ষমা চাইছি।
এক মুহূর্ত চুপ থাকল ইন্দ্রানী। খুব হাল্কা হাসল। দেখল না কেউ।
-- কেন?
আর শব্দ নেই কোনো। কেউ কেটে দেয় নি ফোন এখনও। সে আবার বলল-- কেন আপনি ক্ষমা চাইছেন?
-- আমি সোম নই।
-- আমি জানি। কেন? আপনি জানেন না যে সে কথা আমি জানি? হাসছিল ইন্দ্রানী। খুব সুন্দর করে হাসছিল।
লোকটা বার বার থমকে যাচ্ছে। -- জানি।
ইন্দ্রানী বলল-- একটা কথা জানতে চাইব?
-- বলুন।
-- আপনি কি খুব একা? মানে, নিঃসঙ্গ? কেউ নেই আপনার?
এবারের চুপ থাকাটুকু দশদিক চেপে তীব্র হচ্ছে।প্রশ্নের জের আর রাখবে না ইন্দ্রানী। এ-ই তার চরিত্র।
-- আর কখনো কোনো মহিলাকে এমন অপমান করবেন না। কেমন? খুব নরম ইন্দ্রানীর স্বর।
-- না। করব না। খুব বেশি শান্ত গলা, ওপারের।
-- আমার বাড়িতে আসতে পারেন কখনো । আমার স্বামী আছেন। আমার একটা ছেলেও আছে। বাইরে পড়ে। শাশুড়ী আসেন খুব আমার কাছে। সবার সঙ্গে আলাপ করবেন? আপনার ভালো লাগবে দেখবেন।
নীরবতা বড় হচ্ছে। মাঠের পরে মাঠ ছাড়িয়ে আরো অনেকটা বিস্তৃতি......... ইন্দ্রানী অপেক্ষায় রইল।
--- আমাকে ক্ষমা করেছেন তো?
-- করেছি। প্রথম দিনেই করেছি।
-- আর কোনোদিন কথা হবে না ম্যাডাম। আপনাকে মনে থাকবে।
ফোন কেটে দিল লোকটা। ক্রেডেল থেকে আজ আর রিসিভার সরাল না ইন্দ্রানী।। বুকের ভেতরে উদাত্ত জ্যোৎস্না নেই তার। ধুয়ে যাওয়া সীমাহীন একা মাঠ আছে শুধু।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri