সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
04-December,2022 - Sunday ✍️ By- শাঁওলি দে 269

জীবনের গল্প/শাঁওলি দে

জীবনের গল্প
শাঁওলি দে
^^^^^^^^^^^^

গ্রামে চাকরি। বাড়ি থেকে দূরত্বও বেশি। সকালে উঠেই যে ছোটা শুরু হয়, থামে একেবারে রাতে। নিজেকে নিয়েও ভাবার সময় পাওয়াও মুশকিল। এইরকম চূড়ান্ত ব্যস্ততা ও একঘেঁয়েমির পর্বে হঠাৎ হঠাৎ এমন কিছু ঘটনা হয় বা এমন কিছু মানুষের দেখা মেলে যা মনে চিরতরে দাগ কেটে যায়। ঠিক যেমন আমার স্কুলের ক্লাস সেভেনের সেই ছেলেটা।
জয়েন করার প্রথম দিকে সেভাবে নজরে পড়ে নি; মাসখানেক পর তখনও আমি স্কুটিতে যাওয়া শুরু করিনি, অটোর জন্য অপেক্ষা করছি, হঠাৎ আমার এক কলিগ্ আমাদেরই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটা লম্বা, মোটাসোটা একটা ছেলের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বলল, লাল্টুকে চেনো তো? আমাদের স্কুলেই পড়ে। দারুণ ভালো ছেলে কিন্তু!
আমি তাকালাম ছেলেটির দিকে আর ওমনি ও এক ছুট! বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে এরপর। লাল্টু এসেছে বা হয়তো আসেনি আমি সেভাবে খেয়াল করিনি। একদিন টিফিনের পর আমি ক্লাস নিচ্ছি, সেভেনেরই, হঠাৎ ট্রেনের হুইসেল কানে এল। যেখানে চাকরি করি সেটি প্রত্যন্ত এক গ্রাম। এখানে ট্রেন তো দূর অস্ত, বাসও ঢোকে না। নিজস্ব বাহন অথবা অটোগুলোই ভরসা। এরকম একটা জায়গায় ট্রেনের শব্দ বেশ অবাকই হলাম। এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম; ছাত্রছাত্রীরা বোধহয় আমার মনের ভাব বুঝতে পারল। কেউ একজন দাঁড়িয়ে বলল, মিস্, ওই যে রেলগাড়ির শব্দটা পাচ্ছো, ওটা কিন্তু সত্যি সত্যি না! লাল্টু মুখ দিয়ে আওয়াজ করছে।
লাল্টু! নামটা খুব চেনা চেনা ঠেকল। জানতে চাইলাম কোন্ ক্লাস রে? আমাদের ক্লাসেই তো পড়ে ও মিস্। কিন্তু খুব স্কুল কামাই করে। আমি বললাম ডাক তো ওকে। ওরা তারস্বরে ডাকতে শুরু করল, লাল্টু, ওই লাল্টু, ওই লাল্টু, এদিকে আয় মিস্ ডাকছে তোকে। মিনিট খানেকের মধ্যেই একটা লম্বা মোটাসোটা ছেলে ক্লাসের ভেতরে ঢুকে আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল। দেখেই চিনতে পারলাম ওকে, যাকে ক'দিন আগেই আমার কলিগ পরিচয় দিয়ে বলেছিল, ভালো ছেলে!
আমি বললাম কিরে স্কুলে আসিস নি কেন? ও কোনো উত্তর দিল না। ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম ওই রেলগাড়ির আওয়াজটা তুই করছিলি? কথাটা শুনেই লাল্টু সেদিনের মতোই এক ছুটে পালাল। আমি অবাক হলাম। সেভেনেরই এক ছাত্রী পূজা বলল, জানো তো মিস্ লাল্টু না অনেক কিছুর আওয়াজ মুখ দিয়ে করতে পারে। পশু, পাখি, ব্যাঙ, পোকা, বৃষ্টি আরও কতকিছু। ভালো লাগল শুনে। ওদের বললাম জানিস যারা এইরকম মুখ দিয়ে অনেক কিছুর আওয়াজ করতে পারে তাদের কি বলে? আমার ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলো একে অন্যের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগল। আমি হেসে বললাম ওদের হরবোলা বলে। ওরা তো শুনেই লাল্টু হরবোলা, লাল্টু হরবোলা বলে ডাকতে লাগল। ক্লাস শেষে স্টাফরুমে গিয়ে কলিগদের কাছে জিজ্ঞেস করায় ওরাও জানালো লাল্টু সত্যিই হরবোলা।
(২)
পরদিন ক্লাসে যেতেই প্রথম বেঞ্চে আবিষ্কার করলাম লাল্টুকে। ধবধবে সাদা একটা জামা পড়ে লাজুক মুখে দাঁড়িয়ে আছে। লিখতে দিয়েছিলাম আমি। সবাই খাতা দেখালেও একমাত্র ও বাদ। কারণ জানতে চাইলাম, কিচ্ছু বলল না। বসেই রইল। পাশ থেকে গোবিন্দ বলে উঠল, ও ঠিকমতো লিখতে পারে না মিস্! বললাম, নাম লিখতে পারিস তো? ঘাড় নাড়ল ও; অর্থাৎ পারে। লিখে আন তো? কিছু পর খাতা হাতে হাজির হল সে। লিখেছে সে, যথাযথই। কিন্তু আর কিছুই পারে না দেখলাম। কথাও প্রায় বলে না। বললাম, কারো একটা ডাক ডেকে শোনা তো? ও তবু চুপ করে রইল, হাসি হাসি মুখ করে।
এরকমই চুপচাপ ও। ক্লাসের সবাই ভয়ঙ্করভাবে পেছনে লাগলেও ও কিচ্ছু বলে না। ওকে যত দেখি ততই অবাক হই। ও যেন এই জগতের কেউ না। সবার থেকে আলাদা। অন্য গ্রহের মানুষ। যে সময় ওর অন্য বন্ধুরা খেলে বেড়ায়, তখন ওকে দেখি মাঠে একটা কাঠি দিয়ে আঁকিবুকি কাটছে। বাকিদের চিৎকার চেঁচামেচি যেন ওর কানে পৌঁছাচ্ছেই না।
আর একদিনের কথা, সেদিন বৃষ্টির জন্য ছাত্র-ছাত্রী খুবই কম। আমি সবাইকে ছবি আঁকতে বললাম। ওরা যে যেমন পারে এঁকে দেখালো। কারোটা ভালো, কারোটা খারাপ। শুধু লাল্টু দেখালো না। আমিই উঠে ওর কাছে গেলাম। আর গিয়ে যা দেখলাম তাতে অবাক না হয়ে আর কোনো উপায় থাকল না। ক'দিন আগেই ব্ল্যাকবোর্ডে একটা ছবি এঁকে দিয়েছিলাম, লাল্টু অবিকল ওই ছবিটা এঁকেছে। অথচ দেখাতে লজ্জা পাচ্ছে। সেদিন আমি ওর আরো একটা গুণ আবিষ্কার করলাম। খুব প্রশংসা করলাম ওর। তারপর থেকে স্কুলে গেলেই লাল্টুর খোঁজ করি আমি। কোনদিন যদি স্কুলে নাও আসে ওর উপস্থিতি ঠিক টের পেয়ে যাই। কখনো কোনো পাখির ডাকে, কখনো বা দিনের বেলায় ঝিঁঝি পোকার ডাকে, বা অন্য কোনো কিছুর ডাকে।
(৩)
লাল্টু স্কুলে আসলে পড়ার জন্য চাপ দিই না আমি। সবাই যখন লিখতে পড়তে ব্যস্ত তখন ও খাতা ভর্তি করে এঁকে রাখে কত কী! আমি অন্যদের নিয়ে ব্যস্ত থাকলে ও বেঞ্চে নানারকম শব্দ করতে থাকে, যাতে আমি ওর খাতা দেখি আর বলি বাহঃ! লাল্টু দারুণ হয়েছে তো!
একদিন জানতে চাই বড় হয়ে কি হবি রে লাল্টু? ও ওর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে জানায় মাছ ধরার লোক হতে চায় সে। জানলাম, রোজ সকালে আর ছুটির দিনগুলোতে অনেক মাছ ধরে ও। আমাকেও একদিন পুঁটি মাছ দেবে বলে জানায় লাজুক মুখে। পড়াশোনা করে না, কিন্তু স্কুলের কোনো কাজ হলে ও সবার আগে হাজির হয়। পনেরই আগষ্ট হোক কিম্বা ছাব্বিশে জানুয়ারি, বৃষ্টি পড়ুক অথবা তীব্র শীত, কেউ আসুক না আসুক লাল্টু আসবেই ফুল হাতে, ফিটফাট হয়ে।
এই হল আমাদের লাল্টু। অপরিণত, অমনোযোগী অথচ কি ভীষণ নিষ্পাপ, সরল আর প্রতিভাবান। কোনদিনই আমার বা অন্যদের সাথে বেশি কথা বলে না ও, তবে ফেরার সময় আমরা যতক্ষণ না পর্যন্ত অটোতে উঠি কিম্বা স্কুটি, বাইকে চাপি বুঝতে পারি ও আশেপাশেই আছে। জানি না স্কুলের পরীক্ষায় ও উতরোতে পারবে কিনা, তবে চাই ও যেন এরকমই থাকে! সবাই তো ছুটছেই পিঠে বোঝা নিয়ে ও নাহয় একটু আলাদাই থাকল। তাতে পৃথিবীর কোথাও কোনো ক্ষতি হবে কি? [**সবসময় সব গল্পের চরিত্র ঘটনাবলী কাল্পনিক হয় না।**]

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri