সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
27-November,2022 - Sunday ✍️ By- প্রসেনজিৎ চৌধুরী 177

জলছাঁট

জলছাঁট
প্রসেনজিৎ চৌধুরী
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

ঝুম ঝুম বৃষ্টির সাথে অনিকেতের একটা অদ্ভুত সম্পর্ক। বৃষ্টি হলে যেমন নিজের ভিজতে ইচ্ছে করে, তেমনি জীবনের নানা সময়ে এই বৃষ্টির ছাঁটের একটা আলাদা স্বরলিপি অনিকেতের জীবন জুড়ে। ছোটবেলাতে টিনের চাল বেয়ে সারিবদ্ধ জলধারা, আর একটু জমা জলে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি গোল গোল বৃত্ত তৈরি করলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত অনিকেত। একটু বড় হলে সিঁড়ি ভাঙা অংকের কাগজগুলো আর লীন তাপ এর সংজ্ঞা লেখা ছোট ছোট কাগজ নৌকো হয়ে ভেসে যেত জলধারার মজাদার গতিপথে ।
        
      ঝিম ঝিম বৃষ্টি হঠাৎ আকাশ ভেঙে এলে তুলিকে পেছনে নিয়ে আচমকাই বাইক থামাতে হয় বড় দীঘি চা বাগানের সামনের গেটের পাশে একটা একতলা ঘরের বারান্দায়। আজকের বেড়ানোটা ঠিক জম্পেশ হল না। সেই বৃষ্টিতে এদিক-ওদিক জনশূন্য দেখে তুলিকে বুকে টেনে নিয়ে চকিতে ঠোঁট ছুঁয়েছিল তুলির চিবুক। দু-একটা বৃষ্টি দানা গড়িয়ে গিয়েছিল দুজনের কেঁপে ওঠা থুতনি বেয়ে। বৃষ্টির জন্য এই টিনের চালের নিচে দাঁড়িয়ে সেই ছেলেবেলার টিনের চালের জলের ধারার মতো যে জলের সারি গড়িয়ে পড়ছিল তাতে তুলির হাত ভিজিয়ে জানতে চেয়েছিল অনিকেত -- বাসিস?
-- কি বাসব?
-- ভালোবাসিস ?
 এই প্রশ্নের উত্তর অনিকেত আজ ৩৫ বছর সংসারেও তুলির মুখ থেকে শুনতে পায়নি । অথচ বৃষ্টির পর বৃষ্টি ভিজিয়ে গেছে ওদের সংসার। ঝিরঝির থেকে ঝমঝম। 

     অনিকেতদের বাড়ির পাশেই শিলকুরা  নদী। ধরলা ব্রিজ থেকে বাম দিক দিয়ে বয়ে গেছে ধরলা নদীর শাখাটি । হরিসভা, আদাবাড়ি, সারিপাকুরি, বিদুরের ডাঙা হয়ে বাসাসুবার কাছে তিস্তায় গিয়ে পড়েছে। নদীর ওপারে মধু রায়ের দহলা। সশব্দে বৃষ্টি নামলে ওপাশে বাঁশবন সাদা ঝাপসা হয়ে ওঠে। সাদা বৃষ্টি ঢেকে দেয় সবুজ রঙের বাঁশঝাড় আর কিছু সদ্য গজিয়ে ওঠা কিছু টিনের বাড়ি। ওখানেই খেলতে যায় তুলি অনিকেতের একমাত্র সন্তান বিভু। একটা বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে খেলার মাঠ অনিকেতের ছোটবেলায় ওই বাড়িগুলো ছিল না। বৃষ্টি জলে ছুটে বেড়ায় কিশোরেরা। আছড়ে পড়ে। খেলতেই থাকে বৃষ্টিতে। এ এক অন্য আনন্দ। তারপর মিয়ানো মুড়ির মত বাড়ি ফিরে আসে বিভু খেলাশেষে। তুলি রাগ করে। সন্ধেবলায় পায়ের পাতায় গরম সরষের তেল ডলে দেয়। হ্যারিকেন -এর উপর মোটা কাপড় গরম করে সেঁক দেয় বুকে পিঠে। পরদিন সকালে বাসক পাতার তিত সবুজ রসে লোহার শিক পুড়িয়ে মধু দিয়ে খেতে হয় বিভুকে। বৃষ্টিতে ভেজার মাশুল। নিজেকে খুঁজে পায় অনিকেত। তার নিজের ছেলেবেলা। এ যেন হাতে হাত রাখা এক অনবদ্য বৃষ্টির ধারাপাত। 

সবার অমতে বিয়ের পর যেদিন বাবার গায়ে হাত তুলতে যায় বিভু, সেদিন বৃষ্টি ছিল। বরাবর ভালোমানুষ অনিকেত প্রথমে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল কিছুক্ষণ। দেওয়ালে টাঙানো মায়ের ছবিটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল বেকুব অনিকেত। বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি। দৃঢ় মুখে নিজের ছেলেকে বাড়ির বাইরে যাবার রাস্তা দেখিয়ে দেয় তুলি। মাথায় বৃষ্টি নিয়ে বিভু আর তার বউ বাড়ি ছাড়ে। তাদের একমাত্র সন্তান। ভালোবাসার সন্তান। সেদিন রান্না হয়নি বাড়িতে। সিঁড়ির উপরে টিনের ছাউনির কোন একটা ছিদ্র দিয়ে বৃষ্টির জল পড়ছিল। টুং টাং। চোখের জল মুছে একটা সসপ্যান বসিয়ে আসে তুলি। সেই সসপ্যানে টুংটাং, ছিপ ছিপ, জলদানার শব্দ সারা বাড়িতে ছড়িয়ে পড়েছিল সে রাতে। গভীর রাতে বারান্দায় অনির বুকে আছড়ে পড়ে চিৎকার করে কেঁদেছিল তুলি। তখনও বাইরে ভীষণ বৃষ্টি। 
              
       গলিন্দ্রনাথ স্কুলের পাশে শিলকুরা নদীর উপর কংক্রিটের সেতু পেরিয়ে বাঁহাতে কিছুদূর গেলেই হিন্দুদের দাহ ঘাট। কোনরকম একটা ছাউনি করা। তুলির ঘি মাখানো নিথর দেহটা সাজানো আম কাঠের উপর শায়িত। নিয়ম মেনে আগুন ধরাল অনিকেত। আজ সকাল থেকেই মেঘ ডাকছিল। এবার শুরু হলো বৃষ্টি । তবে বৃষ্টির ধার তেমন নেই। আগুনের সাথে বৃষ্টি দানাদের অলিখিত লড়াই। যেন অসম আক্রোশ। এক দৃষ্টিতে আগুনের দিকে তাকানো অনিকেত। হালকা বৃষ্টি ঝরে চলেছে। অবিচ্ছেদ্য শ্রাবণ ধারা। আর ওদিকে গনগনে আগুনের আস্ফালনে স্বপ্ন পুড়ে চলেছে অনিকেতের। যেন বৃষ্টি ধারায় লেখা হচ্ছে অনিকেতের চরম একাকীত্বের শ্রাবণ গান । 
        
- তুই ছাতা আনিসনি?
- না, জানিস না বৃষ্টিতে ভিজতে আমার ভালো লাগে! তাছাড়া পড়তে এলে ছাতা বইতে ইচ্ছে করে না ।
--তাই বলে ইচ্ছে করে কেউ জলভেজা হয়? 
--আমি হই !!
--আয় এই ছাতার নিচে আয়!!
-- না থাক,
--ঠিক আছে, আর ডাকব না। অভিমান হয় তুলির।
-- নে বাবা নে এই এলাম, তবে ছাতার হাতল কিন্তু আমি ধরব।
-নে ধর ।
-একটা কথা জিজ্ঞেস করব তুলি ? 
-বল !
-বাসিস?
-কি বাসব?
- ভালোবাসিস?
            
 আর শোনা হল না এর উত্তর। দারুণ বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে সব। দাহ কাজ সমাপ্ত হল। মাটির কলস উল্টোদিক থেকে নিচু হয়ে দু পায়ের ফাঁক দিয়ে ফাটিয়ে ঘরে ফিরছে অনিকেত। বৃষ্টি হচ্ছে খুব। টিনের চাল বেয়ে জলসারি। অঝোর। নিজের দুই হাতের আঁজলায় জল নিয়ে মুখে ছিটাল অনিকেত। আজ আর টাওয়েল হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকবে না তুলি । 

দার- ও- দিওয়ার পে শকলিন সে বানানে আয়ি। ফির ইয়ে বারিশ মেরি তানহাই চুরানে আয়ি।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri