সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
27-November,2022 - Sunday ✍️ By- সুদীপা দেব 225

জল-বিন্দু

জল-বিন্দু
সুদীপা দেব
------------------

ভোররাত থেকে মুষলধারায় বৃষ্টি হয়ে চলেছে। সকাল এগারোটার পর একটু রাশ টেনেছে ঠিকই তবে থেমে যায়নি। এরকম দিনে বাড়িতে বসে খিচুড়ি ইলিশ মাছ ভাজা আর দেদার আড্ডা পেলে আমার মতো বেসুরো মানুষও বর্ষার প্রেমে গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠতে পারে। কিন্তু আজ আর এত আয়েস করার উপায় নেই। দুপুর দুটো নাগাদ উত্তর-পশ্চিম কোণ আবার ভীষণ কালো হয়ে আসছে। সুযোগ পেলেই জমাটবাঁধা ভারী মেঘ গলে পড়বে। সন্ধের আগে পৌঁছাতে পারলেই ভালো হয়। এত বৃষ্টিতে রাত হয়ে গেলে ড্রাইভ করতে অসুবিধা হবে। টুকটাক জিনিস ব্যাগে ঢুকিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। 

শিলিগুড়ি থেকে সেবক আসতে বেশ জোর বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। পাহাড় ক্রস করতে একটু ভয় ভয় করছে। খুব ধীরে ধীরে চলে এলাম। মালবাজার পর্যন্ত মোটামুটি ঠিকই ছিল, আবার তুমুল বৃষ্টি। স্পিড টুয়েন্টি। গাড়ির ওয়াইপার ক্লান্তিহীনভাবে আমায় সাহায্য করে চলেছে। চোখের নাগালে সমস্ত পৃথিবী যেন সাদা জল-চাদরে ঢাকা। বাতাসের হাত ধরে আকাশ তার অভিমানী বুকে কৃষ্ণ মেঘের বাসর সাজিয়েছে।
এরকম মাতাল বৃষ্টি আমার স্ত্রী রিয়া খুব এনজয় করে। মধ্যরাতেও ঝমঝম শব্দে আমায় জাগিয়ে তোলে সোহাগী ময়ূরীর মতো ভিজবে বলে। আজ রিয়ার ইচ্ছা ছিলনা আমি ফিরে, আসি কিন্তু উপায় নেই। জলঢাকা নদীতে জল বেড়ে যায় এ সময়। আমার সহকর্মী সনাতন বাবু অসুস্থ হয়ে লিভ নিয়েছেন সম্পূর্ণ স্টেশনের দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হবে। স্পিড আরও কমিয়ে মূর্তি নদীর উন্মত্ত জলোচ্ছ্বাসের ভয়ঙ্কর রূপ দেখছি। নদীর ধারে গাছগুলো যেন তাকে ছুঁয়ে থাকা অপরাধের শাস্তি মাথায় নত মুখে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে। স্বৈরাচারী রাণীর সর্বগ্রাসী আগুনে যে কোন মুহুর্তে ছিন্নমূল হয়ে ভেসে যেতে পারে দেশান্তরে, হয়তো শাস্তির অপেক্ষায় আরও অন্য কোন ভিটেমাটি।

চাপড়ামারী ফরেস্টের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে মনে হল; অরণ্য তার নিজস্বতাকে আজ ভীষণ ভাবে আগলে রেখেছে দুর্ভেদ্য নিষিদ্ধ নগরীর মতো। শাল সেগুন জারুলরা বৃষ্টি সুখের উল্লাসে শ্রাবণ জলের নেশায় বুঁদ হয়ে ঝুঁকে পড়েছে কালো পিচ রাস্তার ওপর। সভ্যতাহীন আদিম পৃথিবীর জলছবি ফুটে উঠেছে।
সাধারণত কয়েকটা চলন্ত গাড়ি ছাড়া এ অঞ্চল প্রায় জনশূন্য থাকে। আজ তো ঘোর বর্ষার একটি দিন। এমনিতে বর্ষা বা বৃষ্টির জল আমাকে খুব বেশি ছোঁয় না, তবে বিয়ের পর রিয়ার পাগলামোতে আজকাল আমিও একটু আধটু ভাসি। এখানে ওকে খুব মিস করছি। একা থাকলে বাউল গান শোনার অভ্যাস আমার। প্রিয় গান শুনতে শুনতে একা চলেছি, বেশ লাগছে।
খুনিয়া মোড় বাসস্টপের কাছে কালুদার দোকানে চা খাই প্রতিবার যাওয়া আসার সময়। ঝাঁপ নামানো দেখছি। বোধহয় আজ আর দোকান খোলেইনি। কালো মেঘের জন্য তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা নেমে আসছে। চারদিক ছমছমে পরিবেশ। মোড় ঘুরতেই বাঁদিকে বাসস্টপের শেডের নিচে দেখি কম বয়সী একজন মেয়ে। রাস্তার দিকে এগিয়ে এসে হাত নেড়ে গাড়ি থামানোর ইশারা করছে। মুহূর্তের মধ্যে পাজল্ড হয়ে যাই। এই দুর্যোগের দিনে এরকম শুনসান জায়গায় একলা দাঁড়িয়ে কে এই মেয়ে! অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। সন্ধ্যার পর অশরীরীদের কীর্তি, গল্প অনেক শুনেছি। এসব বিশ্বাস করি না বলে কখনও পাত্তা দিইনি। কিন্তু আজ....! খুনিয়া মোড়ের খুনি ডাকাতদলের কেউ! অথবা অন্য কোন মতলবে দাঁড়িয়ে নেই তো! থামব! না না থাক। একটু এগিয়ে আবার মনে হল মেয়েটা সত্যিই কোন বিপদে পড়তে পারে। দাঁড়াব কি দাঁড়াব না ভাবতে ভাবতে গাড়ি পিছিয়ে নিলাম। মিউজিক অফ করে দাঁড়ালাম বাসস্টপের সামনে। বাঁ দিকের উইন্ডোগ্লাস সামান্য নামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
―কেয়া বাত হ্যায়?
  ―স্যার মুঝে শিপচু বস্তি তক ছোড়েঙ্গে?
―কাহাসে আয়ে হ্যায়? মাল সে আই হুঁ। জানে কা ডাইরেক্ট কই গাড়ি নেহি মিলি। ইসলিয়ে স্যার....।
―আপ কেয়া করতি হ্যায়? সাথমে অর কওন হ্যায়?
―আই এম ডুইং মাই গ্রাজুয়েশন থার্ড ইয়ার এট মাল কলেজ। ম্যায় আকেলি হুঁ স্যার।
―শো ইওর আইডেন্টিটি কার্ড।
পিঠ ব্যাগ থেকে মেয়েটার আইডেন্টিটি কার্ড বের করে আমার হাতে দিল। ওর সাথে আর একটা বড় ব্যাগ ছিল। সেটা ইশারায় দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
―হোয়াট ইস ইন ইট?
―ঘর কে লিয়ে বাজার সে কুছ সামান লিয়া। বারিস কে টাইম হামারে উধার থোড়া মেহেঙ্গা হো যাতা হ্যায় তো...
 এদিকের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর জনজীবন সামনে থেকে না দেখলে কল্পনা করা যায় না এরা কি পরিমান কষ্ট করে। বর্ষায় কষ্ট আরো বেড়ে যায়। মেয়েটার হাতে ছাতা থাকলেও প্রায় পুরো শরীর ভিজে গেছে। মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম না চোখের জল না বৃষ্টি। মায়া হল। আমি না নিয়ে গেলে এরপর অযাচিত কিছু যদি ঘটে যায়। হয়তো মেয়েটা সত্যি বলছে তবু মন থেকে সন্দেহ দূর করতে পারছি না। ভাবছি এই দুর্দিনে একটা মেয়ে গাড়ি থামিয়ে আমার সাথে একা যেতে চাইছে! হয় ওর প্রচন্ড সাহস অথবা দুনিয়া সম্পর্কে একেবারেই ওয়াকিবহাল নয়। বললাম
―ব্যাঠো
―থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।
উঠে বসল গাড়িতে। ছোটবেলায় কিছু দিন ক্যারাটে শিখেছিলাম। অনভিপ্রেত কিছু যদি ঘটে তাহলে সেটাই ঝালিয়ে নেওয়া যাবে। প্রতি মুহূর্তে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটার অপেক্ষায় রয়েছি। মিনিট পাঁচেকের নীরবতা ভেঙে আমি জিজ্ঞেস করলাম
―আজ ক্লাস হুয়া?
―নো স্যার। টুডে ইজ দা লাস্ট ডেট অফ প্রজেক্ট সাবমিশন। দ্যাটস হোয়াই আই হ্যাড টু গো দেয়ার।
―ঘর মে অর কওন হ্যায়?...
এরকম টুকটাক কথাবার্তা চালিয়ে প্রায় আট কিলোমিটার পথ চলে এলাম মেয়েটা নিজে থেকে এতক্ষণ আমায় কিছুই জিজ্ঞেস করেনি। শহীদ বলিদান পার্ক ছাড়িয়ে এসে বলল
―রুকিয়ে স্যার। মুঝে উতারনা হ্যায়।
এতটা রাস্তা প্রচন্ড বৃষ্টির পর একটু দম নিয়েছে আমারও খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ল। বললাম
―আপকা নাম বতায়ে নেহি!
―রাখি তামাং
―ম্যায় রাজদীপ সরকার। স্টেশন সুপারভাইজার অফ বিন্দু পাওয়ার প্রজেক্ট। শিলিগুড়ি মে মেরা ঘর হ্যায়।
―নাইস টু মিট ইউ স্যার
আমিও বললাম 
―সেম টু ইউ রাখি। মন লাগাকে পঢ়াই  কর না। হাত নেড়ে গাড়ি স্টার্ট করলাম বিন্দুর পাহাড়ি পথে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri