সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
26-November,2022 - Saturday ✍️ By- মনোনীতা চক্রবর্তী 164

জননী

জননী
মনোনীতা চক্রবর্তী
------------------------

      প্রায়ই  ফুলি মানে ফুলি মুর্মু চা-বাগানের মালিকের জন্য কখনও একা, কখনও ছেলে কোলে নিয়ে বিভিন্ন ভাবে পোজ নিয়ে ছবি তুলেছে। মালিক প্রীতম দাশগুপ্ত নিজে হাতে তুলেছেন সেসব ছবি। কে-না জানে শিল্পপতি প্রীতম দাশগুপ্তের আর্টিস্টিক সেন্সের কথা! নানা আঙ্গিকে সমঝদার মুহূর্তও বন্দি হয়েছে ক্যামেরায়। ছেলেকে যখন ফুলি বুকের দুধ খাওয়াচ্ছিল, সে-ছবিও তুলেছিলেন প্রীতম। বলেছিলেন যে এই ছবিটা ফটো-ফেস্টিভ্যাল থেকে পুরস্কার পাবেই পাবে। ফুলিও কম কেরামতি করেনি! বাবু যখন তার মাথায় ঝুমকোলতা গুঁজে দিচ্ছিল, তখন ও বাবুর লকলকে চোখে চোখ রেখে বাঁকা হাসিতে  দাঁতে নখ কাটতে-কাটতে বলছিল,
- এ বাবু, তুই ওই কবিতাটা শুনাবি?
 একটু ঝুঁকে প্রীতম তার কানের কাছে ঠোঁট দুটো নিয়ে খুব আস্তে-আস্তে বলছিল, 
-তুই বললে আমি চাঁদটা আকাশ থেকে নামিয়ে আনব ফুলি...
  হাসি  মুখটা সামান্য আড়াল করে বেঁকিয়ে বলে,
-আরে বাবু, ছোর না...ওই যে চাঁদের যে-কবিতাটা একদিন পুনমের রাতে বইলিছিলি! মনে লাই?
 - আরে, দেখছি তোমার তো বেশ মনে আছে ফুলি!
      বলেই ফুলির দিকে তাকিয়ে ছ'ফিট হাইটের প্রীতম বলতে শুরু করে, " আয় মেতেনি আজ রাতে চাঁদ কুড়োনো মাঝরাতে/দে ছুঁড়ে দে তিন পাহাড়ের গাঁয়..."
একটা তুখোড় সুখ যেন ফুলির শরীরজুড়ে লেপটে-লেপটে যাচ্ছিল! চা-পাতার কাঁচা গন্ধে অনায়াসে ওর সবটুকু নিংড়ে দিয়েছিল বাবুকে!সবটুকু...
 শুধু শারীরিক চাওয়া নয়, আসলে খুব ভালো না-বাসলে এভাবে সমর্পণ সত্যিই বোধহয় হয় না! বাবু কতবার বারণ করেছিল যে তাঁকে যেন 'বাবু' বলে না-ডাকে ফুলি, আরও কত-কী! বলেছিল যে ওর একমাত্র বেঁচে থাকা ছেলে রূপাইয়ের চিকিৎসার সব খরচা দেবে। ছেলেটা সেরে উঠবে ভাবলেই ফুলি কেমন নরম নদী হয়ে ওঠে! 
   ফুলির মরদ ঠিকু লাল। বাবুদের শহরের বাড়িতে গিয়ে তো আনন্দে-আহ্লাদে আটখানা! বাবুদের ডুপ্লের ড্রয়িং-রুমে  ফুলি আর রূপাইয়ের কত ছবি দেয়াল জুড়ে! ঠিকু ওই শহরেই ভ্যান-রিক্সা চালায়।
    আজ রাতেই ফুলির একমাত্র শেষ বেঁচে থাকা ছেলে রূপাই তার কোল থেকে চিরতরে চলে গেল তীব্র জ্বালাটুকু নিয়ে। ডাক্তারের কাগজে লিখে দেওয়া ওষুধগুলোর টাকা জোগাড় করতে পারেনি সে। অত টাকা তার ছিল না। কিন্তু বাবুর মুখটাই তখন মনে পড়ে।  কত পায়ে ধরল ফুলি বাবুর, কিন্তু কিছুতেই টাকা মিলল না!  নিমেষে কাজ থেকে ছাঁটাই হল ফুলি মুর্মু!চোখে জল নিয়ে ফুলি হাত জোড় করে হাঁটু মুড়ে বসে বলে,
-এ বাবু, পুনমের রাতের কথা তোর মনে লাই? তুই তো বইলিছিলি যে এবার আর আমার কোলে ফাঁকা হতে তুই দিবি না! তুর মনে লাই নাকি বাবু?  তুই ভুইলে গেলি! ও বাবু, মনে কইরে দ্যাখ নারে...তুর দুখান পায়ে পড়ি! শোন না রে, তুই যা বলবি আমি সব কইরবো...তুই তো জানিস আমি মিছা কথা কই না...তুকে আমি সব দিইনি? তুই যখন বইলিছিলি যে রূপাইকে তুই চিকিৎসা করাইবি...যত টাকা লাগে তুই দিবি! আর আমাকে বাচ্চা হারাইতে তুই দিবি না, বলিসনি? ও বাবু, আমি তো সব দিয়েছিলাম তুকে রে শুধু এই জন্যই...শুধু এই জন্যই ঠিকুকে ঠকাইছিলাম রে...
পাগলের মতো কাঁদতে-কাঁদতে ফিরে যায় ফুলি।

    বাবুদের ঠাণ্ডা ঘর জুড়ে তখন অতিথিদের হাততালি কুড়োচ্ছে ফুলি আর তার ছেলে রূপাইয়ের ছবি। আজ বাবুর যমজ ছেলের জন্মদিন! মি এবং মিসেস দাশগুপ্ত আপ্যায়নে ব্যস্ত। সমস্ত এলিট-ক্লাস সেখানে! বাহারি আলো, বাইরে আতশবাজির রোশনাই,  বাইরে গাড়ির মেলা! ব্র্যান্ডেড-জেল্লা, খাবারের গন্ধে ম’ম’ করছে চারিদিক! বুফে রেডি। সব্বার হাতেই প্রায় খাবার প্লেট। কিন্তু চোখ তখন সেই ছবিটার দিকে যেটা ইন্টারন্যাশনাল আওয়ার্ড এনে দিয়েছিল সেরা ফটোগ্রাফির জন্য। ছবিটার নাম 'জননী’। হ্যাঁ, ফুলির ছেলেকে ফুলির বুকের দুধ খাওয়ানোর সেই ছবিটা...

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri