চোর বাবাজীরাও যখন নৃত্য বিশারদ
চোর বাবাজীরাও যখন নৃত্য বিশারদ
শুক্লা রায়
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি পড়ছে। বাড়িটাকে মনে হচ্ছে গোটা পাড়া থেকে বিচ্ছিন্ন। তখনও পাড়া-গাঁয়ের বাড়ি-ঘর খুব ঘনবসতির ছিল না। অনেকটা ফাঁকা ফাঁকা। আর এ বাড়িটি তো বিশেষভাবেই ফাঁকা জায়গায়। রাত বেশ গড়িয়েছে নিজের মতো। বৃষ্টির জন্য গরমটা অবশ্য কম। মাস্টার আর মাস্টারনি ছেলেসহ গভীর ঘুমে। তবু মাস্টারের মনের ভেতর একটা অশান্তি কাজ করছিল। মাত্র কয়েকদিন আগেই জ্ঞানেন বুড়া বা জ্ঞানেন্দ্র নাথ রায়ের বাড়িতে অদ্ভুতরকম একটা চুরি হয়েছে।
জানলা খুলে বেশ ঘুমোচ্ছিলেন দোতালাবাড়ির জ্ঞানেন্দ্র নাথ রায় আর তার বউ। দুজনেই বয়স্ক মানুষ। মানে মাঝবয়সী আর কী। হঠাৎ খুটখাট আওয়াজে চোখ খুলে গেল। দুজনেরই। দেখেন ঘরে দুজন লোক। ভোর হয়ে এসেছে প্রায়। জানালা খোলা থাকায় ঘরটায় বেশ একটু মায়াময় রঙ লেগেছে। ওদের চোখ খুলতে দেখেই কী অদ্ভুত! লোকদুটো নানান অঙ্গভঙ্গি করে নৃত্য শুরু করে দিল। সে কী নাচ! নাচ দেখতে দেখতে ঘুম ঘুম আলিস্যিতে দুজনে আবার ঘুমিয়ে পড়লেন। সকালবেলা উঠে দেখা গেল আলনার জামা-কাপড়সহ তিন ব্যাটারি টর্চটা, চাল, আটা অনেক কিছুই গায়েব। নগদ কিছু টাকা-পয়সা রাখা ছিল - কিচ্ছুটি নেই। কী কান্ড! পাড়ার লোকে শুনে আফশোস করলেও মজাও কম পায়নি। সবার মুখে মুখে ঘটনাটা গল্পের মতো ছড়িয়ে গেল। তা এ হেন চুরির ঘটনার পর সবাই একটু সতর্ক। আর যাইহোক ঘুমের ঘোরে নাচ দেখা চলবে না। সে না হয় হল। কিন্তু এখন এই প্রবল বৃষ্টির সাথে ছন্দ মিলিয়ে কেমন একটা ঝুপ ঝুপ শব্দ। এবার কী তবে গান? নাকি তালবাদ্য বিশারদ? কীসের হতে পারে? মাস্টার শুয়ে শুয়েই ভাবছেন। নেমে যে বাইরে বেরিয়ে দেখবেন সে ও সাহসে কুলোচ্ছে না। চোর না হয়ে ডাকাত হলে কাউকে ডেকে পাওয়া যাবে না। আশেপাশে আর বাড়িই নেই। এটা যে জাদু কবিরাজের ভিটে! এ ভিটের প্রতি লোকের অনেক ভয়। সেজন্যই সস্তায় পেয়েছেন বলেই মাস্টার এটা কিনে বাড়ি করতে পেরেছেন। নইলে তো এতদিন ললিত রায়ের বাড়িতে আশ্রিত হিসেবেই থেকেছেন।
এই অন্ধকারে বাইরে বের হওয়া সমীচিন মনে করলেন না মাস্টার। ঘুম ভেঙে গেলেও চুপ করে শুয়ে থাকলেন। বেশিক্ষণ নয়, ঝুপঝুপ আওয়াজটা হঠাৎ থেমে গেল। কিছুক্ষণ পরেই কাঠের চৌকির তলা থেকে একটা লোক সন্তর্পণে বের হয়ে এল। এসে উঠে দাঁড়াতেই মাস্টারও উত্তেজনায় চৌকি থেকে এক লাফে নেমে পড়লেন। টর্চ জ্বালিয়ে বললেন,
"তুই কায় রে?"
এত কষ্ট করে সিঁদ কেটে ঘরে ঢোকা চোর বেচারা তখন হতভম্ব। চোখে তিন ব্যাটারি টর্চের জোরালো আলো এসে পড়াতে আরো কেমন জড়সড় হয়ে গেল। থতমত খেয়ে বলল,
"মুই রে মাস্টার।"
মাস্টার আর কী করেন! চেনা লোক। কাঠের কপাটের হুড়কো খুলে দিয়ে বললেন,
"যা তে।"
সেই মহান চেনা লোকটিও বৃষ্টির মধ্যে একলাফে অন্ধকারে মিশে গেল। পরদিন সকালে ঘরের বাইরে তার ব্যবহৃত একটা গেঞ্জি আর গামছা পাওয়া গেল। অবসর সময়ে এসে একদিন সে দুখানাও অবশ্য নিয়ে গেছে মনে করে!
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴