সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
05-December,2022 - Monday ✍️ By- সুমনা দত্ত ঘোষ 221

খিদে/সুমনা দত্ত (ঘোষ)

খিদে
সুমনা দত্ত (ঘোষ)
------------------

পটকার আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল রূপান্তির। কোলের বাচ্চাটা চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। বীরধু উঠে মশালে আগুন জ্বালিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল ছুয়ামনকে জলদি উঠাও, মহাকাল বাবা আই গেলাক। রূপান্তি তাড়া দিয়ে ডাকে মালতি, রত্নী, আর বুধুকে। কোলের শিশু বিফাইকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। প্রতিবছর ধানের মরসুমে হাতির উৎপাত রোজই লেগে থাকে। কাল তছনছ করেছে অনেকের জমির ধান। তারমধ্যে একটা দাঁতাল এসে ঘর ভেঙে অল্প কিছু মজুত ধান খেয়ে গেছে বীরধুদের। কিছুটা দূরে গ্রামের মানুষেরা সব চিৎকার করছে মশাল সার্চ লাইটের আলোয় পটকা ফাটিয়ে জঙ্গল অভিমুখে ফেরত পাঠাতে চাইছে হাতির দলকে। ওয়াইল্ড লাইফের গাড়ি আসতেই হাতির দল বেপাত্তা। ঘড়িতে তখন ভোর চারটে বাজে। রুপান্তি আঙ্গিনা ঝাড়ু দিয়ে লবণ দিয়ে লাল চা বানিয়ে বীরধুকে দিয়েই উনুনে ভাত চড়িয়ে দেয়। কাল মালতি, রত্নী, আর বুধু কিছু ব্যাঙ শাক আর খুকরি শাক তুলে এনেছিল আজ সেগুলিই রান্না হবে আলু দিয়ে। চায়ে চুমুক দিতে দিতে বীরধু বলে ময় জঙ্গল যাওয়া থো কাঠি আনেক, কাঠি আইনকে হোটেল মে বেচবু। মালতি জানে ফরেস্ট গার্ড দেখতে পেলেই ধাওয়া করবে। তাছাড়া বুনো জন্তুর ভয় তো আছেই। তবে মালতি এ ও জানে পেটের খিদের কাছে সব ভয়ই যে হার মানে।
বীরধু স্থানীয় একটি চা বাগানে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করত। বছর খানেক আগে মালিক হঠাৎই বাগান বন্ধের নোটিশ ঝুলিয়ে চলে গেছেন। সেই থেকে সংসারের হাল বেহাল। বীরধু কাজের সন্ধানে কেরলে চলে গেলেও মহামারীর জন্য পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ফিরে আসতে হয় বনবস্তীতেই। অনেক কষ্টে চড়া সুদে টাকা জোগাড় করে ধান লাগিয়েছিল জমিতে কিন্তু ফসল ঘরে তোলার আগেই হাতির তাণ্ডবে নষ্ট হয়েছে সব। বীরধু জানেনা কি করে শোধ করবে মহাজনী ঋণ!
ঘুম থেকে উঠেই বুধু আর রত্নী ভাতের জন্য কান্না জুড়ে দেয়। রূপান্তি একহাতা করে ভাত আর শাক ভাজা দুজনের পাতে দিতে দিতে বলে খানা খাইকে দোনোঝন যাওয়া শাক তোড়কে আনেক লে। মালতি ভাইবোনদের মধ্যে বড়, সে বোঝে মায়ের কষ্ট। রেশনের চাল ব্যাঙ শাক, কচু শাক, খুকরি শাক আর চা ফুল এই দুর্দিনের ভরসা। ভাই বোনের খাওয়া হলে বাবার জন্য ভাত তুলে রেখে বাকিটা মা আর ও ভাগ করে খাবে। কোলের ভাইটা খিদের জ্বালায় রাতদিন শুধুই কাঁদে। মায়ের হাড় পাঁজর বেরোনো শুকনো স্তন মুখ নিয়ে।
কিছুদিন আগে পাশের বাড়ির রতিয়া চাচা এসেছিল বাবাকে বলেছিল চাইলে মালতিকে সিকিম পাঠাতে পারে। তার মেয়ে যেখানে কাজ করছে সেখানে। বিনিময় যে টাকা পাবে তাতে আর তাদের কোনো দুঃখ কষ্ট থাকবে না। কথাটা শুনেই বাবা লাঠি নিয়ে তেড়ে গিয়েছিল চাচার দিকে। মা বাধা দেওয়ায় বাবা বলেছিল ওয়শান পয়সা মোকে নি লাগি। তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলেছিল একচিন খাড়া হ' সব ঠিক হুয়ি। ভগবানকর উপর ভরসা রাখ। আড়ালে দাঁড়িয়ে মালতি শুনেছিল সব। সেদিন থেকেই বাবার প্রতি সম্মান বেড়ে গেছে অনেক। মালতি স্কুলে দিদিমনির কাছে শুনেছে একে বলে হিউম্যান ট্রাফিকিং।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে এখনও দেখা নেই বীরধুর। ঘরবাইর করতে করতে রুপান্তী বলে মালতি যা তো দেখকে আবে তোর বাপ আওয়াথে কি নেহি? মোকে বহোত চিন্তা লাগাথে। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে মালতি এগিয়ে যায় গ্রামের পথ ধরে জঙ্গলের দিকে। সে জানে বাবা একা যায়নি শিবু চাচা, মনীষ দাদাও সঙ্গে আছে। কিছুদূর যেতেই দেখতে পেল উল্টোদিক থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়ে আসছে ওর ভাই । মালতিকে দেখেই হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলো বুধু। মালতি জিজ্ঞাসা করল কা হোলাক ভাই? ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বুধু বলে দিদি বাবাকে মহাকাল বাবা মাইর দেলাক। বুধুর হাত ধরে মালতি ছুটতে থাকে জঙ্গলের দিকে কিছুটা যেতেই মানুষের জটলা। শিবু চাচা মনীষদাদা পা ছড়িয়ে কাঁদছে। দূরে ছিটকে পড়ে আছে শুকনো কাঠ আর চ্যাপ্টা হয়ে পড়ে আছে বাবার দেহ। মালতি আঁকড়ে ধরে বুধুকে। খবর পেয়ে বুকের শিশুকে আর রত্নীকে নিয়ে ছুটে আসে রূপান্তিও। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে পোস্টমর্টেমের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় দেহ । অফিসার বললেন ঘটনাটা জঙ্গলের বাইরে ঘটলে ক্ষতিপূরণ পেত নিহতের পরিবার। কিন্তু এখন তা সম্ভব নয়।
মালতিদের ঘরের বাইরে পাড়ার ছেলেরা ত্রিপল টানিয়ে গল্পগুজব করছে। রতিয়া চাচাও সেখানে বসে আছেন। বছর পাঁচের বুধু ভাত চেয়ে কান্না জুড়ে দেয়। কোলের বাচ্চাটা ঘুম ভেঙে কাঁদতে থাকে একনাগাড়ে। রুপন্তী একবুক মরুভূমি আর পাড় ভাঙা নদী নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে বীরধুর দেহটা ফিরে আসার। রত্নী কেঁদে কেঁদে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। মালতি আড়চোখে একবার রতিয়া চাচাকে দেখে নেয় । তারপর মায়ের চোখ আলতো করে মুছে দিয়ে বলে একচিন খাড়া হ' সব ঠিক হুয়ি । ভগবানকর উপর ভরসা রাখ। ভোর হয়ে আসছে দূরে পাশের গাঁয়ের থেকে তখনও পটকার আওয়াজ ভেসে আসছে।।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri