কামাই
শৌভিক রায়
^^^^^^^^^^^
শতাব্দী এক্সপ্রেস ধরব, রেডি হচ্ছি তাই। বাইরে রীতিমত অন্ধকার।
এমনিতেই দিল্লিতে সকাল হয় আমাদের ওদিকের তুলনায় খানিকটা পরে, তার ওপর অক্টোবর মাস।
আসলে এবারের হরিদ্বার যাওয়াটা নেহাতই অনুরোধ ফেলতে না পেরে। নাহলে, আজই হয়ত শতাব্দী এক্সপ্রেসের বদলে রাজধানী এক্সপ্রেস ধরে কোচবিহার রওনা দিতাম। কিন্তু সেটা হবার নয়। কেননা আমার শর্তে দাদাটি রাজি হয়েছিলেন, এবার আমাকে দাদার কথা রাখতে হবে।
পুজোর ছুটির আগে যখন আমার সব প্ল্যান প্রোগ্রাম ঠিকঠাক, তখন একদিন দাদাটির আগমন হল বাড়িতে। ঘরে ঢুকেই কোনও ভনিতা না করে দাদা বললেন,
- আমি হরিদ্বার যাব শৌভিক।
- বাহ, খুব ভাল কথা।
- কীসের ভাল কথা? কীসের?
- এই যে হরিদ্বার যাবে!
- ঘন্টার ভাল কথা। তোমার বৌদিও যাবে সঙ্গে।
- সে তো খুবই ভাল দাদা। বৌদিকে নিয়ে তো কোথাও যাও না। খুব ভাল হল। যাও, ঘুরে এসো। খুব ভাল লাগবে।
- যাও মানে? আমি একা যাবো নাকি?
- একা কেন? বৌদি তো যাচ্ছে সঙ্গে!
- আরে তাতে কী? মেয়েমানুষ থাকাও যা, না থাকাও তা! বরং না থাকলেই ভাল। বারবার বললাম যে, ওই তো নদী একটা....তাও সেটা কবেই রাম তেরি ইয়ে ময়লি হয়ে গেছে! ও আর দেখবার কি আছে? না...যেতেই হবে, না হলে জীবন নাকি বৃথা। এসব তোমার জন্য হয়েছে সব, জানো! ইউ, ইউ আর রেস্পন্সিবল ফর অল দিস।
ইংরেজি শুনে বুঝলাম যে, দাদা প্রবল উত্তেজিত এবং হাওয়া বিলক্ষণ খারাপ। তবু সাহস করে জানতে চাইলাম যে, আমি কেন দায়ী।
- এই যে, বছর বছর ঘুরতে যাওয়া। যখন তখন বেরিয়ে পরা! এসব তো তোমারই কান্ড। এতে তো অনেকের জ্বলুনি হবেই, খুব স্বাভাবিক। সবাই কি আর আমার মতো ইয়ে নাকি?
- কিয়ে দাদা?
- নির্লোভ! সংসারে থেকেও সন্ন্যাসী!
- তাহলে তো আরও বেশি করে তোমার হরিদ্বারে যাওয়া উচিত। সন্ন্যাসী যখন।
- দ্যাখো ছোকরা, ডেপোমি ক`র না। এখন আমাদের নিয়ে চলো।
- নিয়ে চলো মানে? কে নিয়ে যাবে? আমি?
- আলবাত তুমি!
- আমি নিয়ে যাব মানে?
- মানে সহজ। চলো স্টেশনে, টিকিট করো সবার।
- আরে আমি কেন হরিদ্বার যাব হঠাৎ!
- কেন যাবে না? কথায় কথায় যে বলো হরিদ্বার তোমার সেকেন্ড হোম, তো এবার চলো। আজি শুভদিনে পিতার ভবনে অমৃতসদনে চলো যাই....চলো চলো...
- মহা মুশকিল তো। আমি এবার যাবো না হরিদ্বার। আমার অলরেডি টিকিট হয়ে গেছে, গাড়ি বুক করা হয়ে গেছে।
- কোথায় যাচ্ছ?
- রাজস্থান। একুশ দিনের ট্যুর। দিল্লি থেকে গাড়ি নিয়ে বেরোব, ওই গাড়ি নিয়েই ঘুরব।
- কী গাড়ি?
- ট্রাভেরা।
- ছয় জন.....হুমম...কোন ট্রেনে দিল্লি?
- রাজধানী।
- কবে যাচ্ছ ?
- এই তো অক্টোবরের দুই তারিখ।
- দুই....গান্ধী জয়ন্তী...আচ্ছা। চলো।
- কোথায় ?
- স্টেশনে।
- কেন?
- টিকিট করব।
- হরিদ্বারের?
- না, আগে দিল্লির। তোমার ওই দুই তারিখেই। ট্রাভেরার ভাড়া ফিফটি ফিফটি। হোটেলে আমাদের ঘর আলাদা। বাকি হিসেবে তুমি রাখবে। রাজস্থান ঘুরব। যা যা দেখবে, যেখানে যেখানে যাবে সব দেখব, যাবো। শুধু একটা কন্ডিশন, আমাকে হরিদ্বার নিয়ে যেতে হবে। রাজস্থান ঘুরে এসে হরিদ্বার। তারপর ফেরা। এবার আর না ক`র না।
এরপর আর না চলে না। তাই খানিক্ষন গাঁইগুঁই করে রাজি হলাম। এমনিতেও খুব কিছু আপত্তি ছিল না নিজের। হরিদ্বারের টান আমার কাছে এরকমই। যাহোক, এত কাণ্ডের সেই হরিদ্বার যাওয়ার সময় হয়ে এলো। রেডি হচ্ছি তাই এই ভোরে। ভাবছিলাম, হরিদ্বারে দাদা আবার কী কান্ড ঘটান। সারা রাজস্থান ট্যুরে দাদার মুখে একটাই কথা বেরিয়েছে- 'কি কামাই!` জয়পুর সিটি প্যালেস থেকে সেই যে দাদা শুরু করেছিলেন, তা দিল্লির কনট প্লেস অবধি চলেছে গতকাল অবধি। জয়পুরে জানতে চেয়েছিলাম,
- কি দাদা, কেমন লাগছে সিটি প্যালেস?
উত্তর এল,
- আছে...আছে আর কি। কিন্তু কি কামাই! দেখেছ?
- কামাই ? মানে ?
- আরে টিকিটের দাম করে রেখেছে এত! আর শালার এত মানুষ আসে দেখতে। কামাইটা দেখবে না!!
তখনও বুঝি নি যে এই কামাই আর পিছু ছাড়বে না। আজমির, পুষ্কর, চিতোর, উদয়পুর, মাউন্ট আবু, যোধপুর, বিকানির, জয়সলমির, মায় স্যাম স্যান্ড ডিউন, খুড়ির মরুভূমি সব এই কামাইয়ের তোড়ে ভেসে গেছে। মাঝে উটের গাড়িতে চেপে উট নিয়ে একটা বেশ গোলমেলে কথাবার্তাও হয়েছিল। সেটা এরকম,
- ভাইয়া, ইয়ে উট তুমহারা হ্যায় ?
- হানজি।
- বহুত বড়িয়া। তো কথা হল ভাইয়া, ইয়ে যো তুমহারা উট হ্যায়, ইসকো তুম পাল পোশকে বড় কিয়া ?
- নেহি বাবুজি, খরিদা ?
- ফরিদা? কোন ফরিদা? ফরিদা জালাল? এখানে আবার ফরিদা জালাল এল কেন?
- আরে দাদা ফরিদা নয়, খরিদা বলেছে।
- সেটার মানে কী ?
- কেনা, কিনেছে...
- ওঃ, সমঝা। আপ উট কেনা ইয়ে খরিদা। তো ভাইয়া উট কেয়া খাতা হ্যায় ?
- ঘাসপুছ...অর কেয়া!
- ঘাস?? কোথায় ঘাস? চারদিকেই তো বালি আর বালি।
- কিঁউ ও দেখ রহে হ্যায় না?
- আরে, ঐগুলো তো কাঁটাগাছ।
- হাঁ ওহি তো।
- কয় কি! কাঁটা খায়? মুখ ছিলে যায় না?
- কেয়া?
- মুখ....মুখ ঠিক রহতে হ্যায় ? কাট যায় না?
- হাঁ বিলকুল ঠিক রহতে হ্যায়।
- শালা কেমন জানোয়ার রে বাপ। কাঁটা খায়। তো ভাইয়া আর কেয়া খাতা হ্যায় ?
- অর...আর...গেওর...গেওর ভি খাতে হ্যায়.. .
- গোবর!!! উট গোবর খায়!! এটা কেমন প্রাণী রে, ব্যাটা গোবর খায়, শৌভিক শুনলে তো, উট গোবর খায়।
কেলোর কীর্তি হতে যাচ্ছে দেখে তাড়াতাড়ি থামিয়েছিলাম দাদাকে। বুঝিয়ে ছিলাম যে, গেওর একটি খাদ্যশস্য। গোবর নয়।
তা এই উটচালকের কামাইয়েও দাদা চমৎকৃত হয়েছিলেন। বাকি জায়গাগুলিতেও যে হবেন সে তো বলাই বাহুল্য।
হঠাৎ দরজায় প্রবল ধাক্কা আর চিৎকার,
- শৌভিক দরজা খোলো, আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে।
দাদার গলা শুনে কোনোমতে দরজা খুললাম। ঘরে ঢুকেই আমার বিছানায় বসে পড়লেন দাদা। ভয়ার্ত চেহারা। তাড়াতাড়ি জল দিলাম। জানতে চাইলাম কী হয়েছে। প্রথমটায় কোনও কথা বেরোল না। শেষটায় যা বুঝলাম তা সত্যিই মারাত্মক।
হোটেলের লোকেদের বারবার নিষেধ সত্বেও চায়ের নেশায় দাদা পাহাড়গঞ্জের আরাকাসা রোডে এই ভোরে একা একা বেরিয়েছিলেন। একটু দূর যেতে না যেতেই চাকুর সামনে, ঘাড়ে রদ্দা আর পেটে ঘুষি খেয়ে, মোবাইল ফোন, হাতঘড়ি, প্যান্টের পকেটে রাখা সতেরো হাজার টাকা দিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। তিনজন ছিল। দিল্লির ক্রাইমের কথা জানি, কিন্তু চোখের সামনে সেই ক্রাইমের একজন শিকারকে দেখব স্বপ্নেও ভাবি নি। হরিদ্বার ক্যানসেল করে থানা পুলিশ করতে চাইলাম। কিন্তু দাদা আপত্তি করলেন। হোটেলের লোকজন তেমন কিছু আশ্বাস না দিলেও, যে অটোতে চেপে স্টেশনে পৌঁছলাম তার ড্রাইভার বারবার বলল যে, সে পুলিশকে জানিয়ে রাখবে। আমরা ফিরে এলে নিশ্চয়ই কিছু হবে। খানিকটা গায়ে পড়েই সে কবে ফিরব, কোন হোটেলে উঠব, কদিন থাকব ইত্যাদি জেনে নিলো। আমার একটু সন্দেহ হচ্ছিল, কিন্তু দাদা গড়গড় করে সব জানিয়ে আমাকে বলল,
- দিল্লি যে দিলওয়ালাদের শহর তার প্রমান এই ড্রাইভার...বুঝলে শৌভিক।
- কিন্তু দাদা...
- কোনও কিন্তু নয়, সবাইকে সন্দেহ ক`র না।
কী আর বলা। এমনিতেই ভদ্রলোক একটা আঘাত পেয়েছেন, কিছু বলতে ইচ্ছে হল না তাই। পৌঁছলাম হরিদ্বার। যে জীবনে প্রথম এলো হরিদ্বারে এত আগ্রহ নিয়ে, তাকে জিজ্ঞেস করলাম,
- কী দাদা, কেমন লাগছে হরিদ্বার?
- আছে, চলে....মনসা মন্দিরের কামাই দেখলে?
বুঝলাম কামাই এবার আর পিছু ছাড়বে না।
যাহোক হরিদ্বার পর্ব শেষে, দিল্লি এসে হোটেলে ঢুকেছি কি ঢুকি নি পুলিশ এসে হাজির। এরপরের কথোপকথন সময় অনুযায়ী পরপর বলছি।
পুলিশ সমক্ষে-
- আপ কো লুট লিয়া ?
- ইয়েস ইয়েস আমাকেই লুট লিয়া।
- কেয়া হুয়া ডিটেলস বাতাইয়ে।
- উস দিন খুব ভোরে ম্যায়নে চা খানে কে লিয়ে...
- পিনে, হাম চায়ে পিতে হ্যায়।
- আরে খানাপিনা ছাড়েন, ভোরে...
- ভোর মতলব?
- ভোর মানে ভোর।
- হাঁ হাঁ ওহি তো, কেয়া মতলব?
- মতলব আবার কী ? চা খানে না পিনে কে লিয়ে....
- ও তো সমঝ গায়ে, লেকিন ভোর কা কেয়া মতলব হ্যায় ? ইসকা মিনিং কেয়া ?
- ও মিনিং ...ডন ডন
- ডন? কৌন ডন ?
পাশ থেকে ফুট কাটলাম, 'সুবাহ স্যার।`
- ওহ তো আয়সে বলিয়ে না, কেয়া ডন ডন লাগা রাখা হ্যায়। তো আগে কেয়া হুয়া।
- কেয়া আর হবে। তিন আদমি থা....
- আপ এক, অর ও লোগ তিন....বহুত না ইনসাফি ....হাঁ উসকে বাদ ?
- মুঝকো পিটা। চাকু দিখায়া ....ইধার ধরা...
- ধরা?
- ঘুচা দিয়া।
- কেয়া ঘুচা দিয়া?
- চাকু।
- চাকু ঘুচা দিয়ে ?
- ওই হল একই, পেটের অন্দর নেহি গিয়া, লেকিন পেটমে চাকু ধরা। আরে ধরা না, রাখা...রাখা...
- হাঁ হাঁ সমঝ গয়ে। এক কম কিজিয়ে....ইয়ে অ্যালবাম দেখিয়ে....ইসমে কোই হ্যায় ও তিনমে সে কোই?
- নেহি...ইস পাতায় নাই, হুমমম ইসমে নেহি....এইখানেও নাই, এই যে, এই যে... এই ব্যাটা ছিল। এই তো আর একটা। ইয়ে ভি থা....দিস ম্যান, ব্যাডম্যান শো মে দা নাইফ...ইফ আই গেট হিম....এন্ড দিস স্কাউণ্ড্রেল হিট মি....
- হাঁ হাঁ সমঝা সমঝা....ঠিক হ্যায় আপ আভি আরাম কিজিয়ে। আপ তো বঙ্গাল সে হ্যায়, যানা হ্যায় কব আপকো?
- কাল।
- কিতনা বাজে আপ কো ট্রেন?
- বিকাল চারটায়।
- বহুত টাইম। বিলকুল মত সোচিয়ে। একদম বেফিকর রোহিয়ে। আপকা সমান অর ক্যাশ মিল জায়গা।
- মিল জায়েগা ? ওহ কী বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ দেব, হে হে শুকরিয়া শুকরিয়া।
- আরে কোই বাত নেহি। তো আভি চলতে হ্যায়, মিলতে হ্যায় ফির জলদি।
পুলিশ প্রস্থানের পর-
- বুঝলে শৌভিক এই হল দিল্লি পুলিশ। দেখলে তো কী তৎপর। কী ইয়ে...
- কী ইয়ে ?
- মানে এলার্ট আর কী। আমরা নামতে না নামতেই এসে হাজির। এই পরিষেবা তুমি ওয়েস্ট বেঙ্গলে ভাবতে পারো?
- সবই ঠিক আছে দাদা, কিন্তু একটু বেশি আগ্রহ মনে হল আমার।
- তোমার তো মনে হবেই। সবেতেই সন্দেহ করো। শালা আমাদের ওখানেও পুলিশ, আর এখানেও পুলিশ। কত পার্থক্য। কী ব্যবহার, কী চেহারা।
ঘন্টা তিনেক পর-
- আর কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে দেখো। আমি নিশ্চিন্ত। দেখলে তো আমাকে ফোন নাম্বার পর্যন্ত দিয়ে গেছে। সেরকম বুঝলে ফোন করব। তাই না?
- হ্যাঁ অবশ্যই করবে। দিয়েছ যখন।
- আমাদের ওখানে হলে দিত? সব ব্যাটা কামাই করতেই ব্যস্ত। সেবা কাকে বলে সেটা দিল্লি পুলিশকে দেখে শেখা উচিত।
বিকেলে-
- এতক্ষনে কিন্তু আসা উচিত ছিল। অবশ্য নোটোরিয়াস ক্রিমিনাল। এদের ধরাও সহজ নয়। তবে দিল্লি পুলিশ। ঠিক ধরবেই। টাকা, ঘড়ি নিয়ে ভাবছি না। মোবাইল ফোনটায় আসলে অনেক নাম্বার রয়েছে। ওটাই দরকার।
রাতে-
- শৌভিক ফোন করলাম ওই নাম্বারে। বলছে দিস নাম্বর ডাজ নট এক্সিস্ট। বোধহয় ভুল লিখেছি, বুঝলে। তবে যেভাবে বলে গেল তাতে তো মনে হল যে, তখনই আসবে। রাত হয়ে গেল, একটা খবর তো দিতে পারত হোটেলের ফোনে। কোনও মানে হয়!
পরদিন সকালে-
- বুঝলে পুলিশ মানে পুলিশই, সে তুমি ওয়েস্ট বেঙ্গল বলো আর দিল্লিই বলো!
- কেন কাল যে আমাদের রাজ্যের পুলিশের নিন্দা করলে। আজ কী হল হঠাৎ?
- না না নিন্দা করি নি। আসলে এরা এত তৎপর। তাই ভাবলাম যে....
- এরা তোমার কাছে কালপ্রিটদের চিনে গেছে। আর কিছুই না দাদা। ওদের ধরতে সুবিধে হবে। বিশেষ খাটতে হবে না।
- ধরবে তবে?
- ধরবে না, ধরেছে।
- তাহলে তো আসবে।
- না আসবে না।
- কেন ? কেন?
- আমরা কোনও ডাইরি করিনি দাদা। কেসটা রেজিস্টার্ড নয়। তাই কোনও প্রমান নেই যে, ছিনতাই হয়েছে। ওই টাকা আর জিনিসপত্র পেলেও কেউ বলবে না ওসব তোমার। তাহলে কী হবে বুঝতে পারছ?
- কী হবে?
- আমার মন বলছে ভাগ বাটোয়ারা হবে। অবশ্য আমি ভুল বলতে পারি। আর মনেপ্রাণে চাইছি যে, সেটাই হোক, আমি যেন ভুল বলি।
- এরকম হবে? এতটা? না বোধহয়। এখনও সময় আছে, আসতেও পারে...
ট্রেন নিউ দিল্লি স্টেশন ছাড়ছে-
- ব্যাটা পুলিশ। বললেই পারতিস যে, আসবি না। চিনে গেলি। ভুল নাম্বার দিয়ে গেলি। বদগুলো....অনলি ফর ইউ উই আর সাফারিং...ওরা গরিব মানুষ, চাকরিবাকরি নেই তাই ছিনতাই করে। আমারটা নিয়েছে বেশ করেছে। আলবাত নেবে। রদ্দি আর ঘুষি না মারলেই পারত শুধু। কিন্তু তোরা কী কান্ডটা করলি। ব্যাটা সামনে পেলে পেটের অন্দরে চাকু ঘুচা দিতাম, তারপর যা হত যো ভি হোতা দেখা যেত....ব্যাটা তোদের কামাই কি কম নাকি! আমাকে ওপাশে ডেকে চুপিচুপি বললি, আমি দিই নি? যাতে সব ফেরত পাই তার জন্য দুই হাজার টাকা দিই নি? ব্যাটা বদমাশ। তোমাকে আর তোমার বৌদিকে লুকিয়ে দিয়েছিলাম শৌভিক ওই টাকাটা। আমি এইজন্যই কোথাও যেতে চাই না। তোমার বৌদি আমার কামাইটাই দেখে, খরচটা দেখে না...ব্যাটাগুলো ওদের কাছেও কামাই করল, আমার কাছেও কামাই করল!
দাদা আরও কী কী সব বলছিল। ট্রেন তখন ঝমঝম করে যমুনা ব্রিজ পার হচ্ছে। তাই কথাগুলো কানে এলো না। তাকিয়ে দেখলাম যমুনার ধারে স্তূপাকৃতি করে রাখা নোংরা আবর্জনা থেকে দুটো ছেলে মেয়ে কীসব কুড়োচ্ছে। হয়ত সেসব বিক্রি করবে।
ভাবতে লাগলাম এদের কামাই কতটা হবে!