সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
17-December,2022 - Saturday ✍️ By- মাল্যবান মিত্র 521

কল্পবিজ্ঞানের ভাষা যখন বাংলা

কল্পবিজ্ঞানের ভাষা যখন বাংলা
মাল্যবান মিত্র
~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কল্পবিজ্ঞানের দেশে কখনো গিয়েছেন? কিংবা বলতে পারবেন বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের অপু শকুনির ডিম্ কেন খুঁজতো? কারণ অপু তার বাবার অনুপস্থিতিতে তার বইয়ের তোরঙ্গ থেকে সর্ব দর্শন সংগ্রহ বলে একটা বই এ পড়েছিল শকুনির ডিমের মধ্যে পারদ পুড়ে সেটাকে কয়েক দিন রৌদ্রে শুকিয়ে মুখে পুড়লে "শূন্যমার্গে যদৃচ্ছা" পাখির মতন বেড়ানো যায়। কিংবা আলাপ হয়েছে হাঁসজারু, গোমড়াথেরিয়াম কিংবা বকচ্ছপের সাথে? হেঁসোরাম হুঁসিয়ারের ডাইরির পাতা উল্টিয়ে দেখেছেন কখনো?
একটু ভেবে দেখুন তো আজথেকে ৫০ বছর আগে, আপনি ভাবতে পারতেন যে আপনার সঙ্গে সর্বদা একটি চলভাস থাকবে, আমরা একটি অতিমারীর সম্মুখীন হব, আন্তর্জালে আবদ্ধ হবে পৃথিবীর বেশিরভাগ অংশ! বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে কল্পনার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর সেই স্বপ্নের পেছনে ছোটার পথে সাহিত্যহিসেবে কল্পবিজ্ঞান অনুঘটকের কাজ করে।
১৯৬২ সালে সাহিত্যিক অদ্রীশ বর্ধন তাঁর সম্পাদিত বাংলা প্রথম সায়েন্স ফিকশান ম্যাগাজিন "আশ্চর্য" প্রকাশ করার জন্য "কল্প বিজ্ঞান" শব্দটি ব্যবহার করেন। বাংলা ভাষায় প্রথম লেখা বিজ্ঞান ভিত্তিক কল্পকাহিনী হিসেবে ১৮৮২ সালে যোগেন্দ্র সাধুর প্রকাশিত এবং প্রাণানন্দ কবিভূষণ সম্পাদিত "বিজ্ঞান দর্পন" পত্রিকায় প্রকাশিত হেমলাল দত্তর "রহস্য" গল্পটিকে ধরা হয় ! যদিও জগদানন্দ রায়কেই বাংলা কল্পবিজ্ঞানের জনক বলা যায়। ১৮৭৯ সালে বিশ্ব ভারতীয় শিক্ষক ও রবীন্দ্রনাথের প্রিয়পাত্র জগদানন্দ রায়ের আন্তঃনাক্ষত্রিক ভ্রমণ ও গ্রহান্তরের জীব নিয়ে লেখা "শুক্র ভ্রমণ " বিজ্ঞানী হার্বার্ট স্পেনসার ও চার্লস ডারউইনের মানুষের অভিব্যক্তি তত্বের ভিত্তিতে লেখা একটি যুগান্তকারী উপন্যাস। ‘ভারতী’ পত্রিকার দুই কিস্তিতে প্রকাশিত হয়েছিল এটি। তবে বাংলা ছোটগল্পে ভিন্নগ্রহের প্রাণীর প্রথম আবির্ভাব এই ‘শুক্র ভ্রমণ’-এই। সত্যজিতের ‘বঙ্কুবাবুর বন্ধু’ অ্যাং দেখা দেবে এর ঠিক সাড়ে ছয় দশক পরে। ১৮৮৬ সালে প্রকাশিত জগদীশচন্দ্র বসুর গল্প "পলাতক তুফান" তার "অব্যক্ত" বইতে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের যৌক্তিকতা ব্যবহার করে সমুদ্রে একটি ঝড়ের গল্প তৈরি করেছেন যা ঢেউয়ের উপর চুলের তেলের বোতল ফেলে নিয়ন্ত্রিত হয়।
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বেগম রোকেয়া সাখওয়াত হোসেন প্রথম মহিলা সাহিত্যিক হিসেবে বিজ্ঞান নির্ভর কল্পকাহিনী লেখেন "সুলতানার স্বপ্ন " ! সেখানে, গ্রহ পরিচালিত হয় মহিলদের দ্বারা, মহিলা বিজ্ঞানীরা সেখানে সৌরবিদ্যুৎ, আবহাওয়া নিয়ন্ত্রক যন্ত্র সৃষ্টি করেছেন, প্রচলন করেছেন শ্রমবিহীন কৃষিকাজ, উড়ন্ত গাড়ির।
কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, প্রেমেন্দ্র মিত্রও ছিলেন বাংলার সবচেয়ে বিখ্যাত বাংলা ভাষায় কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য অনুশীলনকারীদের একজন। তিনি বলেছিলেন যে কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য কেবল "ইউটোপিয়াগুলির কথা বলে না, তবে তাদের মধ্যে সেরাটি দৃঢ় বৈজ্ঞানিক মেজাজ এবং তথ্যের উপর ভিত্তি করে।" তার সবচেয়ে পরিচিত দুটি গল্প হল "পিঁপড়ে পুরাণ" ও "মঙ্গল বৈরী", তার সৃষ্ট অবিস্মরণীয় চরিত্র ঘনাদা লোভ বা ভয় থেকে বিজ্ঞানের অপব্যবহার কারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মুখ। ঘনাদা ১৯৪৫ সালে "মশা " নামের একটি গল্পে প্রথম হাজির হন সর্ব সমক্ষে। প্রেমেন্দ্র মিত্রের সমসাময়িক জনপ্রিয় লেখক হেমেন্দ্রকুমার রায়ের "কাঁচের কফিন" এবং "অমানুষিক মানুষ" খুব জনপ্রিয় হয়েছিল সেসময়।
বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য আলোচনার ক্ষেত্রে সত্যজিৎ রায়ের নাম অতিঅবশ্য উল্লেখ্য, তাঁর সৃষ্ট প্রফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু, বাংলা ভাষায় সাহিত্য হিসেবে কল্পবিজ্ঞানকে এক অন্য মাত্রা প্রদান করে ও প্রভূত জনপ্রিয় করে তোলে। এই প্রসঙ্গে সুকুমার রায়ের হেশোরাম হুঁশিয়ারির ডাইরি কিংবা "আবোল তাবলের" প্রাণীগুলি নিশ্চ্য় তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। এনাইহিলিন পিস্তল, মিরাকুলাস বড়ি কিংবা সহকারী রোবট "রোবু" এখনো আলোড়ন তৈরী করে আজকের বিজ্ঞান গবেষণাকারী মানুষের মনে।
বাংলাদেশের জনপ্রিয়তম সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম হুমায়ুন আহমেদ এর নাম বাংলা ভাষায় কল্পকাহিনী লেখার জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বহুকাল, তার লেখা জনপ্রিয় লেখাগুলির মধ্যে "নিউটনের ভুল সূত্র" , "ওমেগা পয়েন্ট" , "সম্পর্ক" , "আয়না" অন্যতম।
সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার তাঁর সৃষ্ট সত্যান্বেষী অর্জুন -এর গল্পগুলির মধ্যে কল্পবিজ্ঞানকে ব্যবহার করেছেন। গোয়েন্দা গল্পের সাথে কল্পবিজ্ঞানের মিশ্রণ তাঁর লেখা "অর্জুন ঘুরে এল" কিংবা "লাইটার" ইত্যাদিতে দেখতে পাওয়া যায়। জলপাইগুড়ির ছেলে সত্যান্বেষী অর্জুন টাইম মেশিন -এ চড়ে ভবিষ্যতের জলপাইগুড়ি ভ্রমণ করে কিংবা সেনাবাহিনীর জন্য তৈরী একটি লাইটার যেটিকে বোতাম টিপে বোমাতে রূপান্তরিত করা যায় অথবা পকেটে রাখার উপযোগী একটি কলমকে অস্ত্রে রূপান্তরিত করে ফেলবার কল্পনা তিনি মিশিয়েছেন গোয়েন্দা গল্পে যা, বাংলায় লেখা গোয়েন্দা কাহিনীগুলির মধ্যে অর্জুনকে কিছুটা হলেও আলাদা করেছে।
নারায়ণ সান্যালের "বিশ্বাসঘাতক" কল্পনা না হলেও ফিকশান ও নন-ফিকশনের সমন্বয়ে লেখা একটি অসামান্য বিজ্ঞানভিত্তিক বাংলা উপন্যাস। এছাড়াও জনপ্রিয়তার সাথে ও বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের লক্ষ্য রেখে, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সাইয়িদ মুস্তাফা সিরাজ, অদ্রীশ বর্ধন, সিদ্ধার্থ ঘোষ, অনীশ দেব , এণাক্ষী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লিখেছেন। বর্তমান বাংলাদেশে সাদ হোসেন, আফরোজা পারভীন, আহসান হাবিব, মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রমুখ বিজ্ঞান নির্ভর কথা সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন ও জনপ্রিয় হয়েছেন।
শেষমেশ বাংলা ভাষায় লেখা কল্প-কথাসাহিত্য সৃষ্টি প্রসঙ্গে উৎসাহী পাঠকের আশা অনেকখানি। বাংলায় লেখা কল্পকাহিনী যথার্থ অর্থে বিজ্ঞান ভিত্তিক বা বিজ্ঞান নির্ভর হয়ে উঠবে, ভাষার সাবলীলতা বা "শৈলীর" চাপে পড়ে জটিল ও অমূলক বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী বৈজ্ঞানিক পরিভাষা থেকে মুক্ত হবে, প্রাপ্তমনস্কতার পথে আরো এগোবে এই আশা রেখে শ্রদ্ধেয় রাজশেখর বসুর সচেতন বাণী মনে করে ও করাতে চেয়ে, কলম তুলে রাখতে চাইছি। "বিজ্ঞানমূলক রচনার ক্ষেত্রে সীমিত ও ভুল জ্ঞান ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে, ভুল বৈজ্ঞানিক লেখা পাঠকের পক্ষে ক্ষতিকর।"

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri