কত পথ
কত পথ
সত্যজিৎ চক্রবর্তী
--------------------------
স্কুল, কলেজের পড়ার পথগুলো আমার বরাবরই হাঁটাপথ।
মাধ্যমিক
পর্যন্ত বইয়ের বাক্স হাতে এক কি.মি. লম্বা পথ প্রায় দৌড়ে গিয়ে, ফার্স্ট
বেঞ্চে বসাটা আবেগের কোন স্তর ছিল এখনো ধরতে পারিনি।উচ্চমাধ্যমিকে,
কোকরাঝাড় কলেজে ভর্তি হয়ে মাত্র আট কি.মি. পথ প্যাসেঞ্জার ট্রেনে পেরোতে
রেল স্টেশনে অনন্তকাল বসে থাকতাম। ট্রেনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে, ''জীবন
শেখায় সময়কে ভালোভাবে ব্যবহার করতে"- ধারণাটাকে দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছিল। এর
পর স্নাতকে বীরপাড়া কলেজে পৌছতে বাসস্টান্ড থেকে প্রতিদিন প্রায় তিন কি.মি.
হাঁটার চ্যালেঞ্জ মন্দ লাগেনি। কারণ কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ যে আরও বড়।
আবার কর্মের খাতিরেই সামসী-বদলির পর ঠিকভাবে বুঝলাম ঘরে ফেরার হাতছানি কাকে
বলে। তিস্তা-তোর্ষা ট্রেনে গভীর নিঝুম রাতে যখন একদম একা স্টেশন চত্বর
থেকে মেস বাড়ির দিকে যেতুম তখন সারমেয়দের ঐক্যতানে আধ কি.মি. পথ যেন কেবল
পথের ভিতর হারিয়ে যেত।সামসীর কাছে একবার আদুলের ব্রীজটায় ওঠার মুখে ট্রাকের
টায়ার বেরিয়ে এসে গাড়িটাকে আলতো ছুঁয়ে আমাদের সটান নিচে ফেলে দিল।এখনো সেই
পথের কথা ভেবে শিউরে উঠি। আবার ধুপগুড়ি-ফালাকাটা পথে এ -কে ট্রভেলস বাস
যেদিন তার চারটি চাকাকে উপরে রেখে খাদের ধারে সটান শুয়ে পড়ল অসংখ্য যাত্রী
নিয়ে, সেদিন আহত হয়ে নার্সিং হোমে গিয়ে ভাবছিলাম ডেইলি প্যাসেঞ্জারদের
ছুটির দিন বাদ দিয়ে প্রতিদিনই অন্যরকমের জীবন উদযাপন। এর থেকেপরিত্রাণ
নেই। মনে হয় একমাত্র রিটারমেন্টএর পরে নিজেই নিজের ক্যালেন্ডার বানানোর
স্বাধীনতা পাওয়া যেতে পারে। সে দিনটা না আসা পর্যন্ত রাজপথ দিয়ে খুব জোরে
গাড়ি চালাব মনে করলে কি হবে? এক্সিলেটরের সাথে ব্রেকেও যে পদযুগল! গাড়ি
এগুবে কি করে?
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴