সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

কচিপাতায় বৃষ্টিফোঁটা

কচিপাতায় বৃষ্টিফোঁটা
জয়িতা রায় চৌধুরী মল্লিক
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷

নিঝুম দুপুর। সদ্য অবসর প্রাপ্ত শিক্ষিকা উমা দেবী বিছানায় শুয়ে গল্পের বইতে মগ্ন আর নাতি পিকুর হাতে মায়ের মোবাইল। মা ঘুমোচ্ছেন, তাই মোবাইল এখন তার দখলে। বড় বড় চোখদুটো সেখানেই আটকে রেখে, ঠাম্মার হাত ধরে ঝাঁকুনি দিতে দিতে আদুরে গলায় আবদার করতে লাগল পিকু, আমার সাথে খেল না ঠাম্মা, খেল না। উমা দেবী তার ছয় বছরের নাতির দিকে তাকালেন। এই ঘরবন্দি সময়ে ছেলেটার খেলাধূলা সবই বন্ধ, তার ওপর কদিন ধরে বৃষ্টিও হচ্ছে খুব। ওর কষ্টটা অনুভব করতে পারেন তিনি। বই বন্ধ রাখলেন, আপাততঃ। ওকে বললেন, ঠিক আছে কি খেলব, বল।
গেম খেলব মোবাইলে।
ও বাবা ওসব কি আমি পারি? 
আমি তো সব শিখিয়ে দেব তোমায়!
আচ্ছা বেশ, খেলব, তবে আমার পছন্দের একটা খেলাও তোমায় খেলতে হবে, দাদুভাই। 
ওরে বাবা তোমারও পছন্দের খেলা আছে নাকি? কি মজা! আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠল পিকু। চল তাহলে তোমারটাই আগে খেলি, বেশ বড়দের মত গলা করে পিকু তার মতামত জানাল।
ঠাম্মা বললেন, আচ্ছা শোন, খেলাটি হল, বাইরের প্রকৃতির সাথে মিলিয়ে তোমাকে তোমার জানা কোন কবিতা বা গল্প বা গান শোনাতে হবে। কয়েকটি লাইন বললেও হবে। যেটাই তোমার মনে আসবে বলবে, শুধু সেটাকে চারদিকের প্রকৃতির রূপের সাথে একাত্ম হতে হবে। যেমন, দেখ এই মুহূর্তে বাইরে কেমন মেঘ করেছে, হাওয়া বইছে। ঠিক এইরকম অবস্থার সাথে মিলিয়ে তোমার জানা যে লাইন মনে আসছে, সেটাই বলবে। 
গম্ভীর মুখে পিকু বলল, বাপরে, বেশ কঠিন। আচ্ছা তুমি প্রথমে, ঠাম্মা। 
উমাদেবী হাসলেন, তারপর জানলা দিয়ে বাইরে উদাস দৃষ্টি মেলে বলতে লাগলেন, 'বাদলা হাওয়ায় মনে পড়ে ছেলেবেলার গান, বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এল বান,,,,"। 
পুরোটা শেষ করলেন, তারপর ধীরে ধীরে নাতির দিকে তাকালেন, মুগ্ধ হয়ে শুনছিল, পিকু। তিনি বললেন, এবার তোমার পালা। কয়েক সেকেণ্ড একটু ভেবে নিয়ে পিকু বলে উঠল, "আকাশের ময়দানে বাতাসের ভরে ছোট বড় সাদা কালো কত মেঘ চরে, কচি কচি থোপা থোপা মেঘেদের ছানা হেসে খেলে ভেসে যায় মেলে কচি ডানা,,,"। সাবাশ! খুশি মাখা ঝলমলে মুখে ঠাম্মা প্রায় চিৎকার করে উঠলেন। পিকু হাততালি দিল, আনন্দে। বেশ জমে উঠেছে খেলা। ঠাম্মা আরও বলছেন, পিকুও স্কুলের বই থেকে মনে করে, খুঁজে পেতে ঠিক বলে দিচ্ছে। একসময় ঠাম্মা বললেন, তোমাকে হারানো তো খুব শক্ত! আচ্ছা, এবার তাহলে তোমার পছন্দের খেলা শুরু করা যাক। পিকু তখন অবাক চোখে ঠাম্মার দিকে তাকিয়ে বলল, মুষলধারায় বৃষ্টি হচ্ছে ঠাম্মা, এখন আর ওসব খেলা হবে না, বুঝলে। উমাদেবী মিটিমিটি হেসে বললেন, ঠিক ঠিক, বাইরে তো ঝমঝম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে! পিকু ততক্ষণ বলতে শুরু করে দিয়েছে, 'বৃষ্টি নামল দেখছি, সৃষ্টিধর ছাতাটা খুঁজে নিয়ে আয়, না পেলে ভারী কষ্ট হবে,,,,,,,'। উমাদেবী খুশি, ভীষণ খুশি। এভাবে অনেকক্ষণ চলল খেলা। রাতে পড়াশুনো হয়ে গেলে পিকু একগাদা বই হাতে নিয়ে ঠাম্মার ঘরে ঢুকল। ঠাম্মা অবাক হয়ে বললেন, এত বই কিসের? পিকু বলল, এগুলো সব আমার। অনেক রকমের বই আছে এখানে। সেই যে তোমরা সবাই দিয়েছিলে, কিচ্ছু পড়া হয়নি। ওগুলো এখন একে একে পড়ে শেষ করব, বুঝলে। তোমার সাথে সেই খেলাটা খেলতে হবে না, এই বর্ষায় কখন কিভাবে প্রকৃতি সাজবে, কে জানে। তৈরী থাকতে হবে তো। নইলে তোমার কাছে হেরে যেতে হবে যে! ওটা তো আমি হতে দেব না ঠাম্মা, বলে একগাল নিষ্পাপ হাসিতে ঘর ভরিয়ে দিল। দুচোখে আনন্দাশ্রু নিয়ে উমাদেবী বুকে জড়িয়ে ধরলেন নাতিকে, বললেন, আমি তো তোর কাছে হারতেই চাই, দাদুভাই। বাইরে তখন বিরামহীন বাদল ধারা।
পরদিন ঠাম্মা বললেন, আজ আমরা ছাদে গিয়ে খেলব। পিকু অবাক হয়ে বলল, ভিজে যাব যে! ঠাম্মা মুচকী হেসে বললেন, ওটাই তো মজা। উত্তেজনায় ও আনন্দে পিকুর চোখদুটো জ্বলজ্বল করে উঠল। ঠাম্মার হাত ধরে ছাদে চলে এল পিকু। ঝিরঝির বরষনে ছাদ-বাগানের বেলি, জুঁই, গোলাপের সাথে ওরা দুজন ভিজতে লাগল। পিকুর গলায় তখন স্কুলে শেখা গান 'হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ূরের মত নাচেরে',,, মুখে পরিতৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে গলা মেলালেন উমাদেবী,,, 'ঝরে ঘনধারা নবপল্লবে, কাঁপিছে কানন ঝিল্লির রবে। তীর ছাপি নদী কলকল্লোলে এল পল্লীর কাছে রে,,,,'।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri