সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
27-December,2022 - Tuesday ✍️ By- শুক্লা রায় 204

ওই পাড়ে তুমি নয় ট্যারা কার্তিক

ওই পাড়ে তুমি নয় ট্যারা কার্তিক
শুক্লা রায়
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^

অলস পায়ে প্যাডেল করছি। কোথাও যাওয়ার তাড়া নেই। এক কাপ চা আর আড্ডা - এটাই উদ্দেশ্য। খুব জবরদস্ত একখানা বাইক যদিও আছে আমার, তবে আড্ডা দিতে আজকাল সাইকেলই বাহন। আসলে মধ্যপ্রদেশের স্ফিত ভাবটা কমানোর প্রাণপণ চেষ্টা আর কি। ফেবুতে একটা ছবি পোষ্টাতে চাইলেও এখন কত্ত ঝকমারি। নানান কসরৎ করে ক্রমবর্ধমান ওটাকে যতটা সম্ভব ভেতর দিকে ঢুকিয়ে ছবি তোলা! অরিজিনাল ভুঁড়িটাকে যতটা সম্ভব লুকিয়ে ফেলা আর কি! এমনিতেই তো গায়ের রঙটা আগেই মেরে দিয়েছে। শ্রীমান কাকেশ্বর কুচকুচে। এই নিয়ে ভেতরে কী কম দুঃখ ছিল, মানে আছে? মুখে জানান দিইনা তাই। এরপর ইনিও যদি এভাবে বাড়তে থাকেন তাহলে আমার চেহারাটার ছিরি কী দাঁড়াবে বোঝা যাচ্ছে? খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি অনেক। কিন্তু কেন যেন দিন যাচ্ছে আর ওকে কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না। দিন দিন চন্দ্রকলার মতো শ্রীবৃদ্ধি হচ্ছে। ধুত্তেরিকা! ভাল্লাগে না। ছুটির দিনে শুকনো রুটি এড়াতে বাজারে একটু সামান্য, এই তিন পিস মতো পরোটা খেয়ে যাব। তাই এক্সারসাইজের জন্য সাইকেল! পরোটা খেয়ে বাইক নয়, সাইকেলই ভালো!
বাজারে ঢোকার মুখে ট্যারা কার্তিকের সঙ্গে চোখাচোখি। খুব দুর্বিনীত ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে। চোখ ফিরিয়ে নিল। ও আমাদের মতো প্রায়মারি টিচারদের পছন্দ করে না। ওর অবজ্ঞাকে পাত্তা না দিয়ে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলাম, কিরে, কি খবর? প্রথমে একটু নীরবতা। একমনে আখ কামড়াচ্ছিল। আমিও চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে মিষ্টি করে তাকিয়ে থাকলাম। তারপর একরাশ বিরক্তিসহ উত্তর নয় একটা বুলেট ছুটে এল, 'তোর এত খবরে কাজ কি? স্কুল নেই?' আমি বিগলিত কন্ঠে জবাব দিলাম, নাহ্, আজকে স্কুল বাদ দিয়ে তোর খবর নিতেই ছুটে বেড়াচ্ছি রে! মুখে চলে এসেছিল ট্যারা! কিন্তু ওটা চেপে হাসিমুখেই বিদায় নিলাম। আসলে ট্যারা কার্তিক বলতে চোখে যে চেহারা ভাসে আমার বন্ধুটি মোটেই তা নয়। ইয়েস! ইনি আমার এককালের বন্ধুও বটে। রীতিমতো সুদর্শন। ছ'ফিটের মতো হাইট। ফর্সা টকটকে গায়ের রঙ। এখনো যে কোন মেয়ে এক নজরে দেখে ক্রাশ খেয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু হলে কী হবে। লোকটার ভেতরটা ট্যারামিতে ভর্তি! এককালে দারুণ ক্রিকেট খেলত। বোলিং এবং কিপিং ভালো করত। এই খেলা থেকেই নাম হয়েছিল দিনেশ কার্তিক। সেও এক গল্প।
সেবার স্কুল ক্রিকেটে ব্লক লেভেলে খেলা হচ্ছিল। ধুঁকে ধুঁকে হলেও ফাইনালে পৌঁছোলাম। বিপরীত পক্ষ টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছে। মোটামুটি একটা সম্মানজনক অবস্থায় ওরা শেষ করল। আমাদের পালা। প্রথমদিকে বুক চিতিয়ে লড়াই চললেও তিন নম্বর উইকেটটা পড়ার পর ক্রিজে যেন মড়ক লাগল। কিছুটা হতভম্ব অবস্থা কাটিয়ে শুভময় যখন নামল দলের অবস্থা খারাপ। আমাদের মনোবল তলানিতে। সব আগেই হেরে বসে আছি। এখনকার এই ট্যারা কার্তিকের নামই শুভময়। কিন্তু সেদিন যে ওর কী হয়েছে, কোন্ মৃত ক্রিকেটারের পুণ্যাত্মা যে ওর ভেতরে ভর করল কে জানে। দুদ্দাড় মারতে লাগল। বোলার পাল্টিয়েও কিছু হল না। শেষটায় দিনেশ কার্তিকের বাংলাদেশ সফরের স্মৃতি ফিরিয়ে দিল মাঠের উপস্থিত সবাইকে। মাঠ তখন ঢেউয়ের মতো ভাসছে। জিতুক হারুক। সে বিষয় নয়। দুর্দান্ত একটা ইনিংস দেখছি আমরা। দিনেশ কার্তিকের সেই ঐতিহাসিক মার। শেষ ওভারে শেষ বলে পাঁচ রান লাগে। আমাদের খেলাও ঠিক সেই অবস্থায়। মাঠের উত্তেজনা তুঙ্গে। ব্যাট হাতে শুভময়। সমস্ত মনোযোগ বোলারের দিকে আর মাঠের চোখ ওর দিকে। শেষ ছক্কাটা যখন জাস্ট উড়ল, শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে গোটা মাঠ
অভিনন্দন
ের বন্যায় ভরিয়ে দিল। সেদিন থেকেই নাম হল দিনেশ কার্তিক। কিন্তু দু'বছরও গেল না, নাম বদলে হয়ে গেল ট্যারা কার্তিক! ওর এই ট্যারামির কবলে পড়ে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী ওর বউ শ্রীরূপা। আহারে অমন সুন্দর মেয়েটার জীবন একেবারে শেষ।
শ্রীরূপা আমাদের দুটো ক্লাশ নিচে পড়ত। অসাধারণ সুন্দরী। এখনও। আমারও একটু ইয়ে মতো ছিল ওর প্রতি। একটু মানে বেশ একটু। কিন্তু শুভময়ের অমন কম্পিটিশনের কাছে পারব কেন? সুতরাং আর পাঁচজনের মতোই হিরোর বন্ধু হিসেবে সাইড রোলে অভিনয় করে গেলাম। বাপে বাপে কি হয়েছে তা আমাদের ডিটেইলে জানা নেই, কিন্তু শ্রীরূপার বাবা শুভময়ের বাবার নাম শুনলেই তেলে-বেগুনে জ্বলে যেতেন। বলতেন ওদের গুষ্টিটাই খারাপ। ওই ছেলেও ভালো হবে না। অমন কন্দর্পকান্তি ছেলেটার মধ্যে খারাপ কী থাকতে পারে আমরা ভেবে পেলাম না। ভাবতাম ওটা ওনার বেশি বাড়াবাড়ি। প্রায়মারির মাষ্টার তো, বেশি বোঝেন! (আমি নিজে তখনও মাষ্টার হইনি!) মেয়েকে বলতেন খবরদার ওই ছেলেকে বিয়ে করবি না। এই কথার মর্ম আমরা বুঝিনি তো শ্রীরূপা আর কী বুঝবে! ওর তো তখন 'রূপ লাগি আঁখি ঝুরে/গুণে মন ভোর/প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর!' বোঝাই গেছে এ পাব্লিক কিছুতেই শুভময়ের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। আমরাও একটা বন্ধুকৃত্য করার মহা সুযোগ পেয়ে গেলাম আর কি। ওদের চার হাত এক করার দায়িত্ব কাঁধে নিলাম বন্ধুরা মিলেই। প্রথম অংশটা পালিয়ে হলেও শুভময়ের বাবা বেশ উদার মানুষ। বিরাট করে ছেলের বৌভাত করালেন। বলাই বাহুল্য ও বাড়ি থেকে কেউ আসেনি। আর আমরাও কিছুদিন পরে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম শুভময়ের বাড়ির দরজা আমাদের জন্যও হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। এমনকি মেয়ে বান্ধবীদের যাওয়াও শুভময়ের না পসন্দ্। ওর সঙ্গে ক্রমশ দূরত্ব বাড়ল। ওর মনে আসলে ভয় ওর সুন্দরী বউকে আমরা আবার না ভাগিয়ে নিই। আর ওর সন্দেহের চোটে শ্রীরূপাও তটস্থ। আর অন্যদিকে আমার অবস্থা দেখো। বউ নামক বুদ্ধিজীবীর চোখ এড়িয়ে একটা কাজ করার উপায় নেই।
চাকরি পেয়ে মনের দুঃখে আমিও বিশ্বভুবন তোলপাড় করে রীতিমতো ইন্টারভিউ নিয়ে শ্রীরূপার মতোই এক ভয়ঙ্কর সুন্দরীকে বিয়ে করে ফেললাম। মনে মনে বললাম দ্যাখ ব্যাটা, পৃথিবীতে শুধু তোর বউটাই সুন্দরী নয়! আহা! কী টানা টানা ডাগর ডাগর চোখ! তাকালে মনে হয় বুকে ছুরি বিঁধল! হাসলে মনে হয় সবেমাত্র আকাশ লাল হয়ে ভোর নামল! আমি এক্কেবারে আউট! শুধু ভুলবশত কন্ঠস্বরের ডেসিমেলের মাত্রাটার সঠিক পরিমাপ করতে পারিনি আর অতি আতিশয্যে জিভের ধারটিও পরীক্ষা করে নেওয়া হয়নি। এখন তাঁর চিৎকারে আমার বিশ্বব্রহ্মান্ড থরহরি কম্পমান। জিভের ধারের কথা না-ই বা বললাম! আর তান্ডব থুড়ি নৃত্য শুরু করলে তো কোন কথাই নেই, স্বয়ং মা কালিও হার মানবেন। অথচ, আহা! বেচারা শ্রীরূপা ঠিক আগের মতোই শান্ত এবং মিষ্টিই আছে! কী মন্দ কপাল আমার!
যাইহোক ট্যারা কার্তিকের সঙ্গে সম্পর্ক আমাদের যতই ভেঙে যাক ছিঁড়ে যাক, তবুও কোথায় যেন একটা আলগা টান থেকেই গেল। ও মোটেও আমাদের পছন্দ না করলেও আমরা ওকে খুব পছন্দ করি। ওকে দেখে ওর অকারণ রাগ দেখে খুব মজা পাই। চা খেতে ডাকলেও কোনদিন আসেনি। এটাও আমাদের কাছে খুব মজার। সেজন্য দেখা হলেই ডাক দিই একবার করে। শুধু ওর চোখের তাচ্ছিল্যটা দেখার জন্য! বন্ধুত্বের এই করুণ পরিণতিটাও এখন আমাদের কাছে খুব উপভোগ্য!

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri