সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
05-December,2022 - Monday ✍️ By- অনিন্দ্য সেনগুপ্ত 296

এখানে সময় নাম ধরে ডাকে/অনিন্দ্য সেনগুপ্ত

এখানে সময় নাম ধরে ডাকে
অনিন্দ্য সেনগুপ্ত
_________________________

সেদিন অষ্টম নয়ত সপ্তম শ্রেণি। ক্লাসে তুষার-স্যার।চেয়ারে বসেই একান্ত নিজস্ব স্টাইলে - 'ওহে ছোকরা!ডুয়ার্স শব্দের মানে বলো দেখি?' আমি তোতলামি সামলাতে ব্যস্ত দেখে স্যার নিজেই শুরু করলেন - "...দ্বার.....প্রবেশ দ্বার....ভুটানের প্রবেশ দ্বার...... এই অঞ্চল মূলত পরিচিত 3T - ট্রী, টি এবং ট্যোবাকোর জন্য ......অচিরে ট্যুরিজমও ছড়িয়ে পড়বে ডুয়ার্স ঘিরে.....দেবেশ রায় লিখেছেন-'পাহাড় যেখানে নদীর,নদী যেখানে জঙ্গলের আর জঙ্গল যেখানে জনপদের সীমারেখা, সেটাই ডুয়ার্স.....' পড়ে নিও।"......আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে শিক্ষকের মুখে শোনা এই কথাগুলোর মধ্যেই হয়তো লুকোনো ছিল মুখ হাঁ-করা এক কিশোরের ডুয়ার্স প্রেমের ভবিতব্য-'আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই/কিচ্ছু করার নেই .....'।
এর ঠিক বছর দশেক পর থেকে চাকরি সূত্রে নিত্যযাত্রা ডুয়ার্সের জিয়নরেখা এল.আর.পি রোড ধরে।করোনেশন সেতু থেকে যে রাস্তার উদোম ছুট অসম সীমান্তে। দিনশেষে আফিস ফেরত সে যাত্রায় নিশ্চিত বরাদ্দ থাকত একপাল গরু,মোষের সঙ্গে মোলাকাত - জলঢাকা,কেরন বা ডায়নার রাস্তায়। তাদের রাজকীয় গমনে থমকে যেত আমাদের যাত্রী বাসের ঔদ্ধত্য,গলার ঘন্টার টুং-টাং শব্দে চাপা পড়ত ইঞ্জিনের একঘেয়ে গোঙানি।সে দৃশ্যে দেবেশের 'বাঘারু' কোনদিন মৈষাল তো কোনদিন লাঠি হাতে দল ঠেঙানো দলপতি,বাথানের গন্তব্যই যার জীবনের একমাত্র নিশ্চয়তা। গাড়ির অত্যাচার সামলে চতুষ্পদীদের সাবধানে রাস্তা পার করার মুহূর্তে তার শশব্যস্ততার সাক্ষী থাকত সূয্যিমামা,পশ্চিমপাটে। লালচে আভায় বাঘারুকে রাঙিয়ে দিতে দিতে একসময়ে তাকেও ডুব দিতে হয় আংরাভাসার সবুজ জলে। প্রতিসন্ধ্যায় যে খতিয়ান নীরবে লিখে রাখে সোনাখালি জঙ্গল,গয়েরকাটার(থুড়ি, স্বর্গছেঁড়া) চা বাগান আর সমরেশের 'উত্তরাধিকার'।
ওদিকে, সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর টলমলে পায়ে 'মধুবনী'র দিকে এগোতে এগোতে চা শ্রমিক শুক্রা গান ধরে ধামসা,মাদলের সুরে।সেই ব্যারিটোনে মজে গিয়ে খুট্টিমারির দাঁতাল গজরাজ অর্জুন গাছে গা ঘষতে ঘষতে মন্ত্রমুগ্ধের মত আড়াল করে নেয় নিজেকে।আর ঠিক তক্ষুণি পূর্ণিমা চাঁদের সঙ্গে খুনসুটি করতে চেয়ে একটা ময়ূর ডানা ছাড়ে গন্ডারের চারণক্ষেত্র জলদাপাড়ার তৃণভূমির দিকে।কোন বিবাগী 'কান হেলা' হয়ত তখন তোর্ষার রূপালী জল সাঁতরে আশ্রয় নিতে যায় চিলাপাতায় নীল রাজার ভাঙা গড়ের আশপাশে।মানুষ,নদী,পশু,পাখি স্বভাবধর্মে সবাই যে পরিযায়ী এই পটভূমিতে।উল্টোপারের টোটো বস্তীও একসময় কোণঠাসা হতে হতে ভূমিচ্যূত হয় তাই অনিবার্যভাবে।
কোণঠাসা ঠিক যেমন আজ বক্সা-জয়ন্তীর মানুষগুলোও,মিথ্যা পরিসংখ্যানে 'বাঘবন' বাসিন্দা হয়ে।সঙ্গে উপরি গেরো ,'মেঘের গায়ে জেলখানা'র মতই আসন্ন ধ্বংসের আশঙ্কা-নদীগর্ভ ফি বছর উঁচু হতে থাকা।এই জনপদের প্রাচীন ইতিহাস আঁকড়ে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যায় এখনো সেইসব প্রান্তিকজনেরা।ভরা বর্ষার তিস্তায় গাছের গুঁড়ি আঁকড়ে বাঘারুর ভেসে থাকার মতোই সে লড়াই অসম এবং অদম্যও বটে-'যে মাটির জন্যে এমন হন্যে/ এমন ব্যাকুল হলাম/ সে মাটিতে আমার অধিকার /সে মাটির বুকের কাছে/ মগ্ন আছে আমার অঙ্গীকার .....'

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri