একান্ত গ্রামজ
অমিত কুমার দে
~~~~~~~~~
বুকানির ওপর ঝুঁকে আছে অসংখ্য গাছ
প্রেক্ষাপটে বেজে যায় নরেনের দোতারা
একটা ঘোরের মধ্যে সাঁকো পেরিয়ে
আমি আমার মায়ের কাছে যাই
আমার সঙ্গে হাঁটতে থাকে কুয়াশাবাতাস
আমার সঙ্গে হাঁটতে থাকে ভাওয়াইয়া গান
আমার সঙ্গেই হাঁটতে থাকেন ভান্ডানি দেবী
রায়ডাক থেকে তিস্তা –
আমি এখনো খুঁজতে থাকি পুরাতন ভান্ডীর ঝাড়!
বুকের ভেতর মাঝে মাঝে ঘনিয়ে ওঠে
শ্রাবণসংক্রান্তি – বিষহরা গান
বিচালির চাল ভেঙে যায় ভেসে যায়
সেখানে পঞ্চায়েতের দেওয়া কোনো ঘর নেই
একশো দিনের কাজের কাজফাঁকি নেই
কোনো মাস্টার রোলে মিছিমিছি সই করবার
কোনো প্রহসন নেই
শুধু এক দীর্ঘতম সঙ্গীত, আর বেপরোয়া করতাল
গ্রামীণ খোলের গাব-এ খসখসে আঙুলের চাটি
একটা অনন্ত সাঁকো, একা-একা একা-একা হাঁটি!
এলুয়া কাশের চর, ওপারে বাথান
মোষের ঘন্টা যেন সমাহিত বুদ্ধের গান
ধুলো ওড়ে, উড়ে যায় ক্ষীরোল দীঘলনাসা মৈষালি সুর
আমার রাস্তা যেন বহুদূর, আরো দূরে যায়
একটা সারিন্দা থাকে কোনো এক গহীন মায়ায়
গাবুর বয়স এসে ছুঁয়ে ফেলে উত্তর পঞ্চাশ
ঘাড়ের গামছা আমি রেখে যাই ধর্লার পাড়ে
হাতের বাঁশিটি রাখি পরিণত বৃক্ষশিকড়ে
তিস্তার চরে রাখি কোনো এক বৈকালি আকাশ!
একটা হাতের খাড়ু, নাকের নোলক আর আসল ঝুনুকা
এখানে রেখেছি দ্যাখো -
বাঁধো খোঁপা, খোঁপা বাঁধো ওগো সুতনুকা
দৈয়োল পাখির কাছে শিখে নিই প্রেম প্রেম শিস
সব বিষ মুছে দিক আউশ বা আমনের শিষ
এক সাঁকো জুড়ে দিক দুইখানা কুয়াশার গ্রাম
একদিকে ভালোবাসা, অন্যদিকে গ্রামীণ প্রণাম!
দইচিড়া মেখে দাও, আমি যাব মাষানের পাটে
ওখানে বিলের জলে কুড়ুয়ারা জলে বিলি কাটে
সাঁচিপান দিতে পারো, মুখ হোক লাল টকটকে
কুশান পালার থেকে সরিও না একাকি আমাকে
হুদোম পূজার দিকে যারা গেছে উন্মুক্ত শরীরে
বৃষ্টি দুহাতে নিয়ে ভোরবেলা আসে যদি ফিরে
আমিও ভিজব সেই তুমুল প্রপাতে
একটা গামছা আমি রেখে দেব চিরন্তনী হাতে!
আমিও একটা গ্রাম। নাম নেই, পরিত্রাণ নেই
আমাকে খুঁড়ছে দ্যাখো উদ্ধত ট্রাক্টর
কংক্রিট ঢেকেছে এই ছন দেয়া ঘর
আমিও একটা গ্রাম। মাঠ ঘেঁষে বিপুল টাওয়ার
চড়ুই মরেছে বলে কোনোখানে শোক লেখা নেই
কোনোখানে নেই বুঝি কোনো মনভার?
আমিও একটা গ্রাম। বিষ আছে, মাটি জুড়ে বিষ _
উঠোনে গোবরছড়া, শরীরেও নির্ভেজাল গোবরকে দিস।