সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
17-December,2022 - Saturday ✍️ By- অমিতাভ দাস 312

আমি তব্বুসুম বেগম ওরফে সুচরিতা সেন

আমি তব্বুসুম বেগম ওরফে সুচরিতা সেন
অমিতাভ দাস
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^

থানায় পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের পর কলেজ পড়ুয়া ছাত্র দুনির্বারকে তার বাবা নিয়ে গেলেন। অল্প বয়স, মেধাবী, খুব সাহসী এবং পরোপকারী দুর্নিবার শেষ পর্যন্ত মধুচক্রে ধরা পড়ল, তাও কিনা প্রিয়বন্ধুর হোটেলে। খবরে ছাপাছাপি হয়েছে, খবরটা বেশ রসালো করে তুলেছে। কিন্তু যাকে নিয়ে মধুচক্রে ধরা পরল সে মেয়েটির পরিচয়-
হেতমপুর গাঁয়ে নেমে মনসা মন্দিরের পাশ দিয়ে যে গলি আসে, একটু এগিয়ে গেলে বিশু নাপিতের সেলুন তারপরে অনেকটা খোলা জায়গা, বাচ্চারা ফুটবল ক্রিকেট খেলে, এরপরে ফণীমনসার ঝোপ ছুঁয়ে একটু পথ পেরোলে লাল রঙ্গের টিনের চাল। বুঝতে অসুবিধা হলে দেখবে পাশে মস্ত বড় আমবাগান। সে বাড়ির উলটো দিকে টালির ঘর, বন্ধ দরজা, ঘরের পিছনে একটি তাল গাছ, প্রতিবছর বাবুই পাখিরা অনেক বাসা করে, তাল গাছের পেছনে দুটো কাঁঠাল গাছ, অনেক পাখি বাসা করে, ওদের কোনদিন উড়িয়ে দেই না, সে বাড়ির মেয়ে আমি সুচরিতা সেন। বাবা একজন কম্পাউন্ডার। সুকুমার কম্পাউন্ডার বলে লোক চিনতেন। জীবনের শেষ দিকে উনি মানসিক রোগী হয়ে ছিলেন। আড়ালে-আবডালে কিছু ফিসফিস করতেন। কখনো বারান্দায় বসে পথচলতি লোকগুলোকে ডেকে গল্প করতেন। সুখ-দুঃখ, হাসি- মজা ছড়িয়ে যেত বারান্দায়। আমার বয়স তখন একুশ-বাইশ। পথের লোকগুলো বুঝতে পারতেন বাবা মানসিক রোগী হয়ে গেছেন। এরপর থেকে লোকগুলি হাসেও ব্যঙ্গ করত। কেউ কেউ আবার খাবার দিয়ে যেত বাবার হাতে। একদিন এভাবেই ফিরোজ আলম এক নতুন ভাড়াটে বাবার কাছে এসে কথা বলে। আমার অন্ধকার ঘর আলো হয়ে ওঠে। বাবাকে নিয়ে আমার মন খারাপ ফিরোজ গুঁড়ো করে উড়িয়ে দেয় বাতাসে। সেদিন এক পশলা বৃষ্টির পর সে এসেছিল, কাঁঠালিচাঁপার সুগন্ধের মতো। আমি তখন কপাল জুড়ে এলোকেশী। সে যেন বললে তোমার শরীর ভালো নেই। আমি বলেছিলাম কেন এত খোঁজ আমার। অস্ফুটে বলেছিল সে তোমাকে খোঁজাই নিয়তি আমার। সে ঝুঁকে এসেছিল আরো কাছে- ফিসফিস করে বলেছিল, 'বিয়ে করবে?' তিন রাস্তার মোড়ে রিকশাতে চাপতেই আমার পাশে বসে বলেছিল, 'বিয়ে করবে?' বাস-অটোরিকশা, রিক্সা আর বাজারি হই হইয়ে সেকথা চাপা পড়ে গেল। মোড় ঘুরতেই ঘিরে ধরল বাতাস। দিগন্ত ছুঁয়ে আছে জলের বিস্তার। জলের বুক ছুঁয়ে খানিক বসে থাকলাম। সে খুব কাছের থেকে যেন বলল, 'স্বার্থপর।' আমি বললাম, কে? সে বলল, আপনি। তাইতো ইচ্ছে করেই ভুলে আছেন। আমি বললাম, আপনি বাড়ি যাবেন না মুর্শিদাবাদে? তারপর, সত্যি আমায় নিয়ে যাবেন?
আমি অস্ফুটে বললাম কোথায় নিয়ে চললে? বাড়ি। সে কোথায়? কত দূরে? এক মাথা সিঁদুরের বদলে বোরখা পরিয়ে দিল ফিরোজ আমার সোয়ামি। সেদিন কত দূরে বাড়ি উত্তর না দিয়েই সে মিলিয়ে গিয়েছিল। আমার আর ঘুম আসেনি। আলো ফুটলে ঘাস, বালি, নদী, পেরিয়ে বসেছিলাম কাল কুঠুরিতে। তববুসুম বেগমের খোলা ব্লাউজের ভেতর বুক ছুঁয়েছিল রোদ্দুর।
আমার বুকে শুধু হুহু বাতাস। পলাশনগরের পরে রামপুরহাট তারপরে নবাবের পুরনো মহল। সে পথ এখন হাইরোড ছুঁয়ে যায়। এখন এই পথটা সন্ধ্যা হলে জ্যান্ত হয়ে যায়। হাত ধরাধরি করে প্রেম পিরিতি, ঠোঁটে ঠোঁট। এখানে কোনো বিধিনিষেধ নেই। প্রেম পিরিতির জন্য পুরো ছাড়। তবে ঘর বাঁধার ছাড় নেই। আমি ঘর বাঁধিনি। লোকে বলে ঘর ভেঙেছি অনেক। সুচরিতা সেন পাল্টে তববুসুম বেগম। এখানে যারা আসে তারা ভালোবাসা কিনতে আসে। ওরা শরীরকে ভালোবাসা বলে জানে। আমি জানি, মন না চাইলেও কীভাবে শরীর দেওয়া যায়। শরীর জীবন্ত লাশ হয়ে যায়। ওরা জীবন্ত লাশ নিয়ে খেলে। দুর্নিবার ওদের মতো নয়। সে আমাকে নিয়ে ডকুমেন্টারি করতে চেয়েছিল। আমার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে চেয়েছে। আমাকে বলেছিল, 'সুন্দর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসো, আমি তোমাকে সাহায্য করব, আমার বন্ধুরাও। আর তার জন্যই তো বন্ধুর হোটেলে আমাকে নিয়ে আসা। কিন্তু কীভাবে খবরটা জেনে যায়। মিথ্যে অপবাদ দুর্নিবারের গায়ে পড়ে। কিন্তু তোমরা যখন রাতের পর সকাল হলে নেশার ঘোর কাটে আর তখনই ঘেন্না ঘেন্না করে চেঁচিয়ে ওঠো। এরপর নগ্ন শরীর ঢেকে দাও জামা কাপড়ে, শরীরে দুর্গন্ধ ঢাকতে ছড়িয়ে দাও আতর। তারপর ভদ্রলোকের মতো নিজের বাড়িতে বউ, ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আদর্শ স্বামী বাবা হয়ে যাও। তোমাদের সেসব মুখোশ খুলে দিতে চাই আমি তববুসুম বেগম ওরফে সুচরিতা সেন।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri