তখন আমরা নামছিলাম। প্রায় তিনদিন খাড়া পাহাড় উঠে তার আগেরদিন পৌঁছেছিলাম গোসাইকুন্ডতে। গোসাইকুন্ড কাঠমান্ডু থেকে প্রায় একদিনের বাস যাত্রায় নেপালের রসুয়া ধুঞ্চে জেলা। সেখান থেকেই হাঁটার শুরু হয়েছিল আমাদের। আর যখন উঠেছিলাম তখন বেশির ভাগ সময়েই এত ঘন কুয়াশা বা মেঘে ঢাকা ছিলো চারিদিক যে কিছুই বুঝতে পারিনি। শুধু এটুকুই মাথায় ছিল যে দুপাশে আনুমানিক তিন ফিট জায়গার পর একদিকে গভীর খাদ আর একদিকে খাড়া পাথরের পাহাড়। সাথে গুঁড়ো গুঁড়ো তুষারপাত বা বৃষ্টিতে জামাকাপড় আর স্যাক ভিজে ভয়ানক ঠান্ডায় আমরা কাহিল। তাই যে গোসাইকুন্ডের এত নাম শুনে আমরা সেখানে যাওয়া মনস্থ করেছিলাম, সেখানে কেন যাচ্ছি সেটাই ভুলে গিয়েছিলাম।
যাই হোক, তো আগের দিন বিকেল থেকেই আবহাওয়া ভালো হওয়া শুরু হয়েছিল।পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী মহাদেব বিষপানের পর যন্ত্রণায় হিমালয়ের এই অঞ্চলকেই ত্রিশূল দিয়ে আঘাত করেছিলেন আর তার থেকেই এখানে একশো আটটি কুন্ডের সৃষ্টি হয়। আমরা সর্বাধিক প্রচলিত গোসাইকুন্ডের চারপাশে ঘুরে বেড়ানোর খানিক হেঁটে ঘুরে বেড়ানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু আবহাওয়া ভালো হলেও প্রচন্ড ঠান্ডা আর হাওয়ায় কারণে সে চেষ্টা বেশিক্ষণ জারি রাখা গেল না। তার পর ডিনার খেতে খেতে কাচের ঘরে বসে আমরা একটা অসাধারণ সূর্যাস্ত দেখলাম।
তো তারপর দিন সকালে আমরা নেমে আসছিলাম। সেই ফুট সাতেক পাহাড়ি রাস্তাটা বাঁক থেকে মাঝে মাঝেই সামনে কি যেন একটা দেখা যাচ্ছিল। ঠিক বুঝতে পারিনি। এরপর একটা বাঁক ঘুরতেই একটা ফাঁকা জায়গা। আর তারপরই আমাদের সবার মুখের কথা বন্ধ হয়ে গেল। কি দেখছি সামনে। পুরো একশো আশি ডিগ্রিরও বেশি জুড়ে একের পর শৃঙ্গ। আর তারা এতটাই কাছে যে মনে হচ্ছে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেওয়া যাবে। কতক্ষণ এভাবে ছিলাম বলতে পারব না। সম্বিত ফিরল পেছনের একটা দলের প্রচন্ড আনন্দের চিৎকারে। বুঝলাম কোনো কোনো সময় আনন্দের ভাষা থাকে না। কিছু ফটো তোলা হল আর সারাজীবনের হৃদয়ের ক্যামেরায় আমরা ধরে রাখলাম সেই অনির্বচনীয় দৃশ্য।