সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
04-December,2022 - Sunday ✍️ By- শুক্লা রায় 235

অথ মাধ্যমিক কথা/শুক্লা রায়

অথ মাধ্যমিক কথা
শুক্লা রায়
=================

গনগনে মুখে হন্ হন্ করে হেঁটে চলেছেন পরিতোষ বাবু। উঁহু! ভুল হয়ে গেল। উনি আসলে সুমনের পরিতোষ কাকু। বাজারে কীর্তন বসেছে। সটান আসরের দিকে চলে গেলেন। সুমনও ওদিকেই যাচ্ছে। মন্দাকিনীর আসার কথা ঠিক পাঁচটায়। সেরকমই কথা। নাহ্। অরিজিনাল নায়িকা মন্দাকিনী নন। উনি সুমনের ইয়ে - শ্রীমতি পায়েল দেবী। একা আসতে পারবেন না, বাড়ির অনুমতি নেই। তাই কাবাব মে হাড্ডি - দেবীর ছোটো ভাই আসছেন। ধুস্! এভাবে কী প্রেম করা যায়! কিন্তু উপায়টাই বা কী! মাঝখান থেকে পকেটটা একটু বেশিই কাটা যাবে। তার উপর মন না চাইলেও মুখটাকে বত্রিশ ইঞ্চি খুলে বেশ একটা হাসি হাসি পোষ্টার ঝুলিয়ে রাখতে হবে। তবু। ভগবানের যখন এটাই ইচ্ছে, অগত্যা কিঞ্চিৎ ব্যাজার মুখে কীর্তন আসরের দিকে হাঁটতে থাকে সুমন। এসে দেখে টেবিল চাপড়া-চাপড়ি, হুলুস্থুল কান্ড! পরিতোষ কাকু রেগে অগ্নিশর্মা! কেসটা কী? একটু এদিক ওদিক করতেই খবর কালেকশন্ হয়ে গেল। বেশি ভিড়ে যেতে হল না। ওনার মেয়ে এবার মাধ্যমিক দিচ্ছে। কীর্তনের জন্য বেচারী কিছু পড়তেই পারছে না। কর্মকর্তারা ওনাকে বোঝানোর চেষ্টা করে চলেছেন রাত আটটার পরে তো মাইক বন্ধই থাকে! পরিতোষ কাকু এমনিতে খুব নীরিহ। গুরুজন হন, বলতে নেই, লোকে বলে উনি নাকি কাকিমার অরিজিনাল পোষ্যপুত্র। কাকিমণির শাশুড়ি নাকি মরার আগে ছেলেটাকে মন্দিরা দেবীর হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে চোখ বুজেন। তা উনিও আজকে রাগে একেবারে গজরাচ্ছেন। অনেক বুঝিয়ে মাইক বন্ধ করে তবে তাকে ঠান্ডা করা গেল। এসব কর্ম-কান্ডের মধ্যেই সুমন অরিজিৎকে দেখতে পেল। হুঃ! চুলের ডিজাইন হয়েছে! অজান্তেই তার নিজের হাতটাও মাথার পেছনে চলে গেল। নাহ্, ঠিকই আছে সব। পেছনটা পুরো চেঁছেপুছে সামনে বেশ কায়দা করে বানানো খাড়া খাড়া চুল। একসময় সামনে পেছনে উভয়দিকেই তার লম্বা লম্বা চুল ছিল। তখন ওটাই স্টাইল! যাকে বলে স্টাইল ইন। যখন চুলে আঙুল চালাতো সব পাব্লিক হাঁ করে তাকিয়ে থাকত। বিশেষ করে মেয়েরা। আর নিজেদের মধ্যে চোখ চাওয়া-চাওয়ি, মুচকি হাসি! সে এক দিন ছিল!
সাইকেল নিয়ে বেশ কায়দা করে গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে অরিজিৎ। সুমন আপন মনেই আবারও ভাবল, কেসটা কী? পায়েল আসবে সেটা কী অরিজিৎও জানে নাকি? তলে তলে কোনো ষড়যন্ত্র! এদিকে মুখটা ফেরাতেই চোখাচুখি হয়ে গেল। সুমন তৎক্ষনাৎ মুখটাকে কচু সেদ্ধর মতো না ফর্সা না কালো করে ফেলল। চোখের দৃষ্টি হল ঘষা কাচের মতো অসচ্ছ্. দূরদৃষ্টিহীন, নিতান্ত সাদামাটা। কিন্তু বেশিক্ষণ নয়। ওই চোখেই নিমেষে হাজার ওয়াটের বাতি জ্বলে উঠলো। পর্যাপ্ত মেকআপ এবং সুগন্ধির দৌলতে চারিদিক আমোদিত ও আলোকিত করে পায়েলদেবীর আবির্ভাব হল। সুমন একটু দূর থেকেই লক্ষ্য করল দুজনের তেরছা চাহনি আর চোখের কোণের বালি চিকচিক হাসি। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। তবু পায়েল বলে কথা! খুব বেশি মনখারাপের সুযোগ পেল না। পর্যায়ক্রমে চাউমিন, মোমো, চাট ইত্যাদি খাব না খাব না করে বেশ করে খেয়ে ভাইসহ পায়েল একসময় বিদায় নিল। ওদের পিছু পিছু একটু দূর থেকে দেখল অরিজিৎ সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে। সুমনের বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। নাহ্, পায়েলের জন্য নয়। জেনেশুনে অকারণ এতটা খরচা হয়ে গেল বলে। তারপর বাড়ির পথে আবার সেই পরিতোষ কাকু!
এবার আর কোনো তাড়া নেই। আস্তে ধীরে সব সমস্যাগুলো মন দিয়ে শুনলো সুমন। পরীক্ষার ব্যপারে এবার সুমনও বেশ সিরিয়াস হয়ে গেল। রুমকিকে ও চেনে। শ্যামলা গায়ের রঙটায় এখনি ডাকসাইটে সুন্দরী বলা যায়। সুতরাং ওর পরীক্ষার ব্যাপারে সিরিয়াস না হয়ে পারা যায় না। আসলে সুমনও পড়াশুনায় একসময় বেশ ভালোই ছিল। হায়ার সেকেন্ডারীতে ইংরাজীটায় ব্যাক না পেলে ও বাংলায় ত্রিশ, ইতিহাসে বোধহয় চৌত্রিশ এরকম নাম্বার পেয়েছিল। কিন্তু ইংরাজীতে ফেল করে সব গুবলেট হয়ে গেল। সব বাবার জন্য। মা ঠিকই বলে এই মানুষটার পাল্লায় পড়ে মায়ের জীবনটাই শেষ! যদিও দামী দামী শাড়ি আর গয়না শোভিত মাকে দেখে খুব একটা খারাপ আছে বলে কখনোই মনে হয় না। কিন্তু সুমনের ব্যাপারটা প্যাথেটিক! কতবার বলেছে একজনে হবে না দুজনের কাছে ইংরাজীটা পড়তে চায়। তা শুনেই বলে দিল, পারবেন না। এর থেকে ছেলে ফেল করলে করুক। সহ্য হয়! ব্যাপারটা হল ও আগেই পার্থ স্যারের কাছে পড়া শুরু করার পর অনিমেষ স্যারের কাছে ভর্তি হল মনোস্বিতা। সেজন্যই। কিন্তু বাবার তো তা জানার কথা নয়। বলে দিলেন ফেল করুক! বাবা হয়ে পারলেন! তাহলে কী আজকে ওর জীবনটা এমন ম্যাড়মেড়ে পেপারব্যাকের মতো হতো? ইংরাজীটায় ফেল না করলে নিশ্চয়ই কিছু একটা করে ফেলত এতদিনে! লাইফ সেট! রঙিন মলাটের উপর সোনার জলে লেখা বোর্ডবাঁধাই কেউকেটা একজন হয়ে যেত খুব নিশ্চিত!
পরীক্ষার সময় মাইক বেশি বাজালে পুলিশেও কমপ্লেইন করা যায় তো! নাহ্, পরিতোষবাবুর আবার পুলিশে বড্ড ভয়। অগত্যা রুমকির কথা ভেবে সুমনকেই এই দায়িত্ব নিতে হল। পরিতোষকাকু কাকিমার ফোন নাম্বারটা দিলেন। উনি ব্যস্ত মানুষ। ফোনটা মেয়েই ধরবে। শুধু ওকে বলতে হবে 'বুনু একটু কাকিমাকে দাও তো'। সুমন পরদিনই ফোন করল এবং যথারীতি রুমকিকেই ফোনে পেল।
মেয়ের পরীক্ষার যন্ত্রণায় মন্দিরা সত্যিই অস্থির! আজকাল ঘুম উড়ে গেছে চোখ থেকে। ছেলেটার দিকেও একটু লক্ষ্য দিতে পারছে না। মেয়েটা খাওয়া নিয়ে বড্ড জ্বালায়। এটা খাব না, সেটা খাব না- খুব প্যাঁকনা! জিওল মাছ তো আনা আছেই, ওটা একরকম ওষুধের মতো জোর করে খাওয়ায়। এছাড়াও ওর পছন্দের অন্য মাছ, সারাদিন নানা পদের রান্নায় হিমশিম অবস্থা। সকালে এক গ্লাস দুধ হর্লিক্স, তার কতটুকু খায়! বেশিটাই পড়ে থাকে। ফেলতে কী মন চায়! অগত্যা নিজেই খেয়ে নেয় বাকিটা। কিন্তু মেয়ের পুষ্টি হল না তো! তাই এক ঘন্টা পড়ে দুটো ডিমসেদ্ধ। তা মেয়ে একটার বেশি কিছুতেই খাবে না। অগত্যা ফেলে না গিয়ে ওটাও কষ্ট করে মন্দিরাই খেয়ে নেয়। দুপুরের খাওয়া শেষ হতে না হতেই মন্দিরার কী বিশ্রাম আছে? বিকেলের টিফিন বানাতে বসতে হয়। এরকম সারাদিন চলছেই। সিরিয়ালগুলো পর্যন্ত এখন ঠিকমতো দেখতে পারেনা। কিছু দেখে, কিছু রিপিট টেলিকাষ্টে দেখে নেয়। এদিকে আবার মেয়ের জন্য রাতজাগা তো আছেই। অনেক রাত পর্যন্ত পড়ে মেয়েটা। আহারে! মা হয়ে কোন প্রাণে মন্দিরা ঘুমাবে! তখনই সাউন্ড কম করে দিনের বাকি সিরিয়ালগুলো দেখে নেয়। সময়টাও নষ্ট হচ্ছে না তাতে!
তবে মেয়ের পড়ার আগ্রহে সব কষ্ট হাসিমুখে মেনে নিয়েছে মন্দিরা! ফোনটা এখন ওর কাছেই থাকে। মাঝে মাঝে খুলে দেখে স্যার কী নোট পাঠালেন! আবার একটু পরপরই ছাদে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে পড়া নিয়ে কন্সাল্ট করছে। মুখে বেশ একটা গম্ভীর গম্ভীর সিরিয়াসভাব। নাহ্! মেয়েটা অন্যদের মতো মোটেই নয়। সিরিয়াল শেষে একটু চোখটা বোজে মন্দিরা। ঘুম কী আর হয়! শুধু শুয়ে থাকা। হঠাৎ চোখ খুলে দেখে মেয়ে তখনও পড়ার টেবিলেই। একদিন অবশ্য বোকার মতো জিজ্ঞেস করেছিল 'ফোনটায় আলো জ্বলছে কেন রে? পড়া বাদ দিয়ে ফোন ঘাঁটছিস?' মেয়ে একেবারে রেগে অগ্নিশর্মা! 'তুমি তো ঘুমোচ্ছ? আর আমার পড়ার তুমি কী বোঝ? স্যার রাতেও লাষ্ট মিনিট সাজেশন্ দিচ্ছেন।' তাই তো! তাই তো! মন্দিরা আর খুব একটা ঘাঁটাতে সাহস পায় না মেয়েকে।
পরীক্ষাগুলো অবশ্য বেশ ভালোই দিল। অন্তত শুনে তো তাই মনে হচ্ছে। মন্দিরা মেয়ের খাওয়ার পেছনে পরিশ্রম বাড়িয়ে দিল। শেষ পরীক্ষার দিনটায় মন্দিরার মনটা বেশ ফুরফুরে। এই কদিন সুমন ছেলেটা রোজই এসে দেখা করেছে। আজ আসেনি। হয়ত কোনো কাজ পড়েছে। এলে ভালোই হত। ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়েই শপিং করা যেত। মন্দিরা সঙ্গে বেশি করে টাকা এনেছে আজকে। মেয়ের বায়না, একটু শপিং করবে! ওটুকু তো ছেলে-মেয়েদের জন্য করতেই হয়। টাকাটা মেয়ের কাছেই রাখা আছে। মন্দিরা ভয় পাচ্ছিল চুরি হতে পারে। কিন্তু মেয়ে বলল সেসব ভয় নেই। ব্যাগের কাছে ম্যাডামরা বসেই থাকেন যাতে কেউ নকল করতে না পারে। তবে নকল কী আর এভাবে হয়! নকল সাপ্লাইয়ের দাদাদের ভিড়ে স্কুল চত্ত্বর পুরো সরগরম। ব্যাগে করে নকল বয়ে নিয়ে যাবার দরকার কী!
একে একে সবাই বেরিয়ে এলেও রুমকিকে দেখা গেল না। প্রথমে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। কিন্তু তারপরেও এলো না দেখে চিন্তাই হল। মন্দিরা একে তাকে জিজ্ঞেস করেও কোনো হদিশ করতে পারল না। অবশেষে স্কুলের ভেতরে ঢুকে পড়ল, যদি কোথাও থাকে। এরপর অবশ্য বিষয়টা সিরিয়াস হয়ে গেল। নাহ্! স্কুলসুদ্ধ সবাই তন্ন তন্ন করে খুঁজেও রুমকির টিক্কির দেখা পাওয়া গেল না। বাড়িতে ফোন করে জানা গেল বাড়ি যায়নি। অবশেষে বিলাপ আর কান্নায় প্রায় অর্ধমৃত মন্দিরাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গেল স্কুল র্কতৃপক্ষই।
পরিতোষবাবু মুহ্যমান। থানা-পুলিশ, মেয়ে হারানো - সব মিলিয়ে তিনি বেশ মুষড়ে পড়েছেন। হাজার হোক উনি মানুষটা বড্ড সাধা-সিধে, সাতে-পাঁচে থাকতে ভালোবাসেন না। শোকে হাত পা ছেড়ে দিয়ে মেঝেতে শুয়ে মন্দিরা। রুমকির একমাত্র পিসি খবর পেয়ে ছেলের বাইকে করে তড়িঘড়ি চলে এসেছেন। এদের আর কারো কান্না করারও ক্ষমতা নেই। তাই ভদ্রমহিলা শূন্যে বিলাপ করে করে একাই সব কান্না কেঁদে ফেলার দায়িত্বটা নিলেন।
রাত দশটা নাগাদ ক্ষিতীশবাবুর কাছ থেকে ফোনটা এলো। 'কে ক্ষিতীশবাবু'! ও পক্ষ বেশ তেতো গলায় উত্তর দিল, 'সুমনের বাবা। সুমনকে যেন মেয়ের গার্জিয়ান করে দিয়েছেন ফোন নম্বর দিয়ে! এখন খুঁজে নিয়ে আসুন দুজনকে কোথায় পান!' অ্যাঁ! পরিতোষ বাবুর হাঁ মুখটাকে বোজার বিন্দুমাত্র সুযোগ না দিয়েই অপর পক্ষ ফোনটা কেটে দিল।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri