শেষটুকু খুঁজতে খুঁজতে/মনীষিতা নন্দী
শেষটুকু খুঁজতে খুঁজতে
মনীষিতা নন্দী
(১) অসহায় ইতি
দুটো দেশ, অন্য নাম,
বিষনীল মলাটের পৃষ্ঠাজুড়ে
গুছিয়ে লেখা আছে পার্থক্য, গোত্র - পরিচয়ে
এ্যাটলাসে বেসুরো সংকীর্তন
ঝলসানো কমলা বুক, চব্বিশ প্রহর
রেখা বিভাজনে উত্তর হৃদয়হীন,
একটানা ভিজে যায় ইতিহাস চোখ,
দক্ষিণপথে হাত মিলিয়েছে শুভ্র তালু,
খঞ্জনী - চিৎকারে সুতীক্ষ্ণ কটাক্ষের স্নান,
ভাস্কর্য্যে ভ'রে থাকে মেপে নেওয়া বিক্ষোভের দিগ্বিজয় ,
শেষ ছেঁড়া পাতাটুকু এখনও পড়ছে, ওরা কারা?
জানা নেই। পরতে পরতে অনিচ্ছে বাসা ঝোপ
দেওয়াল উঠছে ভেতর ভেতর, ওপরে নোনা, আগাছা
মাটি ছেড়ে যাবার পাসওয়ার্ড কী?
স্বপন - পারের ডাকে, ধুঁকতে থাকে রাজার চিঠি
চাবি ঘুরিয়ে রাতভর নিরুত্তর মেইল বাক্স,
মেসেঞ্জারের নিশ্চুপ ঘন্টায় নতুন রকম ধাঁধা
বেগুনী - নীলে ধূসর নিরুদ্দেশ
বিষাক্ত এঁটোকাঁটা মেখে ছিনিমিনি মাঝদরিয়ায়
মিশে যাবার ইচ্ছে অনিচ্ছে গুরুত্বহীন নির্বাক
বাতিলের খাতা খুবলে বাতিকগ্রস্ত উঁকিঝুঁকি উৎসব
দিশেহারা প্রাণপ্রতিষ্ঠা; এর থালা, ওর বাটিতে,
ডিম পেঁয়াজ নির্বাসন, ছাদ কেড়ে নেওয়া তরজা - খেউড়
বিকেলের আবহাওয়া - খবরে ছোঁওয়াছুঁয়ি সতর্ক,
ভেদাভেদ জানে আমিষ - নিরামিষ সকড়ি কথার ফাঁস
কার মাংস কে খেল, কার ঠোঁটে লুকিয়ে
পাশের বাড়ির মেষশাবকের রক্তছবি ......
নদী কথা ভুলে পেরিয়ে যায়
অসীম শতাব্দীর হাসিরেখা - জলভাষ্য।
সন্দেহ জ্বরে দিগভ্রষ্ট ভাঙাচোরায় জ্যান্ত হয়ে থাকে
উড়োজাহাজ নাটকের প্রাগৈতিহাসিক বাড়ীঘর,
মশা-মাছি-কীট হয়ে মরে যায় প্রজ্ঞা,
কারিগরী সমাধিতে ছবি আঁকে শঠ্ ভৈরব
সাতসুর না চেনে রঙ, না জানে মৌলবাদ
খাঁ খাঁ বেসুরে একটানা বেজে চলে ভাবনার মহামারী ভোর।
(২) প্রতিযোগী
তোকে বড় হিংসে হচ্ছে মেয়ে
জ্বলছি যতই, ততই ঢুকছি খোলসে
মাখন রঙে, ধারালো কলম,
উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাস তীক্ষ্ণ কোমল
সবাইকে পেছনে ফেলে ছুটে চলিস
এক পা এগিয়েও পঁচাশি পালিয়ে আমি
ভীড়ের ভেতর আয়না খুঁজে হন্যে
চেটেপুটে খাই ব্যর্থ মিষ্টান্নের শেষপাত
রাশি করি নিরামিষ মাঞ্চুরিয়ান, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই,
দ্বিতীয় শ্রেণির লাঞ্চব্রেকে নাম লেখা
সাদা টেবল থেকে একা খুঁটে খাই মিথ্যে,
ধূসরে মেখে নিই বন্ধুতা।
যোজন দূর, বয়স কিংবা বেড়ে ওঠায়,
আমার হীনমন্য রঙের তুলি
নিত্য আঁকে তোর সুসফল - অবয়ব
নিজেকে মুছতে মুছতে বিন্দুটুকুও মিলিয়ে গেছে
সলজ্জ পিছিয়ে থাকা
বুকে ধরে আরো এক লজ্জাকে,
গর্ভেও যদি থাকে কোনো খাদ, খুঁজে যায়।
হেরে যাওয়া মিছিলে পা মেলানো বহুদিনের
নতুন ক'রে তাই
হারানোর ভয় হয় না আর।
চোখে চোখে ঠকে যাই,
বিমুগ্ধ দর্শক সেজে বসে থাকি সামনের সারিতে
খেলায় মেতে উঠি বারবার।
চিৎকারে টলে যায় কন্ঠের ওম
শব্দ ক'মে, সময় ক'মে, মরণকামড়
হাততালিতে উপচে পড়ে আমার উদযাপনী পরাজয়
ঠিক আগের মতোই, অভ্যেস যেমন!
(৩) আমার শৈশব
আজ রাস্তা আমায় ঘুম ভাঙিয়েছে
মা ডাকেনি।
উড়ালপুলের তলে নীল ত্রিপলে ঘুমিয়ে
সন্তান আমি।
অযোগ্য কালিতে ভ'রে আছে আমাদের বাসা,
ওখানে এখন থাকতে নেই।
নেতি - রঙ দেখতে পাবার মত বড় আমি নই,
তবু শুনি কানাকানি ফিসফিস....
নতুন ইসকুলে ভর্তি হয়েও যাইনি অনেকদিন।
রোজ দশটায় একলা হইনা আর।
সকালে সবাই একসাথে।
তিনজনে বসে ভাত খাই।
দুপুরের ভাতে কান্না লেগে .....
এত ব্যথা কেন !
লুকোনো মায়ের ঘরে
প্রায়শঃই, ঢোঁক গেলে ফোঁটা কয়' ক্রন্দসী ফুল;
হিমালয় চুপকথা থমথম করে
পড়ার ঘরে বাবার ছায়ায়....
রেকাবিতে শুকনো রক্তকরবী,
ছাদবাগানে জল না প'ড়ে পালিয়েছে সবুজ।
কী যেন জন্মের মতো হারিয়েছে আমাদের!
কী যেন!
আমার বুকে আদুরে বিকেলটা .....
চোর পুলিশ কিংবা ব্যাট - বল,
সাথে দুটো খুশি-হাসিমুখ, টুকরো প্রশ্রয়,
বেগুনী - রাংতা - ক্যাডবেরি,
মুখ ডুবিয়েছে অতৃপ্ত কোলে; গুহামানবী ঠিক!
কিছু নেই, কিছু নেই ডাক ...
দশটার সকালে ধুয়ে দিতে স্থবির অনুভব,
প্রকান্ড ভীড়ের ভেতর কিছুটা রক্তপাতে
গুঁড়িয়ে নিতে নির্মমতম নির্বিকারের মাথা,
ঘুচে দিতে অযোগ্য রঙ,
ফুটপাথ - সড়কে বসে থাকি,
তিনজন, পরিবার, তিনমাস।।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴