সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
28.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৮

28.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৮

27.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৭

27.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৭

26.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৬

26.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৬

25.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৫

25.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৫

24.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৪

24.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৪

23.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৩

23.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৩

22.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২২

22.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২২

21.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২১

21.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২১

20.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২০

20.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২০

19.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৯

19.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৯

18.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৮

18.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৮

17.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৭

17.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৭

16.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৬

16.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৬

15.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৫

15.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৫

14.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৪

14.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৪

13.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৩

13.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১৩

12.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১২

12.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১২

11.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১১

11.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১১

10.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১০

10.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১০

9.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৯

9.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৯

8.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৮

8.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৮

7.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৭

7.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৭

6.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৬

6.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৬

5.স্মৃতি দিয়ে ঘের্রিত-৫/রণজিৎ কুমার মিত্র

5.স্মৃতি দিয়ে ঘের্রিত-৫/রণজিৎ কুমার মিত্র

4.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৪

4.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-৪

3.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা৩/রণজিৎ কুমার মিত্র

3.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা৩/রণজিৎ কুমার মিত্র

2.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা২/রণজিৎ কুমার মিত্র

2.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা২/রণজিৎ কুমার মিত্র

1.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১/রণজিৎ কুমার মিত্র

1.স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-১/রণজিৎ কুমার মিত্র

16-December,2022 - Friday ✍️ By- রণজিৎ কুমার মিত্র 4.37K

স্মৃতি দিয়ে ঘেরা-২৮

স্মৃতি দিয়ে ঘেরা/পর্ব : ২৮
রণজিৎ কুমার মিত্র
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^

          পুলিনবাবু স্যার 'স্মৃতি জাগানিয়া'র শেষে লিখেছিলেন, "ডালপালা বিস্তার করে ক্রমশ বেড়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় । উপল বন্ধুর তার সেই বেড়ে ওঠার পথ। সেই পথের ধারে কেটে গেছে দশ সহস্রাধিক দিবস রজনী।  বিচিত্র অভিজ্ঞতার ঢেউ খেতে খেতে ভেসে চলছে জীবন তরী। পড়তে পড়তে মনে হয়েছিল এভাবেই তো ঘনিয়ে আসবে একদিন আমার বিদায়বেলা, তার প্রস্তুতিও নিতে হবে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তাকে কেন্দ্র করে চারপাশের জীবনে কত ঘটনা, কত ঝরে পড়া স্মৃতির রেণু লেগে আছে এই চলার পথে, কতকাল ধরে চেনা রাস্তায়।  দু বছরের ছাত্র জীবনের পর, জীবিকা সূত্রে তিন দশকের বেশি সময়, এখানকার মানুষ আর  প্রকৃতি ভালোবাসার বন্ধনে জড়িয়ে ছিলাম, সে বন্ধনমুক্ত হয়ে চলে যেতে হবে। কত যে নবীন বরণ, বিদায় সম্বর্ধনা, পুনর্মিলন উৎসব দেখেছি। এসবের মধ্যে নিজের অবস্থান আর সুখ-দুঃখের অনুভবগুলো স্মৃতির ভান্ডারে  জমা  করে রেখেছি।

             কোনো একটি শিক্ষায়তন যখন গড়ে ওঠে তখন তার গড়ে ওঠার পেছনে স্থানীয় মানুষজনদের অবদান থাকে। যার যে ভাবে সাহায্য করবার ক্ষমতা থাকে, তিনি ততটুকু দিয়ে সাহায্য করবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠবার ক্ষেত্রেও স্থানীয় মানুষজনদের অবদান কম ছিল না। স্থানীয় এলাকার অনেক মানুষ জমি দিয়েছেন, শ্রম দিয়েছেন, আবার এও দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অধিগৃহীত জমি দখল হয়ে গেছে। শিবমন্দির লেনিনপুর বিভিন্ন জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি নিয়ে কত যে আখ্যান জমে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জমির ভেতর অনধিকার প্রবেশ, সীমানাপ্রাচীর নিয়ে ভাঙা গড়ার খেলা অবসান আজো হয়নি। কৌতূক বোধ করতাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নোটিশ দেখে- 'এখানে গরু চরানো নিষেধ' - বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের অনেকে প্রতিবেশী গরু ছেড়ে দিয়ে যেতেন ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসকে গো- চারণভূমির সাথে উপমিত করে বেশ হাসিঠাট্টাও চলত। স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে অবাধ মেলামেশা ছিল। ধীরে ধীরে সেইসব সম্পর্ক জটিল হয়ে গেল। প্রাতঃভ্রমণ নিয়ে শুনি ক্যাম্পাসের আবাসিক ও বহিরাগতদের মধ্যে নানা জটিলতা। শিব মন্দিরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে, রাহুতদা, বীরেনের দোকানের আড্ডা, এখন শুধু স্মৃতি মাত্র। খুব বিচলিত বোধ করেছিলাম সেই ভয়ঙ্কর দিনটিতে, পুলিনবাবুর লেখা থেকেই  তার বর্ণনা দিই - "সে অবশ্য অনেককাল আগের কথা।  গুলি চালিয়ে  হত্যার চেষ্টা দেখা গেল এবার। দুপুরের দিকে লাইব্রেরির পথে যেতে শুনলাম রেজিস্ট্রারের প্রাণনাশের চেষ্টার কথা। অফিসে ঢুকে দেখি পুলিশকর্তা এসে গেছেন। হাতে তার একটি পিস্তল।ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে পরীক্ষা করে দেখছেন। শোনা গেল রেজিস্টার তাপস কুমার চট্টোপাধ্যায় তার অফিসে বসে ফাইল দেখছিলেন। ইতিমধ্যে জনৈক অফিসকর্মী তাকে লক্ষ্য করে পিস্তল চালায়। ভাগ্যক্রমে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, প্রাণে বেঁচে যান শ্রী চট্টোপাধ্যায়।পালাবার চেষ্টা করে আততায়ী কিন্তু অফিস কর্মীরা তাকে ধরে ফেলেন। বে-কানুন অন্যায় আবদার না মানায় রুষ্ট কর্মচারীর এই হত্যা প্রয়াস।" বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটি একটি কালো দিন বলে চিহ্নিত হয়ে আছে। আরো একটি অন্ধকার দিনের কথা মনে পড়ে  যেদিন দেখেছিলাম  বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষিত  সমাজের  একদল মানুষ  উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা গাধার পিঠে চড়িয়ে ভাড়া করা লোক দিয়ে ক্যাম্পাস ঘোরাচ্ছেন।  আমার মনে হয়  বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাকে  কালিমালিপ্ত  করার জন্যে, এই দিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিনগুলির তালিকা শোক দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাক। সেদিন দেখেছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান নিয়ে  যারা সবচেয়ে বেশি কথা বলেন ,ছাত্রদের  দিশা দেখান তারাই কালিমালিপ্ত করলেন বিশ্ববিদ্যালয়কে, শিক্ষার স্বার্থে নয় ব্যক্তিগত  উচ্চাশার জন্য  বিশ্ববিদ্যালয়কে গভীর অন্ধকারের দিকে ঠেলে  দিয়ে। এই দুটো দিনকে আমার মনে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শোকের দিন। এই দিনটার কথা স্মরণ করলেই মনে হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শে কোথায় যেন ধস নামছে, সমস্ত মানবিক সম্পর্কে বাসা বেঁধেছে ভয়ঙ্কর ক্ষয়রোগ।  যত দিন এগোচ্ছে,  বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন আরো অন্ধকার, আরো কালিমা জমছে। কবেই হারিয়ে যাচ্ছে সমানী মন্ত্রর উচ্চারণ

            স্মৃতির ঝুড়ি নামিয়ে বৃহৎ বটবৃক্ষের মতো বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড়িয়ে আছে, উত্তরবঙ্গের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা নিয়ে। বহু পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে।  বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের  দুটো প্রধান সম্পদের একটি হল মানব সম্পদ (Human resources) অপরটি হল ভৌত সম্পদ ( Physical resources), এই দুই সম্পদের সদ্ব্যবহার ছাড়া তো বিশ্ববিদ্যালয় এগোতে পারে না। এই এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে, আমরা কতটা এগিয়েছি, সে বিচারের ভার মহাকালের। তবে যতই আমার  তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের জীবন হোক না কেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-গবেষক-কর্মী হিসেবে আমারো হয়তো বা এই অগ্রসরমানতায় সামান্য অংশ আছে, এটুকু ভাবতে ভালো লাগে, আর এই ভাবার আনন্দেই হয়তো পিছন ফিরে চাই বারে বারে। শত-সহস্র প্রাক্তনীদের আনন্দের মধ্যে আমার আনন্দটুকু ও একাকার হয়ে যায়। এটুকুর জন্যই হয়তো এই স্মৃতিবিধুরতা।

         
        ক্যাম্পাসের জীবন আর জীবিকা নিয়ে  সব কথা তো ফুরোবার নয়,  তবুও  কথা তো শেষ করতে হবে। যে শঙ্খনাদ ওই জীবিকা-জীবনের আশ্রয়ের মধ্যে শুনেছি, তা এখনও স্মরণ করি বারে বারে -"শঙ্খের মধ্যে যেমন সমুদ্রের শব্দ শোনা যায় তেমনি এই লাইব্রেরির মধ্যে কি হৃদয়ের উত্থান-পতনের শব্দ শুনিতেছ? এখানে জীবিত ও মৃত ব্যক্তির হৃদয় পাশাপাশি এক পাড়ায় বাস করিতেছে। বাদ ও প্রতিবাদ এখানে দুই ভাইয়ের মতো একসঙ্গে থাকে। সংশয় ও বিশ্বাস, সন্ধান ও আবিষ্কার, এখানে দেহে দেহে লগ্ন হইয়া বাস করে। এখানে দীর্ঘ প্রাণ ও স্বল্পপ্রাণ পরম ধৈর্য ও শান্তির সহিত  জীবনযাত্রা নির্বাহ করিতেছে। কেহ কাহাকেও উপেক্ষা করিতেছে না।" এ কথাগুলো রবীন্দ্রনাথের, গ্রন্থাগার সম্পর্কে তার উক্তির টুকরো, এই যে জীবিত ও মৃত,  প্রতিবাদ ও সংশয়,  বিশ্বাস  ও সন্ধান, আর  আবিষ্কারের স্থান, এখান থেকেই তো জীবন অর্থবহ হয়েছে। এখান থেকেই তো  যতটুকু পেয়েছি তা আজো - 'সব মন- প্রাণ ভরি প্রকাশে'।  

    চাকরি জীবনের মধ্য পর্বতে এসে গ্রন্থাগার ব্যবস্থায় এবং ব্যবহারকারীদের মধ্যে লক্ষনীয় পরিবর্তন আসতে দেখলাম, অবশ্য এটা শুধু আমাদের লাইব্রেরিতেই নয় সবখানে  ঘটছিল। পেশা  জীবনের সন্ধিক্ষণে, এই অভিজ্ঞতা আমার কাছে অত্যন্ত মূল্যবান মনে হয়। পেশাজীবনে এই নতুন সময়ের দাবি মেটাতে, নিজেকে আবার নতুন করে  তৈরি করবার চেষ্টা শুরু হল। কম্পিউটার প্রযুক্তি গ্রন্থাগার ব্যবস্থাকে ক্রমশ বদলে দিচ্ছিল। গ্রন্থাগারে না এসেও ব্যবহারকারীরা নিজের নিজের বিভাগে বসে গ্রন্থাগারের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। আমাদের গ্রন্থাগার বিভাগের নবীন তথ্য বিজ্ঞানী অনির্বাণ, মানসদের প্রচেষ্টায় লাইব্রেরিতে নতুন হাওয়া ঢুকে গেল। অনুজপ্রতিম এইসব সহকর্মীদের কথা খুব মনে পড়ে, ওরা সবাই ছিলেন  লাইব্রেরিতে নতুন তথ্য প্রযুক্তি প্রয়োগের কলাকুশলী। 

     ব্যক্তিগত স্তরে রেফারেন্স সার্ভিস দেওয়া ক্রমশ কমে আসছিল আমার কাছে এই পরিষেবা দেওয়াটি ছিল সবচেয়ে আনন্দের । আন্তর্জালের সুযোগ-সুবিধায় লাইব্রেরিতে না এসেও এই পরিষেবাটি পাওয়া যেত। সমস্ত বিখ্যাত রেফারেন্স বইয়ের ই-ভার্শন প্রকাশ শুরু হয়ে গেল। ২০১০ সালে দেখলাম এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার শেষ মুদ্রণ সংস্করণ, এরপর আর মুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশ হবে না। পৃথিবীর বহু বিখ্যাত রেফারেন্স বইগুলির মুদ্রিত সংস্করণের শেষ ঘন্টা বাজিয়ে নতুন বৈদ্যুতিন সংস্করণের আগমন বার্তা লাইব্রেরিতে বসেই শুনছিলাম।
       অতিমারীর অনেক আগে থেকেই গ্রন্থাগারে ডিজিটাল মাধ্যমে পরিষেবার নির্দেশ দান চালু হয়ে গিয়েছিল। ক্রমশই দেখলাম, বিশ্ববিদ্যালয় বই-কেন্দ্রিক নয়, নির্দেশ দান -কেন্দ্রিক শিক্ষার প্রচলন বাড়ছে। ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচুর অবাস্তব-অলীক-বিকল্প সত্যমূলক তথ্য,(Alternative fact)  জমা হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে, একজন তথ্য ব্যবহারকারী কিভাবে সঠিক তথ্য বেছে নেবেন? অনলাইনে প্রচুর পরিমাণে তথ্য সহজলভ্য। কারো মনে এমন আশঙ্কাও হতে লাগল, লাইব্রেরি ক্রমশ তার কার্যকারিতা হারাচ্ছে। পাঠকদের মধ্যেও বিভাজন হয়ে গেল ডিজিটাল আর নন-ডিজিটাল। এটা আমরা খুব বেশি করে অনুভব করেছিলাম, সেই সময়কার উপাচার্য  যখন নির্বিচারে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে  অধ্যাপক ও আধিকারিকদের ল্যাপটপ দিয়েছিলেন। আমি অন্তত সে সময় একজন অধ্যাপককেও ল্যাপটপ নিয়ে এসে লাইব্রেরিতে বসে লাইব্রেরির কাজ করতে দেখিনি। অদ্ভুত একটা বৈষম্য লাইব্রেরির ব্যবস্থার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছিল। এটা ভালো কি মন্দ, সে বিচার আমি করব না, তবে নির্বিচারে সবকিছু মেনে নিতেও মন চাইত না।
আমাদের মাস্টারমশাইরা বলতেন গ্রন্থাগারে শুধু বই থাকে না। গ্রন্থাগার মানুষকে অনুসন্ধানী করে, প্রশ্ন করতে শেখায়। কখনো কখনো আমার অনেক প্রশ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের বিপদসীমা অতিক্রম করে গেছে। অনেকের সাথে মতান্তর হয়েছে, আজ সে সব ভাবনা অন্যমনস্ক করে দেয়, সেইসব ঠিক-বেঠিকের হিসেব। তবে আমার দেখা বিশ্ববিদ্যালয়-গ্রন্থাগারকে ছাত্র-গবেষক-অধ্যাপকদের জিজ্ঞাসার একটি নিরাপদ স্থান, মতামত ভাগ করে নেওয়ার সঠিক জায়গা বলে মনে করতাম।  ক্রমশঃ সে সব বদলে যেতে দেখলাম। এই বদলে যাওয়াটা আমার মতো বয়সের গ্রন্থাগারপেশাজীবীদের পেশা জীবনের   এই সন্ধিপর্বের একটা প্রশ্ন চিহ্ন হয়ে দেখা দিচ্ছিল।
              তবে এসব আমার একান্তই নিজস্ব অনুভব, কোনো কিছুকে বা কাউকে ছোট বা বড় করার জন্য নয়। খুব মনে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু অধ্যাপক-গবেষক-ছাত্র-ছাত্রীদের কথা, যাদের অনেকেই ব্যক্তিগত জীবনে  চলার সাথে-সাথে গ্রন্থ ভবনকে মিলিয়ে দিয়েছিলেন, সারি- সারি বইয়ের তাকের মাঝে চলত তাদের আনাগোনা। বুদ্ধি-জ্ঞান-বিদ্যাচর্চা এমনকি প্রেমে -অপ্রেমে  নিমগ্ন থাকতেন তারা। এখান থেকেই শত-সহস্র  প্রাক্তনী তৈরি হয়েছেন। অনেকেই দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তারা তাদের স্মৃতির রোমন্থন করতে গিয়ে, ক্যাম্পাসের মধ্যে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা বর্ণনার সাথে, লাইব্রেরির মধ্যে ঘটে যাওয়া নানা অনুভূতি মালার কথা বর্ণনা করেন,  এখনো অনেকের সাথে দেখা হলে তারা সেসব কথা স্মরণ করেন।

     পুরনো হলেই তা অচল এমন কথা লাইব্রেরির  ক্ষেত্রে আমার কখনও মনে হয়নি। এখানে নতুন আর পুরাতন পাশাপাশি থাকে। এখনো সুযোগ পেলে লাইব্রেরিতে যেতে ইচ্ছে করে। পুরনো সহকর্মীরা আর কেউ নেই, নতুন যারা  আছেন তাদের সান্নিধ্য খুব ভালো লাগে। তবে বিষণ্ণ লাগে, অনেক পুরনোর অপসারণে  বা ধ্বংস সাধন দেখে। চিত্রভানু সেনের হাতে লেখা সংস্কৃত ক্যাটালগ!  শ্যামলদার  আশ্চর্য সুন্দর হাতের লেখায় বাংলা ক্যাটালগ! রাজা রামমোহন রায়ের  লাইভ সাইজের সেই বিশাল তৈলচিত্রটি, কোথায় যে ধ্বংসপ্রাপ্ত হল? তার আর  কোনো সংরক্ষণ হল না।  ছাত্রদের টাঙানো সেই কাঠ খোদাই করা লেলিনের ছবি আর খুঁজে পাওয়া যায় না! যে সমস্ত বই, পত্র-পত্রিকা, রুচিশীল, সু-পন্ডিত, প্রথম   গ্রন্থাগারিক চিত্রভানু সেন আবর্জনা মনে করতেন, সে সবে  ভর্তি হয়ে লাইব্রেরির অনেকটা জায়গা প্রায় গোডাউনের চেহারা নিয়েছে। চিত্রভানুবাবুর, সারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রকাশকদের কাছ থেকে খুঁজে আনা রামায়ণ-মহাভারত-বেদ-উপনিষদ-বৌদ্ধ শাস্ত্র ও দর্শন, ভারতীয় দর্শন, Indology বা ভারত বিদ্যার মহা মূল্যবান গ্রন্থগুলি  অবহেলা অনাদরে ধূলিধূসরিত হয়ে প্রায় পরিত্যক্ত  অবস্থায় একটি ঘরে জমা হয়ে আছে। চিত্রভানু সেনের উত্তরাধিকার, অজয় রঞ্জন চক্রবর্তী, দিলীপ চৌধুরী, জ্যোতির্ময় রায়, ল্যাডলি রায়, রমেন্দ্র মোহন মুন্সি, তপন গুপ্ত , সুখরঞ্জন সরকার, মনোজ রায়, শ্যামল বসাক, তনয়া গুপ্তরা বহন করেছিলেন, রক্ষা করেছিলেন, তাদের অনেকেই আজ আর  নেই। যাদের ছায়ায় ছায়ায় লাইব্রেরির সাথে আমার ও বয়স বেড়ে ছিল। এখনো  যোগাযোগ রয়েছে,  যিনি আমার এই স্মৃতিচারণার একান্ত সহমর্মী, মাঝে মাঝে তার সাথে ফোনে কথা হয়।   ছাত্র অবস্থা থেকেই পরিচয়, তনয়াদির সাথে।  তখন দিদি বলতাম, পরে জীবিকাসূত্রে দেখলাম তিনি বৌদি সম্বোধনে লাইব্রেরির সহকর্মীদের কাছে বেশি সম্বর্ধিত। খুব  ঠাট্টা করতাম। তখন লাইব্রেরির তপন+তনয়া  দম্পতি ক্যাম্পাসে ছিলেন প্রায় সুচিত্রা-উত্তম জুটির মতো জনপ্রিয়।  সেইসব হাসিঠাট্টার উত্তরে নির্মল ঝরনার মতো হাসি কবে স্তব্ধ হয়ে গেছে। ক্যাম্পাসের ভেতরে  ছাউনি দেয়া  বসবার জায়গা, যা ছিল বহু মিলন ও বিচ্ছেদের স্মৃতির ইট বালু সিমেন্ট দিয়ে তৈরি তা    ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলেন এক সেলফিশ জায়ান্ট উপাচার্য, শালবাগানকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে  ঘিরে দিলেন। 'বড়ো বেদনার মতো সেসব বাজে'। লাইব্রেরির সামনের  ফুল বাগানে আর আগের মতো পরিচর্যা হয় না, ফোটে না বাহারি মরশুমী ফুলগুলি। শীতের দিনে লাইব্রেরিতে রসিকদা আর চায়ের কেটলি নিয়ে গ্রন্থাগারকর্মীদের টেবিলে-টেবিলে চা পরিবেশন করেন না। কত প্রিয় মানুষ ! কত প্রিয় দৃশ্য! হারিয়ে যাচ্ছে ,ক্যাম্পাসের চেনা রাস্তা ক্রমশই ঘন কুয়াশায় অচেনা হয়ে  যাচ্ছে। দেখতে চাইছি কিন্তু দেখতে পারছি না,  সবকিছু এই ঘন কুয়াশায় , ঢেকে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে।

অবশেষে  সেই দিন এসে গেল।  দিনটি ছিল  বিশ্ববিদ্যালয়ের  আর পাঁচটা দিনের মতোই, ২০১৫ র ফেব্রুয়ারির  শেষ দিনটি। বলেছিলাম কোণ সুভাষণ বা সম্বর্ধনা নয়, শুধু সবার সাথে একসাথে বসে মুখর হতে চাই। কিন্তু সেদিন সবটা শেষে আর পেরে উঠলাম না।  শেষ কথাগুলো কেমন কষ্টের মতো গলায় আটকে যাচ্ছি।  দুপুরে  আলো ফুরিয়ে সন্ধ্যা নাম ছিল গ্রন্থ ভবনের আমার আত্মজনেরা অনেক উপহার আর পুষ্পস্তবক সহ আমাকে গাড়িতে তুলে দিলেন। ফাঁকা গাড়িতে বসে নিজেকে খুব  নির্বান্ধব, একা মনে হচ্ছিল। মনে পড়ে যাচ্ছিল সেই ছাত্র বেলার প্রথম দিনে ইউনিভার্সিটির বাস  ভর্তি হয়ে জলপাইগুড়ি থেকে আসবার দিনটি। দূর থেকে  যেন ভেসে আসছিল কয়েক দশকের শালবন থেকে হাওয়ায় ভেসে আসা সুদূরের গান  -------- 
 "শেষ  বেলাকার শেষের  গানে 
ভোরের বেলার বেদন আনে । 
তরুণ মুখের করুন হাসি  
গোধূলি আলোয় উঠেছে ভাসি।
 প্রথম  ব্যথার  প্রথম বাঁশি
বাজে দিগন্তে কী সন্ধানে শেষের গানে ।"

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri