লাল পরী-১২ (শেষ পর্ব)/মধুপর্ণা রায়
লাল পরী-১২ (শেষ পর্ব)
মধুপর্ণা রায়
মেয়েটা তাকাল। খুব বড় চোখ। দীর্ঘ পাতা। মণিটা ঘুরছিল শাক্যর মুখে। যেন ঠান্ডা দাপটে জরিপ করছে ওকে। বুকের মাঝখান থেকে টান মেরে বের করল কী একটা! হতচকিত শাক্য দেখল বোতাম টিপতেই লম্বা ফিনফিনে জিভের মতো তীব্র কিছু!
মল্লিকা বলল :-- স্প্রিং চাকু। নন্দ মস্তান দিয়েছিল। ও তখন আমার কাছে বসত। চলে যাবার দিন বলেছিল-- যার ক্যালাচি খেতে ইচ্ছে করবে, সেই শালাদের জন্যে থাকল। বুকের গত্তে রেখে দিবি।
মল্লিকা হাসছিল। ভয়ে-ঘেন্নায় ঘিনঘিন করছিল শাক্যর সব। সজোরে কব্জিতে চাপ দিলেই ছিটকে যাবে চাকু। তবু তার সাহস হল না। মল্লিকার হাসিতে অন্ধকার - তীব্রতা। বলল:-- আমার আজ রাতে কলকাতার ট্রেন ধরতে হবে। কাল দুপুরে মিটিং আছে। আমি শালা সংস্থার মেম্বার হয়ে মহা ফাঁপরে পড়েছি। নালিশফালিশ-পরামর্শ - লেকচার.....শাল্লা... নিজের জীবনের কেচ্ছার গপ্প শোনাও....! এখন ফেরবার পথ ধর। আগে বায়নাটা মেটাও তো।
মেয়েটা লকলকে চাকুটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খেলছে। শাক্য কথা না বলে এক হাজার টাকার পাঁচটা নোট বাড়িয়ে দিল নি:শব্দ ঘেন্নায়।
মল্লিকা হাসল। :-- আমাদের ওখানে ঠেকে চুল্লু বিক্রি হয়। বাংলা মদের সঙ্গে কোক মেশানো হয়। আর শালা রামের বোতলে ওটা হয়ে যায় রাম। মুনিয়াটা তেরো বছর বয়সে বিক্রি হয়েছিল। মাদারচোদ বরটা এখনো এসে ওর কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। মুনিয়াটা সারা বচ্ছর ওই মাদারচোদটার জন্য শরীর বেচা টাকা জমায়। বরটাকে একবার দেখবে বলে। মাইরি.... কী গণ্ডগোলের জীবন! শুদ্দু ভণ্ডামি আর বালের মিথ্যা মিথ্যা মিথ্যা...…!
টাকার নোটগুলো যত্নে গুছিয়ে টেবিলে রাখল মল্লিকা। আচমকা সাপের জিভ দিয়ে চিড়ে দিল পাঁচটা একহাজার টাকার পেট। তারপর মাটিতে ফেলে লাথি মারল।
:--- তুমি ফ্লিমের গল্পে এটা লিখে দিও। একটা বেশ্যা তুমি কম্ম না করে শুধু অপমান করে গেছ বলে তোমার দেওয়া টাকায় লাথি মেরেছে আর গোটা রাত তোমাকে সঙ্গ দিয়েছে বলে টাকাটাকে খুন করেছে কিন্তু তোমাকে ফেরত দেয়নি।
হতবাক স্তব্ধতায় শাক্য কেমন বোবা হয়ে গেল। মল্লিকা ঝাঁ করে ওর স্প্রিং চাকু বন্ধ করে ঢুকিয়ে নিল বুকের খাঁজে।
:-- আমরা বেশ্যা। কাজ করে পয়সা নিই। এবার গাড়ি বের কর। আমাকে তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।
চটপট ব্যাগ গুছিয়ে তৈরি মল্লিকা। লং স্কার্টে ছিপছিপে শরীরটা ধারাল আর লম্বাটে লাগছে। শাক্যর কবিসত্তা, তার শিল্পবোধ এইসব দেখছিল আর বুকের তলে নদী সরছিল দূর থেকে দূরে.........।। সে জানে, রঞ্জাবতী আর নেই। মধুমন্তী আর ফিরবে না। খুচরো মেয়েগুলো এক- আধটু প্রেরণার মতো আবোলতাবোল। আর এই মল্লিকা?! তীব্র লাল পোশাকে জ্বলন্ত এক মানুষ - পরী! ওর তবে ডানা আছে। ( সমাপ্ত)
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴