সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
05-December,2022 - Monday ✍️ By- সুবীর সরকার 5.80K

ঢোলসানাই-১২/সুবীর সরকার

ঢোলসানাই/দ্বাদশ পর্ব
সুবীর সরকার
*******************
৩৪।

ভুলে যাওয়ারও তো একটা ইতিহাস থাকে।ইতিহাস থেকে ভুলে যাওয়া চাপা পড়া অংশগুলি অংশত আংশিক এক ভুলে যাওয়ার রদবদল এনে দেয়। হেরম্ব কি ইতিহাসের কেউ হতে পারে! হতে পারাটা সম্ভব নয় কারণ নিম্নবর্গের কোনো ইতিহাস হয় না, হলেও মান্যতা পায় না। নদী নালা জঙ্গল জলা জনজাতি ভাষা বিভাষা কথা উপকথার প্রান্ত প্রান্তরের গানবাজনা পূজা লোকাচার সবকিছু নিয়ে অন্য ও অনন্য এক ইতিহাস মান্য ইতিহাসের সমান্তরালে তীব্রভাবে রচিত বিনির্মিত হয়ে উঠতে থাকে।মান্যতা এখানে গৌণ। মানুষের অংশগ্রহণ আবার অংশগ্রহণের সম্প্রসারণযোগ্য পটভূমির মধ্যে চিরকালীন ভোরবেলার মতো ইতিহাসের ভুলে যাওয়াটাকেই বিদ্রুপ করে; নির্মাণ বিনির্মাণ নিয়ে ইতিহাসেরই ইতিহাস রচিত হতে থাকে শব্দ-নৈঃশব্দে। নৈঃশব্দ খান খান করে কাঁচ ভাঙবার যুদ্ধযাত্রার চক্রান্তকারীদের দরবারী ঝাড়লণ্ঠন ব্রাত্যমানুষের বিক্ষোভ-সংহত হতে হতে ইতিহাসের সংযোজিত অংশ হয়ে প্রাচীন প্রবীণ বৃক্ষশাখার হাওয়াবাতাসে সংকেতময়তার পরিসরটুকুতে ঠোক্কর দিতে থাকে। হাতিডোবার খাল কাজলীকুড়া সাহেবেরহাট দইভাঙ্গির দহ আশ্চর্য আঞ্চলিকতার মিথ ও গন্ধে প্লুত হতে হতে হেরম্ব নদীর সকল অংশগুলিই অতিক্রম করতে থাকে। অতিক্রমণের আবহমানতাটাই চিরসত্যি সূর্য ওঠা চাঁদ ডোবার মতো।ইতিহাসের চিরচেনা পথের প্রান্তরেখা ছুঁয়ে ইতিহাস চলতে চায়। অথচ আঞ্চলিকতার চোরা টানে চোরাবালির ভিতর ইতিহাসের আবশ্যিক নিয়মটুকুই বড় হয়ে ওঠে। যেন নিয়তিতাড়িত মানুষের হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন খোয়াব ইতিহাসেরই মহাবৃত্তান্তের রূপ ধরে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। প্রলোভনের ফাঁদ এড়িয়ে হেরম্ব জলধোয়া খড়ম জোতদার নিয়ামত কবিরাজ ধনবালা খইচালু সবাই মহার্ঘ্য এক ছবির ফ্রেমে গিয়ে ঢোকে মহাকালের চূড়ান্ততম কথাছবির মতো। ভুলে যাবার ইতিহাসটা যেমন সত্যি ঠিক ততটাই ইতিহাস ভুলে যাওয়াটাও।

৩৫।

এত সব ইতিহাস অঞ্চলকথা প্রান্তজনের আঞ্চলিক হয়ে উঠতে চাওয়ার মধ্যে কোথাও কি হেরম্ব ছিল? না কি তাকে খুঁজে আনতে হবে? সেই যে এক বনাঞ্চল পর্বতরেখাবেষ্টিত জলাভূমির উপকথায় হেরম্ব দাঁড়িয়ে ছিল সেখান থেকে সকল আলস্য ভেঙে হেরম্ব আবার তার একক যাত্রা শুরু করে। শুরুর স্থবিরতা বাঁক নেবার অপ্রচলিতে আলস্যের আংশিকতার ঘনত্ব এনে দিতে চাইলেও তাকে অগ্রাহ্য করে জঙ্গলপথই হেরম্বর পূর্বনির্ধারিত। হেরম্বকে এভাবেই পেরিয়ে যেতে হবে দিবালোকের জঙ্গল আদিবাসীদের গ্রাম ঝোরা নালা চা-ফ্যাক্টারী হাসপাতাল নদী নদীপারের কুলবন, উঁচু উঁচু বাঁধ শেয়ালকাঁটার ঝাড় ঘন্টাফুল লতানো গাছলতা বুনো ফল সব, সবকিছু। এই যাত্রাপথে হয়তো জলধোয়া বসুনিয়া থাকবে না,তবে আরো আরো নতুন নতুন মানুষেরা তাকে সঙ্গ দেবে; সখ্যতাও।সখ্যতায় ঘনত্ব সেভাবে থাকবে না। অনন্ত এক উদাসীনতা তাহলে কি জড়ানো থাকবে হেরম্বর শরীরমনে! উদাসীনতা পাকেচক্রে শরীরে শ্যাওলাজড়ানো অনুভূতির দিকে আকাশমাটির বাস্তবতার বাস্তবতাটুকুই মেলে ধরবে। বৈশাখ আষাঢ় কার্তিক বর্ষা হিম বারমাস্যার গান হয়ে পথে পথে পাকাধানের খেতখামারে মাছধরার জালজালকের কৃষিকর্ষণ আদিবাসীদের করমপুজা নাচগান জঙ্গলের হাতি বাইসনের আগুনচোখ হরিণশাবকের নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে পড়া মেঘের ডাকে পেখমমেলা ময়ূরের নাচের অনবদ্যতায় জীবনের আপাতসরল সরলীকৃত ধারাবাহিক গতিময়তায় সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে থাকে। থাকাটাও আঞ্চলিক হয়ে উঠতে পারবে কি না সেটা অনুধাবনের প্রয়োজনীয়তা অগ্রাহ্য করে হেরম্ব চলতে থাকে। তাকে ঘিরে ধরে বনবাদাড়ের যত পাখপাখালি হাতির মাহুত মাহুতের স্মৃতিজড়ানো সব হাতিগান; মহিষের পিঠে শুয়ে থাকা কিশোর,নদী পেরিয়ে নদী সাঁতরে জঙ্গলের নিশ্চিন্তিতে ঢুকে পড়া দশ কুড়ি বরাহ, বাইসন। থাকতে না চাইলেও সমস্ত কিছুর মধ্যে হেরম্বকে কিন্তু থেকে যেতেই হয়, কেননা থেকে যাওয়া ব্যাতিত তার আর কোন উপায় নেই।

৩৬।

প্রাত্যহিকতায় দৈনন্দিনে ভোরের ভেতর জেগে উঠতে চাওয়া ভোরগুলির ভাঁজে ভাঁজে কেমনতর দেহতত্ব এসে পড়ে।তখন ফজরের নামাজ ভাঙে মোল্লাবাড়ির মসজিদে। জামাতের জমায়েত ভেঙে গেলে ভাঙা জমায়েতের টুকরোগুলির বিভ্রম থেকে ভ্রমবশত ভ্রামণিক লোকজতা বিনির্মিত হতে থাকে।কবেকার আভিজাত্য বনেদীয়ানা প্রাচীনতা নিয়ে মোল্লাবাড়ি যেন তার প্রবীণত্বকেই প্রতিধ্বনি ধ্বনির আবর্তে টেনে আনে। তামাকের হাট বল পাটাহাট বল গরুহাটি বল সব সবকিছুকেই মোল্লাবাড়ির চৌহদ্দীতে এনে ফেলতে হয়।কথিত আছে সেই কবেকার ওয়াহাবী ফরাজী খিলাফতের দিনগুলিতে মোল্লাবাড়ির রুকনুদ্দিন জয়নাব ইলিয়াস মইনুদ্দিনেরা দুধসফেদ ঘোড়া ছুটিয়ে চলে যেতেন দিকদিগন্তের পানে।মোল্লাবাড়ির ফরিদা ফুপু আঞ্জুমা নানীর ‘বিয়ের গীতের’ নিজস্ব দল ছিল যার কথা ৫০/৭০ মেইল ব্যাসার্ধের গ্রামগুলির পুরোন নতুন মানুষেরা প্রায় সকলেই জানে।জানা অজানার পর্ব পর্বান্তর পেরিয়ে যেতে যেতে পটভূমির ভিতর মোল্লাবাড়ি ঢুকে পড়তে চায়;ঢুকে পড়ার পর্যাপ্ত অনুষঙ্গ প্রামান্যতা উপযোগী কিনা সেটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে যখন মোল্লাবাড়িই প্রকৃতপক্ষে প্রাকৃতজনের এক পটভূমি হয়ে উঠতে থাকে। পটভূমি কি স্থিরচিত্র হয়ে পটভূমির ভিতর বসে থাকতে পারে! বসবাস করলেই কিংবা বসতি বসালেই তো আর হবে না; তাকে চলমানতা দিতে হবে।হাটবাজারের ব্যাস্ততাও;লোকাচার লোকবৃত্ত কাঁথাসেলাইয়ের দিনগুলি বসতির প্রান্তিক রেখার স্পর্শযোগ্যতা স্বত্বেও স্পর্শযোগ্য মনে না করবার দ্বিধা দোলাচলে ভিন্নমুখি পটভূমির কথাই পটভূমির নতুন জেগে ওঠা অংশরূপে বিবেচ্য বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে থাকে;গড়ানো বেলার আকাশের গুটিয়ে নেয়া আলোর নিঃসঙ্গতায় জল জলা জনভূমির বিষাদের মহাশুণ্যতায় বিলীয়মান সামগ্রিকতাটা লুপ্ত হতে হতে বিলুপ্তির সান্নিধ্যটুকু বেলা-অবেলার দিনবদলের ধরতাইটুকুই জাগিয়ে রাখতে চায়। জাগৃতির প্রাণময়তায় জলে ভাসা নুড়িপাথরের মতো চিরকালের সত্যিকথন হয়ে মোল্লাবাড়ি নামাজ জামাতের বহুস্বরিকতায় জেগে থাকে তীব্র এক জমায়েত হয়ে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri