উত্তরের বাগিচাগুলিতে বিকল্প জ্বালানির স্বপ্ন দেখুক চা শিল্প /গৌতম চক্রবর্তী
উত্তরের বাগিচাগুলিতে বিকল্প জ্বালানির স্বপ্ন দেখুক চা শিল্প
গৌতম চক্রবর্তী
উত্তরবঙ্গের চা-বাগানগুলিতে শ্রমিকের ব্যবহারের জন্য যে বিদ্যুতের যথাযথ ব্যবস্থা রয়েছে তা কখনই শ্রমিকের বিলাসিতার জন্য নয়, তা কেবলমাত্র বেঁচে থাকার জন্য। অন্যভাবে বলা যায় টিভি বা অন্য কোন বিনোদনে ব্যবহারের চেয়েও রাতের খাবার সময় আলোর প্রয়োজনে অথবা বন্য প্রাণীর হাত থেকে রাতে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে চা-বাগান শ্রমিকদের বিদ্যুতের প্রয়োজন অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আর্দ্রতা কমাতে অর্থাৎ বাগিচার পরিভাষাতে উইদারিং ও পাতার ফার্মেন্টেশনের পর ড্রায়ারে তৈরি চা-কে শুকোতে প্রচুর পরিমাণ জ্বালানির প্রয়োজন হয়। এখন ওই দুটি কাজে মূল ভরসা কয়লা। হাতেগোনা কয়েকটি বাগান ধানের তুষ কিংবা ফার্নেস অয়েল ব্যবহার করে। কয়লার দাম দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। বছর দেড়েক আগেও এক মেট্রিক টন কয়লার দাম ছিল ৯-১০ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। উচ্চ ক্যালোরিফিক ভ্যালুর অসমের কয়লার জোগান না থাকায় ভরসা রানিগঞ্জ কিংবা ইন্দোনেশিয়া সহ আরও কয়েকটি জায়গা থেকে আমদানি করা কয়লা। তাই অসমের মতো উত্তরবঙ্গের চা বাগানও যদি জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার শুরু করতে পারে তবে উৎপাদন খরচে অনেকটাই রাশ টানা সম্ভব। উত্তরবঙ্গে প্রাকৃতিক গ্যাসের পাইপলাইন বসানোর কাজ এখন চলছে জোরকদমে। রান্নার জন্য পরিবেশবান্ধব ওই গ্যাসের বাড়ি বাড়ি সংযোগ তো মিলবেই। প্রকল্পটির মাধ্যমে এখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে উত্তরের অর্থনীতির 'জিয়নকাঠি চা শিল্পও। কথা বললাম গ্যাস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (গেইল)-এর পাইপলাইন বসানোর কাজটি যাদের মাধ্যমে হচ্ছে সেরকমই এক কর্তা সন্তোষ ত্রিবেদীর সঙ্গে। জানলাম এর ফলে চা বাগানগুলির সামনে নতুন দুয়ার তো খুলে যাবেই। পাশাপাশি আরও নতুন কলকারখানা চালুর পথও উত্তরবঙ্গে প্রশস্ত হবে।
বারাউনি থেকে গুয়াহাটি পর্যন্ত ৭১২ কিলোমিটার গ্যাসের পাইপলাইন বসানোর কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। এর মধ্যে বিহারের ও অসমের অংশে রয়েছে যথাক্রমে ২৬৮ ও ২৯৯ কিলোমিটার। বাকি ১৯০ কিলোমিটার রয়েছে উত্তরবঙ্গের ৫ জেলায়। অসমে ইতিমধ্যেই কাজ পায় ৯৮ শতাংশ শেষ হয়ে গিয়েছে। উত্তরের জেলাগুলির মধ্যে উত্তর দিনাজপুরে ৭ কিলোমিটার, দার্জিলিংয়ে ৩৭ কিলোমিটার, জলপাইগুড়িতে ৬২ কিলোমিটার, আলিপুরদুয়ারে ৩.৯৭ কিলোমিটার, কোচবিহারে ১২ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হচ্ছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের লাইন থেকে দু'ধরনের গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবা পাওয়া যাবে। প্রথমটি উত্তরবঙ্গ পাবে পাইপড ন্যাচারাল গ্যাস (পিএনজি), যা বাড়ি বাড়ি রান্নার কাজে এবং চা বাগানগুলি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করতে পারবে। অন্যদিকে কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) ব্যবহার করা সম্ভব হবে যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাস সহ অন্যান্য বেসরকারি বাসগুলি এক্ষেত্রে উপকৃত হতে পারে। প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের যে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে উত্তরবঙ্গের চা শিল্পমহল স্বপ্ন দেখতে চাইছে সেটা হল এর খরচ সাশ্রয়ীর দিকটি। উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের চা-বাগান প্রায় ১৫০ বছর আগে শুরু হয়। দার্জিলিং জেলায় চা-বাগান প্রথম ১৮৪০ সালে স্থাপিত হয়। উত্তরবঙ্গের আটটি জেলার মধ্যে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, দার্জিলিং, কালিম্পং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় প্রচুর চা-বাগান রয়েছে। উত্তরবঙ্গ এবং তার আশেপাশে বিশেষ করে ভূটানে প্রচলিত পদ্ধতিতে যে পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় তা সমস্ত উত্তরবঙ্গের মানুষ, চা বাগান, শ্রমিক সহ শিল্পকারখানার প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল নয়। কিন্তু রাষ্ট্র বা বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানীগুলি বিশেষ প্রয়োজনের খাতিরে বা স্বার্থে অন্য স্থানে সরবরাহ করে। ২০১৫ সালের সমীক্ষার রিপোর্টে ডুয়ার্সের ১২টি বাগান সম্পূর্ণ অন্ধকারে আছে। কিছু কিছু চা-বাগানে বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোরও অভাব আছে।
ফিল্ড ওয়ার্ক করতে করতে খবর পেয়েছিলাম সৌর বিদ্যুৎ ব্যাবহার করে চা শিল্পে খরচ অনেকটা কমিয়ে নজির স্থাপন করেছে আলিপুরদুয়ার জেলার মাঝেরডাবরি চা বাগান। নিজের চোখেই দেখলাম সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে চলছে ফ্যাক্টরি। আলোকিত হচ্ছে অফিস থেকে শুরু করে বাগান পরিচালক ও বাবুদের আবাসন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি লিমিটেডকেও বিদ্যুত দেওয়ার সংস্থান রয়েছে। পুরানো ও নতুন মিলে একমাত্র জলপাইগুড়ি জেলাতেই ১২০ টির বেশী ক্ষুদ্র ও বৃহদায়তন বাগান আছে যার অনেকগুলিই শতাব্দী প্রাচীন। দার্জিলিং এর পাহাড় এলাকাতে ৮২ টির মত চা-বাগান আছে। রাজ্যের চা শিল্পের নিরিখে নজির স্থাপন করেছে আলিপুরদুয়ার জেলার মাঝেরডাবরি চা বাগান। রংপুর টি অ্যাসোসিয়েশন মালিকানাধীন ওই বাগানটি চা পরিচালকদের যে সংগঠনের সদস্য, সেই অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার (টাই) ডুয়ার্স শাখার প্রক্তন সম্পাদক রাম অবতার শর্মার মতে এটা চা শিল্পের ইতিহাসে একটি মাইলস্টোন। একদিকে পরিবেশবান্ধব ও অন্যদিকে সাশ্রয়ী সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে ফ্যাক্টরি চালানোর কথা এর আগে কেউ ভাবেনি। কথা বললাম বাগানের ম্যানেজার চিন্ময় ধরের সঙ্গে। তিনি বললেন, চা শিল্পে উৎপাদন ব্যয় ক্রমশ বাড়ছে। তা কমানোর অন্য কোনও উপায় নেই। সৌরবিদ্যুতের এই প্রকল্পে বিনিয়োগ মাত্র একবারই। এর ফলে বিদ্যুৎ বাবদ খরচ অনেকটাই বেঁচে যাবে। ওই মূলধন বাগানের উন্নয়নে আরও বেশি করে ব্যবহার করা যাবে। অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহারে সরকারের পক্ষ থেকে সবসময়েই উৎসাহ দেওয়া হয়ে থাকে। মাঝেরডাবরির এই প্রয়াসকে স্বাগত জানিয়েছে সকলে। এলাকার সামাজিক উন্নয়নেও বাগানটির ভূমিকা প্রশংসনীয়। মাঝেরডাবরি চা বাগিচাতে ম্যানেজারের সঙ্গে গেলাম সোলার প্যানেলগুলি দেখতে। বাগানের ফ্যাক্টরির ছাদেই বসানো হয়েছে সোলার প্যানেলগুলি। উৎপাদন ক্ষমতা ৩৪২ কিলোওয়াট। এজন্য খরচ হয়েছে ১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা। আগামীদিনে উৎপাদন ক্ষমতা ৫০০ কিলোওয়াটে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষের। এখনকার উৎপাদন সেখানে সৌরবিদ্যুতেই চলছে।
২০২১ এর ১৬ জানুয়ারি থেকে প্রকল্পটি চালু হয়। মাঝেরডাবরিতে যে ধরনের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করা হয়েছে সেটিকে বলা হয় অন গ্রিড। তাতে কোনও ব্যাটারির প্রয়োজন নেই। শুধু সৌর প্যানেলগুলি ধুলোমুক্ত রাখা দরকার। এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট মিটারের মাধ্যমে দিনের বেলা বিদ্যুত বণ্টন কোম্পানি লিমিটেডকে বিদ্যুৎ দেওয়া হয় এবং রাতের বেলা কোম্পাণী নেয়। জানলাম এর ফলে বাগানের বিদ্যুত বাবদ খরচ অনেকটাই কমে গিয়েছে। চা মহল সূত্রে জানতে পারলাম সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে উত্তরবঙ্গের বাগানে ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন এই প্রথম। চা গবেষণা সংস্থার (টিআরএ) নাগরাকাটার উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের চা বিজ্ঞানী এবং আধিকারিকেরাও অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। চা বিজ্ঞানী সোমেন বৈশ্যের সংযত প্রতিক্রিয়া ছিল মাঝেরডাবরির প্রকল্পটি সফল হলে চা শিল্পের কাছে একটি নয়া দিগন্তের উন্মোচন হবে। বিভিন্ন অপ্রচলিত বিদ্যুৎ উৎসের মধ্যে শ্রমিকের ব্যবহারসহ চা-বাগান শিল্পের সৌরশক্তি থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতে সৌরশক্তিকে সরাসরি বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিনের বেলায় তো বটেই, রাতেও তা ব্যবহার করা যায়। চা গাছ, ফ্যাক্টরি, আবাসন এবং চা-বাগানের অফিস বাদেও বেশীরভাগ চা-বাগানে বিশেষ করে বড় এবং পুরনো বাগানে প্রচুর অব্যবহৃত কি কখনও ব্যবহারের অনুপযুক্ত ফাঁকা জমি পরে থাকে। এই ফাঁকা জমি সোলার সিস্টেম বসানোর পক্ষে উপযুক্ত। পুরানো বাগানগুলিতে বা নতুন চা বাগানে যাদের স্থায়ী শ্রমিক আছে তাদের বাসস্থানও চা বাগানের সীমার মধ্যেই থাকে। বাগান কর্তৃপক্ষ, বাগান পাহাড়া, বাগান রক্ষণাবেক্ষণ, বেশী শ্রম পাওয়ার তাগিদেই নিজেদের প্রয়োজনে চা শ্রমিকদের বসতি বাগানের মধ্যে স্থাপন করা হয়। যদিও চা-বাগান তৈরীর প্রথম দিকে অন্যস্থান থেকে লোক ধরে এনে বাগানে শ্রমিক হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। কালক্রমে শ্রমিকের ন্যূনতম বাঁচার বা বাঁচানোর তাগিদে ঘরবাড়ি ও বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এত বছর পরেও আজ অনেক চা-বাগানে শ্রমিকের প্রয়োজনের তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ যথেষ্ট নয়।
উত্তরবঙ্গের সমতলের চা-বাগানগুলি অনেক ক্ষেত্রেই আকার আয়তনে বড় এবং বিদ্যুতের চাহিদাও কম নয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে বা কম ব্যবহার করে অপ্রচলিত পদ্ধতিতে উৎপাদিত বিদ্যুতের ব্যবহারের দিকে নজর দিলে একদিকে যেমন প্রত্যক্ষভাবে চা শ্রমিকের উপকারে আসবে, অন্যদিকে বাগান মালিকপক্ষও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভিন্নভাবে উপকৃত হতে পারে। বাগানের সোলার সিস্টেম বসানোর সময় কোথাও জমির পরিমান কম হলে সৌরগাছ ব্যবহার করা যেতে পারে। বড় গাছের প্রধান কান্ডের মত আকারে লোহা বা কাঠের স্তম্ভ ব্যবহার করে তাতে গাছের বিভিন্ন শাখাপ্রশাখার (গাছের পাতা যেখানে থাকে) সোলার সেল বা প্যানেল বসানো হলে তাকে সৌরগাছ বলা হয়। চা বাগানের মত এত বেশী ফাঁকা জমি দেশের কোথাও কোন শিল্পে খুব বেশী পাওয়া সম্ভব নয়। দিনের বেলায় বছরের বেশীরভাগ সময় ধরে উত্তরবঙ্গে তীব্র সূর্যালোক পাওয়া যায়। তাই সোলার সিস্টেম বা সোলার প্যানেলগুলি প্রায় সারাদিনই বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম থাকে। তাই অন্য স্থানের তুলনায় উত্তরবঙ্গের বিশেষ করে সমতলের চা বাগানগুলি থেকে এই পদ্ধতিতে বেশী পরিমাণ বিদ্যুৎ তৈরী করা সম্ভব। চা ফ্যাক্টরিগুলি আকারে বিরাট বড় হয়ে থাকে। সুতরাং পুরনো চা-বাগানগুলিতে বিরাট আকৃতির বাংলো সহ চা-বাগানের অফিসঘরগুলির ছাদও সোলার প্যানেল হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। চা বাগানের চা গাছের তিনটি পাতা সহ কুঁড়ির পর্যাপ্ত উৎপাদনের অন্যতম শক্তি হল তীব্র সূর্যালোক থেকে চা-গাছকে রক্ষা করা অর্থাৎ ছায়া দেওয়া। তাই চা-বাগানের মাঝে মাঝে প্রায় সমান্তরালভাবে ছায়াগাছ বা শেড ট্রি লাগাতে হয়। চা বাগানে ছায়াগাছের পরিবর্তে উঁচু উঁচু স্তম্ভের উপর সমান্তরাল ভাবে সোলার প্যানেল বসানো যায়। পশ্চিমবঙ্গে যে বিপুল পরিমাণ জমিতে চা চাষ হয় এবং তার সিংহভাগই উত্তরবঙ্গে অবস্থিত। এই বিপুল পরিমান জমিতে মাঝে মাঝে সমান্তরালভাবে সোলার প্যানেল বসানো হলে যে পরিমান বিদ্যুৎ তৈরী হবে তা দিয়ে চা-শ্রমিক এবং চা-শিল্পের সাথে যুক্ত সমস্ত স্থানে বিদ্যুৎ জোগান সম্ভব হবে।
এ ভাবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে চা প্রক্রিয়াকরণের আগে কাঁচা চা পাতাকে গরম করার কাজও করা যায়। সোলার প্যানেলগুলিকে উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ এবং পাহাড়ার কাজ করার জন্য বাইরে থেকে লোকের প্রয়োজন হবে না। এগুলি সমগ্র চা বাগান জুড়ে থাকবে। তেমনি বাগানের শ্রমিকদের আবাসনগুলিও বাগানের চারদিকে ছড়িয়ে থাকার ফলে শ্রমিকরাই নিজেদের প্রয়োজনে অল্প পরিশ্রমে পাহাড়ার কাজ করতে পারবে। বর্তমানে অনেক বাগানেই মা শ্রমিকের ছোট শিশু সারাদিন থাকার জন্য চা বাগানের মাঝে মাঝে কিছু ঘর যেগুলিকে ক্রেশ বলে সেখানে থাকে এবং শ্রমিকদের বিশ্রামের জন্যও বাগানে যে ঘরগুলি থাকে তাদের ছাদও সোলার প্যানেল বসানোর জন্য উপযুক্ত হতে পারে। ছায়াগাছের পরিবর্তে সোলার প্যানেল বসানো হলে যে বিপুল পরিমানে বিদ্যুৎ তৈরী করা সম্ভব তা যথাযথ ব্যবহারের পরেও বাগান সংলগ্ন এলাকাতে বিক্রি করা যেতে পারে। তাতে বাগিচা শিল্পে আর্থিক লাভও হতে পারে। প্রচলিত পদ্ধতিতে বাইরে থেকে বাগানে বিদ্যুৎ আনতে হাই টেনশন লাইন ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে সোলার প্যানেল দিয়ে তৈরী বিদ্যুৎ ব্যবহারে ঐ গুলির প্রয়োজন পরে না। চা গাছ অক্সিজেন তৈরী করে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে পরিবেশকে যেমন বাঁচিয়ে রাখে তেমনি সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রচলিত তাপবিদ্যুৎ শক্তির উৎপাদনের সাথে সাথে বিষাক্ত গ্যাসের উৎপাদন রোধ করতে পারে যা প্রচলিত তাপবিদ্যুৎ তৈরীর সময় উৎপন্ন হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমনকি আমাদের দেশেও বর্তমানে অপ্রচলিত বিদ্যুতের উৎস ব্যবহার করে প্রচুর পরিমানে বিদ্যুৎ তৈরী এবং ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে বিস্তৃতভাবে সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং তার ব্যবহার বিস্তার লাভ করেনি। সৌরশক্তিকে প্রত্যক্ষভাবে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান প্রতিবন্ধক হল ফাঁকা জমি, যেখানে গাছপালা, চাষযোগ্য জমি, বন জঙ্গল সহ বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
সবদিক বিবেচনা করে তাই বলা যায়, চা বাগান সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা যেখানে প্রচুর ফাঁকা জমি পাওয়া যাবে এবং সাথে সাথে ছায়াগাছ হিসাবেও সোলার প্যানেল সিস্টেম ব্যবহার করা যাবে। এতে চা শিল্পের শ্রমিকের বিদ্যুতের ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। যদিও সৌর প্যানেলের প্রাথমিক ব্যবস্থাপনার জন্য একলপ্তে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ সহকারে তা ব্যবহৃত হলে অল্প দিনের মধ্যেই ঐ অর্থ উঠে আসার সম্ভাবনা থাকে এবং বারবার অর্থ বিনিয়োগের দরকার পরে না।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴