করোনাকালের লকডাউনে ডুয়ার্সের চা বাগিচা-২/গৌতম চক্রবর্তী
করোনাকালের লকডাউনে ডুয়ার্সের চা বাগিচা
(দ্বিতীয় পর্ব)
গৌতম চক্রবর্তী
করোনা সংক্রমণের জেরে বিশাল ধাক্কা খায় দেশের চা বাগিচা শিল্প। চা ব্যবসায়ীদের আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে ব্যাপক প্রভাব পড়ে পাহাড়, তরাই, অসম এবং ডুয়ার্সের চা শিল্পে। লকডাউন ঘোষণা করার পর থেকেই বিভিন্ন চা বাগান বন্ধ হতে শুরু করে। ফার্স্ট ফ্লাশের মরশুম চলছিল। সেকেন্ড ফ্লাশ ছিল ওঠার মুখে। এই পরিস্থিতিতে চা বাগান পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চা শিল্পের শিরদাঁড়াতে আঘাত পড়ে। করোনা গ্রাসে বড়সড় বিপর্যয়ের মুখে এসে দাঁড়ায় উত্তরবঙ্গের চা শিল্প। করোনা আতঙ্কে ঘরবন্দী হতে শুরু করে চা শ্রমিকরা। ফার্স্ট ফ্লাশে কোপ পড়ে। দেখা যায় ক্ষতি হতে চলেছে সেকেন্ড ফ্লাশের চা-ও। সঙ্কট এবং ভীতি সঞ্চারিত হল চা বাগিচাতে। বাগান মালিকদের একাংশের মত ছিল তখনই কাজ শুরু হলে কিছু পরিমাণে ফার্স্ট ফ্লাশের পাতা তোলা সম্ভব। যত দেরি হবে, ততই এই চায়ের উৎপাদন ও ব্যবসা মার খাবে। বাগান বন্ধের জন্য মরসুমের গোড়াতেই ধাক্কা খায় ফার্স্ট ফ্লাশ চায়ের উৎপাদন রফতানি বাজারে যার অংশীদারি উল্লেখযোগ্য। দার্জিলিং চা বাগান মালিকদের সংগঠনের সদস্য কিশোরীলাল আগরওয়ালের পাশাপাশি একই সুরে কনসালটেটিভ কমিটি অব প্লান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক অমিতাংশু চক্রবর্তীর দাবি ছিল বাগান খুলতে দেরি হলে চা শিল্পের বড় বিপর্যয় হতে পারে। তখনও পর্যন্ত দিন আষ্টেক কাজের ক্ষতি হয়েছে। দার্জিলিং চা বাগান মালিকদের সংগঠনের সদস্য কিশোরীলাল আগরওয়ালের দাবি ছিল ৪-৫ হাজার ফুট উপরের এলাকায় যেহেতু তখনও ঠান্ডা ছিল তাই দু-এক দিনের মধ্যে কাজ শুরু হলে তখনও ফার্স্ট ফ্লাশ বাঁচানো সম্ভব। বিপুল ক্ষতির কথা জানান ক্ষুদ্র চা চাষিদের সংগঠনের কর্তা বিজয়গোপাল চক্রবর্তীও। তাঁর দাবি ছিল বাগান খুললে অন্যান্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি নিরাপদ দূরত্ব রেখে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম সময় শ্রমিকেরা কাজ করবেন।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ডুয়ার্স-তরাই এবং দার্জিলিং সহ দেশে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছিল। টি বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছিল, সেই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে চা উৎপন্ন হয়েছিল ১৮৪.৭২ মিলিয়ন কেজি। ২০১৮ সালে এই উৎপাদন ছিল ১৭৪.৭৯ মিলিয়ন কেজি। বড়ো চা বাগানের পাশাপাশি ক্ষুদ্র চা বাগানগুলির উৎপাদনও বেড়েছিল। দেশে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বড়ো চা বাগানগুলির উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৯৬.৩১ মিলিয়ন কেজি। ২০১৮ সালে বড়ো চা বাগানের উৎপাদন হয়েছিল ৯২.৬২ মিলিয়ন কেজি। ছোটো চা বাগানের ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৮৮.৪১ মিলিয়ন কেজি। ২০১৮ সালে উৎপাদন হয়েছিল ৮২.১৭ মিলিয়ন কেজি। তবে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও উৎপাদকরা চায়ের প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় চিন্তিত ছিল চা জগত। ডুয়ার্সের চা বাগানগুলিতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩১.২০ মিলিয়ন কেজি। ২০১৮ সালে হয়েছিল ২৮.৭৩ মিলিয়ন কেজি। তরাইয়ের উৎপাদন ২০১৮ এর ২০.৯৯ মিলিয়ন কেজি থেকে বেড়ে হয়েছিল ২২.৭৪ মিলিয়ন কেজি। দার্জিলিংয়ে ২০১৯ এর সেপ্টেম্বর মাসে উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১.১৫ মিলিয়ন কেজি। ২০১৮ সালে উৎপাদন হয়েছিল ১ মিলিয়ন কেজি। কিন্তু ক্ষুদ্র চা বাগান পরিচালন গোষ্ঠীর সর্বভারতীয় সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তীর অভিযোগ ছিল সেবারের কাঁচা চা পাতার দাম ক্ষুদ্র চাষিরা পান নি। গড়ে ৮ থেকে ৯ টাকা কেজি দরে কাঁচা চা পাতা বিক্রি হয়েছে। আইটিপিএ শ্রম উপদেষ্টা অমৃতাংশু চক্রবর্তীও জানিয়েছিলেন ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে গত বছরের চায়ের দাম অনেক কম থাকাতে চা বাগান মালিকদের বাড়তি আর্থিক দায়িত্ব বহন করতে হয়েছে।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেশ জুড়ে লকডাউনে সর্বত্রই বন্ধ ছিল চা বাগান। এই সময়ে শর্তসাপেক্ষে কেন্দ্রের অনুমতি এল। এ বার রাজ্যেরও ইঙ্গিত এল চা বাগান খোলা নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে কথা হতে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাদের নির্দেশে জানায় বাগান খুললেও সেখানে কাজের দিনে যেন মোট শ্রমিকের অর্ধেক বা তার কম হাজির থাকেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে রাজ্য জুড়ে লকডাউনের আওতায় চা বাগানগুলিকে রাখার আবেদন জানিয়ে জেলাশাসককে চিঠি লিখেছিল জয়েন্ট ফোরাম অফ ট্রেড ইউনিয়নের নেতা সমন পাঠক। স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী রূপন দেব চা বাগানে প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে স্থানীয়দের সেই সময়কালীন সফর ইতিহাস সম্পর্কে সমীক্ষা করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছিল। চা শ্রমিকদের যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক জিয়াউল আলমের বক্তব্য ছিল স্বাভাবিকভাবেই চা-শ্রমিকরা আতঙ্কিত বলে শ্রমিকদের মেলামেশায় সামাজিক নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। তাই শ্রমিকদের মজুরি এবং খাদ্যসামগ্রীতে যেন টান না পড়ে তা দেখার জন্য প্রশাসনের কাছে তিনি আর্জি জানান। অন্যদিকে বাগিচাগুলির দৃষ্টিভঙ্গী ছিল প্রতি সপ্তাহে শ্রমিকেরা তাদের বেতন এবং রেশন দাবি করবেই। কর্তৃপক্ষ তাই বাগান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে সেই খরচের ভার বাগান কর্তৃপক্ষের কাঁধেই চাপবে। তার চেয়ে প্রশাসন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে চা বাগান বন্ধের দায় বাগান কর্তৃপক্ষের কাঁধে চাপবে না। এক্ষেত্রে সরকার নিশ্চয়ই পরবর্তীকালে সামগ্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। শর্তসাপেক্ষে চা বাগান খোলার অনুমতি দেওয়ার পরেই নিলামে ছাড়পত্র দেওয়ার দাবি উঠেছিল। কেন্দ্রীয় সরকার এবং টি বোর্ডের যে এই ক্ষেত্রে কোন আপত্তি নেই তা তুলে ধরে রাজ্য সরকারের কাছে চিঠি দেয় শিলিগুড়ি টি অকশন কমিটি। যেহেতু ই অকশনে লোকজনের উপস্থিতির তেমন প্রয়োজন নেই সেটাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিল।
টি বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছিল চা উৎপাদিত জেলাগুলির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা শাসক নিলামের ক্ষেত্রে অনুমতি দিতে পারেন। এরপর দার্জিলিংয়ের জেলা শাসকের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করে শিলিগুড়ি টি অকশন কমিটি। চিঠিটি জেলাশাসক নবান্নে পাঠিয়ে দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই সামাজিক দূরত্ব মেনে ই অকশন করা যাবে এই নির্দেশনামা অনুযায়ী রাজ্য সরকারের তরফে মুখ্যসচিব নির্দেশ জারি করে ছাড়পত্র দেয় চা পরিবহনের ক্ষেত্রকেও। ইতিমধ্যেই পাহাড়ের উচ্চ গুণগত মানের চা কি কৌশলে নিলাম হবে তা নিয়ে নিয়ম-নীতিও তৈরি করা হয়। দ্রুত শিলিগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রের মাধ্যমে পাহাড়ের চা নিলাম শুরু হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু নিলাম কেন্দ্র স্বাভাবিক হলেও কুরিয়ার সার্ভিস চালু না হবার ফলে তৈরি চা এর নমুনা ক্রেতাদের কাছে পাঠাতে পারেন নি বিক্রেতারা। বেশ কিছুদিন বাগান বন্ধ থাকায় যোগানের স্বল্পতার কারণে দেশজুড়েই চাহিদা তৈরি হয়। এদিকে নমুনা না দেখে বাইরের ক্রেতারা চা কিনতে অনিচ্ছুক ছিল। ফলে চা শিল্পের বিপণনে সংকটে দেখা যায়। দেশের নানা প্রান্তের বরাত প্রদানকারী চায়ের ক্রেতাদের কলকাতায় নিজস্ব কার্যালয় রয়েছে। নমুনা পাঠাতে না পারার কারণে ডুয়ার্স এবং তরাই এর চা এর বিপণন থমকে ছিল মে মাস পর্যন্ত। ছত্রিশগড়, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, দিল্লির মতো নানা স্থান থেকে ডুয়ার্স এবং তরাই এর ব্ল্যাক টির বরাত এসে পড়েছিল। ক্রেতাদের কাছে নমুনা পাঠাতে না পারার কারণে ওই বরাত বাস্তবায়িত হতে পারে নি। এদিকে বিদেশে ব্ল্যাক টির চাহিদা ক্রমশ উর্ধমুখী বলে শিলিগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রে রাশিয়া, চীন, ইরাক, ইরান, দুবাই, আবুধাবি থেকে বরাত আসে। কলকাতার নিলাম কেন্দ্র পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ার ফলে পরিস্থিতির মোকাবিলায় শিলিগুড়ি নিলাম কেন্দ্রের মাধ্যমে দার্জিলিং চা বিক্রি হতে শুরু করে এই প্রথম। ফলে উত্তরবঙ্গের ক্রেতারাও পাহাড়ের চা কেনার সুবিধা এখান থেকেই পেয়ে যান।
চা এর বিপণন আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সেই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল বাগডোগরা থেকে কার্গো কুরিয়ার সার্ভিস চালুর অনুমতি। কার্গো কুরিয়ার সার্ভিস চালুর বিষয়টির ওপর বেশি জোর দিয়েছিল শিলিগুড়ি টি অকশন কমিটি এবং চা শিল্প মহল। ডুয়ার্স এবং তরাই এর চায়ের চাহিদার গ্রাফ ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তরাই এবং ডুয়ার্স মিলিয়ে প্রত্যেক বছর চা উৎপাদিত হয় ৩৯৪ মিলিয়ন কেজি। করোনার জেরে মার্চের প্রথম সপ্তাহের পর তখনো পর্যন্ত নিলাম না হওয়ায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার টার্নওভার হয়নি। ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছিল প্রচুর। করোনার ধাক্কায় ২০২০ সালের ফার্স্ট ফ্লাশ পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়। স্বাদে গন্ধে চায়ের বাজারে প্রথম ফ্লাশের কদর এবং দাম দুইই বেশি। মার্চে প্রথম ফ্লাশের পাতা তোলা হয়। কিন্তু দেখা যায় এক সপ্তাহ ধরেই ডুয়ার্সের প্রায় সব চা বাগানে পাতা তোলা কমেছে। চা বাগান খোলা থাকলেও শ্রমিকরা কাজে আসতে ভয় পাচ্ছেন। তারও আগে চায়ের রফতানি বন্ধ হয়েছে। চিন, ইরান, জাপান, জার্মানির দরজা চায়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায় ফ্রেরুয়ারি শেষ থেকেই। তখন থেকে ঘরের বাজারের উপর চাপ পড়তে থাকে। যে সব বাগানের চা সরাসরি রফতানি হয়, সেখানে উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হয়। লকডাউনে বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের দুর্দশা চরমে ওঠে। এই অবস্থায় রাজ্য সরকার বন্ধ চা বাগানগুলো খুলতে উদ্যোগী হওয়ায় সেখানকার শ্রমিকরা স্বভাবতই আশার আলো দেখতে শুরু করে। উত্তরবঙ্গের বন্ধ চা বাগানগুলো খুলতে জরুরি পদক্ষেপ করে রাজ্য সরকার। এই উদ্যোগের প্রথম ধাপ হিসেবে ডুয়ার্সের তিনটি বন্ধ চা বাগান খোলার জন্য নতুন মালিক খোঁজা হয়। ওই সব চা বাগানের জমির লিজ হস্তান্তর করতে টেন্ডার ডাকে রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর। এর মধ্যে ছিল আলিপুরদুয়ার জেলার মধু ও বান্দাপানি চা বাগান এবং জলপাইগুড়ি জেলার সুরেন্দ্রনগর চা বাগান। তিনটি চা বাগানই বেশ কয়েক বছর ধরে বন্ধ ছিল।
ডুয়ার্সের বন্ধ চা বাগিচাগুলির বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লিজের চুক্তি ভেঙে আগের মালিকপক্ষ চা বাগান বন্ধ করে পালিয়ে গিয়েছিল। তাই শ্রমিকদের স্বার্থে নতুন করে ওই সব চা বাগানের জমির লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বলা হয় নতুন মালিককে হেক্টর পিছু ৪৫০০ টাকা জমির সেলামি বাবদ সরকারকে মেটাতে হবে। তা ছাড়া একর পিছু ৩০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। সেই সঙ্গে মানতে হবে সরকারের আরও বেশ কিছু শর্ত। সেই সময়ে জলপাইগুড়ি জেলায় ১৭টি ও আলিপুরদুয়ার জেলায় ১১টি চা বাগান বন্ধ হয়ে পড়েছিল। ওই ২৮টি বন্ধ চা বাগানে সব মিলিয়ে বেকার শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৫০ হাজারের বেশি। তাদের দিকে তাকিয়েই বন্ধ চা বাগান খোলার পদক্ষেপ করে রাজ্য সরকার। আইনি ঝঞ্ঝাট এড়িয়ে সব বন্ধ চা বাগানই ধাপে ধাপে খুলে দেওয়া হবে বলে রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন করোনা পরিস্থিতির মধ্যে রাজ্য সরকার যেভাবে বন্ধ চা বাগান খুলতে তৎপর হয় তাতে আগামী দিনে উত্তরবঙ্গে শাসকদলের ভিত আরও মজবুত হবে। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের সময়ে উত্তরবঙ্গে নির্বাচনী সফরে এসে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বন্ধ চা বাগান খোলার আশ্বাস দিলেও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে তখনও পর্যন্ত কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এই নিয়ে হতাশ ছিল বন্ধ বহু চা বাগানের শ্রমিক ও তাদের পরিবারের লোকজন। লকডাউনের মধ্যে বান্দাপানি চা বাগানে ত্রাণ বিলি করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে কার্যত পালিয়ে যেতে বাধ্য হন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লা। লকডাউনের সময়ে মধু চা বাগানে অনাহারে শ্রমিক মারা গিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে রাজ্য সরকার অনাহারে মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে।
করোনার ওয়েভ তখন একটু কম। করোনা পরিস্থিতিতে এই অঞ্চলের বহু পরিযায়ী শ্রমিক অন্য রাজ্য থেকে ফিরে আসছেন নিজের রাজ্যে। বীরপাড়া থেকে ফিরছি। গয়েরকাটা চা ফ্যাক্টরির মেন গেটে ভিড় দেখে কৌতূহলী হয়ে ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললাম। ভিড় ঠেলে এগিয়ে গেলাম। শুনলাম করোনা মোকাবিলায় এগিয়ে এসেছে গয়েরকাটা চা বাগানের মহিলা শ্রমিকরা। নিজেদের উদ্যোগেই পথ নাটিকা করে তারা করোনার বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রসারের চেষ্টা করছে। নাটকটার নাম ছিল ‘করোনা ভাগাও দেশ বাঁচাও’। শুনলাম এই পথ নাটিকাটি হিন্দি এবং সাদরি ভাষায় লিখেছে ম্যাক্সিমা টোপ্পো নামে একজন চা শ্রমিক। গয়েরকাটা চা বাগিচার নারী শ্রমিকরা এতে অভিনয় করেছে। নাটকে একজন নভেল করোনা ভাইরাসের চরিত্রে, বাকিরা ডাক্তার এবং পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করল। নাটক শেষে কথা বললাম ম্যাক্সিমা টোপ্পোর সঙ্গে। ম্যাক্সিমা জানালো তারা চেষ্টা করেছে মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে সচেতনতা ছড়াতে। সারা বিশ্বকে করোনা কীভাবে গ্রাস করছে তার খবর মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছে তারা। এই পথ নাটিকার মাধ্যমে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত মানুষকে তারা বোঝানোর চেষ্টা করেছে কীভাবে করোনা সংক্রমণ ঘটে এবং কোন কোন সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কীভাবে পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা উচিত, সামাজিক দূরত্ব কীভাবে মেনে চলা উচিত, তা সবই বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেছে তারা। দেখলাম যেহেতু কিছু পরিযায়ী শ্রমিক এই অঞ্চলে ফিরে এসেছেন এবং তাঁরা করোনা আক্রান্ত হতে পারেন। সেক্ষেত্রে মানুষের কী কী করা উচিত পরিযায়ী শ্রমিকদের সেটাও বোঝানোর চেষ্টা করেছে তারা। নাটকে করোনা ভাইরাসের চরিত্রে অভিনয়কারী রোসতাং ভেরা জানিয়েছিল মানুষের মধ্যে সচেতনতার প্রসার ঘটানোর জন্যে নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টা তারা করছে। করোনার মধ্যেও এই উদ্যোগকে সাধুবাদ না জানিয়ে পারলাম না।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴