সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
06-December,2022 - Tuesday ✍️ By- নীলাঞ্জন মিস্ত্রী 470

সানিয়া-৯/নীলাঞ্জন মিস্ত্রী

সানিয়া/পর্ব-নয়
নীলাঞ্জন মিস্ত্রী
^^^^^^^^^^^^^^

শুনসান রাজারহাট। দোকানপাট খোলা নেই একটিও। চারিদিকে এক অদ্ভুত নীরবতা। উত্তপ্ত দুপুরের সেই নিস্তব্ধতার মাঝে পাখীদের কলকাকলি ছাড়া আর কিছুই কানে আসে না। বড় বড় গাছেরা রোদ মেখে ছায়া ছড়িয়ে রেখেছে মাটিতে। সেই ছায়ার মাঝে গুটিকয়েক ক্লান্ত পথিক। গামছায় মুখ ঢেকে তারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। প্রখর রৌদ্রে অনেকটা বালিপথ পেড়িয়ে গলা শুকিয়ে গেছে সানিয়া রামুর। জলের তেষ্টা পেয়েছে খুব। বাজারের চায়ের দোকানগুলি খাঁ খাঁ করছে। খাবার জল মিলবে না সেখানে। একদা রাজারহাটে দই দিতে এসে একটি পাতকুঁয়া দেখেছিল সানিয়া। কিন্তু আজ সেটা চোখেও পড়ছে না। সানিয়ার অবাক চোখ ঘুরতে থাকে উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম। অবচেতন মনে কিছু একটা খেলে যায় তার। মহিষ নিয়ে রামুকে দাঁড় করিয়ে পাতকুঁয়াটির খোঁজে যায় সানিয়া। দেখা মেলে সেই কুঁয়োর। শুকনো পাতার মাঝে সেই কুঁয়ো আজ পরিত্যক্ত । অযত্নে অবহেলা অব্যবহারে শেওলা আর আগাছা জমেছে শরীরে। একেবারে শুকিয়ে যায়নি কুঁয়োর জল। জল নেমে গেছে অনেক নীচে। মাথা ঝুঁকিয়ে নিজের মুখখানি দেখতে চাওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হয় সানিয়া। আয়না হয়ে উঠতে পারেনা পাতকুঁয়ার জল। জল লুকিয়েছে ফার্ণের আড়ালে। এ জল তুলতে বালতির প্রয়োজন কিন্তু সে বালতি মিলবে কোথায়? কুঁয়োর  দেখা মিললেও অধরা থেকে যায় তাদের জলপান।

দূরে ঘরবাড়ি দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েকটি। প্রখর দুপুরে ধুলোমাখা পথের পাশে ওরাও হয়তো ভীষণ ক্লান্ত। ওখানে পৌঁছেই খাবার জল মিলবে। রামু সানিয়ার কথা শুনলেও নিজের উপস্থিত বুদ্ধিকে কাজে লাগায়। দু'জনে মিলে মহিষ নিয়ে আবার আসে পাতকুঁয়াটির পাশে। মহিষের গলার দড়িগুলি খুলে জুড়ে দিল রামু। দড়ির মাথায় গামছা মুড়িয়ে বেঁধে দিতে বলে সানিয়াকে। সেই গামছা পাতকুঁয়োর জলে ভিজিয়ে উপরে তোলে তারা। ভেজা গামছা দু'হাতে মুখের উপরে তুলে নিংড়ে নিংড়ে জল বের করে রামু। সেই জল নাকে মুখে চোখে ফেলে তৃষ্ণা মিটিয়ে চলে। রামুর এই কর্মকান্ড দেখে অবাক হয় সানিয়া। মাথার গামছাটা যে এভাবেও কাজে আসতে পারে এর আগে জানা ছিলনা সানিয়ার। রামুর মত করে সেও তৃষ্ণা মেটায়। সাবাসি দিয়ে রামুকে বলে 
-আজি থাকি তুই মোর গুরু রে রামু। তকোরায় কছো। এইমতন বুদ্ধিখান তোর মাথাত কায় দিল রে কত? (আজ থেকে তুই আমার গুরু রে রামু। সত্যি বলছি। এইরকম বুদ্ধিটা তোর মাথায় কে দিল বলতো?)

রোদ ধুলো গায়ে মাখতে মাখতে মেঠো পথ ধরে তারা এগিয়ে চলেছে । এ পথ গেছে ময়নাগুড়ির দিকে। বেলা গড়িয়েছে অনেকটাই। মাথার উপর সময় গোলক। ওদিকে নজর রাখতে রাখতে দ্রুত পায়ে হাঁটতে থাকে তারা। পুবের আকাশে কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে। সেই মেঘ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে তাদের দিকে। ওরা পুরো আকাশটা ঢেকে নিলে এই যাত্রাপথ যে বেজায় কঠিন হবে বুঝতে পারে তারা। হাওয়া তার গতিবেগ বাড়িয়েছে। খোলা মাঠে ঘূর্ণির মাঝে পরে খড়কুটোরা ঘুরপাক খেতে খেতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ধুলোর সাথে যেন তারা খেলায় মেতে উঠেছে। ছাতা বন্ধ করে পিঠে ঝোলায় সানিয়া রামু। মাঠের গরুবাছুর ছোটাছুটি শুরু করছে। অকাল কালবৈশাখীর আগাম বার্তা পেয়ে গেছে যেন তারা। সানিয়া রামু তাদের হাঁটার গতিবেগ বাড়িয়ে ছুটতে থাকে ময়নাগুড়ির দিকে। নিমেষেই বদলে যাচ্ছে চারপাশ। সূর্য ঢাকা পড়েছে মেঘের ভেতর। সময়ের সাথে সাথে ভয়ংকর হয়ে উঠছে আকাশ-মেঘ। এতদিন ধরে যে আশায় বুক বেঁধেছিল সানিয়া তাতে বাধ সাজছে প্রকৃতি। ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হয়ে পরেছে সানিয়া রামু। অবশেষে হাল ছাড়ে তারা। মহিষ নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বড় এক বাঁশ বাগানের নীচে। প্রবল ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখে খুব রাগ হয় সানিয়ার। আজ হয়তো আর দেখা হবে না বাচ্চু ফুলমণির সাথে।

মনের কু-ডাক সত্য হয়। মাথার উপর বিদ্যুতের ঝলকানি ভয় দেখাতে শুরু করে। দিনের বেলাতেই কেমন রাত নেমে এসেছে। পাখীরা ঘরে ফিরছে। ঘন কালো আকাশে ক্রমাগত মেঘ গুড়গুড় হয়েই চলেছে। একটু বাদেই ধরফরিয়ে ঝড় আসে।  আকাশ ফাটতে শুরু করে সজোরে। সাথে পাল্লা দিয়ে পড়ছে পাথর। ঘুরপাকানি ঝড়ের মোচড়ে মরমর করে ভাঙছে গাছের ডাল।  ধুলো বালিতে চোখের পাতা খুলে রাখাই দায়। এ অবস্থায় কি করতে হবে সেটা ভালো করেই জানে সানিয়া রামু। কিছুক্ষণ পর বিদ্যুতের চমকানি ধমকানি আর পাথর পরা বন্ধ হয়। কিন্তু থামেনা বেহায়া  ঝড়। বাঁশ বাগানের নীচে ভয় অনেক কম।  সেখানেই মুখ গুঁজে দু’জনে পরে থাকে মাটির উপর। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে সবকিছু। কিন্তু কিছুই করার নেই। হাতিরাম ও তার সাথীও ভিজছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। ভয়াল এই প্রকৃতির কাছে অসহায় সমস্ত প্রাণীকুল। বাঁশবনে পাখিরা আর্তনাদ করছে। তাদের স্বপ্নের বাসাগুলি ঝরে পরছে এদিক সেদিক। ইতিউতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে তাদের সদ্য ফোটা শাবকেরা। ডিমগুলি ফেটে মিশে যাচ্ছে বৃষ্টির জলে। গাছের ডালে বসেই মায়েরা দেখছে তাদের সন্তানের লাইভ মৃত্যুদৃশ্য। চিৎকার করছে মায়েরা বাবারা। এই দৃশ্য দেখে বড্ড বেদনা কাতর হয়ে ওঠে সানিয়ার মন। কিন্তু ওদের সাহায্য করবার মত যে কেউ নেই আশেপাশে। ঠিক যেন তাদেরই মতো।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri