শালসিঁড়ি-৯ /বিমল দেবনাথ
শালসিঁড়ি-৯
বিমল দেবনাথ
^^^^^^^^^^^^^
অপরূপা বলে- বেরুচ্ছি মানে…
বিকাশ যেন কোনরকমে কপিলদেবের একটা খতরনাক ইনসুইংগার থেকে পা বাঁচিয়ে উইকেট বাঁচালো।
- বেরুচ্ছি বললেই বের হতে পারবে? তোমার ড্রাইভারকে রেডি হতে বলেছ? ড্রাইভার রেডি হতে হতে তুমিও রেডি হয়ে নাও, আমি সব রেডি করে দিচ্ছি।
বিকাশ এইরকম-ই। শালসিঁড়ির ডাক পড়লে ওর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হলো নিজের সব ভুলে শালসিঁড়ির ডাকে সাড়া দেওয়া- চিন্তা করা। অংশুর অবস্থা তখন ডিমের মতন। জীবন আছে, বাড়ন আছে কিন্তু চলন নেই, শব্দ নেই, দাবি নেই, আবদার নেই। অপরূপা রান্নাঘর থেকে বলছে- তোমরা সব অফিসার’রা ভালো করে ভাব, কেন শনিবারে বন্যপ্রাণ’রা বন থেকে বেশি বের হয়। প্রায় মাস দুয়েক পরে এলে, রবিবারটা থাকবে, তাও না। ঘর বলে তো একটা বিষয়বস্তু আছে। মিঠুদির উপর যা চাপ পড়ছে, ও না কাজ ছেড়ে দেয়।
তারপর ঘরে আর কোন কথা নেই। রান্নাঘরের সোঁ সোঁ শব্দ আর মাঝে মধ্যে টুংটাং । যেন খরস্রোতা নদী পাহাড়ের গা কেটে বয়ে যায়। এর মধ্যেই রবিকে ফোনে তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে রেডি হতে বলে বিকাশ স্নানে ঢুকে যায়।
বিকাশের মনে হয় নীরবতা কখনো নীরব হয় না। নীরবতার একটা গাছকথা আছে। এই কথা কখনো এক হয় না। এই কথা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে, গাছের মতো। পাহাড়ের গাছকথা পাহাড়ের মতো, তরাই ভাবরের গাছকথা তাদের মতো, নোনা জলের গাছকথা নোনা জলের মতো, মরুভূমির গাছকথা মরুভূমির মতো। গাছকথা কী কম। গাছকথা শালসিঁড়ি বোঝে কিন্তু অপরূপাদের নীরব কথা বিকাশরা কি সব বোঝে?
বিকাশ বুঝতে পারে অপরূপার অবস্থা রাজ ঘুঘু’র মতো নয় - যে রাজা রাণী পালা করে ডিম তা দেবে। অপরূপার নীরবতা বলে - ও হাপিয়ে উঠছে। ঝড়ঝাপ্টা সাপ-বাজের মতো সব ভয়ংকর আক্রমণ থেকে ডিমকে বাঁচিয়ে একা উষ্ণতা দিয়ে আলো দেখানো বড় কঠিন, বড় কষ্টের। অংশুর গাছকথার স্রোত অপরূপা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। বিকাশ অপরূপার চোখের কাজলে এখন প্রেম থেকে কষ্ট দেখে বেশি। তবুও ও বিবশ শালগাছের মতো। দায়িত্বের মূল গভীর থেকে আরো গভীরে চলে যায় – কত নীরব শালসিঁড়ির সৈনিকের মতো। প্রজন্মের পর প্রজন্মের জন্য আলো চাই, আলোর জন্যে জল চাই। জলের জন্যে আরো মাটি চাই। মাটির জন্য আরো মূল শালসিঁড়ির আনেক মূল চাই। শালসিঁড়ি শুধু গাছ নয় -সবুজ-জীবন গান। শালসিঁড়ির সৈনিকেরা যেন শালসিঁড়ির বীণে বশীভূত সবুজ গানের সুর সাধক। বিকাশও তাই। ওরা এগিয়ে যায় কচি কাঁচাদের ফেলে অপরূপাদের ভরসায়। শালসিঁড়ির মূলের মতো কত পাথর বুকে বেঁধে…
অপরূপা বলে - এই নাও গিলে নাও। তোমার তো চিবনোর সময় হবে না, তাই মণ্ড করে দিয়েছি।
অপরূপা ভাত-সবজি-ডিম-ঘি সব একসাথে মেখে মণ্ড করে দিয়েছে। এই করতে গিয়ে বিকাশের স্নানের সুযোগ করে দিয়েছে - জেনে শুনেই। অপরূপা জানে, এটা না করালে আজ আর বিকাশের নাওয়া খাওয়া হত না। বিকাশের ভাতের থালাকে মনে হয় যেন শুভেচ্ছা-ডালা। আগের দিনে মহারাণীরা যেরকম রাজাদের যুদ্ধ যাত্রার সময় তিলক দিত - সেই রকম। বিকাশ তিমির গ্রাসের মতো সমস্ত ভাতের মণ্ড গিলে ফেলে। অপরূপা কাজল-ওলা সম্বরী চোখে নিঃশব্দ তাকিয়ে থাকে বিকাশের দিকে। অংশু অভিমানের কান্না ঢাকে বইএর পাতায়। বিকাশ ভাবে – এছাড়া উপায় আর কি আছে। দলছুট হাতির ছানারা তো নিজেরাই খুঁজে বেড়ায় ঘাস পুরন্ডি চালতা সিন্দুরি গাছ মাটি জল…
বিকাশ বলে- আসি…
অপরূপা বারান্দায় দাঁড়ায়। বিকাশ গাড়ির কালো কাঁচের ভিতর দিয়ে বারান্দায় দেখে অপরূপা হাত নাড়ায় … অপরূপা বুঝতে পারে না বিকাশ ওকে দেখে কিনা।
গাড়ি চলতেই বিকাশের কাছে ফোন আসে…
গাড়ি ছুটতে থাকে যথা সম্ভব তীব্র গতিতে। বিকাশ জানে গলাকাটায় যেতে ওর প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগবে। মাঝে মাঝে ফোন আসছে আর বিকাশের চোখের সামনে ফিল্ডের পুরো ছবি ভেসে উঠছে …
পাকা রাস্তা থেকে দক্ষিণ দিকে গ্রামের ফসলের খেতের আল দিয়ে আধ ঘন্টা হাঁটলে একটা বড় বাঁশঝাড় দেখা যাবে। ফসলের খেতের ডানে বাঁয়ে আর বাঁশ ঝাড়ের পিছনে কাঁচা পাকা ঘরের নদীর মতো আঁকা বাঁকা গ্রাম। গ্রামের পুবদিকে একটা ছোট নদী উত্তরের দূরের বন থেকে বের হয়ে দক্ষিণে বড় নদীতে গিয়ে মিশেছে। এখন নদীতে কোথাও কোথাও অল্প জল আছে কিন্ত স্রোত নেই। এখন এই নদী যেন নদী নয়, ছোট ছোট জলার মালা। বিস্তীর্ণ ফসলের খেত থেকে ধান কাটা হয়ে গেছে। জলের অভাবে সব খেতে শীতকালীন ফসলের চাষ হয়নি। নদী পাড়ের খেতগুলোতে মাঝ মধ্যে গমের চাষ হয়েছে। সকালে হারান চক্রবর্তী নদীর পাড়ে গিয়ে, এত সকালে নদীর মধ্যে মোষ দেখে অবাক হলেও গা করেনি। হারান তখন সকাল সকাল জরুরি কাজ সেরে আরামের জন্য উসখুস করছে। হারান দেখে মোষটি যেন ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। হারান নিজের কষ্ট সামলে প্রাণীটিকে ভালো করে দেখে। না। এতো মোষ নয় - অন্য কোন প্রাণী মনে হছে। নিশ্চিত হতে হাঁক দিতেই প্রাণীটি হারানের দিকে তেড়ে আসে। হারান হাতের জলের বোতল ফেলে পড়ি মরি করে বাড়ির দিকে ছোটে। হারানের দৌড় দেখে প্রাণীটিও ওর পিছু নেয়। হারান হাঁপাতে হাঁপাতে ঘরে ঢুকে পড়ে। সাবিত্রী, হারানের স্ত্রী, কী হলো কী হোল বলে হৈ হৈ করে ঘরের বাইরে বেরুতেই গাউরটি ওকে শিঙ দিয়ে গুঁতো মেরে দেয়। দেখতে দেখতে গ্রামে হৈ হৈ কাণ্ড লেগে যায়। হৈ-চৈ আর উদভ্রান্তের মত গ্রামের মানুষগুলো নিজেদের কাজকর্ম ভুলে চারদিক থেকে হারানের বাড়ির দিকে ছুটে আসতে থাকে। চারদিক থেকে চাক ভাঙা মৌমাছির মত ধেয়ে আসা লোকজনেদের হৈ হল্লা চিৎকার চেঁচামেচিতে গাউর ঘাবড়ে যায়। ঘাবড়ে গিয়ে এদিক ওদিক ছুটতে থাকে ফাঁকা মাঠে। কিছু লোক গাউরের পিছু নেয় আর কিছু মানুষ দেখতে যায় হারানের স্ত্রী’কে। কিছু ছেলে হারানের স্ত্রী’কে মারুতি ভ্যানে তুলে নিয়ে চলে যায় স্থানীয় হাসপাতালে। অন্যদিকে ভীত সন্ত্রস্ত গাউরটি লোকের তাড়া খেয়ে একটা সুপারি বাগানে গিয়ে বসে পড়ে। ইতি মধ্যে গ্রাম থেকে লোক মারফৎ খবর যায় কাছাকাছি রেঞ্জ অফিসে। সেখান থেকে খবর যায় মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাত ব্যবস্থাপক রেঞ্জে।
হাজার হাজার মানুষ ঘিরে ফেলে সুপারি বাগান। চারদিকে মানুষের হৈ হট্টগোল। আর শুরু হল কিছু লোকের ঢিল ছোঁড়াছুড়ি। গাউরটি যেন অন্য গ্রহের প্রাণী। একটু জিরোবার জো নেই। সারা গ্রামের একটাও মানুষ নেই যারা গাউরকে একটু শান্তি দেবে বা হারানকে সান্ত্বনা দেবে। সবাই কেমন যেন এক উন্মাদ উল্লাসে মেতে উঠেছে। গ্রামের সব লোকজন ঘর খালি করে সুপারি বাগানের দিকে ছুটছে। সুপারি বাগানে যেন কোন সার্কাস বসেছে। গ্রামের মানুষের কোন ধারণা নেই যে গাউর কী ভয়ানক হতে পারে। ধারণা হবেই-বা কী করে। বন থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে এই গ্রামে যে কোন দিন কোন বন্য প্রাণী আসেনি। অনেকেই তো এই প্রাণীটির নামই জানে না। কেউ কেউ এই প্রাণীটিকে বুনো-মোষ ভাবছে। সুপারি বাগানে আপাত বসে থাকা প্রাণীটিকে অনেকের খুব নিরীহ মনে হচ্ছিল। কিছু অত্যুৎসাহী লোক প্রাণীটিকে ছুঁতে চায়। লোকজনের অত্যাচারে প্রাণীটি হঠাৎ এমন ছুট লাগালো যেন মনে হলো গাউরটি ভীম বেগে লোকগুলোকে আক্রমণ করে। গাউরের দৌড়ে লোকজন এমন ছোটাছুটি শুরু করে দিল যে লোক-জনের পায়ে চাপা পড়ে লোক-জনের মৃত্যু হবার উপক্রম। দুই জন মহিলা তো বড় কপাল জোরে বেঁচে গেল। গাউরটি ওদের শরীরের উপর দিয়ে লাফ দিয়ে চলে যায়। যদি কোন ক্রমে গাউরের খুর মহিলদের শরীরে পড়ত, মহিলাদের মৃত্যু অবধারিত ছিল। গাউরটি ছুটতে ছুটতে গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে একটি বড় বাঁশঝাড়ে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। গাউরের এই ভীম গতি ও ভয়ঙ্কর রুদ্র মূর্তি দেখে তামাসায় ভঙ্গ পড়ে। এবার খোঁজ পড়ে বন দপ্তরের আর হারানের বৌএর। জটলা শুরু হয় হারানের বাড়িতে আর কিছু লোকজন আবার পিছু ছাড়তে নারাজ গাউরের। তারা ভিড় করে বাঁশ ঝাড়ের চার পাশে। খবর পেয়ে এসে পড়েন মাস্টারদা। এলাকার শিক্ষক ও সমাজসেবী। মাস্টারদা খবর দেয় হারানের বৌকে গ্রামের হাসপাতাল থেকে সদরে পাঠানো হয়েছে। অবস্থা নাকি ভালো নয়। সন্তানহীন হারানের একমাত্র অবলম্বন ওর স্ত্রী। গ্রামের শিশুর নামকরণ থেকে শ্রাদ্ধ সবের এক মাত্র সাধন হল হারাধন। সেই হারাধনের বৌ’র অবস্থা খারাপ শুনে গ্রামের লোকের মনের রাগ ক্ষোভ দাবানলের মতো জ্বলে উঠল। সবাই বন দপ্তরকে গালাগালি করে তুলোধুনো করছে। গ্রামের লোকজন ভাবছে বন দপ্তর যেন ইলেক্ট্রিক বাল্ব। সুইচ দিলে আলো জ্বলে ওঠার মতো এসে হাজির হবে। গ্রামের মানুষের তেমন দোষ কী। তারা জানে আগুন লাগুক বা না-লাগুক দমকল বিভাগের কর্মচারী তো সারাদিন রেডি হয়ে বসে থাকে। তাহলে বনদপ্তরও তাই। তাদের এত দেরি কেন হয় আসতে। অনেকের মতো এই গ্রামের লোকজনদের ধারণা নেই যে বন দপ্তরের একই লোক দিন রাত্রি কাজ করে। কোন ডিউটি পিরিয়ড নেই। দিনে রাতে একই স্টাফ সাইকেলের চাকার মতো ঘুরছে। সব স্তরে শুধু হুকুম আর হুকুম। হুকুম তামিল করতে করতে যেন হুক্কাপানি যায়। ঘরে বাইরে জায়গা মেলেনা মনের, শরীরের। এর মধ্যে মাস্টারদার কিছু বিচক্ষণ বুদ্ধিদীপ্ত শব্দ লোকজনকে আরো উত্তেজিত করে তুলছে। আবার সেই মাস্টারদা’র উপর ভরসা করে, প্রশাসনের উপর ভরসা করে বনের কর্মীরা গেছে, গ্রামের মানুষকে অনাহুত বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে।
বিকাশ – হ্যালো হ্যালো … কে নিলয়। কী হয়েছে। হাঁপাচ্ছ কেন।
-স্যার বাঁচান।
-কেন কি হলো।
-স্যার, আমরা যেতে না যেতেই কিছু লোক রে রে করে তেড়ে এল। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করলাম। কেউ কিছু বুঝতে চাইছিল না। সবার এক কথা - কেন দেরি হল।
নির্মলবাবু বলছিল ‘ঠিক আছে আমরা তো এসে গেছি। কাজ করতে দিন। আমরা ঘুম পাড়ানি গুলি করে গাউরটি নিয়ে যাব’। মাস্টারদাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে আহত মহিলা কেমন আছেন।
-তারপর?
-আহত মহিলার কথা বলতেই আবার কিছু লোক রে রে করে তেড়ে এল আমাদের মারার জন্যে। বলে - এতক্ষণে মনে পড়ল আহত মহিলার কথা। এতক্ষণ কোথায় ছিলে। শুনে রাখ বাবু, বৌদির কিছু হলে সব কয়টাকে এখানেই পুঁতে রাখব।
-তারপর?
-স্যার, আর তক্ষনি কিছু লোকের অত্যাচারে গাউরটি আবার ছুটতে লাগল। আর তক্ষনি অনেক লোক গাউর ছেড়ে আমাদের দিকে লাঠি-সোটা নিয়ে ছুটে আসতে থাকে আমাদের মারতে। আমার পিঠে একটা কিসের যেন জোর বাড়ি পড়ে। আমি কোন মতে ট্র্যাংকুইলাজিং গানটা বাঁচিয়ে একটা খালি বাড়িতে এসে ঢুকে বসে আছি। কেউ দেখেনি। শুনতে পাচ্ছি ওরা আমাদের খুঁজছে। আর কে কোথায় গেছে জানি না। আপনি তাড়াতাড়ি কিছু ব্যবস্থ করুন।
বিকাশ নিলয়কে আশ্বস্ত করে বলে- তুমি চুপ করে থাক; আমি এই এসে গেলাম।
-আপনি আসছেন স্যার।
-হ্যাঁ।
বিকাশ একা পৌঁছে যায় গলাকাটায়। পুরো ফসলের খেতে যেন মেলা বসেছে। বিকাশের উচ্চতা ওখানকার মানুষদের থেকে একটু বেশি। তাই বিকাশকে যেমন সবাই দূর থেকে দেখতে পাচ্ছে তেমনি বিকাশও দূর থেকে অনেককে দেখতে পাচ্ছে। বিকাশ অনেক লোকজন দেখে কিন্তু একজন মানুষও দেখে না। কিছু লোক হৈ হৈ করে তেড়ে এলেও বাঁধ ভাঙ্গা জলের মত বিকাশের কাছে আসতে আসতে চার পাশে ছড়িয়ে গেল। কিছু লোক বিকাশকে একা এই বিক্ষুব্ধ লোকজনের মধ্যে আসতে দেখে, বিকাশের সাহসিকতার কাছে পরাস্ত হয়ে প্রিয় পোষা কুকুরের মতো লেজ নাড়িয়ে 'স্যার স্যার' করে যাওয়ার রাস্তা করে দিচ্ছিল।
বিকাশ জানে শালের তিন শ’সাল আর শালসিঁড়ির সৈনিকদের মুহূর্ত মুহূর্তই এক একশ সাল। মুহূর্ত লম্বা হলে তাতে ভয় নামক পোকা বসে। ভয়ে তো জয় হয় না। তাই বিকাশের কখনো ভয় হয় না। কারণ ও ভয় পাওয়ার মতো কোন কাজ করে না। বিকাশ জানে বন থেকে গাউর বাইরে আসাতে ওর বা ওর সহকর্মীর কোনো হাত নেই। আর বন থেকে কখন বন্যপ্রাণ বের হবে তার পূর্বানুমান করার বিজ্ঞান কারো জানা নাই। তা হলে ভয় কীসের। বিকাশের যুক্তি বিকাশের সাহস। বিকাশের সাহস বিকাশের অস্ত্র। তাই সে একা আসে একা হেঁটে যায়।
হাঁটতে হাঁটতে এক জন গ্রামবাসী বলে – স্যার ঐ যে, আপনাদের গাড়িটা, কতগুলো লোক ঠেলে উল্টে ফেলে রেখেছে।
-কেন?
-কেন স্যার। হুজুগ।
-কারা কারা ছিল।
এক গ্রামবাসী বলে- কাউকে বলবেন না স্যার। নিবারন, ধিরেন, সুরেশ আর ওর সাঙ্গপাঙ্গ…
-মাস্টার কোথায় ছিল?
-আর মাষ্টরদার কথা বলবেন না। তিনিই তো শাঁকের করাত। এদিকেও কাটে ওদিকেও কাটে…
বিকাশ কথা বাড়ায় না। ফসলের খেতের মধ্যে দিয়ে হেঁটে গ্রামের দিকে যায়। গ্রামের মধ্যে মাঝে মাঝে মৌমাছির চাকের মত মানুষের জটলা দেখা যায়। বিকাশ জিজ্ঞাসা করে- গাউরটি কোথায় আছে?
-গৌর? বুনো মোষটা? সেটা তো আবার ছুটে গিয়ে ঐ বাঁশঝাড়ে বসে আছে।
-আর আমাদের স্টাফরা কোথায় আছে?
-আছে স্যার আছে। আমরা এই কয়জন সবাইকে লুকিয়ে রেখেছি। না হলে পাবলিক যেরকম ক্ষেপে গেছিল, মেরেই ফেলত। আমাদের একটু দেখবেন স্যার।
বিকাশ কিছু বলল না। বিকাশের মনে হল – সিংহের শিকার হায়না চুরি করেছে। ভাবনা এমন, কিছু না হোক হাড়হাড্ডি যদি চিবাতে পারে। বিকাশ নিলয়কে ফোন লাগায়…
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴