লাল পরী-৯/মধুপর্ণা রায়
লাল পরী/৯
মধুপর্ণা রায়
মেয়েটা ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। নাইটির বোতাম আটকাচ্ছে। বলল:-- তুমি এবার খেয়ে নাও। রাত কত হল? উরিব্বাস! চাঁদের কী ফাটাফাটি মাইরি! ও চাঁদ সামলে রাখ জ্যোছনাকে.... কারো নজর লাগতে পারে....
শাক্য চমকে গেল। কী চমৎকার সুরেলা গলা!
:-- এত সুন্দর গাইতে পার তুমি?!
:-- কেন? বেশ্যারা গাইতে পারে না?
:-- গাও তো শুনি।
মল্লিকা চুপ হয়ে গেল। ঘরে ওর সেল বাজছে।
------ হ্যাঁ প্যাঙ্কা বল।...... কী?! কাকে?! শ্যামাকে? ও শালীকে বার বার বলেছিলাম। মারলটা কারা? তপাদের দল?....... ও ভূতোরা? এন জি ওর বালগুলোকে কি বসে বসে ডাটাচচ্চড়ি মারছে? আর ওই পুলিশ? কী করছে? প্যাঙ্কা... দল বাঁধতে বল সবাইকে। বারফাট্টাই আমাদের সাথে চলবে না। আগে যাই..... এখন রাখছি.... যা বললাম তাই কর...
ফোন কেটে দিল মল্লিকা। বলল:-- গান ফান আমাদের জন্যে না৷ বুঝলেন? শ্যামাকে ভূতোরা মেরেছে। মাগীকে বার বার বলেছিলাম- ওসব চক্করে যাস না।
:-- শ্যামাকে মারল কেন?
ততক্ষণে রাতের খাবার এসে গেছে। সেদিকে তাকিয়ে মল্লিকা বলল:-- খেয়ে নিন।
কথা বলল না শাক্য। খেতে খেতে অন্যমনস্ক হয়ে রইল। মল্লিকা বলে গেল:-- শ্যামাটা মেয়ে পাচার বন্ধ করবে বলে উঠে পড়ে লাগল। কো- অর্ডিনেটর হল। ওর মা দিদিমা সবাই লাইনের ছিল। ও লাইনে নামল না। ছোটখাটো দোকান চালাত। দোতলা বাড়ি আছে। লাইনের মেয়েরা ভাড়া থাকে। দিব্যি চলছিল। গাড্ডায় পড়লে যা হয়। এখন হাসপাতালে। বাঁচে কিনা! আপনি খান। আমি শুয়ে পড়লাম।
ঘরে চলে গেল মল্লিকা।
ঘরে ঢুকে শাক্য দেখল, অঘোরে ঘুমোচ্ছে মেয়েটা। শান্ত মুখ। অথচ কত রাত ঘুমোয় না শাক্য। বুকের মাঝখানে অস্থির বাতাস! বালিশে মাথা ছোঁয়াতেই ঘুমিয়ে যেত মধুমন্তী। ওর সমস্ত দিনের অস্থিরতা থেমে গেছে.... দেখত শাক্য। ঘুম থেকে ডেকে দিলে ভীষণ রেগে যেত শেষের দু' বছর। শাক্যর থেকে বিচ্ছিন্ন করছিল নিজেকে। পারছিল বলেই বোধহয় ঘুমিয়েও পড়ত। মধুমন্তী একসময় বড় নির্ভরশীল ছিল। থাকতে চাইত। ছ'টা বছর মাত্র! মল্লিকার বিধ্বস্ত, যন্ত্রণাময় জীবনের তলানি কি তবে কোথাও সুস্থির? এমন নিশ্চিন্তে ঘুমোয় কি করে সে?
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴