সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
23.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/২৩

23.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/২৩

22.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/২২

22.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/২২

21.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/২১

21.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/২১

20.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/২০

20.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/২০

19.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১৯

19.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১৯

18.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১৮

18.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১৮

17.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১৭

17.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১৭

16.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১৬

16.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১৬

15.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১৫

15.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১৫

14.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১৪

14.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১৪

13.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১৩

13.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১৩

12.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১২

12.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১২

11.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১১

11.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১১

10.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১০

10.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১০

9.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/৯

9.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/৯

8.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/৮

8.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/৮

7.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/৭

7.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/৭

6.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/৬

6.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/৬

5.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/৫

5.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/৫

4.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/৪

4.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/৪

3.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/৩

3.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/৩

2.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/২

2.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/২

1.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১

1.বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/১

20-December,2022 - Tuesday ✍️ By- মিশা ঘোষাল 342

বাংড়ি তিতি হাউড়ি শেষে/৯

বাংড়ি তিতি ও হাউড়ি শেষে
পর্ব : ৯
মিশা ঘোষাল
++++++++++++++++++

টোটোপাড়ার হাট

      
হাট বসেছে মঙ্গলবারে
বাংড়ি তিতি হাউড়ি পেরিয়ে
সে এক অদ্ভূত বিকিকিনি !
বিনিময়ে মেলে অনেক কিছু-
সুপারি,এলাচ,লঙ্কা লেবু 
এ প্রথা এই আদিম টোটো ভূমির !!
 
বর্তমানে টোটোপাড়ায় টাকা পয়সার বিনিময়ে কেনাকাটা চললেও একসময় এখানে শুধুমাত্র বিনিময় প্রথার মাধ্যমেই বিকিকিনি চলতো। এখনও টোটোপাড়ার কিছু কিছু অঞ্চলে রয়ে গেছে এই 'বিনিময় প্রথা'র চল। এই যেমন গেরে টোটো তার বাড়িতে কিছু আনারসের চাষ করেছিল। ওর বাবা বাড়িতে খাবার জন‍্য কিছু আনারস রেখে বাকি সবগুলি আনারস বিক্রি করে দিয়েছিল। কিন্তু বিনিময়ে টাকা-পয়সা না নিয়ে নিয়েছিল কালো নুনিয়া ধানের একটি বস্তা। অর্থাৎ রোহিত টোটোর ক্ষেতে যে কালো নুনিয়া ধানের ফলন হয়েছিল, সেখান থেকে এক বস্তা ধান দিতে হয়েছিল গেরেকে, বিনিময়ে তাঁর জমির আনারসগুলো দিয়ে দিয়েছিলেন রোহিতকে তিনি। এভাবে টোটোপাড়ায় এখনো বিনিময় প্রথার মাধ‍্যমে বিকিকিনি চলে। 
    এখানে উল্লেখ করতেই  হয় যে, টোটোপাড়ার আনারস সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের হয়। এই আনারস যেমন সুগন্ধী তেমনি সুমিষ্ট। আর কালো নুনিয়া ধানের চালও ভোগ ধানের মতোই সুগন্ধি ও একটু অন‍্যরকম সুঘ্রাণে ভরপুর। আমাদের পায়েস খাওয়ার জন‍্য বিশেষ উপযোগী হল এই কালো নুনিয়া ধানের চাল। প্রতি বছর কম বেশি দু'তিন কেজি করে এই কালো নুনিয়ার চাল কিনে নিয়ে আসি আমরাও এখানকার টোটোপাড়ার হাট থেকেই।
প্রতি মঙ্গলবার টোটোপাড়ায় হাট বসে। সবুজের মখমলি চাদরে ঢাকা পাহাড়ের কোলে রকমারী পোশাকের রঙবাহারী আলোয় ঢেকে যায় টোটোপাড়ার এই তেমাথা তখন। এই তেমাথার মোড়েই রয়েছে 'উত্তরঙ্গ ক্ষেত্রিয় গ্রামীণ ব‍্যাঙ্কে'র একটি শাখা। টোটোপাড়ার বিশিষ্ট সমাজসেবী অশোক টোটো যিনি টোটো কল‍্যাণ সমিতিরও একজন গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী ব‍্যক্তি ও সদস‍্য, তাঁর বাড়ির নীচের তলা ভাড়া নিয়ে টোটোপাড়ার এই একমাত্র ব‍্যাঙ্ক 'উত্তরবঙ্গ ক্ষেত্রিয় গ্রামীণ ব‍্যাঙ্কে'র শাখাটি আজও চলছে। 
এই তেমাথার মোড়ে কয়েকটি স্থায়ী দোকানও রয়েছে। রয়েছে কয়েকটি মুদিখানার দোকান ও এক-দু'টি চায়ের দোকানও। একটি হোটেলও আছে টোটোপাড়া বাজারের এই তেমাথায়।
এখানে হাট জমে উঠতে শুরু করলে কখন যে রঙে রঙে ভরে যায় এই তেমাথার মোড়ের অলিগলি, বোঝাই যায় না।
আস্তে আস্তে দোকানপাট বসতে শুরু করে খুব সকাল থেকেই এই মঙ্গলবারের হাটে।  
দোকানিরা কেউ কেউ সুবিধা মতো গাড়ির ব‍্যবস্থা করে হাটের আগের দিনই টোটোপাড়ায় চলে আসে বিকেলেই। এখানে থাকার ব‍্যবস্থাটুকু অনেকেই করে রাখেন তারা, টোটোপাড়ায় ব‍্যবসা করতে আসা দোকানদাররা। হরেকরকম জিনিসের রকমারি সাজে ঢেকে যায় টোটোপাড়ার এই বাজার লাইনের রাস্তা তখন। গোলাপী লেবু লজেন্স থেকে গোলাপি হাউই, চকলেট, ল‍্যেবেনজুস, টক-ঝাল আচাড়, চানাচুর, ঝুরিভাজা, খুরমা, পাপড়ি চাট ইত্যাদি ও পেপসির হরেক রকম রঙ লেগে যায় টোটোপাড়ার বাচ্চা ছেলেমেয়ের মুখে ও ঠোঁটে। কারো কারো হাতে থাকে খেলনাপাতি তো কারও হাতে খুরমা-খেজুর।
আর মেয়েদের কারো হাতে মেকআপের জিনিসপত্র, চুড়ি, ক্লিপ, লিপস্টিক। মেয়েদের এদিন  তাড়াহুড়ো করে টোটোপাড়া বাজারের দিকে ছুটতে দেখা যায়। যখন তাদের হাতে টিপের পাতা, চুড়ি ও আধুনিক সাজসজ্জ্বার উপকরণ সহ সবার খুব হাসি হাসি মুখ-
তখন বুঝে নিতে হবে 
'আজ মঙ্গলবার',
'টোটোপাড়ার হাট'!
টোটোপাড়া বাজার লাইনের তেমাথার অনেকটা এলাকা জুড়ে ভোরের আলো ফুটতেই সারাদিন যেন উড়ে বেড়ায় ব‍্যস্ততার খোলা চিঠি!
নৈশব্দের রেশ কাটিয়ে টোটোপাড়ার আকাশে বাতাসে যখন একটু কথা বলার আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়,সারা সপ্তাহের খাদ্যের সন্ধানে নেমে আসা পাহাড়ের গায়ে বসত করা টোটোপাড়ার মানুষ জন যখন ভীড় করে বক্তব্যের পর ব‍্যক্তব‍্য রাখে জটলা করে, তখনও বুঝে নিতে হবে আজ টোটোপাড়ার হাট!
এই আনন্দের রঙ ছুঁয়ে যায় কচি কাঁচাদের খুব বেশি করে। সেদিন যেন দুপুরের পর থেকেই  হুড়োহুড়ি,ছুটোছুটি লেগে যায়। মঙ্গলবার টোটোপাড়ায় সবকিছু যেন হাফ হলিডে হতে হতেও হয় না ! অফিস টাইম অর্ধেক পেরোতে না পেরোতেই আমাদের স্টাফ কোয়ার্টারের গ্রুপ ডি কর্মী সন্ধ‍্যা দি এসে হাজির হয় দরজার সামনে। হাতে বাজারের ব‍্যাগ নিয়ে এসে দাঁড়ায় স্কুলের অফিস ঘরের দরজায়। 
বলে,"ম‍্যাডাম,একটু বাজার করে নিয়ে আসি গিয়ে, আপনার তো যেতে দেরী আছে, আমি ফিরে এসে অফিস, ক্লাসরুম সব বন্ধ করে দেব।"
কী আর বলি! আমার মৌনতা লক্ষ‍্য করলে দিদি আবার বলে, "ম‍্যাডাম যদি আপনার যাবার সময় হয়ে যায় আর তখনও যদি আমি না ফিরে আসি তবে আপনি দরজাটা একটু ভেজিয়ে রেখে যাবেন, আমি ফিরে এসে সব বন্ধ করে দেব।"
   মঙ্গলবার টোটোপাড়ায় ছাত্রছাত্রীদেরও যেন অলিখিত ছুটি হয়ে যায় বিকেল আড়াইটার পর থেকে। টিফিন পিরিয়ডের পর থেকেই এক এক করে যাওয়া শুরু হয় এদিন। এদিক ওদিক দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা কেউ কেউ লুকিয়েই এদিন চলে যায়। কেউ কেউ বলেও যায় অর্থাৎ পারমিসান নিয়েই চলে যেতে থাকে এদিন। 
যেতে না দিলে পাঁচিল টপকে, ছাদ থেকে লাফিয়ে নেমে যাওয়াও চলে। পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গার্লস হোস্টেলের সামনে দিয়ে ঘুরে গিয়ে সোজা  রাস্তায় গিয়ে ওঠে ওরা। তারপর লাগায় ছুট! এমনকি আমাদের স্কুলের ছাদের লাগোয়া যে সুপারি গাছগুলো রয়েছে সেই গাছে লাফিয়ে উঠে তারপর ঐ সুপুরি গাছ বেয়ে নীচে নেমে যায় কিছু ছেলে তারপর রাস্তায় নামে ঐ 'টারজান' কায়দায়! অবাক হওয়া ছাড়া আর কীই বা বলার থাকে তখন! মঙ্গলবার ছাত্রছাত্রীদের এসব অ‍্যাডভেঞ্চার লক্ষ‍্য করে ওদের আর মঙ্গলবার জবরদস্তি করে ক্লাস নেওয়ার জন‍্য আটকে না রেখে ছুটি চাইলেই ছুটি দিয়ে দেওেয়া হতো। কারণ এইসব গাছে ঝুলে,ছাদ থেকে লাফিয়ে 'দে ছুট' করতে গিয়ে যদি কারও হাত,পা ভাঙে তো মহা বিপদ হবে! এই ভেবে মঙ্গলবার পাঁচ/ছয় পিরিয়ডের পর ছুটির ঘন্টা দিয়ে দিতে বলতাম। এ এক অদ্ভূত কান্ড দেখতে পেয়ে মঙ্গলবার আর জোর করে ওদের ধরে রাখতাম না আমারা স্কুলে। মঙ্গলবার সেইজন‍্য কখনও পাঁচ পিরিয়ডের পরই স্কুল ছুটি দিয়ে দিতে হতো। হস্টেলের ছেলে মেয়েরা এসে বলত, "ম‍্যাম,হস্টেলের বাজারের জন‍্য সুপার আমাদের সবাইকে ডেকেছেন। বড় বড় ব‍্যাগ হাতে ছুটতে দেখা যেতো এদিন আমাদের বয়েজ ও গার্লস হস্টেলের রাধুনী ও হেল্পারদের । 
টোটোপাড়ার হাটে বিকি কিনি চলত দিনভর। ছাত্রছাত্রী, মাস্টারশাই, হস্টেলের পড়ুয়া, হস্টেল সুপার, ব‍্যাঙ্ককর্মী, হসপিটালের নার্স, আই সি ডি এস কর্মী, আশাকর্মী আর টোটোপাড়ার মানুষ জন সবাই টোটোপাড়ার এই সাপ্তাহিক হাট থেকেই নিত‍্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নিতে অভ‍্যস্ত । এই একটি দিনের জন‍্য তাঁরা অপেক্ষা করে তাঁকিয়ে থাকে যেন! সারা সপ্তাহের রসদ গুটিয়ে নেওয়া চাই এই সাপ্নাহিক হাট থেকেই ।
    মাদারিহাট থেকে সকাল সকাল যে বাসটি ছেড়ে টোটোপাড়ায় আসে প্রতিদিন,সেই বাসে হাঁস,মুরগিরাও চাপে। খাবারের নিত‍্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও ব‍্যাবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে ঠাসা এই বাসটি ঠিক আটটার সময় ছাড়ে মাদারিহাটের সেন্ট্রাল ব‍্যাঙ্কের সামনে থেকে।'মৌসোনা' নামের এই বেসরকারী বাসটিতে যাতায়াত করে টোটোপাড়ার অফিস স্টাফরাও। প্রাইমারি ও আপার প্রাইমারীর কিছু স্কুল-শিক্ষক, টোটোপাড়ার নিত‍্যযাত্রীরাও চলাচল করে এই বাসটিতে। বাসটি চলে বাংড়ি তিতি হাউড়ি পেরিয়ে, ঠাসা খাবারের রসদ নিয়ে। দোকানদার, আইসক্রিমওয়ালা, কুলফিওয়ালা,
ঔষধের হোলসেলার, জামাকাপড়ের দোকানদার সবাই উঠে পড়ে বাসটিতে টোটোপাড়ার এই হাটে বিকিকিনির সরঞ্জাম নিয়ে। এমনকি বাসটির উপরের ছাদে ও পেটের বাক্সে পোলট্রির মুরগিগুলিকে একসাথে পা বেঁধে রেখে দিতে দেখা যায় টোটোপাড়ার হাটে নিয়ে যাবার জন‍্য। 
এই রাস্তার জামতলা, আই ও সি, হান্টাপাড়া, হল্লাপাড়া, ভগোজ‍্যোৎ, ফরেস্ট বিট, ট্রলি লাইন থেকেও কিছু মানুষ সেখানকার লোকাল সবজি ও তোর্ষা নদীর মাছ কলাপাতায় মুড়িয়ে ভাগা বেঁধে নিয়ে ওঠে এই বাসে। কখনো কখনো বাসটির যাত্রাপথের স্টপেজগুলি থেকে মুজনাই ও তোর্ষার মাছ সুটকি করা সেই মাছ, শাকসবজি, ঢেকি শাক, রাই শাক, কচু ইত্যাদি নিয়েও বাসে উঠতে দেখা যায় এখানকার আদিবাসী মহিলাদের। 
     এই "মৌসোনা" বাসটি বেশ উঁচু ও বেশ বড়ো ধরনের । এর গড়নও বেশ শক্তপোক্ত ও মজবুত।টোটোপাড়ার পাথুরে পথে চলার জন‍্যই 'মৌসোনা'র মালিক বাসটিকে শুনেছি বিশেষ ভাবে উঁচু করে বানিয়েছেন,যাতে বাঙড়ির খাড়া নদী-পথ পার করে তিতির ডলোমাইটের কাদাজল সরিয়ে হাউড়ির পাথরের আঘাত থেকে রক্ষা পেয়ে গাড়িটি ভালোভাবেই টোটোপাড়ায় পৌঁছে যেতে পারে। বাসটিতে আমারাও চাপি কখনো সখনো। স্কুল সময়ের অনেক আগেই বাসটি পৌঁছে যায় টোটোপাড়ায়, সকাল নয়টা-সোয়া নয়টাতেই। তাই স্কুলের সময়মতো না হওয়ার কারণে আমরা বেশিরভাগ সময়ই আমাদের হাই স্কুলের সব স্টাফরা একত্রিত হয়ে একটি জিপ ভাড়া করে স্কুলে যাতায়াত করি।
বর্ষাকালে এই বাসের কন্ডাক্টরদা কোদাল, বেলচা, দা, খোন্তা ইত‍্যাদি সাথে করে নিয়ে ওঠে বাসটিতে। আর সবসময় দরজার পাশে রেখে দেয় এসব। বর্ষাকালে এই কোদাল খোন্তাই খুব  কাজ লাগে এই রাস্তায় চলার পথে। বলতে গেলে সবসময়ই এসব কাজে লাগে এই পথে। চলতি পথে হঠাৎ বর্ষা নামলে হঠাৎই সামনে দেখা দেয় ভাঙা রাস্তা ও খাড়া রেইনকাট। সেইসময় ইন্সট‍্যান্ট রাস্তা বানিয়ে নিয়ে নদীপথে বাসটিকে চালিয়ে নিয়ে যেতে হয় বাসের স্টাফদের। ভরা বর্ষায় টোটোপাড়ার রাস্তা দুমড়ে মুচড়ে দ্বিখন্ডিত হয়ে গেলে তখন কিছুদিন বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায় । তখন টোটোপাড়ার হাট ভালোভাবে বসতে পারে না। এই সময় যদি কোনো পিক-আপ ভ‍্যান বা কোনো ছোটো গাড়ি মালপত্র নিয়ে টোটোপাড়ায় পৌঁছতে পারে তবেই হাট বসে। নইলে টোটোপাড়ার হাটও অচল পয়সার মতো  অচল হয়ে যায় । ভূটান পাহাড় থেকে কিছু শাক সবজি নেমে আসে সেইসময় । ডোকোয় করে (মাথায় পরা বাঁশের ঝুড়ি) নেপালি,লেপচা,তামাং ও ভূটিয়া মহিলারা শাকসবজি নিয়ে নেমে আসে টোটোপাড়ার এই হাটে কিছু রোজগারের আশায়।
সপ্তাহে শুধুমাত্র এই একদিনই টোটোপাড়ায় হাট বসে, সেই দিনটি মঙ্গলবার। কিন্তু বর্ষাকালে নদী-রাস্তা ভেঙে গেলে মাদারীহাট থেকে পণ্যবাহী লড়ি ও ছোটো গাড়ি টোটোপাড়ায় ঢুকতে না পারলে বাজার বন্ধের উপক্রম হয়। টোটোপাড়ায় উৎপন্ন কিছু শাক,তরকারি,লঙ্কা,লেবু আর উপরের পাহাড় তথা ভূটান থেকে নামে কিছু নির্ভেজাল শাকসবজি আর পাহাড়ি মুরগি ও শূকর। শূকরের মাংসও চলে এখানে, সাথে থাকে 'ইউ' অথবা 'হাড়িয়া'। ডেচকিতে করে 'হাড়িয়া' ও 'ইউ' নিয়ে বিক্রির জন‍্য বসে থাকতে দেখা যায় কিছু মহিলা ও পুরুষদের এই হাটের রাস্তায় ।  
টোটোপাড়ার এই হাটে ফলমূলও নিয়ে আসে স্থানীয়রা বিক্রির জন‍্য। ফলমূলের মধ‍্যে কমলালেবু,কলা,মুসাম্বি ও আনারস অন্যতম। মাথায় ডোকো পরে  টোটো,নেপালী ও ভূটানী মহিলারা এইসব ফল নিয়ে আসে টোটোপাড়ার বাজারে বিক্রির জন‍্য।রকমারী ফল ছাড়াও টোটোপাড়ার মাটিতে উৎপন্ন  নিজস্ব ফসল যেমন- এলাচ, গোলমরিচ, আদা, সুপারি, মারুয়া, মেম্বে(ভুট্টা), ধান, চাল, শিমূল আলু, ভূটানী আলু ইত‍্যাদি সহ আরও অনেক কিছু খুচরা ও পাইকারি হারে বিক্রির জন‍্য টোটোপাড়ার হাটে আসে। ভিড় জমে ওঠে। আদিম পটভূমিতে আমদানি ও রপ্তানির এই 'টোটোপাড়ার হাট' যার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক তাৎপর্য রয়েছে আগামীর ইতিহাসে সে কথা লেখা হবে টোটোপাড়ার গল্পকথার পাতায় পাতায়।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri