সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
25.তোর্সার ঘরবাড়ি-২৫

25.তোর্সার ঘরবাড়ি-২৫

24.তোর্সার ঘরবাড়ি-২৪

24.তোর্সার ঘরবাড়ি-২৪

23.তোর্সার ঘরবাড়ি-২৩

23.তোর্সার ঘরবাড়ি-২৩

22.তোর্সার ঘরবাড়ি-২২

22.তোর্সার ঘরবাড়ি-২২

21.তোর্সার ঘরবাড়ি-২১

21.তোর্সার ঘরবাড়ি-২১

20.তোর্সার ঘরবাড়ি-২০

20.তোর্সার ঘরবাড়ি-২০

19.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৯

19.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৯

18.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৮

18.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৮

17.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৭

17.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৭

16.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৬

16.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৬

15.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৫/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

15.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৫/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

14.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৪/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

14.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৪/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

13.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৩/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

13.তোর্সার ঘরবাড়ি-১৩/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

12.তোর্সার ঘরবাড়ি-১২/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

12.তোর্সার ঘরবাড়ি-১২/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

11.তোর্সার ঘরবাড়ি-১১/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

11.তোর্সার ঘরবাড়ি-১১/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

10.তোর্সার ঘরবাড়ি-১০/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

10.তোর্সার ঘরবাড়ি-১০/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

9.তোর্সার ঘরবাড়ি-৯/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

9.তোর্সার ঘরবাড়ি-৯/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

8.তোর্সার ঘরবাড়ি-৮/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

8.তোর্সার ঘরবাড়ি-৮/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

7.তোর্সার ঘরবাড়ি-৭/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

7.তোর্সার ঘরবাড়ি-৭/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

6.তোর্সার ঘরবাড়ি-৬/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

6.তোর্সার ঘরবাড়ি-৬/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

5.তোর্সার ঘরবাড়ি-৫/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

5.তোর্সার ঘরবাড়ি-৫/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

4.তোর্সার ঘরবাড়িত-৪/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

4.তোর্সার ঘরবাড়িত-৪/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

3.তোর্সার ঘরবাড়ি-৩/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

3.তোর্সার ঘরবাড়ি-৩/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

2.তোর্সার ঘরবাড়িত-২/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

2.তোর্সার ঘরবাড়িত-২/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

1.তোর্সার ঘরবাড়ি-১/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

1.তোর্সার ঘরবাড়ি-১/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

তোর্সার ঘরবাড়ি-৯/মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

তোর্সার ঘর বাড়ি//নবম পর্ব
মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস
--------------------------------------

তোর্সা নদীর উতাল পাতাল কারবা চলে নাও/ সোনার বন্ধুর বাদে মোর কেমন করে গাও রে....

সন্ধে ঘনিয়ে এলে নদী পাড় জুড়ে গহন অন্ধকার। বাঁধে ওঠাও নিষেধ, সেই স্কুলবেলা পেরোল, কলেজ জীবন ঐ আলেয়ার বিজ্ঞানের ব‍্যাখ‍্যা, ফসফরাসের আলো এখন বেশ জেনে গেছে সেই ছোট্ট বয়সের ভয় নিয়ে বাস করা ক্ষুদের দল। তারা তো বড় অনেক বড় এখন। কালেভদ্রে বন্ধুদের বড় হয়ে ওঠা মুখ চোখে পড়ে জীবন পথে চলতে চলতে। ঐ আলেয়া আজো জ্বলে, ফস করে নিভেও যায়, এখন আর মিনিরা তেমন ভয় পায় না। বুকের খাঁচাটা অনেক দেখেছে যে। তিন বছর বয়স না হতেই মৃত‍্যুর সুতো বাঁধা উঠোনে গলা মিলিয়েছে হরির নামে। ধূপের গন্ধ, সন্ধের প্রদীপ, সদ‍্য বাবা হারানো জেঠুর ছেলেমেয়েদের হয়ে ওঠা দেখেছে, যন্ত্রণা দেখেছে। যৌথ বাড়ির অসহায় দিদিদের দেখেছে, যাদের অক্ষর পরিচয় হতে না হতেই, মেধাবী পারিবারিক কৃষ্টি সচেতন হয়েও বিয়ের পিঁড়িতে বসতে দেখেছে।তারপর সেই অন‍্য সংসারে তারা পুতুল খেলতে লেগেছে। ঐতো নদীরই একদিক থেকে অন‍্যদিক, কেউবা অন‍্য নদীর ধারে অন‍্য শহরে। একে একে ফুরিয়েছে ধীরে কালের গতিতে। তবু তো টুকরো কথাগুলো বসে থাকে বুকে। বয়স হলই বা তিনকুড়ি সত্তর পেরোলেও ভ্রূর কালো রঙ হালকা হতে হতে পিটপিটে চোখেও ভুলে যাওয়া সেই পাট পাট সুতির শাড়ির স্বপ্ন দেখে। স্বচক্ষে সামনে দেখে অঝোর বৃষ্টি বৈশাখের এক সাজসজ্জার দিন। নস‍্যি রঙের বেনারসিতে কি ভাল দেখাচ্ছে দিদিকে! বিনু দিদি। ঐ খুব সুষ্ঠু সংসার করায় একশোতে একশো পাওয়া মেয়ে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। একদিনের সে সাজিয়ে তোলা মখমলে আলপনার অদ্ভুত টান রঙিনে রঙিন। সম্পূর্ণ বাড়ির  উঠোন মুড়ে দেওয়া হয়েছে চন্দ্রাতপে। আকাশের ঘোর ঘনঘটা চোখে কি আর পড়ে নাকি? তোর্সার চরুয়া মানুষেরা আজ ধুয়ে কেচে রাখা শাড়ি কাপড় বের করেছে মিত্তিরদের বাড়ি যাবে বলে। কি কান্ড কি কান্ড! আকাশ কালো হয়ে জমজমাট। খুব দ্রুত সন্ধে হল যেন। বিনুদিকে কি ভালোই না লাগছে। ঘরে বসে কে আর টের পাবে মেঘগর্জন! ঘূর্ণাবর্ত শুরু হল। ঝড়  সঙ্গে দমকে বৃষ্টি। সবাই হায় হায় করছে, তখন সব শেষ। এমন সুন্দর সাজানো এত রঙিন আলপনা, সব ধুয়ে মুছে গ'লে ঐ তোর্সার দিকেই ধেয়ে যায়। উঠোনে পায়ের গোছ পর্যন্ত জল, বৃষ্টি কমে গেলে আর কি হবে!
মিনির বাবা অভিজিতের ছোটাছুটি তুঙ্গে। বাড়ির ক্ষুদেরা চোখে ঘুম নিয়েও বহুক্ষণ অপেক্ষায় ছিল, বিয়ে দেখবে বলে, সে আর হয় না অনেকেরই। দুচোখ ডুবে গেছে ঘুমে। এবার ছেলেমেয়েরা আধবোজা চোখের ফাঁকে দেখে নেয় মাটির বারান্দা জুড়ে ঠামির কালো রঙের জলচৌকি। তার উপর সাদা চালগুঁড়োর আলপনা। লগ্ন তো পেরিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। ঐ বড় চৌকির দু প্রান্তে দুজন বসলে পুরোহিত বিয়ের মন্ত্র উচ্চারণ করেন। ততক্ষণে ধুয়ে মুছে গেছে সাজ বিনুদিদির উৎকন্ঠা আর কান্না ভেজা চোখে। এক ঝলক ঘুম চোখ নিয়ে উঠে এসে দেখে গেছে মিনি পুনু। সাজানো ঘটের উপর বিনুদিদি আর বিনুদিদির বরের হাত দুটো নতুন গামছায় ঢাকা। বারান্দায় চলছে পুরোহিতের মন্ত্র। ঝর ঝর বৃষ্টি বাইরে। ওখানেই বিয়ে শেষ না হতেই কে যেন দুহাতে পাঁজাকোলা করে মিনিকে শুইয়ে দিয়ে এসেছে বিছানায়। এভাবেই সকাল হয় আবছায়া আলো আর মেঘলা ধূপছায়ায় ছাঁদনাতলা বেঁকে চুরে কাত হয়ে আছে। উঠোনে জমেছে জল। বিনুদিদি চলে যাবে আজ শ্বশুরবাড়ি। পুকুর কেটে শুকনো জায়গা বেছে নিয়ে উঁচু মাটির উপর আংটি খেলা চলছে। মিনির সব কেমন মনখারাপের মেঘে ঢেকে যায়। বিনুদিদিই তো ওর সব মনখারাপের কষ্ট, ফুঁপিয়ে ওঠা সব কিছুর সঙ্গী। মার হাতে বিরাশি শিক্কার চড় চাপড় তো লেগেই থাকে। অসম্ভব কাজ, নাকে মুখে লেগে অফিস ছোটা, তার উপর মিনির পুরো স্কুল জীবন, বিশেষ করে ফাইভ সিক্স পর্যন্ত মুখে ভাত নিয়ে ঠায় বসে থাকা কাঁহাতক সহ‍্য হয়! চড় চাপড়, তারপর উগড়ে দেওয়া সব কখন পরিষ্কার হবে ! তখন মন একদম ভেঙে যায়। মাথায় চড়ে সূর্য।আর তো কাউকে রাগ দেখাতে পারেনি মা। মিনিকেই মেরে... মনের দু:খগুলো চেপে বুকের মধ‍্যে জমিয়েছে।
ওচারী তিত্তিরী সরলার ভাগের কাজ বেড়ে গিয়েছিল যখন ছোট বৌ উনুন সাজিয়ে নিজের ঘরের বারান্দায় রান্না করতে শুরু করে। ঠাম্মি ছিল মার সঙ্গে সর্বক্ষণ। অবাক চোখে বিরাট যৌথ সংসারের টুকরো হওয়া দেখেছে। মাটি ভাগ হয়েছে আর ওপর। ভিতরে তখন যন্ত্রণার আলপনা।

তোর্সার বদল হয়। বদলে যায় মানুষ। জীবন যাপনের শুলুক সন্ধান। বাড়ির উনুনের সংখ‍্যা বাড়ে। বড় কাঁচা মেঝের টিনের চালার রান্নাঘরে পিঁড়ি পেতে একসঙ্গে বসে খাওয়ার ছবি চলচ্চিত্র এখন। আকাশের গায়ে জলছবি। একখানা সেই রান্নাঘর কবেই উঠে গেছে। উনুন হয়েছে কয়লা ঘুঁটের যার যার পরিধিতে। ভক ভক করে ধোঁয়া বেরোয় আর গল গল করে আকাশের দিকে ছোটে। কি কথা বলে আকাশের সাথে কে জানে! মার উনুন গন গন করে। কয়লা পোড়ে। হাঁড়িতে ভাত ফোটে টগবগ, গন্ধ ওঠে। আর ঢাকনি সরিয়ে না দিলে ফুটন্ত ভাতের জল গনগনে আঁচে পড়লে কেমন পোড়া বিজাতীয় গন্ধ বাষ্প ওঠে। গলা বুক বন্ধ হয়ে যায়। ছোট বৌ তার উনুন সামলায়। মিনিরা সন্ধে থেকে ঐ উনুনে তৈরি রুটি খায় আর ঠিক সময় মতো কোনদিন খিচুড়ি, কোনদিন ভাত আলু পোস্ত ডাল দিয়ে মধুর মুখ করে রাতের খাওয়া সারে। সে সব দিন কবেই তোর্সার জলের মতো সময়ের সঙ্গে ভেসে গেছে। মাটির মেঝে পাকা হয়েছে। ধীরে যৌথ বোধ সংসার ভাঙতে ভাঙতে টুকরো ছায়া ঘিরেছে মানুষগুলোকে। মিনির বাবা অভিজিত মিত্রের সবসময়ই উদ‍্যোগ থাকে সকলকে নিয়ে হঠাৎ এক আধদিন পিকনিকের মতো করা। ঐ মানুষের ইচ্ছের দাম এ বাড়ি জুড়ে। ফলে সেইসব পরিকল্পনা মাফিক বাড়ির মানুষেরা সময় মতো প্রয়োজন মতো একত্রিত হয়। খাওয়া দাওয়া ভোজ পর্ব শেষে আবার পরদিন থেকে নিজেদের মতো। বড় হওয়ার প্রথম ধাপে মিনির অজস্র প্রকৃতি কুতূহলে বাড়ির বড়বৌ বড় জেঠিমাকে ডেকেছে "বড়মা" বলে। সেই মানুষটির মুখে কোন যন্ত্রণার ছাপ কোনদিন দেখেনি বাড়ির কেউ। অথচ কি দারিদ্র! কি ভাবে স্বল্প আয়ের সংসারে ছেলেমেয়েকে ভবিষ‍্যতের পথ দেখানো কি অসম্ভব ছিল না দেখলে বোঝা সম্ভব না। ঐ মানুষ ভরাট মাটির জালার সামনে আগেরদিন জলে ভিজিয়ে রাখা বট পাতা দু আঙুলে ক্লোরোফিলের সবুজ রঙ সরায়। কাদা কাদা ভেজা পচা পাতার গন্ধ ওঠে। পাতার স্কেলিটন বেরিয়ে পড়লে রোদে পেতে রাখা। শুকিয়ে ওঠার অপেক্ষায়। মিনির ঐ ছোট্টবেলাতে ঐ সবুজ শেওলাধরা মাটির জালা বটপাতার স্কেলিটন আর বড়মা কখন একাকার হয়ে যেত।

কোচবিহারের রাস্তায় প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে স্কুলের পর স্কুল ছাত্র ছাত্রী লাইন করে বিশেষ বিশেষ দেশাত্মবোধক সিনেমা দেখানো হত। সেই একদিনের কথা মিনি আজও জলছবির মত দেখে। হাত ধরে কে যেন ফিরিয়ে এনেছিল লাইন থেকে ক্লাস থ্রির মেয়েটাকে। বাড়ির সামনে ভিড় জমতে শুরু করেছে। কেউ বলছে,'আহা! কি ভাগ‍্যিমানী, মাথা ভরা সিঁদুর নিয়ে সশরীরে স্বর্গে গেলেন।' উঠোনের এ কোণ সে কোণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে বড়মার আট ছেলে মেয়ের অনেকেই। কেউ ফুঁপিয়ে কেউ আবার 'মা নেই তো কিচ্ছু নেই' বিলাপে দুপুরের আলোকে ম্রিয়মাণ করে দিয়েছে। মিনির বাড়ি ঢুকেই কেমন শঙ্কা হয়।ভয়ে শিউরে উঠতে থাকে। মা কোথায় মা? বড়মা....উঠোনের ধারে পাশে চরের মানুষের সঙ্গে পরিচিত লোকেরাও ঢুকে পড়েছে। বড়মাও এমনি করেই মাটির জালা কিছু ভেজানো বটপাতা আর রোদজালিকার মমতা ছেড়ে আলোর রহস‍্য ছেড়ে কোথায় চলে গেল!...ভাই বোনেরা একজন অন‍্যজনের দায়িত্ব নিয়ে বিরাট দু তিনখানা উঠোনে প্রবল সংগ্রামে বড় হতে থাকে।
কিছু পাওয়া খানিকটা না পাওয়ায় নদীর গতি বদলে যায় মিনিরা সে স্রোত প্রতিবছর কখনো বাড়তে দেখে কখনো বর্ষায় নতুন রূপ। দেখতে দেখতে সন্ধে আর রাতের মতো ওরাও পড়ার বইয়ের বাইরেও কত অজানা বইয়ের পৃষ্ঠায় মুখ ডুবিয়ে থাকে অনায়াসে আর ধারাবাহিক গতির মতো গাছেদের পাতা ঝরে। অদ্ভুত অন্ধকার ছায়ায় মানুষের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। মিনি রতু ঘনা পুনু সবাই এক একটা গাছ হয়ে যায়। কখনো মহীরুহের ছায়া পড়ে আরো কত চারাগাছের উপর। এক জন্মেই দেখে অর্জুন গাছ কেউ নিষ্ঠুর হাতে কেটে দিল। খন্ড খন্ড খোলশ পাতা ফল ছড়িয়ে মরে গের গাছটা। সামনের কাঠগোলাপ গাছটার সঙ্গে মিনির বন্ধুত্ব আত্মীয়তা গতজন্মের। তাইতো ভাবনায় ছিল ওর আর তোর্সার পাড়ের চরুয়া বন্ধুদের। সেই কাঠগোলাপের অমসৃণ শরীর সেদিন অদৃশ‍্য হয়ে যাবে সেদিন মিনি বোধহয় থাকবে না। ...একথাই ভাবে। ভাবতে ভাবতে জেঠুর ঘরের পড়ার পড়ার বই আর খাতার ভিতর ডুব দিয়েছে মিনি আর মিনির বড় হয়ে ওঠা কলেজে সদ‍্য পা দেওয়া বন্ধুরা। শেক্সপীয়র, মিলটন, শেলী, কিটস্, ওয়ার্ডস ওয়ার্থ পাঠ নিতে নিতে কখন দেশীয় নাটকের হাত ধরে গিরিশ ঘোষ, দীনবন্ধু, মাইকেল পেরিয়ে রবীন্দ্রনাথে এসে ঠেকে পড়ার গতি। জেঠুকে লুকিয়ে পড়ার ফাঁকে খাতার পৃষ্ঠায় লেখালেখি চলে কথোপকথনের মত।পাপিয়া পাখির মত মিষ্টি মেয়ে মারিয়া মিনির বন্ধু ছিল। একসাথেই পড়ত বিকেল থেকে সন্ধে ওরা জেঠুর কাছে জেঠুর ঘরে। পরদিন আবার কলেজ...এভাবেই টপকে চলল দিনগুলো ভালোবেসে নদীকে সঙ্গে নিয়ে দুদ্দাড় ভীষণ রকম এ বয়সে শহরটাকেই বড় ভালোবেসে। মনের ভিতর নড়াচড়া উচাটন প্রাণ কেমনের ঘরের গন্ধ। মারিয়াকে ভালোবাসতে শুরু করল থার্ড ইয়ারের এক খেলোয়ার দাদা।সেসময়ের ইউনিয়নের ও কেষ্ট বিষ্টু সে। মনে মনে মারিয়ার টান ও কাছ থেকে অনুভব করেছে মিনি। রাজশহরের লাল ইটের শিক্ষার উঁচু ধাপে যাওয়ার সিঁড়িতে মন দেওয়া নেওয়া তো এত খোলা আকাশের মত ছিলনা। একটু গোপন, কিছু বাধা, পরিখার অন‍্যপারে চোখদুটোই শুধু চেনা। সঙ্গে দীঘির শহরে পরিযায়ী পাখির মতই মনের ভিতর কেউ আসে কেউ চলে যায়। একমাত্র সন্তান মারিয়া ওদের গুহ বাড়ির আদরের মণি। ওর কালো দুটো চোখে অবসাদ আর ছায়ায় কতবার যে বুঝিয়ে দিয়েছে ঐ বিশেষ প্রেমে পড়া মানুষকে,"এ সম্ভব নয়" "হতে পারেনা" । তবু কেমন নিয়তি নির্ধারণে একদিন মিত্তির বাড়িতে পড়তে আসা মারিয়া একটিবারই নিজের বাড়ি ফিরেছিল। তারপর উধাও হল।
 কোথায় ডুবিয়ে দিল নদী ওকে। সত‍্যি ডুবিয়ে দেওয়াই বটে। ওর বাড়ির লোকজন পুলিশ নিয়ে সারা রাত খুঁজে, নদীর ওপাড়ের গঞ্জ থেকে দুজনকে নিয়ে এসেছিল পরদিন দুপুর গড়িয়ে। পুলিশের  জিজ্ঞাসাবাদে মিনিদের ও উত্তর দিতে হয়েছিল। মিত্তির বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে আসার সুবাদে, সে বাড়ির সকলেই জিজ্ঞাসিত হয়েছিল।....বিকেল পেরোলে মা মিত্তিরদের ছোটবৌ মেয়ের হাত ধরে গিয়েছিল সুনীতি রোডে মারিয়ার বাড়িতে। কর্তব‍্যবোধ আর ভালবাসার টানে।...হে ঈশ্বর! এই ছিল মনে, ঘরের বারান্দা দিয়ে উঠতেই মারিয়ার মার কান্না বুকে বসে আছে। এওতো জলছবি। মধ‍্যিখানের ঘরে মারিয়া তখন একমাথা সিঁদুর। ঝোড়োকাকের মতো চেহারা সেই খেলুড়ে দাদার। সদ‍্য সতের পেরোনো মেয়েটা বন্ধুকে জড়িয়ে দুহাত ধরে শুধু একটি কথাই বলেছিল, 'সব শেষ হয়ে গেল রে মিনি'!...কেন বলেছিল! ও তো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ির বাথরুমের ছোট্ট ফোকর গ'লে ঐ অজানা ছেলেটার প্রেমে ছুটেছিল খালি পায়ে। সন্ধে পেরোনো অন্ধকারে। পাটাকুড়ার দিক থেকে তোর্সার বাঁধ পেরিয়ে নেমেছিল চরের দিকে।দুজন মানুষ ছুটছে প্রেমের টানে সাদাটে চর ধরে। হাওয়ায় উড়ছে মারিয়ার চুল। এ ছবি আজ ও তাড়িয়ে বেড়ায় আরো একজন মানুষকে। যে দেখেছিল মন দেওয়া নেওয়ার বাস্তব মঞ্চাভিনয়। আবছায়া জ‍্যোৎস্নায় ওদের পথ দেখিয়েছিল চাঁদ। সেই ছেলে দুহাত বাড়িয়ে মারিয়াকে তুলে এনেছিল বন্ধুর বাড়ি। সেখানে সিঁদুর পরিয়ে বিয়ে করেছিল। এত তাড়া ছিল জীবনের! একি প্রেম! নাকি গভীর আবিষ্কারের মোহ।.... ছেনে নিয়ে একদিন পর বাড়ির মানুষের চেষ্টায় রেজিষ্ট্রীকরণে 'বিবাহ' নামের মাত্রা পাওয়া সম্পর্ক। হায় তোর্সা, এতেও তোমার সাক্ষী থাকতে হ'ল!!

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri