সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
35.চা-ডুবুরী-৩৫/সুকান্ত নাহা

35.চা-ডুবুরী-৩৫/সুকান্ত নাহা

34.চা-ডুবুরী-৩৪/সুকান্ত নাহা

34.চা-ডুবুরী-৩৪/সুকান্ত নাহা

33.চা-ডুবুরী-৩৩/সুকান্ত নাহা

33.চা-ডুবুরী-৩৩/সুকান্ত নাহা

32.চা-ডুবুরী-৩২/সুকান্ত নাহা

32.চা-ডুবুরী-৩২/সুকান্ত নাহা

31.চা-ডুবুরী-৩১/সুকান্ত নাহা

31.চা-ডুবুরী-৩১/সুকান্ত নাহা

30.চা-ডুবুরী-৩০/সুকান্ত নাহা

30.চা-ডুবুরী-৩০/সুকান্ত নাহা

29.চা-ডুবুরী-২৯/সুকান্ত নাহা

29.চা-ডুবুরী-২৯/সুকান্ত নাহা

28.চা-ডুবুরী-২৮/সুকান্ত নাহা

28.চা-ডুবুরী-২৮/সুকান্ত নাহা

27.চা-ডুবুরী-২৭/সুকান্ত নাহা

27.চা-ডুবুরী-২৭/সুকান্ত নাহা

26.চা-ডুবুরী-২৬/সুকান্ত নাহা

26.চা-ডুবুরী-২৬/সুকান্ত নাহা

25.চা-ডুবুরী-২৫/সুকান্ত নাহা

25.চা-ডুবুরী-২৫/সুকান্ত নাহা

24.চা-ডুবুরী-২৪/সুকান্ত নাহা

24.চা-ডুবুরী-২৪/সুকান্ত নাহা

23.চা-ডুবুরী-২৩/সুকান্ত নাহা

23.চা-ডুবুরী-২৩/সুকান্ত নাহা

22.চা-ডুবুরী-২২/সুকান্ত নাহা

22.চা-ডুবুরী-২২/সুকান্ত নাহা

21.চা-ডুবুরী-২১/সুকান্ত নাহা

21.চা-ডুবুরী-২১/সুকান্ত নাহা

20.চা-ডুবুরী-২০/সুকান্ত নাহা

20.চা-ডুবুরী-২০/সুকান্ত নাহা

19.চা-ডুবুরী-১৯/সুকান্ত নাহা

19.চা-ডুবুরী-১৯/সুকান্ত নাহা

18.চা-ডুবুরী-১৮/সুকান্ত নাহা

18.চা-ডুবুরী-১৮/সুকান্ত নাহা

17.চা-ডুবুরী-১৭/সুকান্ত নাহা

17.চা-ডুবুরী-১৭/সুকান্ত নাহা

16.চা-ডুবুরী-১৬/সুকান্ত নাহা

16.চা-ডুবুরী-১৬/সুকান্ত নাহা

15.চা-ডুবুরী-১৫/সুকান্ত নাহা

15.চা-ডুবুরী-১৫/সুকান্ত নাহা

14.চা-ডুবুরী-১৪/সুকান্ত নাহা

14.চা-ডুবুরী-১৪/সুকান্ত নাহা

13.চা-ডুবুরী-১৩/সুকান্ত নাহা

13.চা-ডুবুরী-১৩/সুকান্ত নাহা

12.চা-ডুবুরী-১২/সুকান্ত নাহা

12.চা-ডুবুরী-১২/সুকান্ত নাহা

11.চা-ডুবুরী-১১/সুকান্ত নাহা

11.চা-ডুবুরী-১১/সুকান্ত নাহা

10.চা-ডুবুরি-১০/সুকান্ত নাহা

10.চা-ডুবুরি-১০/সুকান্ত নাহা

9.চা-ডুবুরি-৯/সুকান্ত নাহা

9.চা-ডুবুরি-৯/সুকান্ত নাহা

8.চা-ডুবুরি-৮/সুকান্ত নাহা

8.চা-ডুবুরি-৮/সুকান্ত নাহা

7.চা-ডুবুরি-৭/সুকান্ত নাহা

7.চা-ডুবুরি-৭/সুকান্ত নাহা

6.চা-ডুবুরি-৬/সুকান্ত নাহা

6.চা-ডুবুরি-৬/সুকান্ত নাহা

5.চা-ডুবুরি-৫/সুকান্ত নাহা

5.চা-ডুবুরি-৫/সুকান্ত নাহা

4.চা-ডুবুরি-৪/সুকান্ত নাহা

4.চা-ডুবুরি-৪/সুকান্ত নাহা

3.চা-ডুবুরি-৩/সুকান্ত নাহা

3.চা-ডুবুরি-৩/সুকান্ত নাহা

2.চা-ডুবুরি-২/সুকান্ত নাহা

2.চা-ডুবুরি-২/সুকান্ত নাহা

1.চা-ডুবুরি-১/সুকান্ত নাহা

1.চা-ডুবুরি-১/সুকান্ত নাহা

06-December,2022 - Tuesday ✍️ By- সুকান্ত নাহা 392

চা-ডুবুরি-৯/সুকান্ত নাহা

চা-ডুবুরি : পর্ব: ৯
সুকান্ত নাহা
~~~~~~~~~~
                                   
চোরাবালি

কদিন ধরে লাগাতার গেট-মিটিং চলার পর অবশেষে উত্তেজনা চরমে উঠল। নীলপাহাড়ি ফ্যাক্টরি গেটের বাইরে আজকের জমায়েতের চরিত্রটা একেবারেই আলাদা। চূড়ান্ত কিছু একটা এস্পার-ওস্পার করে ফেলার মনোভাব ফুটে উঠছে সকলের শারীরিক ভাষায়।
একটা ক্ষীণ আশা এতদিন জেগেছিল শ্রমিকদের ভেতর। সংগঠনের চাপে অন্তত কিছুটা হলেও বিবেচনা করবে মালিকপক্ষ। কিন্তু কলকাতায় বোনাস চুক্তি হয়ে যাওয়ার পরও দেখা গেল মালিকপক্ষ তার সিদ্ধান্ত থেকে একচুল সরেনি। মাসখানেক আগে যে হারে বোনাস দেবে বলে নোটিশ জারি করেছিল সেই হারই বহাল হয়েছে চুক্তিতে। গতবারের চেয়ে যা যথেষ্টই কম। অথচ নিয়মানুযায়ী গতবছরের উৎপাদনের ওপর বোনাসের হার ধার্য হয়। উৎপাদন গতবার নেহাত কম ছিল না। এ বছরও পাতার ঢল নেমেছে। তবুও পাতার দাম না পাওয়ার যুক্তি দেখিয়ে অনড় মালিকপক্ষ । এ সবকিছুর পেছনে যে সুরেশ গর্গের হাত আছে তা স্পষ্ট হয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে। শোনা যাচ্ছে বোনাস মিটিঙের আগে কলকাতায় বসে একটি প্রভাবশালী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাথে গোপনে রফা করেছিল সুরেশ । আর্থিক লেনদেনও হয়েছে নাকি সেখানে। যে জন্য বোনাস মিটিং-এ ঐ নেতারা কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল। এই তথ্য ফাঁস হতেই বাগানের অন্য দুটি ইউনিয়ন আসরে নেমে পড়েছে। তাদেরই উস্কানিতে হতাশার ধোঁয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে শ্রমিকদের ভেতর। তারই বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে আজ। 

একটু আগে মেইন গেট বন্ধ করে দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েছে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা। যাতে ম্যানজাররা কেউ বেরিয়ে যেতে না পারে। অথচ ভেতরে ম্যানেজমেন্টের কাউকেই এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না। একমাত্র সদানন্দ পাঠক ছাড়া। স্পষ্ট বোঝাই যাচ্ছে আজ ঘেরাও হবে অফিস। কিছু লোক এসে প্রোডাকশন বন্ধ করে দিয়ে ফ্যাক্টরি লেবারদের বের করে দিল। তারা সকলেই সাধারণ শ্রমিক। ইউনিয়ন নেতাদের কাউকে দেখা গেল না। কাজ বন্ধ করতে এলেও সদানন্দ পাঠক ওদের একবারও বাধা দেবার চেষ্টা করল না। বরং বড়-গুদাম বাবু মিনমিন করে 'তাহলে তো পাতা নষ্ট হবে' বলতে গিয়ে ওদের দাবড়ানি খেয়ে চুপ করে গেলেন। লোকগুলো চলে যেতেই সদানন্দকে মোবাইল কানে  দূরে সরে যেতে দেখা গেল। কার সাথে কথা হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না। অস্থির পায়চারি দেখে বোঝা যাচ্ছে  বেশ টেনসড।

পাতা শুকোনোর কাঠের দোতলা শুকলাই(উইদারিং) শেডের ওপর দাঁড়িয়ে সব লক্ষ করছিল সুবর্ণ। জমায়েতের বহরটা বাড়তেই সেটা এগিয়ে আসছিল অফিসের দিকে। শ্রমিকদের মধ্যে বেশীর ভাগই মহিলা। সকলেই  উত্তেজিত। অতীতেও এই অভিনব স্ট্র্যাটেজি লক্ষ করেছে সুবর্ণ। ঘেরাও এ ইউনিয়ন নেতারা সামনে থাকে না কেউ। পুরুষ শ্রমিকরাও অংশগ্রহণ করে কম। মহিলারাই নেতৃত্ব দেয়। নেপথ্যে ছক কষে দেয় নেতারা। আপাতত অফিসে বড়বাবু দিব্যেন্দু রায় ছাড়া চার পাঁচজন স্টাফ রয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ একটু পর পর বারান্দায় বেরিয়ে জমায়েতের ভাবগতিক বুঝে নিয়েই চটজলদি ঢুকে পড়ছিল ভেতরে। সকলেই  উৎকন্ঠিত। সুবর্ণর মনেও আশংকার মেঘ জমছিল একটু একটু করে। ক্ষোভ যেভাবে বাড়ছে তাতে খুব খারাপ কিছু একটা ঘটে যেতেই পারে। আজ অবধি নীলপাহাড়ি কখনো বন্ধ হয়নি। মাঝে মধ্যে শ্রমিক অসন্তোষ হলেও তা কখনও এতটা ঘোরালো হয়ে ওঠেনি। সুরেশ গর্গ লোকটা আসার পর থেকে বাগানের পরিবেশটাই বদলে গেছে। পুজোর মুখে কিছু একটা ঘটে গেলে কী যে হবে সেই দুশ্চিন্তা গ্রাস করতে থাকে সুবর্ণকে ক্রমশ। 

অফিস বারান্দার কাছাকাছি আসতেই ভীড়ের ভেতর থেকে পুরুষকন্ঠে চিল চিৎকারে শ্লোগান শোনা যায়, " মালিক কা মনমানী নেহি চলেগা", "মালিক কা দালাল হুঁশিয়ার" তৎক্ষনাৎ সেই স্লোগানে সকলে সমস্বরে ফেটে পড়ে। অফিস চৌকিদার আগেই বারান্দার গ্রিলের গেটে ভেতর থেকে তালা দিয়ে বড়বাবুকে চাবি দিয়ে সরে গেছে। উত্তেজিত মহিলারা বারান্দার কাছে এসে গেট বন্ধ দেখে সেটা ঝাঁকুনি দিতে শুরু করে। মুহুর্মুহু শ্লোগান ওঠে," হামারা দাবী মাননা হোগা', মালিক কা দালাল হুঁশিয়ার''। সারা অফিস চত্বর জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে নিমেষে। টেনশনে চরম আকার নিতেই সদানন্দকেও আর দেখা যায় না। 
মহিলাদের সমবেত বিক্ষোভের ঢেউ যখন প্রায় গেট ভেঙে ফেলার উপক্রম করছে ঠিক সেই সময় বড় বাবু দিব্যেন্দু রায় তার চেম্বার ছেড়ে বেরিয়ে আসতেই  জনতার আক্রোশ কিছুটা প্রশমিত হয়। কাউকে বলতে শোনা যায়, ' হামলোগ বড়া সাহাব সে বাত করনা চাহতা হ্যায়। উনকো বুলাইয়ে... জলদি। '
বড়বাবু বড়সায়েবকে ডেকে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ভেতরে যেতেই শ্লোগান বন্ধ হয়। কিন্তু গরম-গরম কথাবার্তা চলতেই থাকে বাইরে। ঠিক সেই মুহুর্তে সুবর্ণর পকেটে মোবাইলটা বেজে ওঠে। সুমন্তর ফোন, 'কী রে, তুই কোথায়? '
-'কেন? অফিসে..। '
-' অফিসে তো ঘেরাও চলছে । পরিস্থিতি কী? '
-' এখনও বোঝা যাচ্ছে না। তুই কোথায়? '
-'এতক্ষণ বাগানেই ছিলাম। লেবাররা কেউ আসেনি দেখে মৌয়াবাড়ি হাটে পান খেতে এসেছি। শোন, তুই চান্স পেলে বেরিয়ে যা অফিস থেকে। লেবাররা খচে আছে। কখন কি করবে ঠিক নেই।' সুমন্তর গলার স্বর উত্তেজিত। 
-'আমাদের কী করবে... আর কেনই বা করবে? '
-' আরে শোন, ম্যানেজমেন্টের কেউ বাগানে নেই। এমনটা যে ঘটতে চলেছে কালকেই খবর ছিল। তাই সকাল হতেই সব গা ঢাকা দিয়েছে। ওদের না পেয়ে ভাঙচুর চালাতে পারে অফিসে...'
-' কেন, পাঠক তো এই একটু আগেও ছিল এখানে! '
-' ছিল, কিন্তু হাওয়া গরম দেখেই ফ্যাক্টরির পেছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ওখানে থেকেও তুই জানিস না। একটু আগে দেখলাম গাড়ি নিয়ে বাগান ছেড়ে বেরিয়ে গেল। যদিও ব্যাপারটা পুরোটাই গেম। আজকের এই ঘেরাও এর পেছনে আসল খেলাটাই তো ওর। বাইরে থাকলেও ওকে কেউ কিছু করত না। '

-' কী বলছিস! 'সুবর্ণ যেন আকাশ থেকে পড়ে, 'এতে ওর লাভ? '

-' আরে এক ঢিলে দুই পাখি সরাতে চাচ্ছে ও। সুরেশ আর বড়সাহেব মিস্টার রবিন্দর সহায়কে সরিয়ে ও নিজের লোক আনতে চাইছে। সুরেশ বুঝতে পারছে না পাঠকের খেলাটা। পাঠক হচ্ছে মিহি মাল। সুরেশ থাকলে ওর কামাই আটকে যাচ্ছে।ওদের দুজনকে সরিয়ে নিজের লোক আনতে পারলে তো ওর "গুটি-লাল"। '
-'অতই সহজ! সুরেশকে সরাতে গেলে ও নিজেই ভোগে চলে যাবে ! '
-' আরে শোন...ভেতরের খবর। ও সুরেশের অনেক সিক্রেট খবর ছবিসহ মালিককে পাঠিয়েছে। মালিক  আর সুরেশের ওপর খুশি না জেনে রাখ। মালিক এখন পাঠকের কাছ থেকে সব খবরাখবর নেয়। ওর সঙ্গেই রোজ রাতে বাগানের বিষয়ে কথা হয় মালিকের। '

-' তুই এসব কথা কিভাবে জানলি?'
-' আরে ওরা চলে ডালে-ডালে। সুমন্ত ঘোষাল চলে পাতায়-পাতায়। এসব খবর জানতে গ্রাস-রুটে যেতে হয় বস! ' সুমন্তর গলায় এলেম নেওয়ার সুর। 

' বুঝলাম না... ' সুবর্ণ যেন ধাঁধার পাকে পড়ে যায়। 

'শোন্ ওপর মহলের সিক্রেট যদি জানতে চাস তো তোকে নিচুতলাকে হাত করতে হবে। পাঠক ওর বাংলো-সার্ভেন্ট কে তাড়িয়ে দিয়েছে কদিন আগে জানিস তো। গায় হাত-টাত দিতে গেছিল বোধহয়...প্রতিবাদ করায় ওকে সরিয়ে দিয়ে নতুন  একজনকে এনেছে। মেয়েটা ওর প্রতিটা চালচলন, ফোনে কথাবার্তা সব ফলো করত। এখন পাতা তোলে। ওকে খুঁচিয়ে কিছু জেনেছি। বাকিটা গর্গের বাংলো চৌকিদার হরকা মানে হরকাবাহাদুর আমাদের ছোটবেলার বন্ধু, ওকে একটু ঝাঁকাতেই সব বেরিয়ে গেছে। পাঠক কখন বাংলোয় মেয়ে নিয়ে ঢোকে, পার্টিতে কী কথা হয়, মাল খেয়ে বাইরে এসে ফোনে কার সাথে পাঠক কী কথা বলে সব ওর পেটে জমে থাকে। আমার কাজ শুধু মাল খসিয়ে ওকে একটু বমি করানো। ' 

-' এ-তে তোর লাভটা কী? 

-' লাভ নেই বলছিস!! আরে এসব লেটেস্ট ইনফরমেশনই তো ম্যানেজমেন্টের উইক-পয়েন্ট আর...'
কথা শেষ হয় না গেটে পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়ায়।পুলিশ আসায় আগুনে যেন ঘি পড়ে। শ্রমিকরা চিৎকার করতে থাকে 'পুলিশ কৌন বুলায়া,পুলিশ তুম দূর হটো,পুলিশকা জুলুম নেই চলেগা...'গেট চৌকিদার পুলিশ দেখে গেট খুলে দিতেই থানার সেকেন্ড অফিসার আর তিনজন বন্দুকধারী কনস্টেবল গাড়ি থেকে নেমে ঢুকে পড়ে অফিস চত্বরে। ঢুকতেই তারা ঘেরাও হয়ে যায় উত্তেজিত শ্রমিকদের ঘেরাটোপে। সকলেই জানতে চায় কে পুলিশ ডেকেছে, কেনই বা ডেকেছে, এর মানে কী! অফিসার শুধু বলেন তাদের কাছে ওপরতলা থেকে অর্ডার এসেছে বাগানের আইন শৃঙ্খলা দেখবার জন্য। তাই তারা এসেছেন। উত্তর শুনে শ্রমিকরা জানায় তারা তাদের ন্যায্য দাবি জানাতে এসেছে। মারদাঙ্গা করতে নয়। পুলিশ ডেকে ম্যানেজমেন্ট কী প্রমাণ করতে চাইছে। ক্ষোভে, উত্তেজনায় ফুঁসতে থাকে সকলে। মুখগুলো সবই চেনা সুবর্ণর । সকলের নামগুলো এই মুহুর্তে মনে না পড়লেও রূপালী, সুরন্তি, বুধনি, ফুলো, ফুলমায়া, কান্ঞ্ছিমায়া, ডাহরু, বিমল, সুজাতা এদের দেখা যাচ্ছে সামনে। সুরন্তি আর ফুলোকে এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত দেখাচ্ছে। সুরন্তি গলার রগ ফুলিয়ে চেঁচাচ্ছে, 
' মালিককর মনমানি নি চলি। সাহি বোনাস দেইকে পড়ি। বড়া সাহাবসে হামিন বাত করেক চাহতো। উ-ঠো কনে ছিপকে বইঠে? উকে নিকলা...' মালিকের মনমর্জি ওরা মানবে না। সঠিক বোনাস দিতে হবে। ওরা ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে চায়। কোথায় লুকিয়ে আছে ম্যানেজার ওরা জানতে চায়। তাকে বের করতে বলে। 

ফুলো হঠাৎ ভীড় ঠেলে এগিয়ে এসে কান্না-কান্না গলায় চিৎকার করে ওঠে, ' সাইলভর  মইর-মইরকে হামিন পাতি তোইড়কে মালিককে দেইলা, মালিক পাতি বেইচকে মুরুখ নাফা করেল আউর বোনাস দেওয়েক টাইম উকর আনসা লাগোথে! ইখন হামিনকর সাইলভর কর কামাইকে উ খায়েক খোঁজথে কি কা? নি হোই... হামিনকর পেট নখে, হামিনঘরে বালবাচ্চা নখে, পূজা নখে... ' সারাবছর ওরা মরতে মরতে পাতা তুলে মালিককে দেয়। মালিক পাতা বেচে লাভ করে এখন বোনাস দিতে তার অসুবিধে হচ্ছে! বোনাসের টাকা মালিক মেরে দিতে চাইছে! ওদেরও  পেট আছে, ঘরে বাচ্চাকাচ্চা আছে, পুজো আছে...সকলের মনের কথাগুলো যেন ফুলোর কথার আর্তিতে প্রকাশ পাচ্ছিল। কিন্তু যাদের সামনে বলা তারা দৃশ্যত অসহায়। আইন শৃঙ্খলা দেখতে এসে নিজেরাই বেকায়দায় পড়ে গেছে। আচমকা ঘেরাও হয়ে গিয়ে রীতিমত বিব্রত দেখাচ্ছে তাদের।

অবস্থা আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে বড়বাবু বেরিয়ে এসে মহিলা শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন যে পুলিশকে ঘেরাও করাটা বোকামি হচ্ছে। এতে পরিস্থিতি ঘোরালো হতে পারে। কেউ তার কথা শোনেনা। স্লোগান তীব্রতর হতে থাকে। বড়বাবুকে সরে গিয়ে কাউকে ফোন করতে দেখা যায়। ঠিক তখনই আবার বেজে ওঠে সুবর্ণর ফোন, 
বড়বাবু তাকেই ফোন করছেন, 'তুমি কোথায়! '
-'এই যে ট্রাফ-হাউসের মাথায়! '
বড়বাবু মাথা তুলে ওপরে তাকাতেই সুবর্ণ হাত নাড়ে। ফোনেই উনি বলতে থাকেন, 
'শোনো, সুমন্ত কোথায়... ওকে বলো লিডার দের ব্যাপারটা জানাতে। সিচুয়েশন কিন্তু হাতের বাইরে চলে যাবে এর পরে। ওকে বলো একবার আসতে। ম্যানেজাররা কেউ নেই, এই মুহুর্তে আমরা হাল না ধরলে বুঝতেই পারছো...'
-' আচ্ছা, ঠিক আছে ওকে জানাচ্ছি।' বলে সুবর্ণ ফোন কেটে সুমন্তকে সব জানায়। 

খানিক বাদে সুমন্তর মোটরবাইক এসে ঢোকে অফিসে। ওর পেছন পেছন দু'জন মাঝারি মাপের লিডারকে দেখা যায়। সকলের প্রচেষ্টায় পুলিশদের ঘেরাওমুক্ত করে গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। তারপর সকলে মিলে বোঝানোর চেষ্টা চলে শ্রমিকদের। কিছুতেই কিছু হয় না। শ্রমিকরা অনড়। যতদিন না বোনাসের ফয়সালা হচ্ছে ততদিন তারা কাজে যাবে না। হাল ছেড়ে ছোটো নেতারা অদৃশ্য হয়ে যায়। বাবুরাও হতাশায় গুটিয়ে  গিয়ে ঘরমুখো হয়। শ্রমিকদের উত্তেজনাও এক সময় থিতিয়ে পড়ে। ক্লান্ত শরীরে তারা ইতস্তত বসে পড়ে অফিস চত্বরে। বাচ্চা কোলে শূণ্য চাহনি মাখা দৃষ্টি নিয়ে বসে থাকা 'ছৌয়ারি-মাঈ'দের কোলে খানিক আগেও যে দুধের শিশুগুলো চিল চিৎকারে মেতেছিল, স্তন চুষতে চুষতে একসময় তারাও ঘুমিয়ে পড়ে। শুকনো মুখে বসে থাকা শ্রমিকদের সব আশা আবর্তিত হতে থাকে অফিস বাড়িটাকে ঘিরে। 

সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায় ম্যানেজমেন্টের কাউকে দেখা যায় না। শেষ বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারা একে একে বিষন্নমনে ঘরে ফিরে যায়। বাবুরাও আর অফিসমুখো  হয় না। সকলের মনে আশংকার কালো মেঘ স্তরীভূত হতে থাকে। সন্ধে নামতেই দু'চারটে কুকুর আর একজন গেট-চৌকিদার ছাড়া সারা অফিস কম্পাউন্ডে কারো দেখা মেলে না। শূণ্য অফিসঘরের কাঠের সিলিং থেকে ঝুলতে থাকা পাখাগুলো ক্যাঁচকোচ শব্দ করে ঘুরে চলে। বন্ধ করার কেউ নেই। বাবুদের খোলা খাতার পৃষ্ঠাগুলো বাতাসে ফরফর করে ওড়ে। দেখার কেউ নেই। কারখানার হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়ায় শুধুই পিনপতনের নীরবতা জেগে থাকে। অন্ধকার নামতেই গেট চৌকিদার চারপাশের সিকিউরিটি লাইটগুলো  জ্বালিয়ে দিয়ে গুমটিঘরের অন্ধকারে বসে থাকে একা। প্রহরে প্রহরে লোহার ঘন্টাটা বাজানো ছাড়া আজ আর তার কোনও কাজ নেই। 

বাড়ি ফিরে জামা কাপড় না ছেড়েই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিল সুবর্ণ। এলোমেলো চিন্তাগুলো বিভিন্ন দিক থেকে মস্তিষ্কের ভেতরে হাতুড়ির মত আঘাত করে চলেছে। কিছুই ভাল লাগছিল না। সামনের দিনগুলো অজানা আশংকার অন্ধকারে দোল খাচ্ছে পেন্ডুলামের মতো। রাত আটটা নাগাদ একবার তূর্ণার ফোন এসেছিল। সুবর্ণ চেপে যায় খবরটা। তবু গলার স্বরে ও ঠিক বুঝে যায় কিছু একটা হয়েছে। 'শরীর টা ম্যাজম্যাজ করছে' বলে এড়িয়ে যেতে চেয়ে আরেক বিপত্তি। নানান উপদেশে জেরবার করে তোলে,'এটা খাও, সেটা খাও,' ' এটা কোরো না ওটা কোরো না'... । অনেক কষ্টে ওকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ফোন রেখে আকাশ পাতাল চিন্তা করতে করতে অন্ধকার ঘরে কখন যেন চোখটা লেগে গেছিল। মোবাইলটা বেজে উঠতেই ঘুম ভাঙে সুবর্ণর। চোখ মেলতেই দেখে ঘড়িতে রাত এগারোটা। অচেনা নম্বর থেকে ফোন। ফোন তুলতেই ওপাশে লোকাল নিউজ রিপোর্টারের গলা, ' সুবর্ণ দা, আমি অসীম বলছি, উত্তরাঞ্চল বার্তার। একটা খবর আছে। তোমাদের ম্যানেজার থানায় সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। কাল সকালে তোমরা নোটিশ টা পেয়ে যাবে। এইমাত্র খবরটা জানলাম। তোমাদের বড়বাবুর ফোন নাম্বার নেই। তাই তোমাকেই জানালাম। 'ফোনটা কেটে যেতেই সুবর্ণর একমুহূর্তের জন্য মনে হল সে একটা নির্জন সমুদ্রতটে দাঁড়িয়ে। প্রচন্ড বিক্ষুদ্ধ একটা ঢেউ সরে যেতেই পায়ের তলায় বালি আলগা হয়ে দ্রুত সরে যাচ্ছে। গোড়ালি থেকে হাঁটু, হাঁটু ছাড়িয়ে কোমর, বুক, গলা অবধি শরীরটা ঢুকে যাচ্ছে চোরাবালির ভেতর। মাথার ওপর খড়কুটোও নেই যে আঁকড়ে ধরবে। সামনে কেবল অন্ধকার, আর ফুঁসতে থাকা অনাগত স্রোতের আস্ফালন। মাথার ভেতরটা পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে যাচ্ছিল সুবর্ণর। মস্তিষ্কের ভেতরেও যেন শুধুই অন্ধকার। এই মুহূর্তে কোথাও যেন কোন আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে না। নিস্তব্ধ ঘরের ভেতর ঘড়ির কাঁটাগুলো একটানা টিকটিক শব্দতুলে সময় হত্যা করে চলেছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri