সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
12-May,2023 - Friday ✍️ By- সুবীর সরকার 532

গঞ্জহাটের আখ্যান-৯/সুবীর সরকার

গঞ্জহাটের আখ্যান/৯
সুবীর সরকার
---------------------------

৩১।
'ধওলি রে মোর মাই
সুন্দরী মোর মাই
দোনো জনে যুক্তি করি চল পলেয়া যাই'

গঙ্গাধরের পাড়ে পাড়ে চরে চরে সেই কত কত যুগ ধরে গোয়ালপাড়ার মেয়েরা এই গান তাদের কণ্ঠে তুলে নিয়ে কি এক হাহাকারের সুরে সুরে তাদের শরীরে নাচ জাগাতে জাগাতে জীবনের আবহমান এক আর্তি ছড়িয়ে দেয়।দূরের মাঠপ্রান্তরে তখন বিকেলশেষের  মায়া।মায়ায় মায়ায় বুঝি আস্ত এক জীবনের ঘোর।গানের দেশে নাচের দেশে হেমন্তের হিমের দেশে গানভরা এক জীবনের গল্প প্রখরতার উত্তাপ ছড়াতে থাকলে আবার ঘুরে ঘুরে গান নেমে আসে মরণ ও জন্মের এই দুনিয়াদারির ভিতর-
'নাল টিয়া নাল টিয়া রে তোর ভাসা নলের আগালে/বিনা বাতাসে ভাসা ঢোলে রে'

৩২।
এইসব চলতে থাকে।ভরা হাটের ভেতর থেকে এক পেশীবহুল দীর্ঘ শরীর নিয়ে বেরিয়ে আসে নাজিমুদ্দিন ওস্তাদ।সে তার জীবনের গল্পের দিকে একপর্বে আমাদেরকে প্রবল টেনে আনবে।আমরা নুতন করে শুনে নেব চর দখলের লড়াই আর হাতিক্যাম্পের গল্প।বিষ্ময় নিয়ে শুনতে থাকবো কিভাবে গান আর বাজনা আর নাচ দিয়ে বুনো হাতিদের পোষ মানানো হত কুমারসাহেবের জঙ্গলবাড়ির সেই ক্যাম্পে।
নাজিমুদ্দিন তখন গাবুর বয়সের চেংড়া। আব্বার সাথে রূপসীর জমিদারের লেঠেলবাহিনীর হুকাতামাকের দায়িত্ব তার উপর। পাশাপাশি মুন্সি চাচার কাছে লাঠি চালনার তালিম নিচ্ছে।আর ফাঁক পেলেই গঙ্গাধরের কাছারে কাছারে জল ভরতে আসা সুন্দরী কইন্যাদের সাথে রঙ্গরস করা আর খোসা নাচের মত গেয়েও ওঠা-
'আন্ধ্যারে ধান্দারে নাচবা নাকি দুলাভাই
দুলা তুই হ্যাচাকের বায়না দে'
এইসব দেখে জরিনা আবেদা হাসিনা ফুলেশ্বরীদের কি খলখল হেসে ওঠা। তারাও কখনো গানে গানে প্রতি উত্তর দিত -
'ফাতেরা রে ফাতেরা
বগরিবাড়ির ফাতেরা"

কি অন্যরকম জীবন ছিল তখন।আলো ছিল। স্বপ্নের ভেতর খেলে বেড়াতো হলখল মরিচের খেত। আর সেই নদীপাড়ের জীবন থেকেই তো সে তার জীবনে টেনে এনেছিল জরিনাকে।
হায়রে জীবন!সে বারবার তাকে ডুবিয়েই মারলো এই ধানপাটকামলাকিষান আর ভরা সব হাট পাচালির ভিতর!

৩৩.
ইউসুফ মোল্লার বেশ মনে পড়ে শালমারার বড় বালার চরে বড় রাজকুমারীর গান নিয়ে নাচ নিয়ে বাদ্য বাজনা নিয়ে এক শীতের রাতে জমিয়ে তোলা গানবাড়ির কথা। ইউসুফ মোল্লা তখন সদ্য যুবক। পালতোলা নৌকোর দুরন্ত মাঝি। ব্রহ্মপুত্র শাসন করে সে।পণ্য পৌঁছে দেয় বন্দরে বন্দরে। আর নেশা বলতে গানবাড়িতে ঘুরে ঘুরে গান শোনা।
তখন রাজবহাদুর প্রভাত বড়ুয়া বেঁচে।
শিকারে যান মস্ত দাঁতাল হাতি জংবাহাদুরের পিঠে চড়ে।বড় রাজকুমারী আর ছোট রাজকুমারী তখন গঞ্জ গা হাট ঘুরে ঘুরে গান, নাচ, শোলোক খুঁজে বেড়াচ্ছেন।নিজেরাও নাচছেন। গাইছেন।
বালাবাড়ির চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে সেই সব গান। যা চিরকালীন।যা ভরভরন্ত জীবনের কথা বলে -
"কালা বাইগণ ধওলা রে
বাইগণের গোড়ায় কাটা"
এক হাট থেকে বেরিয়ে নুতন এক হাটে প্রবেশ করতে গিয়ে এই চার কুড়ি পেরিয়ে আসা জীবনে বারবার ইউসুফ মোল্লার মনে পড়ে সেই সব সোনার বরণ পাখির মতন দিনগুলির কথা।
হায়রে,কত তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা নেমে আসে মানুষের জীবনে!জলে ভিজে ওঠে ইউসুফের চোখ। সে দেখতে পায় "টলমল টলমল কচুপাতের পানি"।
ঠিক এখানেই একটা গল্প শেষ হয়ে যায়,ন নতুন এক শুরুর অপেক্ষায়!

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri