বিন্নাগুড়ি চা বাগিচা/গৌতম চক্রবর্তী
বিন্নাগুড়ি চা বাগিচা
গৌতম চক্রবর্তী
ভরা বর্ষার মরসুম। হাসি ফুটেছে ডুয়ার্সের বাগিচা বলয়ে। ফার্স্ট ফ্ল্যাশ ক্ষতগ্রস্ত হওয়ার পর সেকেন্ড ফ্ল্যাশে যেন দাম পাওয়া যায় তার প্রস্তুতি চলছে। ভরা বর্ষা মাথায় করেই পৌছলাম বিন্নাগুড়ি চা বাগিচা সফরে। এই শনি এবং রবিবার বিন্নাগুড়ি, হলদিবাড়ি, এথেলবাড়ি, রহিমপুরে কাজ করব। বিন্নাগুড়ি বাসস্ট্যান্ডে নামলাম। বিন্নাগুড়ি থেকে বিন্নাগুড়ি টি এস্টেট ১.১৪ কিমি। সময় লাগল ৫ মিনিট। বিন্নাগুড়ি থেকে তেলিপাড়া সিএস শপ এর সামনে দিয়ে যেতে হবে। ডিবিআইটিএ এর সঞ্জয়বাবুর সহযোগিতা করায় সিনিয়ার ম্যানেজারের কাছ থেকে পেলাম উষ্ণ অভ্যর্থনা। ধুপগুড়ি ব্লক এর বিন্নাগুড়ি টি গার্ডেনটির পরিচালক গোষ্ঠী বিন্নাগুড়ি টি কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি এবং এই বাগানটিও ডিবিআইটিএ-এর সদস্য। বাগানে সর্বমোট ম্যানেজারিয়াল স্টাফ আট জন। এটির মালিকানা কলকাতাকেন্দ্রিক। বাগানে স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন গুলি হল সিবিএমইউ এবং এনইউপিডব্লিউ। বিন্নাগুড়ি চা বাগানের আয়তন ৭২৫.০৯ হেক্টর, কিন্তু চাষযোগ্য আবাদি ক্ষেত্র ৬০২.৫৫ হেক্টর। আপরুটেড এরিয়া ৪০.২৯ হেক্টর। রিপ্ল্যান্টেড এরিয়া ২১.২৫ হেক্টর। সেচের সুবিধাযুক্ত মোট চাষযোগ্য উৎপাদন ক্ষেত্র ৫৫৯.৯৭ হেক্টর। ড্রেনেজ এরিয়া ২২.৫০ হেক্টর। প্রতি হেক্টর উৎপাদনযোগ্য এবং ড্রেন এবং সেচযুক্ত প্ল্যান্টেশন এরিয়া থেকে ২৪৩৫ কেজি করে চা পাতা উৎপাদিত হয়। চা বাগানে নিজস্ব চা পাতা উৎপাদনের গড় ৫৫-৬০ লাখ কেজি। ফ্যাক্টরিতে নিজস্ব উৎপাদিত চা ১৩-১৫ লাখ কেজি। বাইরের বাগান থেকে কাঁচা পাতা সংগৃহিত হয় না। মোট বাৎসরিক উৎপাদিত চা ১৩-১৫ লাখ কেজি। বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বাগানে ইনঅরগ্যানিক সিটিসি চা উৎপাদিত হয়। বাগানটি ছোটো হলেও চরিত্রগত দিক দিয়ে মানের বাগান। বিন্নাগুড়ি চা বাগান এমজিএনআরইজিএস এর সুযোগ সুবিধা লাভ করে না। ব্যাংকের কাছে বাগানটি আর্থিকভাবে দায়বদ্ধ। বাগান পরিচালনার কার্যকর মূলধন আসে ব্যাংক এবং নিজস্ব অর্থনৈতিক সোর্স থেকে। বাগানটির লিজ হোল্ডার বিন্নাগুড়ি টি এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড। লিজের ভ্যালিডিটির সময়সীমা এবং মেয়াদ ২০৩৫ সাল পর্যন্ত।
প্রাথমিক সমীক্ষা সারলাম চা বাগিচার অফিসে বসেই বড়বাবুর সহযোগিতায়। ম্যানেজারের সঙ্গে আলাপচারিতায় এবং চা বাগিচা অফিস থেকে নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে পেলাম বিন্নাগুড়ি চা বাগিচার উৎপাদন সম্পর্কিত বেশ কিছু তথ্য।
সিনিয়র ম্যানেজারের জবানীতেই বলি, “এখন একটা ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে যে, চা যে কোনও মাটিতেই চাষ করা যায়। তাই জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, বিহারের কিষানগঞ্জ জেলার বিরাট এলাকা জুড়ে যে চা-বাগিচা স্থাপনের উদ্যম প্রচেষ্টা চলছে সেখানে ভাবা হচ্ছে না এখানকার মাটি চা চাষের জন্য কতখানি উপযুক্ত”।
জানতে চাইলাম, “ ডুয়ার্সে যে দেখি অধিকাংশ চা বাগিচা রুখাশুখা, আপরুটিং হয় না, সেগুলি থেকে কি ভালো মানের চা হয়”?
ম্যানেজার সাহেব বললেন, “সাধারণভাবে চা গাছের মূল মাটির ২ থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত গভীরে প্রবেশ করে। মাটির যথেষ্ট গভীরতা না থাকলে তাই চা গাছের থেকে ভাল ফসল আশা করা যায় না। এ ক্ষেত্রে মাটির উর্বরতা, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা এবং সূর্যের আলোর পরিমাণ— সব কিছুই চা-চাষের আগে বিবেচনার মধ্যে আনতে হয়। চা-গাছের মাটি চুন এবং ক্যালশিয়াম কার্বোনেটমুক্ত থাকা প্রয়োজন। এ ছাড়া সেই মাটির উর্বরতার জন্য দরকার নাইট্রোজেন যৌগ। মাটির গঠনপ্রকৃতিও চা-চাষের ক্ষেত্রে বিবেচনার মধ্যে রাখতে হয়। মাটিতে জল প্রবেশ ক্ষমতা, গ্যাস বিনিময়ের ব্যবস্থা— সব কিছুই চা-বাগান স্থাপনের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়”।
বললাম, “এখন কিন্তু সারা পৃথিবীতে স্বাস্থ্যচেতনা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জৈব চা-চাষের দাবি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। শুধু আন্তর্জাতিক চায়ের বাজার দখল করতে জৈব চাষের বৃদ্ধি প্রয়োজন তা নয়, দেশীয় বাজারেও এই চায়ের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এই ব্যাপারে ডুয়ার্সের বিন্নাগুড়ির মতো প্রতিষ্ঠিত বাগিচাগুলির কি ভাবনা হওয়া উচিত? এক্ষেত্রে কি উতপাদন খরচ অনেক বাড়বে”?
“জৈব চা উৎপাদনের খরচ যে সাধারণ চা উৎপাদনের খরচ থেকে বেশি তাতে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু সেটা পুষিয়ে যায় এই চা ট্র্যাডিশনাল চায়ের থেকে কম করেও ৩০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হয়। এখানে চা গাছগুলি রাসায়নিক সারে অভ্যস্ত। তাই এদের জৈব চা-চাষে পরিণত করতে সময় লাগবে প্রায় ২-৩ বছর। এ ছাড়া জৈব রাসায়নিক পেতে হলে নানা গৃহপালিত প্রাণী পোষা ও তার রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। এর ফলে গড়ে ওঠে ডায়েরি ও পোলট্রি শিল্প। বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়”।
নাগরাকাটা টি রিসার্চ সেন্টারের টি সায়েন্টিস বরেন বৈশ্যের কাছ থেকেও একই বক্তব্যের প্রতিফলন শুনেছিলাম। বরেনবাবুর বক্তব্য ছিলরাসায়নিক সার মাটি ও জলকে দূষিত করে, জৈব সারের ব্যবহারে পরিবেশের কোনও ক্ষতি হয় না। রাসায়নিক সার কীটনাশক, পরিবেশবান্ধব কীটপতঙ্গকেও বিনাশ করে। জৈব সার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, পরিবেশবান্ধব কীটপতঙ্গকে বাঁচিয়ে রাখে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দ্রব্যের ব্যবহারের ফলে এর প্রয়োগকারী প্রত্যক্ষভাবে নানা বিষাক্ত প্রভাবের শিকার হবার পাশাপাশি নানা ধরনের ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। জৈব সার শুধু যে গাছ ও নানা পরিবেশবান্ধব কীটপতঙ্গের স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখে তা নয়, এর ফসলও ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্যরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়। রাসায়নিক সার প্রাথমিকভাবে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করলেও উর্বরতা পরবর্তী সময়ে জমির উর্বরতা শক্তি হারায়। প্রতিবার তাই আগের বারের তুলনায় আরও বেশি রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয়। জমির উর্বরতা জৈবিক সার প্রয়োগে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। রাসায়নিক সারে উৎপাদিত পণ্যে চাহিদা হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে এর বাজারদরেরও হ্রাস ঘটে। জৈব সারে উৎপাদিত চা এর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে, তাই এই চা বেশি দামে বিক্রি হয়। রাসায়নিক সারের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পায় বলে এর উৎপাদন ব্যয়ও বৃদ্ধি পেতে থাকে। অন্যদিকে মাটি জৈব সারে অভ্যস্ত হয়ে গেলে এর উর্বরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে, উৎপাদন খরচও হ্রাস পায়। এই জৈব চা-চাষ পরিবেশরক্ষার ক্ষেত্রেও কার্যকরী ভূমিকা নেয়। প্রচলিত চা-চাষ, যেখানে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়, সেই চা-বাগানগুলিকে জৈবিক চা-বাগানে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে দেখা গেছে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছরে উৎপাদন কমেছে যথাক্রমে ১০, ২০ এবং ৪০ শতাংশ। তার পরের বছর থেকে জৈব চা-চাষে উৎপন্ন চা শুধু যে আগের উৎপাদনে ফিরে যায় তা নয়, এর পর থেকে তার উৎপাদনের হার প্রচলিত চা-চাষের থেকে আরও বৃদ্ধি পায়।
জৈবিক চায়ের প্রশ্নে সেটি যে জৈবিক চা-বাগানেরই চা, তার জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বীকৃত সংস্থার কাছ থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হয়। এর জন্য ভারতের টি বোর্ড জৈব চাষি, ক্ষুদ্র উৎপাদক এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও সোসাইটিকে বিশেষ ট্রেনিং-সহ বড় চা-বাগানগুলির পরিচালকদের নানাভাবে সাহায্য দিয়ে থাকে। বিদেশের ক্রেতারাও জৈবিক চা-বাগানগুলি মাঝেমধ্যেই পরিদর্শন করতে আসে। প্রতি বছর একবার করে চা-বাগিচা পরীক্ষা করতে হয়। গাছের পাতা পরীক্ষা করতে হয় দু'বছরে একবার। তৈরি হওয়া চায়ে কীটনাশক, রাসায়নিক বা অন্য কোনও ভারী পদার্থের উপস্থিতি আছে কি না প্রতি বছর পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু চা বাগিচা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে যে ভয়ঙ্কর তথ্য পেলাম সেটা জানলে সুস্বাদু চা সেবনকারীদের রাতের ঘুম উবে যাবে। ডুয়ার্সের বেশ কিছু বড় বড় বাগান ছোট ছোট চা-চাষিদের ইচ্ছেমতো মূল্য দিয়ে তাদের উৎপন্ন চায়ের গুণগতমান বিচার না করেই কিনে ফ্যাক্টরিতে অন্য চা-পাতার সঙ্গে মিশিয়ে পরিমাণ বৃদ্ধির প্রতি নজর দিতে গিয়ে গুণমানকে নামিয়ে আনছে। চা-বাগানের এই মালিকানার চরিত্রের সংকটের দায় বইতে হচ্ছে চা শ্রমিকসহ সমগ্র দেশের অর্থনীতিকে। চা-বাগিচা শিল্পকে সমৃদ্ধ করার সব উপাদান মজুত আছে। চা-বাগিচা শিল্পের সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে। সেই চা-শিল্পকে সংকটের কালো মেঘে ঢেকে দিতে চাইলে দুর্যোগ তো নেমে আসবেই সারা দেশের জনজীবনে। এই শিল্পের যদি কোনও সংকট আদৌ হয়ে থাকে, তবে তার উৎসকে খুঁজে বার করে তাকে নির্মূল করার দায়িত্ব নেওয়া দরকার। আমাদের এই সমাজে মালিকদের পক্ষে ড্রাম বাজাতে সবাই এগিয়ে আসে। মালিকরা বলছে চা-বাগানে চলছে সংকট। শাসকদের একাংশ সেই কথার প্রতিধ্বনি তুলে বলে বাগানে চলছে সংকট। তাই নাকি বাগানের মালিক বাগান বন্ধ করে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বাগান মৃত বলে ঘোষণা করা হচ্ছে। অথচ কোনও বাগান মালিক ছেড়ে চলে গেলে বা তার মালিকানা ছাড়তে চাইলে বাগানটির ক্রেতার কোনও অভাব হচ্ছে না। বাগানটি যদি মৃতই হয় তবে সেই মৃত বাগান ক্রয় করতে এত ক্রেতা এসে ভিড় করে কেন?
বাগিচায় ব্যক্তিগত ইলেক্ট্রিক মিটার সহ পাকাবাড়ির সংখ্যা ৮৮৪ টি। অধিকাংশ কোয়ার্টারসেই বিদ্যুতের সংযোগ আছে। আগে এর জন্য বিদ্যুতের চার্জ নেওয়া হত না। এখন রেডিয়ো, টিভি, ইলেকট্রিক ইস্ত্রি ইত্যাদির মতো বৈদ্যুতিক সামগ্রীর ব্যবহারের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শ্রমিকদের ঘরে মিটার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। বৈদ্যুতিক সংযোগবিহীন শ্রমিক আবাসের সংখ্যা ৫০ এর মত। আধা পাকাবাড়ি আছে বেশ কিছু। মোট শ্রমিক আবাস ৯৩০ টি। মোট শ্রমিক ১৬৪২ জন। বাগানে শতকরা ৫৭ শতাংশ শ্রমিক আবাস এবং অন্যান্য বাসগৃহ আছে। দেখলাম ভূপ্রকৃতির চরিত্রের জন্য ডুয়ার্স ও তরাইতে শ্রমিক কলোনিগুলি পরস্পর পরস্পরের সংলগ্ন অবস্থায় আছে। সাধারণত এক-একটা শ্রমিক কলোনি গড়ে ওঠে তিনটি অথবা দুটো লেবার লাইন দিয়ে। এই লেবার লাইন সাধারণত পাঁচ-ছ'টা বাড়ি নিয়ে তৈরি হয় এবং এই লাইনগুলি পরস্পরের সঙ্গে সমান্তরালভাবে থাকে। এখানে যে সমস্ত শ্রমিক স্থায়ী হয়, তারা প্রত্যেকেই কোয়াটার পায় এবং অবসর নেওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকতে পারে। কোনও পরিবারের শুধু একজন সদস্য যদি বাগানে কাজ করে তবে কর্তৃপক্ষ সেই কোয়ার্টারের রান্নাঘর তালাচাবি দিয়ে মাঝের ঘর এবং উঠোনে রান্না করতে দেয়। স্বামী অথবা স্ত্রীর মধ্যে কেউ একজন অবসর গ্রহণ করলে সেই শ্রমিক পরিবারের জন্য একই নীতি অনুসরণ করা হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা গেছে সেই পরিবারের একজন সদস্য যদি স্থায়ী শ্রমিক রূপে বাগানে কর্মরত থাকে তবে তাকে সেই রান্নাঘরে থাকতে দেওয়া হচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দু'টি পরিবারকে সেই রান্নাঘর ব্যবহার করতে হচ্ছে। তবে এগুলো শুধুমাত্র নিয়মের জন্যই নিয়ম। ডুয়ার্সের বাগিচাগুলির সার্বিক নিয়ম অবসরগ্রহণের পরের দিনই সেই শ্রমিক পরিবারটিকে কোয়ার্টারস ছেড়ে দিতে হয়। সেই ঘরের চাবি কর্তৃপক্ষর হাতে ফিরিয়ে দেবার পরই সে গ্র্যাচুইটি, পিএফ ইত্যাদির মতো অবসরকালীন অর্থ হাতে পায়। কোনও বাগানে যদি কর্তৃপক্ষ শ্রমিককে কোয়ার্টার দিতে না পারে তবে কর্তৃপক্ষ তার বাসস্থানের জন্য চুক্তি অনুযায়ী বাসস্থান ভাতা দেয়।
দেখলাম জল সরবরাহের জন্য লেবার লাইনে পাইপের সাহায্যে জল সরবরাহ করা হচ্ছে। ট্যাপ কলের ব্যবস্থা আছে। সকালে এক থেকে দু'ঘণ্টা এবং বিকেলে এক থেকে দু'ঘণ্টা জল সরবরাহ করা হয়। রবিবার সারাদিনই জল সরবরাহ করা হয়। বাগানে মাঝে মাঝে ক্লোরিনে পরিশুদ্ধ খাবার জল সরবরাহ করা হয়। পানীয় জলের উৎস ডিপ টিউব ওয়েল। বাগিচাতে সজল ধারা নেই। কুয়ো আছে বেশ কয়েকটি। বাগানে গ্রীষ্মকালে জলের সংকট দেখা গেলে শ্রমিকদের দূরের কোনও উৎস থেকে জল সংগ্রহ করে আনতে হয়। তবে অধিকাংশ চা-বাগানে তাদের জামাকাপড় ধুতে, এমনকি স্নানের জন্য বাইরে কোনও জলাশয়ে যেতে হয়। এখানে জল নিষ্কাশনের জন্য নর্দমার ব্যবস্থা অন্যান্য শ্রমিকদের বস্তির তুলনায় ভাল। যদিও তার রক্ষণাবেক্ষণের অভাব নিয়ে আছে নানা অভিযোগ৷ রাজ্যের বিধিবদ্ধ আইন অনুসারে প্রতিটি বাড়ির জন্য পৃথক শৌচালয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। দেখলাম কোনও কোনও ক্ষেত্রে দু'টি পরিবারের জন্য একটা করে শৌচালয়ের বন্দোবস্ত করা হয়ছে। তবে জলের অভাবের জন্য বহু শৌচালয় অব্যবহৃত হয়ে পড়ে আছে বলে জানতে পারলাম। লেবার লাইন থেকে কিছুটা দূরে এই শৌচালয় করা হয়। সেখানে শৌচালয়ের জন্য জল সরবরাহের ব্যবস্থা নেই।
বিন্নাগুড়ি চা বাগিচার সাব স্টাফ এর সংখ্যা ৮৪ জন। করণিক ১৩ জন। ক্ল্যারিক্যাল এবং টেকনিক্যাল স্টাফ ৭ জন। বাগানের শ্রমিক পরিবারের সংখ্যা ১০৯৯। মোট জনসংখ্যা ৬৬১৬। স্থায়ী শ্রমিক ১৩৯৪ জন। বিগত আর্থিক বছরে অস্থায়ী বিঘা শ্রমিক ছিল ১৫৮৩ জন। ফ্যাক্টরিতে নিযুক্ত স্টাফ এবং শ্রমিক সংখ্যা ৮৫ জন। চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক ৪৭ জন। কম্পিউটার অপারেটর একজন। টেকনিক্যাল এবং স্থায়ী শ্রমিক মিলে মোট শ্রমিক সংখ্যা ২৯ জন। কর্মরত শ্রমিক ১৬৪২ জন এবং শ্রমিক নয় এমন সদস্যদের সংখ্যা ৪৯৭৪ জন। বিন্নাগুড়ি চা বাগিচার হাসপাতাল একটি। আউটডোর ডিসপেনসরিও রয়েছে। তাতে মেল ওয়ার্ড এবং ফিমেল ওয়ার্ড আছে দশটি করে, আইসোলেশন ওয়ার্ড আছে চারটি, এবং মেটারনিটি ওয়ার্ড আছে দুটি। হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারও আছে। অ্যাম্বুলেন্স নাই। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। বাগানে এমবিবিএস পাশ ডাক্তার আছেন। ট্রেন্ড নার্স আছে, একজন মিড ওয়াইফ আছে, দুজন কম্পাউন্ডার এবং একজন স্বাস্থ্য সহযোগী আছে। বাগিচায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ সরবরাহ করা হয়। হাসপাতালে রোগীদের পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হয়। ক্রেশের সংখ্যা একটা। অস্থায়ী দুটো। ক্ৰেশে পর্যাপ্ত জলের ব্যাবস্থা, শৌচালয় আছে । দুধ, বিস্কুট বা পুষ্টিকর খাবার ক্রেশের শিশুদের দেওয়া হয়। পর্যাপ্ত পানীয় জল ক্ৰেশে এবং চা বাগানে সরবরাহ করা হয়। ক্রেশে অ্যাটেনডেন্ট মোট তিনজন। বাগিচায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। বাগিচা সংলগ্ন উচ্চ বিদ্যালয় আছে। শ্রমিক সন্তানদের বিদ্যালয়ে নেবার জন্য যানবাহনের ব্যাবস্থা হিসাবে একটা বাস আছে। বাগানে বিনোদনমূলক ক্লাব এবং খেলার মাঠ আছে। ইনডং টি গার্ডেনে নিয়মিত পি এফ বা গ্র্যাচুইটির টাকা জমা পড়ে। বোনাস চুক্তি অনুযায়ী মিটিয়ে দেওয়া হয়। পি এফ বা গ্র্যাচুইটি বকেয়া থাকে না। শ্রমিকদের মজুরি, রেশন এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা চুক্তি অনুযায়ী দেওয়া হয়। ২০০৯ সাল থেকে লেবার ওয়েলফেয়ার অফিসারের পোস্ট আছে।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴